ট্যাঙ্কার ভর্তি ছিল অতি-দাহ্য তরলে। বুধবার রাতে নাকাশিপাড়া থানার ভেড়ামারা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে সই ট্যাঙ্কারের সঙ্গে একটি লরির ধাক্কায় মারা গেলেন ওই লরির চালক। লরির মধ্যেই জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিচয় পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “এক জনের মৃত্যু হয়েছে ওই অগ্নিকাণ্ডে। তাঁর দেহটি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গাড়ি দু’টিকে দেখে মনে হচ্ছে, দু’টিই খুব জোরে আসছিল।” তাঁর কথায়, “ঘটনার সময় তেমন বাতাস না থাকায় আগুন সে ভাবে ছড়ায়নি। কিন্তু তা না হলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত।”
বৃহস্পতিবারও এলাকায় আতঙ্কের ছাপ ছিল। বুধবার রাতে এই ঘটনার পরে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দমকলের ছ’টি ইঞ্জিনের ৩০ জন কর্মী মিলে লড়াই করে আগুন আয়ত্তে আনেন। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আহুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ঘটনার প্রায় ৪৫ মিনিট পরে দমকল আসায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। |
ভয়াবহ আগুন নেভাতে হিমসিম। বুধবার রাতে নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় জাতীয় সড়কের উপরে ট্যাঙ্কার ও
লরির মুখোমুখি ধাক্কায় আগুন লেগে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় লরির চালকের। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য |
আগুনের শিখা প্রায় চার তলা বাড়ির সমান উঁচু হয়ে জ্বলতে থাকে। এই এলাকাটি অত্যন্ত জনবহূল। দাহ্য পদার্থ রয়েছে সব দিকেই। তাই বড় বিপদের আশঙ্কা করছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাই তখন তাঁরাই প্রাথমিক ভাবে জল আর বালি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু প্রচণ্ড তাতের সামনে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ কৃষ্ণনগর থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কিন্তু পরিস্থিতি তখন মারাত্মক ছিল। তাই ওই দু’টি ইঞ্জিনের সাহায্যে আগুন আয়ত্তে আনা যাচ্ছিল না। দমকল কর্মীরাও তা আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন। আরও দমকলের ইঞ্জিন তখন ডেকে পাঠানো হয়। শান্তিপুর, রানাঘাট ও নবদ্বীপ থেকে সেই ইঞ্জিনগুলো আসে। বহরমপুর থেকেও আনা হয়েছিল একটি ইঞ্জিন। তবে সেটি আসার আগেই আগুন নিভে যায়।
কৃষ্ণনগর দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “কৃষ্ণনগর থেকে দূরত্বের কারণেই আমাদের পৌঁছতে সময় লাগে। তা ছাড়া প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে গাড়ি জোরেও চালানো যাচ্ছিল না।” তিনি বলেন, “ওই ট্যাঙ্কারে অতি দাহ্য তরল ছিল। ফলে আগুন খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের কর্মীরা শেষ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের চেষ্টাতেই আগুন নিভেছে।”
এই দিনও সকালে এলাকায় পোড়া লরি দু’টিকে দেখে মনে হচ্ছিল, দু’টি লোহার খাঁচা। চারদিকে তীব্র গন্ধ। আগুন চলে গিয়েছিল বিশ্বজিৎ সাহার বাড়ির উঠোন পর্যন্ত। তিনি বলেন, “পৌনে বারোটা নাগাদ হঠাৎ খুব জোরে শব্দ হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি দু’টো গাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে। তারপরেই দেখি বাড়ির দিকে আগুন ছুটে আসছে। প্রাণ ভয়ে আমরা দূরে পালিয়ে যাই। সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। আগুনের এত তাপ ছিল যে কাছে ঘেঁসা যাচ্ছিল না।” ঘটনাস্থলে তখন ছুটে এসেছেন আশপাশের বহু মানুষ। তাঁরা নিজেদের মতো করে আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা চপল বিশ্বাস বলেন, “যে ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ল, তাতে আমরা লরি চালককে বার করে আনতে পারলাম না। চোখের সামনে তিনি মারা গেলেন। আশপাশে আরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। কোনও ভাবে তা এড়ানো গিয়েছে।” |