|
|
|
|
সবার উপরে সহবাগ |
এই বীরুকেই তো চাই অস্ট্রেলিয়ায় |
দীপ দাশগুপ্ত |
বীরুর ২১৯ বারবার আমাকে এগারো বছর আগের ব্লুমফন্টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। মনে পড়ছিল, সে বারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্লুমফন্টেনের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয়েছিল বীরুর। আমারও। ওর টেস্ট ক্যাপের নম্বর ছিল ২৩৮ আর আমার ২৩৯। সচিন বা অন্য কারও থেকে প্রথম বার ক্যাপ পাওয়ার যে রেওয়াজ এখন চালু হয়েছে, সেই টেস্টটায় সে রকম কিছু ছিল না। একে অপরের টেস্ট ক্যাপ নম্বরটা আমরা কখনও ভুলিনি। অর্থাৎ আমি ওর কাছে এখনও ২৩৯ নম্বর! মজা করে বলেও সেটা মাঝে মাঝে। ওই টেস্টের আগে দলীপ ট্রফিতে খেলেছিলাম ওর বিরুদ্ধে, কিন্তু কোনও আন্তর্জাতিক সফরে সেই প্রথম। জীবনের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিল, কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না ওর গ্রেটনেস নিয়ে। সে দিনের ডাকাবুকো ছেলে আজ বীরেন্দ্র সহবাগ হয়েছে। কিন্তু তখন যেটা ছিল, আজও আছে। যে কোনও জিনিস একেবারে সহজ করে দেখা, ভাবা। কোনও রকম জটিলতার মধ্যে না যাওয়া। |
|
দু’শোর চুড়ো ছুঁয়ে তৃপ্ত সহবাগ। বৃহস্পতিবার ইনদওরে। ছবি: এ পি |
যখন একের পর এক বল ইনদওরের বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়ছে, মনে হল এ যে ভাবে ব্যাট করছে, নির্ঘাত ২৫০ করবে! ২৩৮ তো পেরোবেই। সত্যি বলতে কী, ২৫০ করতেও পারত বীরু। স্কোরবুকে দেখুন, ৪৭তম ওভারের তিন নম্বর বলটায় আউট হয়েছে ও। অর্থাৎ তখনও ২১টা বল ছিল। তার গোটা ১২ বলে স্ট্রাইক পেলেই তো আড়াইশো হয়ে যায়। কাকতালীয় লাগতে পারে, কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের দুই ‘গ্রেট হিটার’ সি কে নায়ডু ও মুস্তাক আলির শহর ইনদওরেই উঠল সহবাগ-ঝড়। অথচ এই ম্যাচের আগে দেখছিলাম, কত লোক কত কথা বলছে। অস্ত্রোপচারের পরে ফিরে এসে ওর পা চলছে না, ব্যাট-প্যাডের মধ্যে অনেক ফাঁক, একেবারেই ছন্দে নেই, অস্ট্রেলিয়ায় টিমের চাপ হবে, এই সব। ইনদওরের পরে এ সব কথাবার্তা পুরো হাস্যকর লাগছে। এই জন্যই কোনও গ্রেট ক্রিকেটারকে কখনও ছোট করে দেখা বা উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। সহবাগ যেটা পারে, অন্য কেউ তা পারে নাকি? টেস্ট ক্রিকেটে কোনও ভারতীয়ের সর্বোচ্চ স্কোর (৩১৯) ওর, ওয়ান ডে-তেও এখন সর্বোচ্চ। |
নজির |
বিশ্বরেকর্ড
এক দিনে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ
২১৯ |
ভারতে সেরা
টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ
৩১৯ |
টেস্টে সর্বাধিক দ্বিশত
৬টি
(দু’টি ত্রিশত-সহ) |
|
আগেই বলছিলাম, জীবনকে খুব ‘রিফ্রেশিং’ একটা দিক থেকে দেখতে পারে সহবাগ। ওর ক্রিকেট-দর্শনের নির্যাস হল, বল দেখো এবং মারার হলে মারো। স্কোরবোর্ড ৫০০-৫ দেখাক বা ৫০-৫। খেলাটাকে ও অনেকটা নিজের মতো করে নিয়েছে। ওই গানটার মতো ‘নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি...’। কী রকম সেটা? ব্যাট সোজা আর মাথা সোজা। ব্যস, এটুকুই হল ওর টেকনিক। ২০০৩-এর মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের কথা মনে পড়ছে। ব্রেট লিদের বেধড়ক ঠেঙিয়ে ১৯৫ করে ছয় মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করতে গিয়ে আউট হয়েছিল ও। ড্রেসিংরুমে ফিরতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আগের বলটায় ছয় মারলি। পরের বলটায় মারতে গিয়ে উইকেটটাই দিয়ে দিলি? ডাবল সেঞ্চুরিটা মাঠে ফেলে এলি?’ উদাসীন বীরু আমার দিকে তাকিয়ে হাসল, “দূর, অত মাথায় থাকে নাকি? পরের বলটাও ফুলটস ছিল যে!’’
