‘এক্সপ্রেসওয়ে’ যেন হার মানাচ্ছে গ্রামের মেঠো পথকেও। আর সেই ‘মেঠো’ পথ দিয়েই রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রোজ যাতায়াত করছে হাজার হাজার গাড়ি।
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের খানাখন্দে চাকা পড়ে গাড়ি খারাপ হওয়াটাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। গর্ত এড়াতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে হামেশাই। এমনকী, সেই ‘মেঠো’ পথে গাড়ির চাকার ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। এলাকাবাসীরা জানান, দুর্ঘটনা না-ঘটাই এখন ব্যতিক্রম বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে।
যশোহর রোড ধরে এক্সপ্রেসওয়েতে ঢুকে দুর্গানগর সেতুর কাছে দু’দিকে রাস্তা কার্যত নেই বললেই চলে। এলাকায় প্রায় দু’শো মিটার রাস্তার দু’দিকেই বড় বড় খানাখন্দ। রাস্তার বদলে লাল মাটির উপর দিয়ে গাড়ি গেলেই উঠছে ধুলোর ঝড়। ওই পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী, গাড়িচালক মতিলাল শর্মা বলেন, ‘‘এত বেশি ধুলো ওড়ে যে, চোখ খুলে গাড়ি চালানোটাই কঠিন ব্যাপার।’’
শুধু দুর্গানগর সেতুর কাছেই নয়, আর একটু এগিয়ে রামকৃষ্ণপল্লি ছাড়িয়ে নিরঞ্জন সেন নগরের কাছে রেলের সাবওয়ের নীচের রাস্তাতেও বড় বড় গতর্র্। আলো কম থাকায় ভুলবশত ওই সব গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল হওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। রাস্তার বেশির ভাগ অংশেই আলো না-থাকায় রাতে এই পথে গাড়ি চালানো আরও বিপজ্জনক। |
এরও নাম ‘এক্সপ্রেসওয়ে’! ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার। তার মধ্যে যশোহর রোড থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পুরো অংশই প্রায় গর্তে ভরা। উত্তরপাড়া থেকে গাড়ি চালিয়ে ওই রাস্তা ধরে সল্টলেকে সেক্টর ফাইভের অফিসে আসেন অনির্বাণ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়েতে যেখানে গাড়ির স্পিডোমিটার ১০০ ছুঁইছুঁই হওয়া উচিত, সেখানে এই রাস্তায় ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানোই যায় না। নামেই এক্সপ্রেসওয়ে!’’
শুধু গাড়ির চালকেরাই নন, এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে অভিযোগ উগরে দিলেন রাস্তার ধারের দোকানদার থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও। মাঠকল এলাকায় রাস্তার ধারে চায়ের দোকান চালান লক্ষ্মী দাস। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘দোকানের সামনে রাস্তায় বড় বড় গর্ত। কিছু দিন আগে দুপুরে একটা ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের দোকানে এসে ধাক্কা মারে। তখন দোকান বন্ধ ছিল। খোলা থাকলে তো বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত!’’
রাস্তার কিছু কিছু বড় গর্তে আবার বালি ফেলে কিছুটা তাপ্পি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। কিন্তু তাতে উল্টে বিপত্তি বেড়েছে। গর্তে গাড়ির চাকা পড়লে বালিতে পিছলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। রাস্তার ধারে যত্রতত্র ডাঁই করা নির্মীয়মাণ আবাসনের ইট, বালি, পাথর। বারবার দুর্ঘটনার জেরে দু’ধারের গার্ডরেলগুলো এখন অনেক জায়গাতেই ভাঙা। এই রাস্তা আগে পিডব্লিউডি রক্ষণাবেক্ষণ করলেও এখন অবশ্য তারা দায়িত্বে নেই। পিডব্লিউডি-র বারাসত হাইওয়ে ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ আগে আমরা করতাম। এখন দায়িত্বে আছে জাতীয় সড়ক সংস্থা।” জাতীয় সড়ক সংস্থার কলকাতা বিভাগের কর্মকর্তা অনিল দীক্ষিত অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাস্তা মেরামতির জন্য ১৪ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। টেন্ডার ডেকে এজেন্সি নির্বাচনের কাজও হয়ে গিয়েছে। মাস দেড়েকের মধ্যেই মেরামতি শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।’’ |