|
|
|
|
|
|
গ্ল্যামারের সঙ্গে এই পেশায় আছে চ্যালেঞ্জ |
এফএম-এর দৌলতে রেডিয়ো এখন পাল্লা দিচ্ছে টেলিভিশনের জেট গতির সঙ্গে। এই
দুটি
ক্ষেত্রে কেরিয়ার গড়ার নানান সুযোগ নিয়ে আলোচনা করছেন শুভ্রা চক্রবর্তী |
নব্বই দশকের গোড়ায়, ঠিক সন্ধে ৬টার সময়, খবর শুরুর আগে সেই বিশেষ সিগনেচার টিউন শুনে বেশির ভাগ বাঙালিই জড়ো হতেন ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বাংলা ভাষায়, টাটকা খবর সম্প্রচারের সেটাই শুরু। আজ, তার দু’দশক পরে, আমরা প্রতি মুহূর্তে রিমোটের সুইচ টিপে, লাইভ খবর, খবর নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে এখন দৌড়ে চলেছি।
টেলিভিশনের এই জেট গতির যুগে এখনও কিন্তু গ্রামাঞ্চল, মফস্সল এবং শহরেরও কিছু বাসিন্দার কাছে ‘রেডিয়ো’ বস্তুটি প্রাগৈতিহাসিক হয়ে যায়নি। তার অনেকটাই অবশ্য এফএম রেডিয়োর দৌলতে। এখনও বহু মানুষের কাছে রেডিয়োর খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা যথেষ্ট উঁচুতে। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অ্যাসিসট্যান্ট নিউজ-এডিটর মধুপর্ণা ধর চৌধুরী জানালেন, ‘প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে রেডিয়ো জার্নালিজমের প্রধান তফাত সময়ের। একটা খবর লিখতে যে সময় এবং পরিসর পাওয়া যায় প্রিন্ট মিডিয়ায়, রেডিয়োতে তা কখনওই পাওয়া যায় না। |
|
কোনও বুলেটিনের আগের মুহূর্তে পাওয়া খবরকে কী ভাবে ছোট অথচ নির্ভুল তথ্য শ্রোতার কানে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটাই তখন চ্যালেঞ্জ।
তবে, অডিয়ো-ভিসুয়াল মিডিয়ায় শোনা এবং দেখার কাজ একই সঙ্গে হয় বলে এখানে এডিটরকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। যেমন, টিভি জার্নালিজম করতে হলে অনেক বেশি তৎপর হওয়া দরকার। কোনও খবর কভার করতে গিয়ে কতটুকু নেব, কতটুকু ছবি দেব আর নিজে কতটুকু বলব, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়ায় তিনটি ক্ষেত্রেই কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মধুপর্ণাদেবীর বক্তব্য ‘চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়া আর ঝরঝরে বলতে পারার ক্ষমতাটা অডিয়ো-ভিসুয়াল ক্ষেত্রে খুব জরুরি। গ্ল্যামারের আকর্ষণে এই জগতে ছেলেমেয়েদের আসার প্রবণতা বেশি হলেও, নিজেদের ঠিক মতো তৈরি না করে এলে এই ক্ষেত্রে সফল হওয়া কঠিন।’
সারা দেশেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাস কমিউনিকেশনের কোর্সের মধ্যেই টিভি এবং রেডিয়ো জার্নালিজম শেখানো হয়। দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাস মিডিয়া (www.iimmdelhi.com)-য় ১ বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন (রেডিয়ো, টি ভি জার্নালিজম অ্যান্ড প্রোডাকশন, ডিরেকশনে স্পেশালাইজেশন সহ) কোর্স রয়েছে। নতুন দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন -এ (www.iimc.nic.in) টি ভি অ্যান্ড রেডিয়ো জার্নালিজমের কোর্স আছে। নয়ডার এশিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন (www.aaft.com) মাস কমিউনিকেশনের নানা বিষয়ের ওপর তিন মাসের স্বল্পমেয়াদি কোর্স, এক বছরের ডিপ্লোমা, তিন বছরের বি এসসি এবং দুই বছরের এম এসসি করার সুযোগ রয়েছে। চণ্ডীগড়ের অ্যাকাডেমি অব ব্রডকাস্টিং (www.aofb.in/rj_courses.htm)-এ প্রফেশনাল রেডিয়ো জকিং, রেডিয়ো স্ক্রিপ্ট রাইটিং, অডিয়ো প্রোডাকশন-এ সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়। মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেশনস (জার্নালিজম, মাস কমিউনিকেশন, ফিল্ম, টেলিফিল্ম এবং ভিডিয়ো প্রোডাকশনে ডিপ্লোমা কোর্স), পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (www.ftiindia.com)-য় ফিল্ম অ্যান্ড টি ভি ডিরেকশনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা কোর্স পড়ার সুযোগ রয়েছে।
