নিজস্ব সংবাদদাতা • নলহাটি |
অবরোধ তোলা নিয়ে নলহাটিতে ক্রাশার মালিক ও শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করল। যদিও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহাত আব্বাস বলেন, “মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মারপিট করার অভিযোগ রয়েছে। দু’পক্ষের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। অভিযুক্তদের ধরার জন্য পুলিশকর্মীরা তল্লাশি চালিয়েছে। বাড়িতে তাদের পাওয়া যায়নি।”
নলহাটির পাথরখাদান এলাকায় পাথরকুচি তোলার জন্য ট্রাক ঢুকতে শ্রমিকদের একাংশ বাধা দিচ্ছে- এই অভিযোগে শনিবার সকাল ১০টা থেকে নলহাটি বাসস্ট্যান্ডে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়ক ক্রাশার মালিকদের একাংশ অবরোধ করেন। তাঁদের সঙ্গে কয়েক জন ট্রাককর্মীও ছিলেন। ঘণ্টা দু’য়েক পরে শ্রমিকদের একাংশ অবরোধকারীদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঠ দিয়ে মারধর করা ও ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ তুলেছেন। মালিক পক্ষের অভিযোগ, তাঁদের ৬ জন জখম হয়েছেন। এরপর অবরোধ উঠে যায়।
নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি ক্রাশারে ট্রাকে পাথরকুচি তোলার জন্য শ্রমিকদের বদলে মালিক পক্ষ জেসিপি মেশিন ব্যবহার করছেন। এই অভিযোগ তুলে গত কয়েক বছর ধরেই দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলছে। বুধবার থেকে পাথর শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় নলহাটির কোঠাতলায় শ্রমিকদের একাংশ মালবাহী গাড়ি আটকানো শুরু করায় তা চরম আকার নেয়। মালিকপক্ষের একাংশকে নিয়ে শনিবার নলহাটি বাসস্ট্যান্ডে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন মালিকপক্ষের নেতা আনন্দ যাদব। আনন্দবাবু ও নলহাটি থানা ট্রাক মালিক সমিতির সম্পাদক অনিল সিংহের অভিযোগ, “আমরা অবরোধ শুরু করেছি শুনে শ্রমিকদের একাংশ কোঠাতলা থেকে এসে আমাদের লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। তারপরে কাঠ নিয়ে আমাদের মারধর করে। পুলিশের সামনেই এসব ঘটে। পুলিশকর্মীরা নিষ্ক্রিয় ছিল।” তাঁদের অভিযোগ, মালিক পক্ষের ৫ জন ও একজন ট্রাক চালক জখম হন। তাঁদের প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করানো হয়। আনন্দবাবু বলেন, “শ্রমিকরা পাথর বোঝাই করতে আসা গাড়ির পথ আটকে অন্যায় কাজ করছেন। তাঁদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে পাথর শিল্পাঞ্চলে গাড়ি আটকানো ওদের বন্ধ করতে হবে।”
শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে টিইউসিসি নেতা দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের শ্রমিকরা মারধর করেনি। মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।” তবে মালিক পক্ষের প্রস্তাব তাঁরা মানতে নারাজ। দীপকবাবু বলেন, “শ্রমিকরা নায্য দাবিতে ট্রাক আটকাচ্ছেন। মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ট্রাকে পাথরকুচি তোলার কাজে নিয়োগ করলেই সমস্যা মিটে যাবে।” উভয়পক্ষেরই অভিযোগ, “পুলিশ ও প্রশাসন এই সমস্যা মেটাতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “রামপুরহাটের মহকুমাশাসককে বলেছি উভয় পক্ষকে ডেকে দ্রুত আলোচনায় বসুন। আশাকরি শীঘ্রই এই সমস্যা মিটে যাবে।” |