অঘটন ঘটতে ঘটতেও শেষ পর্যন্ত ঘটল না! বাঁচিয়ে দিল সুব্রত ভট্টাচার্যের সেই ‘বিখ্যাত কপাল’।
বৃহস্পতিবার সুব্রতর ভাগ্যের পাশাপাশি মোহনবাগানের ভরাডুবি আটকে দিল ক্রসপিস, বিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের এক গাদা গোল নষ্ট এবং অবশ্যই সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের হাত। এ সবের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত কলকাতা লিগে মরসুমের প্রথম হারের ‘তেতো স্বাদ’ পেতে হল না ওডাফা-ব্যারেটোদের।
ম্যাচের পর আকাশের দিকে দু’হাত তুলে শূন্যে একটা লম্বা লাফ। তার পর দলের প্রত্যেক ফুটবলারকে হাত ধরে একে একে মাঠের ভিতর থেকে বের করে আনলেন মহমেডান কোচ অলোক মুখোপাধ্যায়। উচ্ছ্বাস বেরোচ্ছে প্রতিটি অভিব্যক্তি থেকে। পুরো পয়েন্ট অসেনি তো কী? খাদের কিনারা থেকে ঘুরে তো দাঁড়ানো গিয়েছে! অলোকের চওড়া হাসিতে তখন শুধু মোহনবাগানকে আটকানোর আনন্দ লুকিয়ে নেই। আছে নতুন মহমেডানকে খুঁজে পাওয়ার তৃপ্তিও। |
‘মহমেডান আর বড় দল নয়’, এই সমালোচনাকে তুড়ি মেরে এ দিন উড়িয়ে দিলেন সফর সর্দার আর তপন মাইতির মতো দুই প্রধানের বাতিলরা। তখন কোথায় মোহনবাগানের মহাতারকারা? ব্যারেটো-ওডাফা কেউ কোথাও নেই। মাঠ জুড়ে শুধু সাদা-কালো জার্সিধারীদের দাপাদাপি। ড্যানিয়েলের নেতৃত্বে মোহন-মাঝমাঠের দুরবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না। কোনও বোঝাপড়া নেই। উদ্দেশ্যহীন ফুটবলে ভরা। ব্যা-ও জুটির জন্য বল বাড়ানো তো দূরের কথা, বিপক্ষের পা থেকে বল কাড়তেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন মণীশ-গৌরাঙ্গরা। বিপদ বুঝে মাঝমাঠেই তিনটে পরিবর্তন করলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। ড্যানিয়েলের জায়গায় মাসি, মণীশের বদলে শৌভিক এবং গৌরাঙ্গের পরিবর্তে দীপেন্দু দুয়ারি। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। মাঝমাঠের চেহারা বদলালেও বড় কোনও উন্নতি হল না। ম্যাচের পর কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তি দিলেন, “এত ফুটবলার বদল হলে বোঝাপড়ায় দারুণ সমস্যা হয়।” বলার মতো খেললেন শুধু সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়। আলফ্রেড-স্ট্যানলিদের বেশ কিছু শট না আটকালে, এক পয়েন্টও কপালে জুটত না মোহনবাগানের।
সুব্রতর দলে সবচেয়ে খারাপ হাল ড্যানিয়েলের। স্টপার থেকে তাঁকে মাঝমাঠে তুলে এনেছেন মোহন টিডি। কিন্তু এখানেও চূড়ান্ত ব্যর্থ এই অস্ট্রেলীয় ফুটবলার। যতক্ষণ পায়ে বল পড়ছে না, ততক্ষণ সব ঠিক। কিন্তু একবার বল পেলেই তুলে দিচ্ছেন বিপক্ষের পায়ে। মোহনবাগানের এশীয় কোটা যেন অভিশপ্ত! প্রথমে ডায়মন্ডস্টার, তার পর সাইমন স্টোরি, এ বার ড্যানিয়েল। এক মাত্র সুয়োকাই ছিলেন বলার মতো। যাঁকে এনেছিলেন করিম বেঞ্চারিফা। সালগাওকরের কোচ হয়ে তিনিই আবার সুয়োকাকে গোয়ায় নিয়ে চলে গিয়েছেন।
মহমেডান কোচ যদি আর একটু সাহস দেখাতে পারতেন, তা হলে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া আশ্চর্যের হত না। কিন্তু কেন কে জানে, ম্যাচের সত্তর মিনিট পর্যন্ত স্কোর লাইনে ড্রয়ের সাইনবোর্ড ঝুলছে দেখে আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়লেন সাদা-কালো কোচ। বাড়তি ঝুঁকি নিলেন না। যদিও মহমেডান কোচের দাবি, “আজিমের চোট লেগে গেল বলে। তাই শেষের দিকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেললাম। না হলে পুরো ম্যাচে একবারও রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টা করিনি।”
মোহনবাগান: সংগ্রাম, কিংশুক, আনোয়ার, ধনরাজন, সুরসুকার, মণীশ (শৌভিক), গৌরাঙ্গ (দীপেন্দু), ড্যানিয়েল (রাকেশ), অভিনাশ, ব্যারেটো, ওডাফা। |