ছিনতাই করতে যাওয়ার আগেই ধরা পড়ে গেল ৫ দুষ্কৃতী। জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা মানিক মণ্ডল নামে পেশায় কীর্তনীয়া এক ব্যক্তির বাড়িতে শুক্রবার জড়ো হয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। শনিবার জিয়াগঞ্জ ও ভগবানগোলা থানার পুলিশ এক সঙ্গে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে। রবিবার লালবাগ এসিজেএম আদালতে তাদের হাজির করানো হলে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। সরকারি কৌঁসুলি সঞ্জীব বর্মণ বলেন, “এদিন এসিজেএম আদালতের দায়িত্বে ছিলেন বিচারক সত্যজিৎ মাইতি। আদালতে হাজির করানো হলে তদন্তের স্বার্থে বিচারক ধৃতদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।”
গত শনিবার জিয়াগঞ্জ থানার বাগডহরা পঞ্চায়েতের কালিপুকুর এলাকা থেকে ওই ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে হুগলির পাণ্ডুয়ার বাসিন্দা শেখ সাহাবুদ্দিন, বাগডাঙা-হাবড়ার আরিফুল মণ্ডল ও আশরাফ মণ্ডল, বেদপাড়া মছলন্দপুর-হাবড়ার প্রণয় দে, রাজবল্লভপুর-হাবড়ার প্রদীপ বিশ্বাস। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সকলেই ডাকাতির উদ্দেশ্যে স্থানীয় কীর্তনীয়া মানিক মণ্ডলের বাড়িতে জড়ো হয়। সেই সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় ৫ জন ডাকাত ধরা পড়ে যায়। ধৃতদের কাছ থেকে ২টি দেশি পিস্তল এবং ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে বাড়ির মালিক মানিক মণ্ডল এবং ডাকাত দলের আর এক জন পালিয়ে যায়। পুলিশের এক অফিসার বলেন, “ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পিস্তল থেকে গুলি বের হয়নি বলে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
ধৃতদের জেরা করে অবশ্য পুলিশ জানতে পেরেছে, জিয়াগঞ্জের মানিক মণ্ডল বিভিন্ন জায়গায় কীর্তন গেয়ে বেড়ান। সেই সুবাদে পাণ্ডুয়ার ‘কুখ্যাত ডাকাত’ শেখ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এর পরেই ভগনবানগোলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ডাকাতির পরিকল্পনা করে সাহাবুদ্দিন। সেই মত ঘটনার ১০-১২ দিন আগে মোটারবাইক নিয়ে ভগবানগোলায় গিয়ে ‘ট্রায়াল’ও দেয় তারা। এমনকী ব্যাঙ্ক ডাকাতির পরে সীতেশনগর থেকে ঘাট পেরিয়ে সাগরদিঘি হয়ে পালানোর পথও ঠিক করা ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্কের ওই শাখায় পুলিশের প্রহরা থাকায় পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে তারা।
এর পরে ভগবানগোলা গরুর হাটে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে এবং সেই মতো শুক্রবার রাতে তারা জিয়াগঞ্জের বাড়িতে জড়ো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাহাবুদ্দিন ২০০৭ সালে ডাকাতি করে পাওয়া ২৭০ গ্রাম সোনা লাল্টু নামে একজনের কাছে রাখতে দেয়। এর পরে ওই সোনা বাবদ অর্থ না পেয়ে ওই যুবককে ২০০৯ সালে গুলি করে খুনের চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিনকে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ খুঁজছে। এর পরে সাহাবুদ্দিন গুজরাত চলে যায়। সেখানে অন্য একটি ঘটনায় তার জেল হাজত হয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে সাহাবুদ্দিন নতুন দল তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে বেড়াত। সম্প্রতি ভগবানগোলায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির পরিকল্পনা করে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “ওই ডাকাত দলের গ্রেফতার পুলিশের কাছে বড় সাফল্য।” |