|
|
মীর |
রেডিয়োর গুরুগম্ভীর বেড়াজালটাকে ভেঙে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘরের লোকের মতো কথা বলার ধরনটা এফ এম
রেডিয়োরই অবদান। আর, এটাই রেডিয়োকে সাধারণ মানুষের কাছে এখন এতটাই প্রিয় করে তুলেছে যে, এই প্রজন্মের
অনেক ছেলেমেয়েই ‘রেডিয়ো জকি হব’ এই লক্ষ্য সামনে নিয়েই এগোচ্ছে। একই সঙ্গে শুরুতেই ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যেখানে চাকরি জীবন শুরু করতে পারবে, এটা জেনে অনেকেই এখন এই বিষয়ে আগ্রহী। তবে, এখানে সফল হতে গেলে কম পক্ষে তিনটি ভাষায় একদম সড়গড়, মাইক্রোফোনের সামনে সহজ, সাবলীল এবং ঘরোয়া ভাষায় কথা বলতে পারাটা খুব জরুরি। একটানা ১৭ বছর রেডিয়ো জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অধ্যবসায় জিনিসটার খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এখানে। আর, অডিয়ো-ভিসুয়াল মিডিয়ায় যারা নিউজ ফিল্ডে কাজ করতে চায়, তাদের কখনওই একই মিডিয়ায়, একই সঙ্গে ‘নন-ফিকশনাল’ ক্ষেত্রে কাজ করা উচিত নয় বলে আমার মনে হয়। আমি নিজেও সে কারণেই আর সংবাদ পাঠকের জায়গাটায় নেই। |
|
এ রাজ্যে কলকাতা, যাদবপুর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনের মধ্যেই টি ভি এবং রেডিয়ো জার্নালিজম পড়ানো হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত বিভাগে মাস কমিউনিকেশন এবং ফিল্ম স্টাডিজ পড়তে পারে ছেলেমেয়েরা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন স্টাডিজ-এ
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স আছে। এ ছাড়া, ভবনস কলেজ অব কমিউনিকেশনের সল্টলেক এবং ভবানীপুর শাখায় এই
বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স পড়ায়। এ ছাড়া
বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও টি ভি অ্যাঙ্করিং, রেডিয়ো জকিং-এর কোর্স করার সুযোগ আছে।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এফ এম রেডিয়ো সর্ব অর্থেই রেডিয়োর দুনিয়ায় এক পরিবর্তনের ঝড় আনে। টেলিভিশনের থেকে চোখ ঘুরিয়ে আবার রেডিয়োয় কান পাততে এফ এম রেডিয়োর অবদান অনেকটাই।
দূরদর্শনে বহু বছর ধরে সাংবাদিকতায় যুক্ত এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশন-এর অতিথি-অধ্যাপক স্নেহাশিস শূরের মতে, ‘যে কোনও মিডিয়ার ক্ষেত্রেই ঝরঝরে ভাষায় লিখতে পারা আর পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে জ্ঞান থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে, বিশেষ করে মেয়েদের একটি অংশ এই কোর্স পড়ে, শুধু মাত্র অডিয়ো-ভিসুয়াল মিডিয়ায় যাবে বলে।
এই ক্ষেত্রে কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন। ফিল্ডে ঠিক সময়ে পৌঁছনো, খবর নেওয়া, এডিট করা, ভয়েসওভার এবং শেষে তা সময়ের মধ্যে নিউজ ডেস্ক-এ পৌঁছনো সবটাই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে পারার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। তবে, আমাদের এখানে টেলিভিশন রিপোর্টিংকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে হলে আরও অনেক বেশি সচেতনতার দরকার। কোন ঘটনা, কী ভাবে উপস্থাপন করলে তার সঠিক প্রভাব পড়বে, তা বোঝা খুব প্রয়োজন।’
সব মিলিয়ে অডিয়ো-ভিসুয়াল মিডিয়ার গ্ল্যামার, হেডফোন কানে প্রতি মুহূর্তে রেডিয়ো জকিদের সঙ্গে আমজনতার নিবিড় যোগাযোগ, নতুন প্রজন্মের কাছে মিডিয়া জগতের আকর্ষণ দুর্নিবার করে তুলেছে। |
|
|
|
|
|