সচিন, অবসর নিতে আর বেশি দেরি কোরো না
গোটা অস্ট্রেলিয়ার সচিন সম্পর্কে মুগ্ধতার শরিক এ বার তিনি নন। সিডনির বাড়িতে বসে রোববার রাতে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সেটা ব্যাখ্যাও করলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সি প্রবীণ বলতে এখন ঊননব্বই বছরের আর্থার মরিস আর তিরাশি বছরের তিনি। দু’জনেই ব্র্যাডম্যানের সেই আটচল্লিশের অপরাজেয় দলের শেষ জীবিত দুই সদস্য। তার মধ্যে তিনি নীল হাভির‌্ বয়স আন্দাজে বেশ তীক্ষ্ন। সচিন ও ব্র্যাডম্যান নিয়ে তুলনামূলক আলোচনার সময় এমন ভাবে কথা বলছিলেন যেন জাম্পকাট করে যখন তখন চলে যেতে পারেন ১৯৪৮ সালে। আবার ফিরে আসতে পারেন অবলীলাক্রমে ২০১২-তে...

প্রশ্ন: সিডনি টেস্টে কেউ কেউ বলছিল আপনি মাঠে এসেছিলেন। সত্যি এসেছিলেন?
হার্ভি: গিয়েছিলাম তো প্রথম দু’দিন।

প্র: কেমন লাগল?
হার্ভি: খুব একপেশে লাগল।

প্র: ইন্ডিয়া টিমকে ভাল লাগেনি?
হার্ভি: একদমই না। কতকগুলো বয়স্ক ব্যাটসম্যান নিয়ে গড়া দল। না আছে ভাল বোলার। না মজবুত ব্যাটিং। ব্যাটিং-বোলিং দু’টোতেই ল্যাংচাচ্ছে। পার্থে ওদের কপালে দুর্ভোগ আছে।

প্র: টেস্ট একপেশে বলে ভাল লাগল না?
হার্ভি: ক্রিকেট দেখতেই আসলে এখন আর ভাল লাগে না। খেলাটা এত বেশি ব্যাটসম্যানের দিকে ঝুঁকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপারটাই নিহত। ব্যাটগুলো কী সব হয়েছে এখনকার দিনে! মারলেই বল ছোটে। বাউন্ডারি ছোট করে দেওয়া হচ্ছে। সব নিয়ম বদলাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের সুবিধে মতো।
আমাকে লোকে জিজ্ঞেস করে ব্র্যাডম্যান এখন খেললে সফল হতেন? আমি বলি সফল হতেন মানে কী, উনি ৯৯.৯৪ নিয়ে শেষ করেছিলেন তো। এখন হলে এই সব আধুনিক ব্যাট হাতে শেষ করতেন ১৯৯.৯৪ নিয়ে!

প্র: জীবনের প্রথম সফরেই আপনি ব্র্যাডম্যানকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পেয়েছিলেন। কী ছিল ওঁর মধ্যে যা আর কেউ অতিক্রম করতে পারল না?
হার্ভি: ব্র্যাডম্যানের মতো এত দ্রুত বলের লেংথ বিচার করতে পারার ক্ষমতা আমি কারও মধ্যে দেখিনি। অসম্ভব ভাল ফুটওয়ার্ক ছিল। বলের লাইনে দারুণ যেতেন। আড়াআড়ি মারতেন বলে সবাই বলত আনঅর্থোডক্স। আজও তাই ভাবে। আমার কিন্তু দেখে তাজ্জব লাগত লোকটা যতই তাড়াতাড়ি খেলুক, মাথা নড়ছে না। ব্যালান্সটাও দারুণ।
সারমর্ম ব্যাটিং ব্যাকরণের মধ্য থেকেই উনি নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাকে চ্যালেঞ্জ করে মোটেও নয়। যেটা লোকে মনে করে।

প্র: সচিন আর ব্র্যাডম্যানের খেলার ধরনে সত্যি মিল আছে?
হার্ভি: নিশ্চয়ই আছে। সচিন একই রকম জমাট। বিশ্বের সব প্রান্তে, সব ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে রান করেছে। ওকে আমি দু’নম্বরে রাখতে চাই।

প্র: আপনার ক্রিকেটজীবন এবং অবসরেও এত ব্যাটসম্যান দেখেছেন। হাটন, উইকস, ভিভ, গাওস্কর, গ্রেগ চ্যাপেল, পন্টিং, লারা, সোবার্স। দু’নম্বরে এঁদের হারিয়ে সচিন কী ভাবে? তার ব্যাখ্যা?
হার্ভি: ব্যাখ্যা ব্যাটসম্যানশিপের ক্লাসে। ডন অনেক এগিয়ে থাকা এক নম্বর। কিন্তু আমি নিশ্চিত সচিন দুই। কোনও সংশয় নেই।

