|
|
|
|
মেঘ-বৃষ্টির দৌলতে ‘নকল’ শীতের আমেজ |
দেবদূত ঘোষঠাকুর • কলকাতা |
আবহবিজ্ঞান মানতে গেলে এ আসলে শীতই নয়। কিন্তু ছুটির দিনে সেই ‘নকল’ শীতটাই যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা!
আকাশে মেঘ জমে থাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যতই চড়ুক না কেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা না-বাড়ায় রবিবার দিনভর ‘শীত শীত’ ভাব ছড়িয়ে রইল গোটা দক্ষিণবঙ্গে। একটু বৃষ্টি হয়ে গেলে তো কথাই নেই। তার পরে বাইরে বেরোতে গেলে রীতিমতো মাফলার-টুপিতে মাথা-কান ঢেকে রাখতে হল!
শীতকালটায় উত্তরবঙ্গ ও গোটা উত্তর ভারতে এমন পরিবেশ হামেশাই হয়। ঘন কুয়াশায় সূর্য উঠতে পারে না, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বাড়তে পারে না। একটা সময়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় সমান সমান হয়ে যায় আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘শীতল দিন’ (কোল্ড ডে)।
দক্ষিণবঙ্গে কিন্তু শীতকালে এমন পরিস্থিতি সাধারণত হয় না। এ বার হচ্ছে। টানা তিন দিন বৃষ্টি-কুয়াশার বাধায় দক্ষিণবঙ্গে
সূর্যের দেখা না-মেলায় মাটি গরম হতে পারেনি। উপরন্তু মাঝে-মধ্যে বৃষ্টির ‘ভেজা ভেজা’ ভাবটা শীতের অনুভূতিকে আরও জোরদার করেছে। ফলে অন্য ভাবে শীত ফিরে এসেছে দক্ষিণবঙ্গে। আজ, সোমবারেও এই ‘নকল’ শীত বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস।
|
উলটপুরাণ। বিস্তারিত... |
‘আসল’ শীত কবে ফিরবে এ তল্লাটে?
সেটা নির্ভর করছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার গতি-প্রকৃতির উপরে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীর থেকে সরে আসায় সেখানে প্রবল তুষারপাত শুরু হয়েছে। এমনকী, এ দিন বরফ পড়েছে পঞ্জাবের পাঠানকোটেও। উত্তরাখণ্ড-হিমাচলের জায়গায় জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। দিল্লির মৌসম ভবনের খবর: পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরে আসার পরে উত্তরাখণ্ড-হিমাচলে তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর ঝঞ্ঝা যতো নীচের দিকে নামবে, ততই উত্তুরে বাতাসের তীব্রতা বাড়বে উত্তর ও পূর্ব ভারতে। ফিরবে শীত। আবহবিদদের আশা, পৌষ সংক্রাম্তির আগেই দক্ষিণবঙ্গের আকাশ পরিষ্কার হয়ে ফের জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে।
এবং তার আগে পর্যন্ত যেটুকু ঠান্ডার আমেজ, তা মিলবে বৃষ্টি, ও তার সুবাদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা না-বাড়ার দৌলতে। শনি-রবিবার যেমন ছিল। তবু একে ‘নকল’ শীত বলা হচ্ছে কেন?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা: আবহবিজ্ঞানে ‘শীত’ মানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে যাওয়া। লাগাতার পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ইস্তক যে পরিস্থিতিটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। শুধু
এখানেই নয়, তামাম পূর্ব ভারতের এক হাল। বিহার ঘন
কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ফলে পটনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠতে পারেনি, অর্থাৎ এ সময়ের স্বাভাবিকের ৮ ডিগ্রি কম। ও দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ১৪.২ ডিগ্রিতে!
এ দিন দুপুরে কলকাতাতেও সর্বোচ্চ-সর্বনিম্নের ফারাক ছিল মাত্র তিন ডিগ্রির। সর্বোচ্চ ২২ ডিগ্রি না-ছাড়ালেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ১৯ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। সাম্প্রতিক কালে যা বেনজির। গত দশ বছরে মহানগরে জানুয়ারির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৯ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে।
এমনকী, গত বছরে তা ১০ ডিগ্রিরও নীচে নেমেছিল। সে জায়গায় এ বার ১ জানুয়ারি কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.২ ডিগ্রি। তার পরে আর নামেনি। শুক্রবার তো ২০ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল! অন্য দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। যদিও এ সময়ে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি।
এবং এ হেন ‘উলটপুরাণের’ জেরে শহরের ঘরে-ঘরে সর্দি-কাশির ধুম। মেঘলা পরিবেশে মশার দাপট বাড়ছে, ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়ার মতো উপসর্গসমেত জ্বরেরও প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি জলবাহিত এক ধরনের জীবাণুর সক্রিয়তায় কলকাতার একাংশে ছড়াচ্ছে জন্ডিস।
‘নকল’কে সরিয়ে ‘আসল’ শীত না-ফিরলে শহরের স্বাস্থ্যও ফিরবে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। |
|
|
|
|
|