মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভাব-অভিযোগ জানানোর জন্য যুবকটি মহাকরণের একতলায় অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু অফিসারেরা তাঁর কাছে আসতেই তাঁদের হাতে কোনও অভিযোগপত্র না-দিয়ে তিনি চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘‘আমি বিষফল খেয়েছি!’’
বৃহস্পতিবার বেলা সওয়া ৩টে নাগাদ খাস মহাকরণে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ এবং মহাকরণের অফিসারেরা জানান, ওই যুবকের পরিচয় জানতে প্রথমে হিমশিম খেতে হয়। তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় মহাকরণের চিকিৎসকদের। ওই যুবক জানান, তিনি ধুতরো ফলের বীজ জলে ভিজিয়ে রেখেছিলেন। কিছু ক্ষণ আগে তিনি সেই জল পান করেছেন। পুলিশ জানায়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর আগে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তাঁর নাম মনোজ দাশগুপ্ত। বাড়ি কাকদ্বীপের ভুধাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীনাথ গ্রামে।
কী অভিযোগ জানানোর জন্য মহাকরণে এসেছিলেন মনোজ?
পুলিশের দাবি, ওই যুবক তাদের বলেছেন, তিনি খুবই দুঃস্থ। তাঁর বাবা, স্ত্রী, পুত্র রয়েছেন। ছেলের বয়স সাত বছর। সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর কোনও রোজগার নেই। তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি আত্মঘাতী হতে চান। কিন্তু কী কারণে মহাকরণে এসে তিনি আত্মঘাতী হতে চাইলেন, মনোজ তার কোনও ব্যাখ্যা এ দিন দিতে পারেননি বলে জানায় পুলিশ। সন্ধ্যায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক সুস্থ রয়েছেন।
শ্রীনাথ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মনোজের আরও দুই ভাই আছেন। তিনি কখনও হকারের কাজ করতেন, কখনও বা দিনমজুরের। তাঁর বাবা সুশীতল দাশগুপ্ত সামান্য কয়েক কাঠা জমিতে চাষ করেন। তাতেই কোনও রকমে সংসার চলে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মনোজ। দীর্ঘদিন কাজ না-থাকায় মনোজ প্রায়ই মানসিক ভারসাম্য হারান। কাউকে কিছু না-জানিয়ে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে অন্য কোথাও চলেও যান। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মহাকরণে বা মহাকরণ চত্বরে এই নিয়ে তৃতীয় বার কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন। পুলিশ জানায়, প্রথম ঘটনা ঘটে গত ১৩ সেপ্টেম্বর। উত্তর কলকাতার এক যুবক মহাকরণের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তিনি সোনার দোকানে কাজ করতেন। চুরির অভিযোগে তাঁর সেই চাকরি যায়। রোজগার না-থাকায় তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। পরের ঘটনাটি ঘটে ১১ নভেম্বর। বেলেঘাটার এক মহিলা মহাকরণে ঢুকে পুলিশকে জানান, তাঁকে বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েও তিনি সুবিচার পাননি। তাই তিনি বিষ খেয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। |