হাজার দুই অনাবাসী ভারতীয়ের উপস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ কবুল করলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণে আরও কমবে বৃদ্ধির হার। গত কালই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, চলতি আর্থিক বছরে এই হার ৭.৫ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী জানালেন, গত বছর ৮.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি ঘটলেও এ বছর তা ৭-এ নেমে আসবে। তবে এর মধ্যেও অনাবাসীদের কাছে দেশের অর্থনীতির একটা উজ্জ্বল চিত্রই এ দিন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, মার্চের শেষ নাগাদ মূল্যবৃদ্ধির হার ৬-৭ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা।
এখানে দশম প্রবাসী ভারতীয় দিবসের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ভারতের অর্থনীতির ভিত খুবই মজবুত। দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াও সুদৃঢ়। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেশের সঞ্চয়-হার জাতীয় উৎপাদনের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। ফলে চলতি সঙ্কটের মোকাবিলা করে অদূর ভবিষ্যতেই ছন্দে ফিরবে ভারত। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯-১০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে কয়েক বছরের মধ্যেই।
ভারতীয় অর্থনীতির শক্তির দিকগুলি ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি, অনাবাসী ভারতীয়দের প্রতি তাঁর সরকার
কতটা দায়বদ্ধ, সে কথাও আজ বিশেষ ভাবে তুলে ধরেন তিনি। অনাবাসীদের জন্য ঘোষণা করেন বিশেষ বিমা ও পেনশন প্রকল্প। তবে অনাবাসীদেরও যে ভারতের দ্রুত উন্নতির জন্য অনেক কিছু করার আছে, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। |
একই সম্মেলন মঞ্চে প্রণববাবুও বলেন, “বিনিয়োগ ও শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে অনাবাসীদের বিপুল ক্ষমতাকে এখনও পুরোপুরি কাজে লাগায়নি ভারত।” চিন বিপুল বিনিয়োগ পায় অনাবাসীদের কাছ থেকে। ভারতেও অনাবাসীদের লগ্নি অনেকটাই বাড়ানো ও তার ক্ষেত্র প্রসারিত করার আহ্বান জানান প্রণববাবু। সেই সঙ্গে এ কথাও বলেন যে, “শুধু অর্থ নয়, অনাবাসীদের কাছ থেকে আরও সময়, ভাবনা ও উদ্যোগও আশা করে এই দেশ।”
বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সঙ্কট ও অন্যান্য কারণে বিদেশে
যে ভারতীয়দের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আজ সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গও তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। আর্থিক দুর্দশায় পড়ে সম্প্রতি অনেক উদারপন্থী দেশও
এখন বেশ খানিকটা রক্ষণাত্মক হয়ে উঠেছে নিজেদের নাগরিকদের সম্পর্কে। ফলে এখন অনাবাসী ভারতীয়দের কাজের সুযোগ কমছে সেখানে। অনেক ক্ষেত্রে
সামাজিক অসহিষ্ণুতা ও বিরোধিতার মুখেও পড়তে হচ্ছে ভারতীয়-সহ ভিন্দেশিদের।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এশিয়া ও উপসাগরীয় এলাকার রাজনৈতিক অস্থিরতা। গত বছর শুধু লিবিয়া থেকেই ১৬ হাজারের বেশি ভারতীয়কে বিমানে ও জাহাজে দেশে ফেরাতে হয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও মিশর ও ইয়েমেনের ক্ষেত্রেও একই দায়িত্ব পালন করেছে ইউপিএ সরকার। শুধু পশ্চিম এশিয়া ও উপসাগরীয় এলাকাতেই রয়েছেন ৬০ লক্ষের বেশি ভারতীয়। তাঁদের ব্যাপারে সরকার নিয়ত সজাগ রয়েছে বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “সঙ্কটের পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের দেশে ফেরানো, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে সরকারের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করতে ক্যাবিনেট সচিবের অধীনে একটি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি গড়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকও এই বিষয়ে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে।”
বিমা বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি আসার পথ আপাতত খুলতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে অনাবাসীদের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দেশের অর্থনীতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে
মনমোহন-প্রণবরা আজ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তা হল, দেশের অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরাতে অনাবাসীদের
বিনিয়োগ ও উদ্যোগের উপরে অনেকটাই ভরসা রাখছে দিল্লি। |