বীরেন্দ্র সে ভাগ!
দ্য সুপারম্যান!
ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান!
স-হ-বা-গ স-হ-বা-গ!
তাঁর মহাবলী ২১৯-উত্তর বিভিন্ন পাবলিক নেটওয়ার্কিং সাইটে চলতে থাকা সহবাগ বন্দনার নমুনা।
দেশ-বিদেশের ক্রিকেটমহলে কথা বলতে গিয়ে মনে হল, মহাতারকাদের প্রতিক্রিয়াও আজ এক। কেউ তাঁর প্রতিপক্ষ। কেউ স্নেহবৎসল প্রাক্তন ক্যাপ্টেন। কেউ বা জাতীয় নির্বাচক প্রধান। সকলে আজ বীরেন্দ্র সহবাগ-মুখী। বুম বুম আফ্রিদি যেমন। আজও ওয়ান ডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। স্বীকার করে নিচ্ছেন, “এ রেকর্ড আর আমার পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়। গত কয়েক বছরে ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার ভূমিকাটাও অনেক পাল্টেছে। আগের মতো আর ওপেন করি না। পাঁচ বা ছয় নম্বরে ব্যাট করি। ওই জায়গায় নেমে ডাবল হান্ড্রেড হয় না।” বলে আফ্রিদি দ্রুত যোগ করছেন, “২১৯! জাস্ট ভাবতে পারছি না। বহুত বড়া অ্যাচিভমেন্ট হ্যায়!” |
ইনদওরে সহবাগ-ধমাকা যখন চলছে, তখন আফ্রিদি ফিরছেন ঢাকা থেকে। ইনিংসটা দেখা হয়নি। অনিল কুম্বলে অতটা হতভাগ্য নন। রাতে একটা ফাংশন থেকে বেরিয়ে কুম্বলে বলছিলেন, “আমি লাকি যে, বীরু যখন ১৭০, তখন থেকে ইনিংসটা দেখতে পেরেছি। অকল্পনীয়! একমাত্র বীরুর পক্ষেই সম্ভব।” তিনি সাফ বলে দিচ্ছেন, যদি কেউ ব্রায়ান লারার টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারে তো সেটা সহবাগই। “টেস্টে ওর দু’টো ট্রিপল সেঞ্চুরি রয়েছে। একটা অল্পের জন্য মিস করেছে। কী স্ট্রাইক রেট! এর পর এক দিন লারার ৪০০-টাও ভেঙে দিতে পারে।”
ক্যাপ্টেন হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদি সহবাগ-ক্ষেপনাস্ত্রের উৎক্ষেপণ ঘটিয়ে থাকেন, তা হলে ক্রিকেটজীবনের খুব কঠিন একটা সময়ে অধিনায়ক কুম্বলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিডনিগেটের সেই বিতর্কিত অস্ট্রেলিয়া সফরে জাতীয় নির্বাচকেরা বাদই দিয়ে দিচ্ছিলেন সহবাগকে। কুম্বলে জোরজার করে বাড়তি সদস্য হিসেবে ঢোকান। সেই কথা মনে করিয়ে দিতে কুম্বলে যোগ করলেন, “বীরুর যোগ্যতা নিয়ে আমার কখনও কোনও সন্দেহ ছিল না। অন্যরা যে বলটা ডিফেন্ড করবে সেটা ও স্রেফ উড়িয়ে দেবে। বোলার যেই হোক না কেন। এখানেই ও অন্যদের চেয়ে আলাদা।” তা হলে এত যে সহবাগের টেকনিক নিয়ে কথা ওঠে? কুম্বলে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “দু’ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে যে ১৬ হাজারের উপর রান করেছে তাকে নিয়ে এ সব প্রশ্ন তোলাও মূর্খতা।” |
কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের ওয়ান ডে ব্যাটিং কীর্তি মানে অবধারিত ভাবে কপিল দেব এবং জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টানব্রিজ ওয়েলসে তাঁর সেই ১৭৫ নট আউট এসে পড়বেই। আজকের দিনেও হচ্ছে। প্রাক্তন অলরাউন্ডারের সঙ্গে দিন কয়েক আগে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল সহবাগের। কপিল পরামর্শ দিয়েছিলেন, গল্ফ খেলো। ব্যাট-সুইংটা ঠিক থাকবে। ২১৯ দেখার পর কপিলের ইচ্ছে হচ্ছে, সহবাগকে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে দেখবেন। “সে দিন ও আজকের ২১৯-টাও ভেঙে দেবে।”
কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তকে ভারতে মারকাটারি ওয়ান ডে ব্যাটিংয়ের জনক ধরা হয়। কিন্তু আজকের দিনে তিনি সহবাগের কোনও তুলনাই খুঁজে পাচ্ছেন না। “ধুর, আমার চেয়ে একশো গুণ ভাল। আমি শুধু ওয়ান ডে-তে চালিয়ে খেলে রান করতে পারতাম। সহবাগ সব ধরনের ক্রিকেটে একই স্টাইলে ব্যাটিং করে রান করে যাচ্ছে।” বলে নির্বাচক-প্রধান যোগ করলেন, “অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে ২১৯ এর চেয়ে ভাল খবর আর কিছু হতে পারে না!” আফ্রিদির আবার মনে পড়ছে, মুলতানের ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা। “সে দিনই বুঝেছিলাম, এর ব্যাটে প্রচুর রেকর্ড গড়াগড়ি খাবে। টেস্টে দু’টো ট্রিপল সেঞ্চুরি কি আর এমনি এমনি করেছে!” শুনতে-শুনতে মনে হচ্ছিল, সত্যি! বীরেন্দ্র সহবাগদের কোনও লাইন অব কন্ট্রোল হয় না! |
যত কাণ্ড মধ্যপ্রদেশে |
বীরেন্দ্র সহবাগ ২১৯
প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মাঠ: ইনদওর (৮ ডিসেম্বর ২০১১)
বল ১৪৯, বাউন্ডারি ২৫, ওভার বাউন্ডারি ৭
স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৯৭ |
সহবাগ বনাম |
কেমার রোচ ২২ বলে ৩১ রান, বাউন্ডারি ৪,
ওভার বাউন্ডারি ১
রবি রামপল ২৫ বলে ৩০ রান, বাউন্ডারি ৪
আন্দ্রে রাসেল ২২ বলে ৩৭ রান, বাউন্ডারি ৪,
ওভার বাউন্ডারি ২
সুনীল নারিন ২৩ বলে ৩৩ রান, বাউন্ডারি ৩,
ওভার বাউন্ডারি ২
ড্যারেন স্যামি ৯ বলে ১৩ রান, ওভার বাউন্ডারি ১
কায়রন পোলাডর্ ১৯ বলে ৩৩ রান, বাউন্ডারি ৪,
ওভার বাউন্ডারি ১
মার্লন স্যামুয়েলস ২৯ বলে ৪২ রান, বাউন্ডারি ৬ |
|
সচিন তেন্ডুলকর ২০০ ন.আ.
প্রতিপক্ষ দ. আফ্রিকা
মাঠ গ্বালিয়র(২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০)
বল ১৪৭, বাউন্ডারি ২৫, ওভার বাউন্ডারি ৩
স্ট্রাইক রেট ১৩৬.০৫ |
সচিন বনাম |
ডেল স্টেইন ৩১ বলে ৩৭, বাউন্ডারি ৭
ওয়েন পার্নেল ২৪ বলে ৪৬, বাউন্ডারি ৭
ফান ডার মারউই ৩২ বলে ৪৩, বাউন্ডারি ৫,
ওভার বাউন্ডারি ১
শার্ল ল্যাঙ্গভেল্ট ২৮ বলে ৩০, বাউন্ডারি ২,
ওভার বাউন্ডারি ১
জাঁ পল দুমিনি ১৭ বলে ২০, বাউন্ডারি ১,
ওভার বাউন্ডারি ১
জাক কালিস ১৫ বলে ২৪ রান, বাউন্ডারি ৩ |
|
|