ছাত্র রাজনীতিতে বহিরাগত রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপ কমলেই কলেজগুলিতে অশান্তি বন্ধ হবে। ছাত্র থেকে কলেজের অধ্যক্ষ, এমনকী খোদ রাজনৈতিক দলের নেতারাও মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি সীমাবদ্ধ থাকুক সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, বহিরাগতদের বেশিরভাগই কলেজে আসে পেশি শক্তি দেখাতে। এটা বন্ধ করতে প্রথম দরকার রাজনৈতিক দলগুলির সচেতনতা। সেই সঙ্গে প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষকেও কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
সামনের ১৭ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের কলেজগুলিতে ভোট। শান্তিপূর্ণ ভাবে সেই ভোট সম্পন্ন করতে শুক্রবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রসঙ্গই উঠবে। জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, “কলেজ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেই নিয়ে আলোচনার জন্য ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি সহ রাজনৈতিক দলগুলিকেও ডাকা হয়েছে। থাকবেন কলেজের অধ্যক্ষেরাও। খোলামেলা আলোচনা হবে। তারপরে প্রশাসনিক স্তরে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” কী নিয়ে সেখানে কথা হতে পারে এবং হওয়া উচিত, তা জানাচ্ছেন নেতা-অধ্যক্ষেরা। |
কান্দি রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল হক জানাচ্ছেন, কলেজের মধ্যে বর্তমান ছাত্রেরা সে ভাবে অশান্তির ঘটনায় থাকে না। সবটাই ইন্ধন আসে বহিরাগতদের কাছ থেকে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্রয় দেয় ছাত্র সংসদ দখলের রাজনীতিতে। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলিকে তাই আগে সচেতন হতে হবে। তবেই অশান্তির সিংহভাগ কমবে। বাকিটা কমাতে প্রশাসনিক বিধি নিষেধ যথেষ্ট।”
বেলডাঙা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সুজাতা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বহিরাগতদের পেশিশক্তির আস্ফালনের জন্যই যত অশান্তি।” এই কলেজে বারবার অশান্তি হয়েছে। গত অগস্টেও প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাট হয়েছে। তাঁর কথায়, “তাই কলেজ ভোটের মুখে আবার কিছু হতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।” তাঁর পরামর্শ, “প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে, পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ কলেজে ঢুকতে পারবে না। তা হলেই অশান্তি অনেকটা কমে যাবে।”
ছাত্র সংগঠনগুলির কারও কারও অবশ্য মত হল, কলেজে বহিরাগতদের ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। কারণ, বর্তমান ছাত্রেরা নিজেদের পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষের কোনও কাজে অসন্তুষ্ট হলেও তার প্রতিবাদ অনেক সময় করতে পারেন না। তাই সেখানে সেই ঝুঁকি যাঁর নেই, তিনি অনেক বেশি আন্দোলন করতে পারেন। তা ছাড়া অভিজ্ঞ নেতাদের পরামর্শেরও দরকার রয়েছে কলেজের নবীন নেতৃত্বের। তবে ডোমকল কলেজের অধ্যক্ষা অনুরাধা সেনগুপ্ত বলেন, “বহিরাগতেরা আমাদের কলেজে আসতে পারেন না, কারণ জেলাপ্রশাসন যে সব বিধি নিষেধের কথা বলছেন সে সব এখনই চালু রয়েছে, তাই এই কলেজে অশান্তিও কম।”
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানের মতে, “কলেজের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা যত সক্রিয় ও স্বনির্ভর হয়ে উঠবেন, ততই বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। কিন্তু বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা বন্ধ করা এবং ১৪৪ ধারা জারি করার অর্থ হল, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে প্রশাসন তো নিরপেক্ষও নয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যেরও মতে, “অনেক ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষই অহেতুক জটিলতা তৈরি করেন। কলেজে মনোনয়নপত্র দাখিল করা নিয়ে এত জটিলতা কেন? ভোটার তালিকা দাবি করলে দেওয়া হচ্ছে না কেন? কলেজের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা বজায় রাখতে হবে।” তৃণমূল ছাত্র শাখার জেলা পর্যবেক্ষক বরুণ দত্তও মনে করেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ হলেই অনেক অশান্তি কমে যায়।”
ছাত্র পরিষদের সভাপতি হাসানুজ্জামানও বলেন, “অশান্তির মূলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ত্ব অনেক সময় দায়ী।” তবে সেই সঙ্গেই তাঁর মত, “বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা বাঞ্ছনীয় নয়। কলেজের বাইরেও রাজনৈতিক জমায়েতে উত্তেজনা বাড়ে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।” মৃগাঙ্কবাবুরও মত, “রাজনৈতিক নেতাদের কলেজে ছাত্র সংগঠন নির্বাচন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিকতা দূর হওয়া দরকার। ছাত্র রাজনীতি করুক ছাত্রেরাই।” পিএসইউ জেলা সভাপতি আরাফৎ শেখেরও বক্তব্য, “ছাত্র রাজনীতিতে দলতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ আগে বন্ধ করতে হবে। সমস্ত দলকেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থ পাল বলেন, “নির্বাচনের দিন পর্যন্ত কলেজের ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে সমস্ত রাজনৈতিক জমায়েত নিষিদ্ধ করতে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় বহরমপুর কলেজে পুলিশ ২০০ মিটার দূরে ছাত্রদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করছে। সব কলেজে এই ব্যবস্থা করতে হবে।”
|
এক নজরে কলেজ ভোট |
• ১৭ ডিসেম্বর ১৫টি কলেজে নির্বাচন |
• গত বার এসএফআই জিতেছিল ৯টি কলেজে। বেলডাঙা কলেজ, পাঁচথুপি হরিপদ গৌরীবালা কলেজ, সালার মোজাফ্ফর আহমেদ কলেজ, জঙ্গিপুর কলেজ, লালগোলা কলেজ, জিয়াগঞ্জ রানি ধন্যাকুমারী কলেজ, বহরমপুর কলেজ, লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টিনারি কলেজ, ডোমকল বসন্তপুর কলেজ |
• ছাত্র পরিষদ জিতেছিল ৬টি কলেজে। মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয়, শ্রীপৎ সিংহ কলেজ জিয়াগঞ্জ, আমতলা জ্যোতিন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়, বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ, কান্দি রাজ কলেজ, কান্দি রাজা বীরেন্দ্রচন্দ্র কলেজ |
|