সকলের জন্য উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে প্রশাসনকেই আমজনতার দরজায় নিয়ে যেতে চায় রাজ্য। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করছে তারা। চালু হয়েছে ই-গভর্ন্যান্স। যাতে ইন্টারনেটের মসৃণ পথে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত প্রান্তেও পৌঁছে যায় বিভিন্ন জরুরি সরকারি পরিষেবা। স্রেফ কম্পিউটারের বোতাম টিপলেই হাতের মুঠোয় আসে জমির দলিল বা জন্মের সার্টিফিকেটের মতো নথি। এবং এই কারণেই আগামী দিনে সরকারি কাজ-কর্মের প্রতিটি স্তরে ই-গভর্ন্যান্স চালু করার উপর জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার আজকের বিশ্বায়নের জমানায় সকলের জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তথ্যের বৈষম্য দূর করার উপর জোর দিচ্ছে শিল্পমহল। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তিকেই এর উপযুক্ত মাধ্যম বলে চিহ্নিত করছে তারা।
বৃহস্পতিবারই মিলন মেলা প্রাঙ্গণে তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলন ইনফোকমের প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে বক্তৃতা দেন উদ্বোধনী আলেচনাসভায়। যার বিষয় ছিল ‘ইনক্লুশন’। অর্থাৎ, তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দরজায় পৌঁছে গিয়ে সকলের জন্য উন্নয়ন। |
এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই সকলের জন্য উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতি তৈরি করছে তাঁর সরকার। লক্ষ্য, সরকারি পরিষেবাকে আরও মসৃণ ভাবে আমজনতার দরজায় পৌঁছে দেওয়া। একই সঙ্গে জোর দিয়েছেন কলকাতার বাইরে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে।
দলীয় নির্বাচনী ইস্তেহার থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার শিল্পমহলের মুখোমুখি হওয়া সব সময়ই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন ইনফোকমের মঞ্চ থেকেও তিনি বলেন, “হলদিয়া, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হবে তথ্যপ্রযুক্তি হাব। কল্যাণীতে তৈরি হবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি।” তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এই সমাগমে বিনিয়োগকারীদের এ রাজ্যে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
সকলের জন্য উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিই যে সেরা হাতিয়ার, তা এক বাক্যে মানছে শিল্পমহলও। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় থেকে মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ভাস্কর প্রামাণিক। অ্যাকসেনচার-এর অবিনাশ বশিষ্ঠ থেকে শুরু করে স্টেট ব্যাঙ্কের এ কৃষ্ণ কুমার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই মনে করেন যে, আজকের দুনিয়ায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল তথ্য। কারণ, যে কোনও ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় যুঝে টিকে থাকতে প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে থাকা একান্ত জরুরি। তাই তা কারও নাগালে না থাকার মানে তিনি বৈষম্যের শিকার। কেউ কম্পিউটার (এবং ইন্টারনেট) ব্যবহার করতে জানা বা না-জানার (ডিজিটাল ডিভাইড) মধ্যে ফারাক অনেকখানি। যত দ্রুত সম্ভব এই বৈষম্য দূর করা উচিত বলেই মনে করেন তাঁরা।স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাঙ্কিং-সহ বিভিন্ন পরিষেবা আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে ভাস্করবাবুর দাবি, পরিবারে এক জন
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানলেও অনেক সমস্যার সমাধানসূত্র পাওয়া যাবে। পূর্ণেন্দুবাবু আবার মনে করেন, মোবাইল পরিষেবা প্রসারের হাত ধরে বিভিন্ন পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। রাজ্য সরকার এই পথেই হাঁটার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তথ্যপ্রযুক্তি সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্তা এ কৃষ্ণ কুমার জানান, যে সব গ্রামে ব্যাঙ্কের অস্তিত্বই নেই, সেখানেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তাঁরা। যেমন, ওই সব অঞ্চলে ‘মোবাইল ভ্যান’ পাঠিয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলছে স্টেট ব্যাঙ্ক। এবং তা করা তথ্যপ্রযুক্তির দৌলতেই সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। |