মা কিন্তু তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী
আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাবা-মায়ের এক মেয়ে। মা ছোটবেলায় মারা যান। তার পর বাবা আমার ছোট মাসিকে বিয়ে করেন। এই মা আমাকে খুব ভালবাসে। সত্যি বলতে কী, এই মা না থাকলে আমি হয়তো জীবনে এত দূরে পৌঁছোতেই পারতাম না। বাড়ির অন্যান্য সকলেও আমাকে খুব ভালবাসেন। কিন্তু ইদানীং মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কিছুটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি কখনও বাবা মাকে দুঃখ দিয়ে কিছু করতে চাই না। কিন্তু মা আমাকে এক দম বুঝতে পারে না। বন্ধুবান্ধবরা যেটুকুও বোঝে, মা সেটুকুও বুঝতে চায় না। আমার কথাবার্তা, চালচলন সব কিছুই নাকি খারাপ। কিন্তু অন্যেরা যারা আমায় চেনে বা কথা বলেছে তারা কখনওই আমায় খারাপ বলেনি। শুধু মাত্র মা-ই এমন আচরণ করে। মায়ের সঙ্গে আমার কোনও ব্যাপারেই মতের মিল হয় না। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে?
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তোমাকে বলছি
প্রথমেই বলি, তোমার বয়সি ছেলেমেয়েদের অনেকেই এই ধরনের সমস্যায় পড়ে। এই বয়সে বন্ধুবান্ধবদের জগৎটাকে অনেক বেশি কাছের, অনেক বেশি নিজের বলে মনে হয়। ‘আমার বন্ধুবান্ধবরা যা সহজে বুঝতে পারছে, মা-বাবা কেন তা বুঝতে পারছে না?’ মা-বাবার সঙ্গে মতপার্থক্যও এই সময় থেকেই শুরু হয়, কারণ এই বয়সেই সন্তানের মধ্যে একটা স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের বিকাশ হতে থাকে। ফলে অনেক বিষয়েই হয়তো তোমার আলাদা একটা মতামত তৈরি হয়েছে, যার সঙ্গে তোমার মায়ের মতের মিল হচ্ছে না।
এই মতপার্থক্যের একটা কারণ ‘জেনারেশন গ্যাপ’। তুমি বা তোমার বন্ধুবান্ধব একটা বিষয়কে যে ভাবে দেখবে বা ভাববে, তোমার মা অথবা বাবার দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তোমার বক্তব্য, মায়ের সঙ্গে এখন তোমার মতের কোনও মিল হচ্ছে না, বা তিনি তোমার কোনও কথাই বুঝতে চাইছে না। তোমাকে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই মা-ই কিন্তু তোমাকে এত দিন পর্যন্ত মানুষ করে এসেছেন। তুমি চিঠিতে সে কথার উল্লেখও করেছ। সুতরাং, এ কথা কখনওই ভেবো না যে, উনি তোমার নিজের মা নন বলে এ রকম করছেন। বরং উনি সব সময়েই তোমার ভাল চান এবং কীসে তোমার ভাল হবে, কোনটা করলে তোমার পক্ষে ঠিক হবে এই সমস্ত চিন্তা করেই তোমাকে বিভিন্ন বিষয়ে বাধা দেন। এত বছর ধরে উনি তোমাকে বড় করেছেন, সুতরাং আজ নিশ্চয়ই হঠাৎ উনি তোমার শত্রু হয়ে যাবেন না। বাবা-মা সব সময়ই ছেলে বা মেয়ের মঙ্গলকামনা করেন এবং কী ভাবে সে জীবনের পথে আসা বাধাগুলো ভাল ভাবে পেরিয়ে যেতে পারবে, সেই বিষয়ে ঠিক পরামর্শ দেন। তাঁরা বয়সে বড়, সুতরাং জীবন সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাও তাঁদের বেশি। তাই কী করলে তোমার ভাল হবে, কারও কাছ থেকে আঘাত পাবে না বা কোনও বড় ভুলের পথে পা বাড়াবে না, সেগুলোই তাঁরা বলতে থাকেন। তোমার কেরিয়ার তৈরির ক্ষেত্রেও মা-ই তোমাকে এতটা পথ নিয়ে এসেছেন। বাকি পথটাও তুমি যাতে ঠিক লক্ষ্যে এগোতে পারো, সেই পথই দেখাতে চেষ্টা করেন। মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখো, যে বিষয়গুলোয় তোমার মায়ের সঙ্গে মতের মিল হচ্ছে না, সেগুলো হয়তো তিনি তোমার ভাল হওয়ার কথা ভেবেই বলেছেন।