ওর সঙ্গে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে থাকাটাও অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতা। এক বার আমার ব্যাটের কানায় লেগে চার হল। ফিল্ডার একটুর জন্য ক্যাচ পায়নি। বীরুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘সরি! এজ হয়ে গেল!’ বীরু অবাক, “কেন? এতে সরির কী আছে? ওদের এজ হলে চার পায় না? দিনের শেষে তোর নামের পাশে চার রান এল, সেটাই বড় কথা। এজ-ফেজ ভুলে যা তো!” এই হচ্ছে বীরু। সবাই জানে ও পুল খেলতে পারে না বা খেলে না। নিজের মতো করে ও আবিষ্কার করে নিয়েছে শর্ট পিচের দাওয়াই। আপারকাট। অফস্টাম্পের বাইরে শর্ট পিচ মানেই বল থার্ডম্যানের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে উড়ে যাবে। বড় চমৎকার খেলে শটটা। ইনদওরেও খেলল। এই ইনিংসের পরে ভারতের ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিয়ে কিছু লেখার দরকার আছে বলে মনে হয় না। |
পরের চার |
সচিন তেন্ডুলকর
২০০*
১৪৭ বলে
দঃ আফ্রিকার বিরুদ্ধে |
চার্লস কভেন্ট্রি
১৯৪*
১৫৬ বলে
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে |
সইদ আনোয়ার
১৯৪
১৪৬ বলে
ভারতের বিরুদ্ধে |
ভিভ রিচার্ডস
১৮৯*
১৭০ বলে
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে |
*অপরাজিত |
|
২০১০ ফেব্রুয়ারিতে গ্বালিয়রে যখন সচিন ওয়ান ডে-তে ২০০ করল, সেই ম্যাচটার নির্বাচিত অংশ টিভিতে ব্রেকের সময় দেখাচ্ছিল। দেখলাম, সচিন ২০০ করতে ড্রেসিংরুমের বারান্দায় শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত সহবাগ। মাথার উপর দু’হাত তুলে হাততালি দিচ্ছে। সচিনের ২০০ ঐতিহাসিক, কারণ ওয়ান ডে-তে ওটাই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। আর ২১৯ ভয়ঙ্কর সুন্দর, কারণ এই ইনিংসের মধ্যে ছিল ২৫০-র অবিশ্বাস্য শৃঙ্গকে ছুঁয়ে ফেলার সম্ভাবনা। ২১৯-ও আর কেউ কোনও দিন করবে বলে আমি অন্তত মনে করি না। এখনকার ক্রিকেটে সম্ভাব্য দাবিদার শুধু ক্রিস গেইল। কিন্তু গেইলেরও বয়স হয়েছে, ৪০ ওভারের পরে ও আর টানতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। টিভিতে দেখলাম, সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বীরু সহজ ভাবে রবি শাস্ত্রীকে বলছে, “৩৩ বছর বয়স হল। আমি তো টায়ার্ড ওল্ড ম্যান। ড্রেসিংরুমে ফিরে আইস-ব্যাগ নিতে হবে।”
টায়ার্ড ওল্ড ম্যান! এমন ক্লান্ত বুড়োকেই তো অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের চাই।
|
ভারত |
গম্ভীর রান আউট ৬৭
সহবাগ ক মার্টিন (পরিবর্ত) বো পোলার্ড ২১৯
রায়না রান আউট ৫৫
জাডেজা ক রামপল বো রাসেল ১০
রোহিত বো রোচ ২৭
বিরাট ন.আ. ২৩
পার্থিব ন.আ. ৩
অতিরিক্ত ১৪
মোট (৫০ ওভারে) ৪১৮-৫।
পতন: ১৭৬, ৩১৬, ৩৪১, ৩৭৬, ৩৯৩।
বোলিং: রোচ ১০-০-৮৮-১, রামপল ৯-০-৬৬-০, রাসেল ৭-০-৬৩-১,
নারায়ণ ৬-০-৪৬-০, স্যামি ৩-০-৩০-০, পোলার্ড ৭-০-৬৫-১, স্যামুয়েলস ৮-০-৫৯-০। |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
সিমন্স ক পার্থিব বো জাডেজা ৩৬
পাওয়েল রান আউট ৭
স্যামুয়েলস বো রাহুল ৩৩
হায়াত বো রাহুল ১১
রামদিন ক রোহিত বো রায়না ৯৬
পোলার্ড বো রাহুল ৩
রাসেল স্টাম্পড পার্থিব বো রায়না ২৯
স্যামি ক মিঠুন বো অশ্বিন ২
রামপল ক মনোজ (পরিবর্ত) বো জাডেজা ১০
রোচ ক ও বো জাডেজা ৭
নায়ারণ ন.আ. ২৭
অতিরিক্ত ৪,
মোট (৪৯.২ ওভারে) ২৬৫ অলআউট।
পতন: ১৩, ৬৩, ৮১, ৯০, ১০০, ১৪০, ১৪৫, ১৬৮, ২০১।
বোলিং: বিনয় ৪-০-৩৪-০, অশ্বিন ১০-০-৫৯-১, জাডেজা ১০-২-৩৪-৩,
মিঠুন ৪-০-৩৭-০, রাহুল ১০-০-৪৩-৩, রায়না ৬.২-০-১৭-২, রোহিত ৫-০-৩৯-০। |
|
|
|
|
|
|