কলকাতা লিগ হলেও ট্রেভর জেমস মর্গ্যান আজ ‘সুইচ অফ’ করবেন না!
কারণ, ইয়াকুবু-লালকমলদের বিরুদ্ধে শুক্রবারের লড়াইকে ইস্টবেঙ্গল কোচ আই লিগের যুদ্ধ হিসাবেই দেখছেন!
কলকাতা এবং ভারত---দুটো লিগই এক সঙ্গে চলছে। ফলে, টিম নামানোর সময় অনেক পারম্যুটেশন-কম্বিনেশন করতে হচ্ছে আই লিগ খেলা ক্লাবগুলিকে। লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচও তার ব্যতিক্রম নন. সে জন্যই কম গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা লিগে দল নামানোর সময়, প্রথম এগারোর ফুটবলারদের নামাননি তিনি। ‘সুইচ অফ’ করে রেখেছিলেন। প্রয়াগ ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে তা করার ঝুঁকি অবশ্য নিচ্ছেন না। তড়িঘড়ি ড্রেসিংরুমে ঢুকে মর্গ্যান আঠারো জনের যে তালিকা টিম ম্যানেজারকে তৈরি করে দিয়েছেন, তাতে কিন্তু আই লিগের সব ফুটবলারের নামই রয়েছে। “প্রয়াগের সঙ্গে ম্যাচ, ওদের সঙ্গে আই লিগে খেলতে হবে। কালকের ম্যাচকে আমি আই লিগের ম্যাচ হিসাবেই দেখব,” যুবভারতীতে অনুশীলনের পর অকপট ইস্টবেঙ্গল কোচ।
ষোলো মাসের কোচিং জীবনে মর্গ্যানের পথে সবথেকে বেশি কাঁটা বিছিয়েছে ইউনাইটেডই। অন্য টিম নিয়ে কখনও মন্তব্য না করলেও, ঘনিষ্ঠ মহলে ইস্টবেঙ্গল কোচ কিন্তু বলে বেড়ান, “মোহনবাগানের চেয়ে এ বার ইউনাইটেড বেশি শক্তিশালী।” প্রাক্তন হাল সিটির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারের ল্যাপটপ তাকে জানিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের চমকপ্রদ পরিসংখ্যানইউনাইটেডই একমাত্র দল যারা আই লিগে এখনও অপরাজিত। এ বছর ২০টা ম্যাচ খেলেছেন ইয়াকুবুর-জোসিমাররা। হেরেছেন মাত্র দুটিতে। ডুরান্ডে টাইব্রেকারে চার্চিলের কাছে এবং ফেড কাপে ইস্টবেঙ্গলের কাছে। যুবভারতীতে কয়েকমাস আগে মর্গ্যানের টিমের সেই জয়ে অবশ্য বিতর্ক শুরু হয়েছিল রেফারিং নিয়ে। জয়ের গোলটার সময়ই তো ইউনাইটেড নয় জন হয়ে গিয়েছিল। |
এসব উজ্জ্বল পরিসংখ্যান নিয়ে জাবর কাটতে রাজি নন সঞ্জয় সেন। ইউনাইটেড কোচ বরং তাকাতে চাইছেন সামনের দিকে। “দুটো ড্র করে কলকাতা লিগে চার পয়েন্ট নষ্ট করেছি। কাল তিন পয়েন্ট পেলে এর কিছুটা উদ্ধার হবে। টিম মিটিংয়ে সেটাই বলেছি।” ইয়াকুবু, ভিনসেন্ট, জোসিমার, লালকমল, জয়ন্ত, বোলাজিইউনাইটেড কোচের অস্ত্রভান্ডারে বিদেশি-স্বদেশি মিলিয়ে বিপক্ষকে বিপদে ফেলার মতো প্রচুর অস্ত্র মজুত। গলায় তাই বেশ উচ্ছ্বাশা। কার্ডের জন্য স্টপারে অর্ণব মণ্ডলের বাইরে চলে যাওয়াটাকে তাই গুরুত্ব দিচ্ছেন না ইউনাইটেড কোচ।
বারাবার যে কাঁটা তাকে বিদ্ধ করেছে, তাকে সমূলে বিনাশ করতে মর্গ্যান অবশ্য চেষ্টার কোনও ক্রুটি করছেন না। এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন ইয়াকুবুদের যে, বুধবারই অনুশীলনের পর টিম-সহকারীদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। বৃহস্পতিবারের প্রস্তুতি এবং টিম নির্বাচন নিয়ে। সেখানেই মর্গ্যান জানিয়ে দেন, আক্রমণের ঢেউ তুলে শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে চান। তুলে নিতে চান গোল নামক রসদ। তাকে সম্ভবত সাহসী করে তুলেছে মেহতাব হোসেনের অর্ন্তভুক্তি। ও টোলগের গোলে ফেরা। আর সে জন্যই আক্রমনাত্মক মনোভাব নিয়েই ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল নামাচ্ছেন মর্গ্যান। লাল-হলুদ কোচ যা টিম ভেবেছেন তাতে টোলগের সঙ্গে রবিন এবং লেন শুরু করবেন ফরোয়ার্ডে। মাঝমাঠে মেহতাব, ভাসুম, সুশান্ত। পেন থাকছেন রিজার্ভ বেঞ্চে। রক্ষণে নওবা, ওপারা, গুরবিন্দার এবং রবার্ট। ওপারা অবশ্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে গাড়িতে ওঠার সময় বলে গেলেন, “মনে হচ্ছে খেলতে পারব না।” ইস্টবেঙ্গল কোচের যা মনোভাব তাতে ওপারার ইচ্ছে কতটা মর্যাদা পাবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।
কিন্তু মর্গ্যান বধের জন্যে গোকুলে যে বেড়ে উঠেছেন পয়ত্রিশ বছরের এক ‘তরুণ’। একশোর বেশি গোল রয়েছে যাঁর পকেটে। এখনও অবিশ্বাস্য সব গোল করছেন। “ইনসাল্লা, কাল যদি ঈশ্বর আমার সঙ্গে থাকেন তা হলে....” বলতে বলতেই গাড়িতে উঠে পড়লেন ইউসিফ ইয়াকুবু। পুরো ইউনাইটেড যে লাল-হলুদ ঝড় থামাতে টিমের ওই ভীস্মের দিকে তাকিয়ে।
|
শুক্রবারে কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল: প্রয়াগ ইউনাইটেড
(যুবভারতী ২-০০) |