প্র: আপনার দেখা সেরা ফাস্ট বোলার কে? সম্প্রতি নির্বাচিত সিডনি মাঠের সর্বকালের সেরা অস্ট্রেলীয় একাদশে গ্লেন ম্যাকগ্রা হারিয়ে দিয়েছেন ডেনিস লিলিকে। আপনি একমত?
হার্ভি: একটুও না। গ্লেন ম্যাকগ্রা অফস্টাম্প ও তার বাইরে সারাক্ষণ রেখে ওয়েট করত কখন ব্যাটসম্যান ভুল করবে আর ওকে উইকেটটা দেবে। আমি যার কথা বলব সে ব্যাটসম্যানের ভুলের জন্য ওয়েট করত না। এমনিতেই ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিত। তার নাম রে লিন্ডওয়াল।

প্র: লিন্ডওয়ালই আপনার দেখা সেরা?
হার্ভি: মিডিয়াম পেসে সেরা ছিল আলেক বেডসার। ফাস্ট বোলিংয়ে লিন্ডওয়াল।

প্র: সচিনের শততম সেঞ্চুরি নিয়ে সারা পৃথিবীতে মাতামাতি চলছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
হার্ভি: আমার প্রতিক্রিয়া হল, হওয়ার হলে অ্যাডিলেডে হবে।

প্র: কেন?
হার্ভি: পার্থ উইকেট যদি নিজের চেহারায় থাকে, সচিনের এখনকার যা অবস্থা তাতে সেঞ্চুরি সমস্যা হবে।

প্র: তাই মনে হচ্ছে?
হার্ভি: হ্যাঁ।

প্র: কিন্তু সচিনের সিডনির ৮০ দেখে তো অস্ট্রেলীয় মিডিয়া এবং বিশেষজ্ঞরা ফের উচ্ছ্বসিত।
হার্ভি: আমি ওটা দেখিনি। কিন্তু ফার্স্ট ইনিংসের ৪১ আর মেলবোর্নের দু’টো দেখেছি। সচিনের খেলা খারাপ হতে শুরু করেছে। ওর ব্যাট-প্যাডের মাঝখানে ইদানীং গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। পায়ের মুভমেন্ট স্লো হচ্ছে। ঊনচল্লিশ তো হয়ে গেল। খুব স্বাভাবিক।

প্র: কিন্তু ব্র্যাডম্যান নিজেও তো ঊনচল্লিশ বছর অবধি খেলেছেন। আপনি তো শেষ সফরে ওঁর সতীর্থও ছিলেন।
হার্ভি: হ্যাঁ। আর উনি নিজেও তখন স্বীকার করতেন যে, তিরিশের দশকের মতো ফর্মে আর নেই। খেলা খারাপ হতে শুরু করেছে। তবু ব্র্যাডম্যান তো। তারই মধ্যে তিনটে সেঞ্চুরি করে দিয়েছিলেন। আমার তখন মাত্র কুড়ি বছর। তবু সব মনে আছে।

প্র: এমন কোনও টিপস দিয়েছিলেন যা এত বছর পরেও আপনার মনে আছে?
হার্ভি: বলেছিলেন, বলটা জমি থেকে যদি না তোলো তা হলে তোমায় কেউ আউট করতে পারবে না। গোল্ডেন অ্যাডভাইস। আজ যখন টিভি দেখি যে, ব্যাটসম্যানরা তুলে তুলে মারছে তখন অসহ্য লাগে। আর ডনের পরামর্শটা মনে পড়ে যায়!

প্র: টেস্টের এই যে দু’দিন খেলা দেখলেন কার ব্যাটিং সবচেয়ে ভাল লাগল?
হার্ভি: মাইকেল ক্লার্ক। আর সচিন। যদি দু’টো টিমের ব্যাটিং মান ধরা হয়। সচিনের অরিজিনাল ফর্ম নয়।

প্র: কেন পন্টিং? ভাল লাগেনি?
হার্ভি: ধুর, সেঞ্চুরি করেছে বলে কি ভাল বলতে হবে নাকি? পন্টিংয়ের খেলাটা গ্যাছে। আমি বলব ছ’মাস আগেই ওর অবসরে চলে যাওয়া উচিত ছিল। এখন স্রেফ টাকা রোজগারের জন্য পড়ে রয়েছে।

প্র: সচিন কিন্তু বল তুলে খেলছেন। আপারকাট মারছেন চলতি সফরে।
হার্ভি: সচিনের স্কিল লেভেলটা অনেক বেশি।

প্র: ঠিক বুঝতে পারছি না। এক বার বলছেন সচিনের খেলা পড়ে গ্যাছে। আবার প্রশংসা করছেন।
হার্ভি: প্রশংসা করছি ও এখনও অন্যদের চেয়ে বেটার বলে। তা বলে নিজের পুরনো খেলা থেকে পড়েছে। চার বছর আগে ওকে আরও ভাল ব্যাট করতে দেখেছি। এখন সিমিং পিচে ভেতরে আসা বল নিয়মিত সচিনকে সমস্যায় ফেলছে। উপমহাদেশে এখনও ম্যানেজ করে দিতে পারবে। কিন্তু দ্রুতগামী উইকেটে সমস্যায় পড়বে।

প্র: আপনার মতে সচিনের কী করণীয়?
হার্ভি: অবসর নেওয়ার কথা ভাবা উচিত। ঠাঁট থাকতে থাকতে চলে যাওয়া উচিত। মনে রাখা উচিত, আমি নিজেকে নিজে অসম্মান করতে পারি না। আমি যে ডনের ঠিক পরেই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.