|
|
|
|
প্রশ্নের মুখে নিরপেক্ষতা |
রায়গঞ্জে জামিন, মাজদিয়ায় জেল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নদিয়ার এসএফআই এবং সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, রায়গঞ্জের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাতে পুরো ঘটনা এবং অভিযুক্তদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও শুক্রবার ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ৯ ছাত্র নেতা জামিন পেয়ে গেলেন। পরের দিন জামিন পেলেন মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী। এমনকী, খোদ মুখ্যমন্ত্রী অধ্যক্ষ নিগ্রহকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ ও ‘বাচ্চা ছেলেদের ভুল’ বলে অভিহিত করলেন। আর মাজদিয়ার ঘটনায় সেই ধরনের কোনও ‘প্রত্যক্ষ’ প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও শুধু অধ্যক্ষের এফআইআরের ভিত্তিতে তাঁদের সমর্থক তিন ছাত্রকে জেলে পাঠানো হল। রাজনীতির রং দেখেই পুলিশ এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র। তাঁর বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই। অভিযোগকারী যেমন অভিযোগ করবেন, তেমনই ধারা দেওয়া হয়। দু’টো ঘটনার দু’রকম ধারা হতেই পারে। তবে জামিন দেওয়া, না-দেওয়া পুরোপুরি বিচারকের বিচার্য।”
উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র আন্দোলন কড়া হাতে দমনের পক্ষপাতী, রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন নাগরিক সমাজের অনেকেও কিন্তু পুলিশের ‘দু’ধরনের’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রায়গঞ্জের ঘটনাতেও পুলিশের একই রকম কঠোর হওয়া উচিত ছিল। সেখানে অভিযুক্তেরা শাসক দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও। |
|
রায়গঞ্জের ঘটনায় সহজেই জামিন পান তিলক চৌধুরী। |
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য এখনও দাবি করা হচ্ছে যে, রায়গঞ্জের ঘটনার পিছনে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যৌথ ষড়যন্ত্র আছে। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই কথা বলেছেন। কিন্তু সেটা পুলিশের বিচার্য হতে পারে না বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত। তাদের বক্তব্য, তা হলে মাজদিয়ার ক্ষেত্রেও তো সিপিএমের তরফে একই রকম অভিযোগ করা হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন তমলুকে বলেছেন, “পুরোটাই গট-আপ গেম! রায়গঞ্জের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে
চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে! দলীয় পোস্টার ছেঁড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন ছাত্রেরা। মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হল। আর রায়গঞ্জে তৃণমূলের বড় বড় নেতারা ছিল। তাই ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাজদিয়ায় ছাত্রদের ফাঁসিয়ে দিয়ে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে!”
চাপড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সামসুল ইসলাম মোল্লা অভিযুক্ত ছাত্রদের আইনজীবী। তিনি মাজদিয়ার ওই কলেজের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যানও। তাঁর বক্তব্য, “রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনা সবাই সংবাদমাধ্যমে দেখেছে। অথচ সেখানে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে গেল। আর এখানে সামান্য কারণে জামিন পেল না!” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমন কিছু ধারা দিয়েছে, যেগুলি এ ক্ষেত্রে খাটে না। রায়গঞ্জের ঘটনাটি বিচারকের সামনে তুলে ধরেছি।”
|
পৃথক ফল |
মাজদিয়ায় অধ্যক্ষ-নিগ্রহে ধৃত কলেজ ছাত্ররা। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
