সেতু নেই, ধান আনতে বিপাকে চাষিরা
বছর ভাল বৃষ্টি হওয়ায় চাষও ভাল হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। নদে প্রচুর জল থাকায় মাঠের ধান মাঠেই ফেলে রেখেছেন দুবরাজপুরের মেটেলাগ্রামের বাসিন্দারা। অন্য বছর বক্রেশ্বর নদ পার করে ধান বয়ে নিয়ে আসতে সমস্যা হত ঠিকই, তবে কম জল থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে গরুরগাড়িতে করে বাড়িতে ধান নিয়ে আসতে পারতেন।
এ বার নদীতে প্রায় ১০-১২ ফুট জল। অন্য পথ বলতে প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার ঘুরে গ্রামে আসতে হবে। ওই পথ ঘুরে ধান নিয়ে আসতে প্রায় ৮০০ টাকা বেশি লাগবে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এ বার ধানের যা ‘বাজার দর’ ফসল ঘরে তোলার জন্য ওই টাকা খরচ করতে রাজি হচ্ছেন না কেউই। শুধু কি এই বছর সমস্যা হচ্ছে? বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যার সৃষ্টির মূলে রয়েছে ১৩-১৪ বছর আগে ওই নদের উপরে তৈরি হওয়া বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জলাধার। ওই জলাধার ঠিক মেটেলা গ্রামের পাশেই রয়েছে। বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীতে ও জলাধারে বেশি জল জমে থাকায় সমস্যা বেড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, “চাষ করতে যাওয়া থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা এই গ্রামের মানুষের চরম সমস্যা। অথচ নদের যে অংশ অপেক্ষাকৃত কম চওড়া সেখান দিয়ে একটি ভাসা পুলের ব্যবস্থা করলে চাষিরা উপকৃত হন। কিন্তু স্থানীয় গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন সকলকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। ফল পাওয়া যায়নি।” তাঁরা জানান, নদ পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা লোহার কড়াই। তাও ভাড়া করতে হয়েছে। ওই লোহার কড়াইয়ে এত বিপুল পরিমাণ ফসল আনা সম্ভব নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় হাজার চারেক মানুষ বাস করেন মেটেলা গ্রামে। বক্রেশ্বর নদের ওপারে মতিজাপুর, শিমূলকুঁড়ি, পদমপুর মৌজায় প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি রয়েছে মেটেলা গ্রামের বাসিন্দাদের। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার তৈরির আগের বছরগুলিতে এই নদে হাঁটু জল থাকত। ফলে জমির ফসল ঘরে তুলতে সমস্যা হত না। কিন্তু এ বার রীতি মতো বিপাকে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।
ভরসা ভাড়া করা লোহার কড়াই। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
চাষি রবিলাল চৌধুরী, সুকুমার মণ্ডল, হাকিম দাসদের ক্ষোভ, “বীজতলা করা থেকেই কষ্টের শুরু। কিন্তু সেই ফসল যদি ঘরে তুলতে না পারি তা হলে আর চাষ করে লাভ কী?” তাঁদের আরও বক্তব্য, “ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা যাঁদের জমির পরিমাণ কম, তাঁরা কোনও ভাবে এক বার গরুরগাড়ি ভাড়া নিয়ে ১৮-২০ কিমি পথ ঘুরে ফসল নিয়ে আসতে পারলেও যাঁদের জমির পরিমাণ বেশি তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। গাড়ির জন্য খরচ করে লাভের মুখ দেখতে পান না।”
তা হলে উপায়? গ্রামবাসীরা জানান, যদি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জলাধারের জল কিছুটা কমিয়ে দেন অথবা বালির বস্তা নদের অপেক্ষাকৃত কম চওড়া অংশে ফেলে একটি অস্থায়ী সেতু করে দেয় তা হলে ধান ঘরে তোলা সহজ হবে। সে ক্ষেত্রেও প্রচুর সময় লাগবে বলে যন্ত্র ব্যবহার করে নদের মধ্যে মাটি ফেলে ধান ঘরে তোলার কথাও বলছেন কেউ কেউ। গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিলীপ মাল বলেন, “গ্রামের মানুষের সমস্যার কথা জানি। এটাও জানি খুব শীঘ্রই ফসল ঘরে না তুললে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু একমাত্র ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নদে বালির বস্তা ফেলে একটা সমাধান সূত্র মিলতে পারে। কিন্তু তা সময় সাপেক্ষ। আর যন্ত্র ব্যবহারের যে দাবি, সেটা আমার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।”
এ বারও চাষিরা একই দাবি করেছেন ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে। এসডিও (সদর) সুজয় আচার্য বলেন, “গ্রামবাসীদের দাবিপত্র পেয়েছি। বিডিও সমস্যার কথা জানেন। আমরা ইতিমধ্যে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।” জেনারেল ম্যানেজার মৃণালকান্তি মিত্র বলেন, “এসডিও আমার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই গ্রামে কী সমস্যা হচ্ছে ক্ষতিয়ে দেখতে লোক পাঠাব। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.