নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বদলির নির্দেশ আটকাতে চাকরি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের কয়েক জন চিকিৎসক। এখনও পর্যন্ত দু’জন মাত্র চিকিৎসকের বদলির নির্দেশ এসেছে। তবে আরও কয়েক জনকে বদলি করা হবে বলে কানাকানি চলছে। আর তাতেই চাকরি ছাড়ার হুমকিকে অস্ত্র করে পাল্টা ‘চাল’ দিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে ভোগা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই সেই ‘চালে’ খানিকটা ‘বিমূঢ়’। বদলির নির্দেশ ফেরাতে স্বাস্থ্যভবনে তাঁরাও তদ্বির শুরু করেছেন।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতির বক্তব্য, “বদলির নির্দেশ এলে অনেকেই চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নেবেন বলে শুনছি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, যাতে শূন্যপদে নতুন চিকিৎসক পাঠিয়ে তবেই বদলি করা হয়। না হলে হাসপাতালে খুবই সমস্যা হবে।”
অথচ, বদলির নির্দেশ হচ্ছে তাঁদেরই, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছেন এখানে। ২০০৪ সালে মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার আগে সেই মেদিনীপুর সদর হাসাপাতালের আমল থেকে রয়েছেন কয়েক জন। অভিযোগ, আগে কয়েক বার বদলির নির্দেশ এলেও তাঁরা তা আটকেছেন ‘প্রভাব খাটিয়ে’। তাঁদের একই জায়গায় রয়ে যাওয়ার ইচ্ছের পিছনে রোগীকল্যাণের চিন্তার চেয়ে ‘ব্যবসা-বুদ্ধি’ই বড় বলেও অভিযোগ। মেডিক্যালের আউটডোরে দেখাতে এসে বা ভর্তি থাকা অবস্থায় রোগীরা এই সব ডাক্তারবাবুর অনেকেরই ততটা দেখা পান না, যতটা তাঁদের নিয়মিত দেখা যায় শহরেরই বেসরকারি নার্সিংহোম বা ক্লিনিকে। হাসপাতালে রোগী দেখলেও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের প্যাথলজি সেন্টারে পাঠানোর ব্যাপারেও বিশেষ ‘সচেতন’ এই সব ডাক্তারবাবুরা। বদলি হলে এই ‘কারবার’ বন্ধ হবে বুঝেই ওই ডাক্তারবাবুরা হুমকির পাল্টা চাল চেলেছেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ। ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে আগের আমলের শাসক-শিবিরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ফলে ধরাধরি করেই এত কাল বদলি আটকেছেন। পালাবদলের পরে সেই ‘প্রভাব’ খাটানোর সুযোগ কমেছে বলেই ‘হুমকি’র পথ ধরেছেন বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য।
এখনও পর্যন্ত যে দু’জনের বদলির নির্দেশ এসেছে তাঁদের অন্যতম জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসক সীতারাম পাল। তাঁর ক্ষেত্রে বদলি আটকাতে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যভবনে আবেদনও জানিয়েছেন। অধ্যক্ষ বলেন, “ওঁর আর মাত্র ৮ মাস চাকরি রয়েছে। তাই ওঁর বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছি।” বদলির নির্দেশ হয়েছে শল্য-চিকিৎসক দেবাশিস মজুমদারেরও। সীতারামবাবুুর মতো দীর্ঘ দিন ধরে মেদিনীপুরেই থেকে যাওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা কমবেশি ১৫। যাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই আবার বামফ্রন্ট-ঘনিষ্ঠ ‘অ্যাসোসিয়েশন অব্ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর সদস্য। এই সংগঠনের আরও কয়েক জন নেতৃস্থানীয় চিকিৎসকও বদলি-র নির্দেশ আসবে ধরে নিয়ে আগেভাগেই চাকরি ছাড়ার ‘হুমকি’ দিতে শুরু করেছেন। এই নেতৃস্থানীয়দের কেউ কেউ এমনকী মেডিক্যালে সরঞ্জাম কেনাকাটা থেকে শুরু করে নির্মাণ-কাজ নিয়েও এত কাল নিয়মিত ‘নাক গলিয়ে’ছেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ওই চিকিৎসক সংগঠনের মেদিনীপুর মেডিক্যাল ইউনিটের সভাপতি আদিত্যপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ মানছেন না। তাঁর যুক্তি, “অনেকের বয়স হয়ে গিয়েছে। বদলি হলে পারিবারিক সমস্যাও হতে পারে। তাই কেউ কেউ স্বেচ্ছাবসরের কথা ভাবছেন।”
মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ চিন্তায়, কেননা এখানে অনুমোদিত ৭৬টি চিকিৎসক-পদের ২৫টিই এই মুহূর্তে শূন্য। অনেক চিকিৎসক আবার বাইরে থেকে এসে সপ্তাহে দু’-আড়াই দিন থেকেই চলে যান। এই অবস্থায় আরও কয়েক জন চিকিৎসক অবসর নিয়ে নিলে পরিষেবা নিয়ে বিপদ বাড়বে বলেই আশঙ্কা। অধ্যক্ষের কথায়, “আমাদের কলেজে এখনও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ানো শুরু হয়নি। ফলে জুনিয়র ডাক্তারও কম। তাই নতুন চিকিৎসক না পাঠানো পর্যন্ত চিকিৎসকদের বদলি না করার আবেদন জানিয়েছি।” |