বাংলাদেশের সহিত ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সুপবন বহিতেছে। তিস্তা চুক্তির ব্যর্থতা দূরে সরাইয়া রাখিয়া উভয় দেশই ভবিষ্যমুখী। বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্র’-এর মর্যাদা দিবার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম কেন্দ্রের এই অভিপ্রায়ের কথা জানাইয়াও দিয়াছেন। একই সঙ্গে রেল মন্ত্রক ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা হইতে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেল-সংযোগ পুনরুজ্জীবিত করার নীতিগত সিদ্ধান্তও লইয়াছে। ভারত সরকারের বক্তব্য, ইহার ফলে দুই দেশেরই ব্যবসায়-বাণিজ্যে গতি সঞ্চারিত হইবে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রসারের উদ্যোগ স্বাগত।
বাংলাদেশ কাঁচামালে সমৃদ্ধ। বিশেষত সে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ভাণ্ডার অতিশয় ঋদ্ধ। কিন্তু তাহার নিষ্কাশন ও পরিশোধনের প্রযুক্তি এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পুঁজি তাহার অনায়ত্ত। এ ব্যাপারে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের লগ্নি সহায়ক হইতে পারে। আবার আখাউড়া-আগরতলা রেল-সংযোগ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের সহিত বাংলাদেশের পণ্য পরিবহণ ও বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিতে পারে। ঢাকার তরফে এই রেলপথের দাবি বহু দিনের। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের মর্যাদা দিলে সেখান হইতে ভারতে পণ্য-আমদানিও কার্যত নিঃশুল্ক হইয়া উঠিবে। পরিণামে বাংলাদেশি পণ্য অনেক সহজে ভারতের বাজারে প্রবেশ করিতে পারিবে। ইহাতে যদি বস্ত্র শিল্পের ন্যায় কিছু ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতিস্বীকারও করিতে হয়, বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উচ্ছ্বাস দেখা দিবে, তাহার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বাংলাদেশের দাবি, মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে আরও বেশি বার চালানো, তাহার যাতায়াতের সময় হ্রাস, সীমান্তে শুল্ক দফতরের বাড়তি কাউন্টার খুলিয়া অকারণ বিলম্ব ও হয়রানি রদ করা এবং পণ্য-পরিবহণের জন্য একটি কন্টেনার সার্ভিস চালু করা। সঙ্গত দাবি। ভারত সরকার যে জরুরি ভিত্তিতে দাবিগুলি মিটাইতে মনস্থ করিয়াছে, ইহা অভিপ্রেত। বস্তুত তিস্তার জলের ভাগ লইয়া পশ্চিমবঙ্গের সহিত মনান্তর সত্ত্বেও বাংলাদেশের সহিত এক্ষণে ভারতের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ও সুপ্রতিবেশীসুলভ যে, এত দিন কেন রেল-সংযোগ বা কন্টেনার সার্ভিসের দাবির মীমাংসা হয় নাই, তাহাই কিছুটা আশ্চর্যের। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁহার ‘পুবের দিকে তাকাইবার’ নীতির রূপায়ণ নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশকে দিয়াই শুরু করিতে আগ্রহী। সেই অভিপ্রায়কে সম্মান দিতেই, এবং বাংলাদেশ মারফত মূল ভারতীয় ভূখণ্ড হইতে উত্তর-পূর্বে পণ্য পরিবহণের স্বর্ণ-সম্ভাবনা বাস্তবায়নের আশায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা ঢাকায় তাঁহার সফরসঙ্গী হইয়াছিলেন। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এবং রেল মন্ত্রক যে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং প্রতিবেশীর উষ্ণ সমাদর ও বন্ধুত্বকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়া নির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে লইয়াছে, অদূর ভবিষ্যতেই তাহার কূটনৈতিক সুফলও ফলিতে পারে। সুলক্ষণ। |