রাজ্যে আসবেন না শিল্পপতিরা, ফের কটাক্ষ বুদ্ধদেবের
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘বিভ্রান্তিকর’ কৃষি ও শিল্পনীতিকে হাতিয়ার করেই প্রধান বিরোধী দলের আন্দোলনের পথ পরিকল্পনার কথা বললেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বস্তুত, রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের স্বার্থে শিল্পপতিদের নিয়ে সম্মেলন শুরুর করার আগের দিন রাজ্যের শিল্পায়নের ‘করুণ চিত্র’ নিয়ে ফের সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পত্রপাঠ যার জবাব দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলত, শিল্প-সম্মেলনের আগে শিল্পায়ন-তরজা আরও উচ্চ গ্রামে উঠেছে!
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে রবিবার সোনারপুরের হরিনাভি মাঠে ভিড়ে-ঠাসা সমাবেশে বুদ্ধবাবু ফের শিল্পায়নের প্রশ্নে তুলোধোনা করেছেন রাজ্য সরকারকে। প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান সরকারের জমি-নীতি নিয়ে। তাঁর কথায়, “বামফ্রন্ট সরকার যা শিল্প করে গিয়েছিল। সেটাই রয়েছে। তার পরে এই সরকার আর এক পা এগোতে পারেনি!” রাজ্যের নীতির সমালোচনা করে তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, শিল্পপতিদের সরকারি সাহায্যে জমি দেওয়া যাবে না। তা হলে কোনও শিল্পপতিই এ রাজ্যে আসবেন না। রাজ্যে শিল্পায়ন মুখ থুবড়ে পড়বে! আর রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েরা কোথায় কাজ করবেন? রাজ্যে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে!”
আজ, সোমবারই রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে ‘বেঙ্গল লিড্স ২০১২’ শীর্ষক সম্মেলন শুরু হচ্ছে। তার প্রাক্কালে বুদ্ধবাবুর সমালোচনা প্রত্যাশিত ভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, “যিনি এ সব কথা বলছেন, তাঁদেরই সরকার ৩৪ বছর ধরে এ রাজ্যটার সর্বনাশ করে গিয়েছে। নীতিহীন সরকারের মুখে নীতির কথা মানায় না! ওঁদের আমলেই কৃষক হত্যা, জোর করে জমি দখল, কারখানা বন্ধ করে অরাজকতা তৈরি করা হয়েছে। এখন আবার নতুন সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছেন!”
সোনারপুরের হরিনাভি মাঠে সিপিএমের সমাবেশ। রবিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।
কোনও বিনিয়োগকারী এ রাজ্যে আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে বুদ্ধবাবুর যে অভিযোগ, তার জবাবে পার্থবাবু বলেন, “৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসে গিয়েছে। আরও অনেক বিনিয়োগকারী এ রাজ্যে আসতে আগ্রহী। সোমবার থেকে ‘বেঙ্গল লিড্স’ শুরু হচ্ছে। সেখানেও ১২৫টি সংস্থা অংশ নিচ্ছে। আরও অনেক সংস্থা অংশ নিতে চাইছে। এ রাজ্যের শিল্প নিজের গতিতে এগোচ্ছে। কোনও রকম কুৎসা রটিয়ে সেই অগ্রগতি আটকাতে পারবেন না বুদ্ধবাবুরা।”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ফের উল্লেখ করেছেন, বামফ্রন্ট সরকারের শিল্পায়নের লক্ষ্যে কোনও ভুল ছিল না। বুদ্ধবাবুর কথায়, “আমাদের শিল্পনীতিই ঠিক ছিল। কৃষির পাশাপাশি শিল্পনীতি করা হয়েছিল। নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কলকারখানা করতেই হবে।” শিল্পনীতির পাশাপাশি রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও সমালোচনা করেন তিনি। রাজ্যে বিদ্যুতের ‘বেহাল’ অবস্থার জন্য সরকারের ‘অবাস্তব’ নীতিকেই তিনি দায়ী করেছেন।
কৃষকদের সমস্যা নিয়েও ‘আক্রমণাত্মক’ ছিলেন বুদ্ধবাবু। সমাবেশে বলেন, “চাষি ধান-পাট বিক্রি করতে পারছে না। রাজ্যে সরকার তো দূরের কথা, কোনও সমবায়ও চাষির কাছ থেকে ধান কিনছে না। মাঠ থেকে ধান তোলার পরে চাষি মরিয়া হয়ে ধান বিক্রির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজারে যা দাম পাচ্ছে, তাতে ফলনের খরচও উঠছে না। চাষিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। গত বছর আলুর দাম পাওয়া যায়নি। অনেক চাষি তো শুনছি এ বার আর আলুর চাষ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গরিব মানুষের কাজ নেই। ধান-পাটের দাম নেই।”
যার জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, “সমস্তটাই মিথ্যা অভিযোগ! ওঁদের আমলে চাষিরা সহায়ক মূল্য পেত না। এখন তো চেকে সরাসরি দাম দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের আমলে তো ফড়েরাই সব টাকা নিয়ে নিত!”
সরকার পরিবর্তনের পরে গ্রামের গরিবদের কী ভাবে ‘অবস্থা কাহিল’ হয়ে গিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে বুদ্ধবাবু এ দিন আহ্বান করেছেন, “ভুক্তভোগী চাষিদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন করতে হবে।” আগামী দিনে কী ভাবে ওই আন্দোলন সংগঠিত করা যায়, সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে তার পরিকল্পনা চলছে বলে জানান বুদ্ধবাবু।
রাজ্যে সরকার বদলের পরে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ও অপরাধ ছিল। কিন্তু এখন পাড়ায় পাড়ায় ছিনতাই-রাহাজানি বেড়ে গিয়েছে। অপরাধীরা মনে করছে, এটা ওদের সরকার! পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে।” শিক্ষায় ‘নৈরাজ্যের পরিবেশ’ তৈরির জন্যও তৃণমূলকে দায়ী করেছেন বুদ্ধবাবু।
দলীয় কর্মীদের একাংশের ভুলের জন্য সিপিএমের বিপর্যয় হয়েছিল বলে স্বীকার করে বুদ্ধবাবু বলেন, “ত্রুটি শোধরাতে হবে। সম্মেলনে ওই সব বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।” সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা প্রমুখ। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি রেজ্জাকের ‘পরামর্শ’, “গ্রামের বাগদি (আদিবাসী) পাড়াগুলোতে গিয়ে বৈঠক করুন। তার পরে মহাকরণের সামনে গিয়ে আন্দোলন করবেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.