তোমার বয়সটাই হচ্ছে বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত, কিছুটা চালিত হবার বয়স। তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে। তোমাকে বুঝতে হবে, তুমি যাদের কথায় প্রভাবিত হচ্ছ, তারাও তোমার বয়সি এবং তোমার মতোই জীবনে অনভিজ্ঞ। এখন মনে হবে বন্ধুদের কথাই ঠিক, তারাই তোমাকে ঠিক বুঝছে, শুধু মা-ই বুঝতে চাইছে না। কিন্তু অনেক সময়েই দেখবে, বন্ধুরা নিজেরাও নিজেদের ক্ষেত্রে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আর যত বড় হবে, তত বুঝতে শিখবে যে জীবনে বন্ধুদের যেমন একটা জায়গা রয়েছে, তেমনই বাবা-মায়েরও একটা স্বতন্ত্র স্থান রয়েছে, যেখানে থেকে তাঁরা সারা জীবন সন্তানের মঙ্গলের জন্যই চিন্তা করেন। এখন মায়ের যে কথাটা তোমার শুনতে ভাল লাগছে না বা যে সমস্যায় মায়ের দেখানো সমাধানটা তোমার মনঃপূত হচ্ছে না, তুমি নিজে সংসারজীবনে প্রবেশ করলে দেখবে, ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে তুমিও তোমার মায়ের কথাই বলতে।
মায়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে তোমার অসুবিধাগুলো তাঁকে জানাও। দেখবে, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে সমস্যা আরও বাড়ে। সব সময় মনে রাখবে, মা সব সময়ই তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। আজও আছেন।
মাকে বলছি
আপনার মেয়ের যা বয়স, তাতে বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন আপনি যদি ওর কথাবার্তা, চালচলন, পছন্দ, সব কিছু নিয়েই তির্যক মন্তব্য করেন, সেটা কখনওই ওর ভাল লাগবে না। ওর বন্ধুদের বিষয়েও নেগেটিভ কথা বলাটা ওর পছন্দ না-ই হতে পারে। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হবে, যা কখনওই কাম্য নয়। আপনাকে বাস্তব পরিস্থিতি চিন্তা করে মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। এই জেনারেশনের অনেক কিছুই প্রশংসনীয় রয়েছে, সেগুলো ওর সামনে বলুন, ওর তা হলে ভাল লাগবে।
আমরা প্রত্যেকেই এই বয়সে কিছু না কিছু ভুল করি। আর এই ভুলগুলো থেকেই আমরা জীবনের শিক্ষা নিই। সুতরাং সব কিছুতেই বাধা দেবেন না। কিছুটা ভুল করতে দিন। সেই ভুল থেকে ও নিজেই ঠিকটা শিখবে। ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশুন আর পাশে থাকার চেষ্টা করুন। কোনও ভুল করলে ‘আমি আগেই বলেছিলাম এটা হবে’ এ ভাবে না বলে, ওকেই বুঝতে দিন যে আপনিই ঠিক ছিলেন। মানসিক দূরত্ব তৈরি হলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাই মেয়ের সঙ্গে কোনও মতেই এই দূরত্বটা তৈরি হতে দেবেন না। আপনি সব সময়ই ওর পাশে রয়েছেন, এই ভরসার জায়গাটায় থাকুন। দেখবেন, ও আর একটু বড় হয়ে গেলে এই সমস্যাটাও আস্তে আস্তে মিটে যাবে।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.