লজ্জার দিনে বাংলার সান্ত্বনা শুধু লক্ষ্মী
চার বছর আগে এই ইডেনেই অস্ত গিয়েছিল বাংলার ক্রিকেট। ডিসেম্বরের এমনই এক বিকেলে।
চার বছর পর আবার আতঙ্কটা ফিরে এল। এক ডিসেম্বরেরই বিকেলে এবং জোরালো ভাবে। ফের দেখতে হবে অবনমনের অন্ধকার গলি? স্বাদ পেতে হবে প্লেট গ্রুপের লাস্ট বয়-দের সঙ্গে এক বেঞ্চে বসার লজ্জার?
২০০৭ আর ২০১১। সে বার প্রতিপক্ষ অন্ধ্রপ্রদেশ। আর এ বার তামিলনাড়ু। বাঁচতে গেলে এই ম্যাচ থেকে পাঁচ পয়েন্ট দরকার ছিল বাংলার। পাঁচ দূরের ব্যাপার, এক পয়েন্টও এখন মরীচিকার মতো লাগছে। এর পর পড়ে থাকছে দু’টো ম্যাচ। অবনমন বাঁচাতে পয়েন্ট চাই কত? অন্তত আট! কে দেবেন, কারা দেবেন? এই বাংলার ব্যাটিং? একটা সিনেমা শেষ হতে যত সময় লাগে, তার চেয়েও আগে তো ইনিংসের পর্দা পড়ে যায়! স্কোরের নমুনা শুনলে মনে হবে টেলিফোন নম্বর। ৩৩, ৪, ২, ০, ০...। ৩৯১-এর জবাব হল ১৭৬! ম্যাচের মাঝেই নির্বাচকদের বলে ফেলতে হল, দোকানে ম্যাচ টানার মতো মালমশলা নেই। এলিটে এই টিম থাকবে কী করে?
পিচে যে ভয়ের কিছুই ছিল না, সেটা লক্ষ্মীরতন শুক্ল-ই বুঝিয়ে চলেছেন। দু’ইনিংস ধরে। বাকি ব্যাটিং যখন ইয়ো মহেশ নামের বিপক্ষের এক পেসারের সামনে উড়ে গিয়েছে, তখন প্রথম ইনিংসে লক্ষ্মী অপরাজিত ৬২। ফলো অন হল, এবং দিনের শেষেও লক্ষ্মী আবার অপরাজিত। এ বার নামের পাশে ৫০ ব্যাটিং। ক্রিকেটে টেকনিকের সঙ্গে সাহসটাও যে লাগে, তার সেরা উদাহরণ ইডেনে বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মী। বালাজি হোক বা ইয়ো মহেশ, কাউকে রেয়াৎ করেননি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন, বাকিদের হলটা কী? সহজ উত্তর, এই টিমের অর্ধেকে জানেনই না, চার দিনের ম্যাচে ব্যাটটা কী ভাবে করতে হয়।
সব শেষ। ইডেনে হতাশ সৌরভ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্রথম ইনিংসের সৌরভকে (২) দোষ দেওয়া যায় না। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে অভিনব মুকুন্দ ও রকম ক্যাচ রোজ-রোজ ধরবেন না। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি যথেষ্ট জমাট। কিন্তু এই যে শ্রীবৎস গোস্বামী, অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা, ঋতম পোড়েলরা দু’টো ইনিংস ধরে যে ব্যাটিংটা করে গেলেন, তার কী মানে? চার দিনের ম্যাচে বল মারার চেয়েও ছাড়ার নিয়মটা ভাল ভাবে জানতে হয়। দুঃখের হচ্ছে, শ্রীবৎসরা সেটা জানেন না। উদাহরণ চাই? দ্বিতীয় ইনিংসে একবার স্পিনারের টার্নে কোনও মতে বাঁচলেন ঋতম। সতর্ক তো হলেনই না। উল্টে পরের বলেই স্পিনের বিরুদ্ধে চালাতে গিয়ে উইকেট গেল। অভিষেক গালিতে প্র্যাক্টিসের ঢঙে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নের রাস্তা ধরলেন। বোঝা গেল, বাংলার রিজার্ভ বেঞ্চ বলে কিছু নেই।
ইনিংসে হার বাঁচাতে বাংলার চাই আরও ৫২। হাতে গোটা একটা দিন। বড়জোর ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেতে পারে বাংলা। কিন্তু সে জন্য সৌরভ-লক্ষ্মীর একজনকে অন্তত থেকে যেতে হবে তিনটে সেশন। সম্ভব? ইডেন ছাড়ার সময় সৌরভ থমথমে মুখে বলে গেলেন, “দেখা যাক।” আর লক্ষ্মী? দিনভর অক্লান্ত লড়েও আশা দিচ্ছেন। বলছেন, “এক পয়েন্ট ঠিক দেব বাংলাকে। দেখে নেবেন।”
কিন্তু প্রাক্তন অধিনায়কের এমন চরম আশাবাদেও সিএবি তেমন আশ্বস্ত আর হচ্ছে কোথায়? নির্বাচকরা ফুটছেন। তোড়জোড় চলছে এমন কিছু নতুন মুখ খোঁজার যাদের দিয়ে বছর দুই-তিন পর একটা জমাট দল তৈরি হয়। কোচ নিয়েও তো অভিযোগ। হাজার অসন্তোষ। বলা হচ্ছে, তিনি দু’বছরেও সিনিয়রদের মন বুঝলেন না। ‘ম্যান ম্যানেজমেন্টে’র কাজটা রামন পারেননি। রামনকে নির্বাচকেরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, চার ম্যাচ পরেও টিমের এই হাল কেন? কোচ উত্তর দিয়েছেন, ঘোড়াকে কুয়ো-র কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু সে জল খাবে কি না তার ব্যাপার। এ বছরই সিএবি-র সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে রামনের। শোনা যাচ্ছে, সেই চুক্তির নবীকরণ না-ও হতে পারে। টিম প্লেটে নেমে গেলে প্রশ্নই নেই।
হতেই পারে, আজ ইডেনে অলৌকিক কান্ড ঘটিয়ে এক পয়েন্ট এনে দিলেন লক্ষ্মীরা। তাতে হয়তো অবনমনের ফাঁড়া সাময়িক ভাবে কাটবে। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটে বিতর্কের আগুনে শান্তির জল পড়বে কি?

সংক্ষিপ্ত স্কোর
তামিলনাড়ু ৩৯১
বাংলা ১৭৬ (লক্ষ্মী ন:আ: ৬২, শ্রীবৎস ৩৩, মহেশ ৪-৩২) ও
১৬৩-৪ (লক্ষ্মী ৫০ ব্যাটিং, সৌরভ ২৮ ব্যাটিং)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.