|
|
|
|
রবীন্দ্র উদ্যানে ‘তাসের দেশ’ |
দুঃস্বপ্ন ভুলে এগিয়ে চলার ডাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্যের শেষ দৃশ্যে বাঁধভাঙার গান বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ‘তাসের দেশ’কে মাধ্যম করে জঙ্গলমহলের জীর্ণ-পুরাতন দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ভুলে ‘ভয়হীন এগিয়ে চলা’র ডাক দিল ঝাড়গ্রামের ‘মৃদঙ্গ’।
খুন-সন্ত্রাসের রোজনামচায় গত তিন বছর ধরে জঙ্গলমহলে নিয়মরক্ষার দু’একটি মেলা-পালাপার্বণ ও নাট্যোৎসব হলেও, অধিকাংশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ বারের মতো তাদের বার্ষিক উৎসবের আয়োজন করেছিল ‘মৃদঙ্গ’ নৃত্য সংস্থা। এত দিন পরে শনিবার সন্ধ্যায় মৃদঙ্গের বার্ষিক নৃত্যোৎসব ফের অনুষ্ঠিত হল ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্র-উদ্যানে। ঝাড়গ্রাম পুরসভার শাল-সবুজে ঘেরা এই উদ্যানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত একটি মুক্তমঞ্চ। সেখানেই রীতিমতো প্রেক্ষাগৃহের আদলে অস্থায়ী-মণ্ডপ গড়ে মৃদঙ্গের বার্ষিক উৎসব চলল সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। যা গত ‘তিন বছরের ইতিহাসে’ বিরল বইকি! শীতের রাতে উপস্থিত ছিলেন হাজার খানেক দর্শক-শ্রোতা। অনুষ্ঠান শেষে ‘তাসের দেশ’-এর নৃত্যনির্দেশক তথা মৃদঙ্গের অধ্যক্ষা গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০০৮ সালে শেষ বারের মতো শহরের দেবেন্দ্রমোহন হলে আমাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। জঙ্গলমহলে অশান্তির কারণে গত তিন বছর বার্ষিক অনুষ্ঠান করতে পারিনি। পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় এ বার চার দেওয়ালের পরিবর্তে প্রকৃতির মাঝে অনুষ্ঠান করব স্থির করি। ঝাড়গ্রাম পুরসভা অনুমতি দেওয়ায় সেটা সম্ভব হয়েছে। তবে ঠাণ্ডার জন্য রবীন্দ্র-উদ্যানের মুক্তমঞ্চ-সহ একাংশকে ঘিরে প্রেক্ষাগৃহের আদলে অস্থায়ী-মণ্ডপ করতে হয়েছিল। ‘তাসের দেশ’-এর মাধ্যমে আমরা দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ভুলে ভয়হীন এগিয়ে চলার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
শুরুতে সংস্থার কচিকাঁচাদের নৃত্যনুষ্ঠানের পর রাতে শেষ নিবেদন ছিল বড়দের ‘তাসের দেশ’। “তাসের দেশের বাসিন্দাদের আড়ষ্ট শরীরী বিভঙ্গের মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলের মানুষের গত তিন বছরের শঙ্কা, ভীতি ও জড়তা কথা বলতে চেয়েছি”, বললেন গৌরীদেবী। ‘হরতনি’ মৌমিতা সিংহ, ‘রুইতন’ কুহু দাশগুপ্ত, ‘গোলাম’ সুমনা সরকারদের কথায়, “গত তিন বছর ধরে অশান্তির সময় আমরা যেভাবে ভয়ে ভয়ে থাকতাম, নাচের মধ্যে সেই ‘স্বাভাবিক’ শঙ্কা-জড়তার ভাব আনা হয়েছিল।” রাজপুত্রের ভূমিকায় দেবস্মিতা চক্রবর্তী ও সওদাগরের ভূমিকায় প্রিয়া নন্দীরা জানালেন, শেষদৃশ্যে বাঁধভাঙার গানের (বাঁধ ভেঙে দাও...) সঙ্গে নাচের সময় জঙ্গলমহলের বিগত দিনের সঙ্গে বর্তমান শান্ত-পরিস্থিতির তুল্যমূল্য বিবেচনা করে উচ্ছ্বাসের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। কলকাতার বিশিষ্ট নৃত্য-নির্দেশক
শান্তনু সরকারও তাঁর মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানালেন গৌরীদেবী। |
|
|
|
|
|