ভিটে হারানোর যন্ত্রণার ছবিই হাতিয়ার দম্পতির
যে কেড়েছে বাস্তুভিটে, সেই কেড়েছে ভয়।
শীতেও মন খারাপ করা বিবর্ণ আকাশ। মাঝেমধ্যেই জলকাদা। এ সব অগ্রাহ্য করে উজানি অসমের এক শিল্পী দম্পতি চষে ফেলছেন উত্তর কলকাতা। তাঁদের সম্বল প্রায় ৪৫ বর্গফুটের এক ক্যানভাস। বিশাল সেই ক্যানভাসে ধ্বংস আর মৃত্যুর ছবি। আগ্রহী হয়ে যাঁরা সেই ছবি দেখতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, শিল্পী দম্পতি তাঁদের অনুরোধ করছেন ক্যানভাসে একটা সই দিতে।
কিন্তু ব্যাপারটা কী? শিল্পী দম্পতি সুজিত বরুয়া ও শিখাস্মিতা বরুয়া গৌরীবাড়ি এলাকায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে জানালেন, বিধ্বংসী বন্যায়, ভূমিক্ষয়ে ফি বছরই শিবসাগর, ধেমাজি, মাজুলিতে ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। নদনদীর ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধ গ্রাম, চাষের খেত, রাস্তাঘাট। কিন্তু লোহিতপাড়ের মানুষদের সর্বস্ব হারানোর যন্ত্রণা জানতেই পারেন না অবশিষ্ট ভারতবাসী। বন্যা জাতীয় সমস্যা। তাতে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের সংস্থান আছে। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে ছয় দশক পরেও অসমের ভূমিক্ষয়ের জন্য কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প নেই। আর তাই অসমের এই দুঃখকে দেশের কাছে তুলে ধরতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা। সঙ্গে মাইক নেই, অর্থবল নেই। হাতিয়ার শুধু রং-তুলি আর একটা ক্যানভাস!
নিজেদের আঁকা ছবির সামনে বড়ুয়া দম্পতি। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
ধেমাজি, লখিমপুরের বড় বাঁধ নিয়ে অসম যখন উত্তাল, তখনই প্রচার ও যাবতীয় হইচইয়ের আড়ালে সুজিত-শিখাস্মিতা কলকাতার পথে মৃত্যু ও ধ্বংসের ছবি এঁকে পথচারীদের নজর কাড়ছেন। কেউ ছবির টানে কাছে এলে তাঁকে বোঝানো হচ্ছে, কী চলছে অসমে। যদি সমব্যথী হন, তবে মাত্র একটি সই চাইছেন তাঁরা।
ওই শিল্পী দম্পতির নিজের বাড়ি ছিল শিবসাগরের আফোলা গ্রামে। ‘ছিল’ কারণ, এখন আর নেই। ব্রহ্মপুত্র গিলে ফেলেছে সেই ভিটে। গ্রামের মানুষ জমি, ভিটে হারিয়ে নিঃস্ব। কিন্তু, কেন্দ্রের তরফে ভূমিক্ষয় নিয়ে কোনও পুনর্বাসন প্রকল্প না থাকায়, সাহায্য জোটে না। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, নববর্ষে, হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন বটে, কিন্তু সেই অর্থ বা সাহায্য কতদিনে তৃণমূল স্তরে এসে পৌঁছবে জানা নেই। আর সেই অসহায়তাকেই ৪৫ বর্গফুট ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন সুজিত ও শিখাস্মিতা। ক্যানভাসে নীলের পটভূমিতে কথা বলছে বানভাসি গ্রাম, নিরাশ্রয় মানুষের কঙ্কালসার দেহ। সুজিতের কথায়, গাই নদীর বন্যা যখন ধেমাজি ভাসাল, মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের জন্য ১ লক্ষ ও বন্যায় ঘরছাড়াদের জন্য ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ফি বছরের বন্যা রুখতে পাকাপাকি ব্যবস্থা নিতেই হবে।
কলকাতায় আসার আগে দম্পতি বেঙ্গালুরুর জাতীয় যুব উৎসবে যোগ দিতে যান। সেখানে মানুষের কাছে উত্তর-পূর্বের কাহিনি শুনিয়ে এসেছেন। এখন কলকাতায়। পরবর্তী গন্তব্য ভিলাই। গোটা দেশের মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে, ক্যানভাসটি রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের কাছে পাঠাতে চান শিল্পী দম্পতি। তাতে যদি দিল্লির ঘুম ভাঙে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.