বিমানবাবুদের সুরেই রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সিও বলেছেন, “রায়গঞ্জ কলেজে তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা অধ্যক্ষকে মেরেছে। তছনছ করেছে সরকারি সম্পত্তি। অপরাধীদের ধরার পরেও ছেড়ে দেওয়া হল। অথচ মাজদিয়ায় অধ্যক্ষের এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের-করা অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের জামিন-অযোগ্য ধারা দেওয়ায় ১৪ দিনের জেল হেফাজত হল। এটা দলতন্ত্র নয়?” দীপার দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ অবশ্য এ দিন মাজদিয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছে। আজ, সোমবার কলেজে কলেজে তাদের ‘কালা দিবস’ পালন করার কথা।
এসএফআই-এর নদিয়া জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্তের বক্তব্য, রায়গঞ্জ ও মাজদিয়ার ঘটনা পাশাপাশি রাখলেই ‘পুলিশের ভূমিকা’ পরিষ্কার হবে। ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ তাঁদের ছেলেদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনিও।
প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে মাজদিয়ার কলেজে আক্রান্ত হন অধ্যক্ষ সরোজেন্দ্রনাথ কর। অভিযোগ, ‘বহিরাগত’দের নিয়ে এসএফআই-এর কিছু সদস্য তাঁকে মারধর করে। তিনি পাঁচ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এঁদের মধ্যে পুলিশ পুষ্পেন সরকার, প্রণব ঘোষ ও অভিজিৎ হালদারকে গ্রেফতার করেছে। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে। অধ্যক্ষ-নিগ্রহের তীব্র নিন্দা করে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “৩৪ বছরের অভ্যাস থেকে ওরা বার হতে পারেনি! যে ভাবে অধ্যক্ষকে মারধর করা হয়েছে, অত্যন্ত লজ্জার!” |
|
মাজদিয়া কলেজের অধ্যক্ষ নিগ্রহের প্রতিবাদ। রবিবার কলেজ স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র। |
সরোজেন্দ্রবাবুর কল্যাণীর বাড়িতে এ দিন দেখা করতে যান ‘অল বেঙ্গল প্রিন্সিপাল কাউন্সিলে’র প্রতিনিধিরা। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “সরোজেন্দ্রবাবুর মনোবল বাড়াতেই আমরা আজ এসেছি। বলেছি, যত বড় বিপর্যয় হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।” তাঁর দাবি, তাঁরা শিক্ষাকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ করতে চাইছেন। চন্দনবাবুর বক্তব্য, “বামফ্রন্ট আমলেও অধ্যক্ষেরা মার খেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ জানানোর সাহস পেতেন না। স্থানীয় সিপিএম নেতারা চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করতেন।” ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত করে দোষী ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। আর সরোজেন্দ্রবাবু বলেন, “চিকিৎসার পরে এখন আমি কিছুটা সুস্থ। কিন্তু ঘাড়ের কাছে যন্ত্রণাটা এখনও কমেনি। এখনও ভাবতে পারছি না, কোনও কারণ ছাড়াই ছাত্রদের হাতে এমন মার খাব। আমি এখনও আতঙ্কিত।”
|
রায়গঞ্জ |
|
মাজদিয়া |
• ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে মারধর।
তছনছ সরকারি সম্পত্তি।
|
অভিযোগ |
• অধ্যক্ষকে মারধর। টেবিলের ভাঙা পায়া
দিয়ে হাতে-পিঠে আঘাত।
|
• ভিডিও ফুটেজ আছে।
|
প্রমাণ |
• ভিডিও ফুটেজ নেই।
|
• ধৃত তৃণমূলের ৯ বহিরাগত।
• আত্মসমর্পণ নেতার।
|
পদক্ষেপ |
• ধৃত এসএফআইয়ের ৩ কলেজ ছাত্র।
• খোঁজ চলছে ২ ছাত্রের।
|
সবই জামিনযোগ্য |
• ১৪৩, ছোটখাটো ঝামেলা • ৩২১, ৩২৩, গালিগালাজ • ৩৪১, ৫০৬,
কটূক্তি
• ৪২৭, সামান্য ভাঙচুর
(ক্ষতি ৫০ টাকা পর্যন্ত)।
|
ধারা |
জামিন-অযোগ্য |
• ৩২৫, গুরুতর আঘাত
• ৩৫৩, সরকারি কাজে বাধা।
|
জামিনযোগ্য |
• ৪৮৪, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ
• ৫০৬, মারধরের হুমকি
• ৩৪, দল বেঁধে হামলা।
|
• গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণের দিনেই প্রত্যেকের জামিন।
|
ফল |
• তিন ছাত্রকেই ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ।
|
|
|
|
|
|
|
|