বছরের প্রথম দিন থেকেই আকাশের মুখ ভার। দেখা নেই সূর্যের। জানুয়ারির শুরুতে জাঁকিয়ে শীত তো নেইই। উল্টে দফায় দফায় বৃষ্টি আর ঠান্ডা হাওয়া পণ্ড করেছে সব। রাস্তায় প্যাচপ্যাচে কাদা আর আসময়ের বৃষ্টিতে ভেস্তেছে পিকনিক কিংবা বেড়ানোর পরিকল্পনা।
শুধু পিকনিকই নয়, অসময়ের এই বৃষ্টি আর মেঘলা আবহাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে চাষি থেকে ব্যবসায়ীদেরও। নতুন বছরের সপ্তাহ পেরোলেও এখনও মেঘ কাটেনি আকাশের। স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়েছে ফসলে। মুসকিলে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। প্রতি বছর জানুয়ারির প্রতিটি রবিবারই রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। শুরু হয়ে যায় পিকনিকের হৈ-হুল্লোড়ও। তবে এ বারের ছবিটা একেবারেই আলাদা। আবহাওয়ার এই হেরফেরে বাতিল হয়েছে বেশির ভাগ পিকনিকই। ভিড় হচ্ছে না মায়াপুর, বেথুয়াডহরি বা নবদ্বীপের মতো জায়গাতেও। আর যাঁরা বেড়াতে আসছেন, বৃষ্টির জল-কাদায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদেরও। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের।
হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠণের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “অসময়ের এই বৃষ্টিতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছি।” একই অবস্থা মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরেও। মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক রমেন দাস বলেন, “খারাপ আবহাওয়ায় পর্যটকদের ভিড় অন্যান্য বারের তুলনায় কম। কোনও বারই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছবিটা এরকম থআকে না।”
পর্যটক কম আসায় প্রভাব পড়ছে শীতকালীন ব্যবসায়ও। নদিয়ার চেম্বর অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সংগঠনের সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “পৌষ মাসে সাধারহণত পর্যটকদের উপরেই ভরসা করে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বিশেষত এই নতুন বছরের প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ। এই সময়ে ভাল ব্যবসা হয়। এ বছর অবশ্য আবহাওয়ার কারণে ভিড় কমে গিয়েছে।”
অন্য দিকে, মেঘলা আকাশ আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকদেরও। প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক নিশীথ দে বলেন, “বৃষ্টি খুব বেশি হয়নি। তবে এই মেঘলা আবহাওয়ায় ফসলে ধসা রোগের সংক্রমণ বাড়বে। ক্ষতিকারক পোকার সংখ্যা বাড়বে।” অন্য দিকে, পূর্বস্থলী মহকুমা সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “আম ও লিচুর জন্য এই বৃষ্টি ভাল। যে সব তৈল বীজে এখনও ফুল ধরেনি সেক্ষেত্রেও এই বৃষ্টি লাভ জনক। তবে এই আবহাওয়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য এখন থেকেই আলু বা অন্যান্য সব্জিতে ওষুধ প্রয়োগ করা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “এমনিতেই এ বছর বর্ষা খুব ভালো হওয়ায় কপি ও শীতকালীন সব্জির ফলন খুব ভলো হয়েছে। ফলে পরের দিকে ওই সব্জির ঘাটতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই আবহাওয়ায় পোকার সংক্রমণ থেকে সাবধান হওয়া খুবই জরুরি।” |