শেষ মুহূর্তেও ট্রেন থামাতে লাইন ছেড়ে যাননি গেটম্যান
রাত থেকে বাড়ির দরজা হাট করে খোলা।
শান্তিপুরে গোবিন্দপুর কালীবাড়ির কাছে তাঁর এই বাড়িতে ফেরার পথেই শনিবার রাতে দুর্ঘটনায় মারা যান পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের শান্তিপুর শাখার গেটম্যান পূর্ণেন্দু মণ্ডল (৫৮)। কাজ শেষ করে লাইন ধরেই ফুলিয়া স্টেশনে যাচ্ছিলেন আপ শান্তিপুর লোকাল ধরতে। সেই ট্রেনটিই দাঁড়িয়ে ছিল ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “ওই সময়েই একই লাইনে চলে আসে ডাউন শান্তিপুর লোকালটি। শেষ মুহূর্তে পিছনে ট্রেনটিকে দেখতে পেয়ে হাত তুলে থামানোর চেষ্টাও করেছিলেন ওই গেটম্যান। কিন্তু তা-ও দুর্ঘটনা এড়ানো গেল না। ট্রেন তাঁর উপর দিয়ে চলে যায়।” রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল বলেন, “দুর্ঘটনা রোধ করতে নিজের জীবন দিয়েছেন পূর্ণেন্দুবাবু।” তাঁর কথায়, “আমরা তাঁর পরিবারের পাশে থাকব। তাঁদের জন্য যা যা করা যায়, সবই করা হবে।” ইতিমধ্যেই ওই পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
মৃত গেটম্যান
পূর্ণেন্দু মণ্ডল।
কিন্তু সে সব কথাও এখন কে বলবে পূর্ণেন্দুবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবীকে। সেই রাত থেকেই তিনি ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছেন। ঘরের এক কোণে বিয়ের খাটে শুয়ে রয়েছেন। মাথার কাছে বসে নব্বুই ছুঁইছুঁই মা। তিনিই বরং সান্ত্বনা দিয়েছেন মেয়েকে। গোটা বাড়ি অগোছাল। রান্নাঘরে পড়ে রয়েছে বাসি বাসনপত্র। উনুন চড়েনি রাত থেকে। গ্যাসের উপরে পড়ে রয়েছে চায়ের বাসন। পাশেই ফাঁকা বিস্কুটের কৌটো। বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে জিনিসপত্র। ঘরের ভিতরেও এলোমেলো পড়ে রয়েছে কাপড় জামা। আত্মীয়স্বজন আসছেন অনেকে। কিন্তু কে যাচ্ছেন, কে আসছেন, তার কোনও খবর রাখার মতো অবস্থায় নেই বাড়ির লোকজন। ওই দিন রাত আটটা থেকেই ওই বাড়ি স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে। ওই সময়েই খবর আসে, ফুলিয়া স্টেশনে দুর্ঘটনা হয়েছে। স্টেশনের কাছেই রেলের লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানের কাজ করতেন পূর্ণেন্দুবাবু। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর মজুমদার বলেন, “দুর্ঘটনার ঠিক আগে দেখেছিলাম ওই ব্যক্তিকে লাইনের উপরে। চোখের সামনে মারা গেলেন তিনি।”
পূর্ণেন্দুবাবুর মেয়ে সুপর্ণা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় এমএ-র ছাত্রী। তিনি বলেন, “প্রতিদিনই বাবা বাড়ি ফেরার সময় আমার জন্য কিছু নিয়ে আসতেন। কিন্তু ওই দিন কিছুই জিজ্ঞেসও করেননি। আমারও কিছু বলা হয়নি। ভেবেছিলাম পরের দিন বেশি করে কিছু চেয়ে নেব।” সে সুযোগ যে আর আসবে না, সে কথা জেনেছেন ওই রাতেই। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মাসি মায়া কুণ্ডুর সঙ্গে চলে যান ফুলিয়া স্টেশনে। মায়াদেবী বলেন, “গিয়ে দেখি দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি ধাক্কা লেগেছে। চারপাশে বহু লোক। কিন্তু কেউই জামাইবাবুর খবর দিতে পারছিল না।” শেষে পুলিশ সুপর্ণাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। সুপর্ণা বলেন, “আমাদের স্টেশনে কেউ কিছু বলেননি। বাড়ি এসে জানতে পারলাম বাবা আর নেই।”
তার পর থেকেই গেটম্যানের বাড়ির দরজাটা কেউ আর বন্ধ করেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.