করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চেহারা
প্রসূতিদের খাট আছে, তোশক নেই
মাঝ রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দীপ্তি দাস। তাঁর বাড়ির লোক জনকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন-- গ্লাভস ও সাবান হাসপাতালে নেই। ওগুলো দ্রুত বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হবে। তাতেই শেষ নয়। মঙ্গলবার রাতে প্রসবের পরে একটি শয্যা পেলেও একটা চাদর পর্যন্ত জোটেনি সদ্যোজাতের। একটা পলিথিন ধরিয়ে দিয়েই দায় সেরেছেন কর্তব্যরত কর্মীরা। উপায় না দেখে লোহার খাটেই শোয়ানো হয়েছে নবজাতককে।
মঙ্গলবারই প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন উর্মিলা বিবি। বুধবার সকালে প্রসবও হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে তাঁর ক্ষেত্রেও। অগত্যা পলিথিনের উপরে বাচ্চাকে শুইয়ে বাড়ির তোশক-চাদরের অপেক্ষায় বসে আছেন তিনি। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে তোষক বা বিছানার চাদর না থাকাটাই নাকি দীর্ঘদিনের ‘রেওয়াজ’। ফলে একই সমস্যায় পড়তে হয় সমস্ত মহিলাকেই। হাসপাতালের এক কর্মী বললেন, “এখানে যাঁরা ভর্তি হন তাঁদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত। আর অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালের শয্যার উপর পেতে রাখা তোশক, বিছানার চাদর সব নোংরা করেন তাঁরা। বললেও ওরা কথা শোনেন না। তাই ও সব আর দেওয়া হয় না।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফততেরের তরফে প্রসূতি ও অসুস্থ শিশুদের বিনামূল্যে পরিষেবার দেওয়ার উদ্যোগ করা হলেও করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের প্রসূতিদের দিনের পর দিন এভাবেই তোশক বা চাদরটুকু পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।
লোহার খাটেই ঠাঁই সদ্যোজাতের। নিজস্ব চিত্র
তাও কেবল নোংরা হয়ে যাওয়ার ভয়ে! হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ গড়ে ১২ থেকে ১৪ জন প্রসূতি ভর্তি হন এই হাসপাতালে। গত রবিবার ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। রেফার করা হয়েছে ৪ জনকে। সোমবার ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। তাঁদর মধ্যে রেফার করা হয়েছে ৯ জনকে। মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন। অন্যত্র রেফার করা হয়েছে ৪ জনকে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭ জন। তাঁদের ৪ জনকেই রেফার করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে সিজার, ব্লাডব্যাঙ্ক ও পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় জটিল কোন সমস্যা দেখা দিলেই কিছু প্রসূতিকে জেলা হাসপাতালে রেফার করে দিতে হয়। তবে হাসপাতালের এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দীপক দাস বলেন, ‘‘প্রসূতিদের কিছু জরুরি ওষুধের সরবরাহ ঠিকমত না হওয়ায় রেফার করে দিতে আমরা বাধ্য হই আমরা। খিঁচুনি বা রক্ত বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো হাসপাতালে ঠিকমত সরবরাহ হলে রেফারের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এছাড়াও গ্লাভস কিংবা রাউন্ড বডি নীডল দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে না থাকায় আমাদেরও নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা তুলো, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন, সিরিঞ্জ, জেলকোর মত সামগ্রীও মাঝে মাঝেই হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্লাভসের ঘাটতি থাকায় একই গ্লাভস বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে। হাসপাতলের বিছানায় শুয়ে সদ্য মা হওয়া দীপ্তি কিংবা উর্মিলারা জানাচ্ছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে নাকি সবরকম সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়? কিন্তু এখানে এসে সবই তো কিনতে হচ্ছে। আমাদের মত গরিব মানুষেরা তাহলে কিসের ভরসায় হাসপাতালে আসবে? সামান্য একটা চাদর পর্যন্ত এরা দেয় না। এই ঠান্ডায় বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’’
করিমপুর হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘আমি ছুটিতে বাইরে আছি। এটা হওয়ার তো কথা নয়। প্রসূতিদের বিছানা হাসপাতালের আর পাঁচটা বিছানার মতই হওয়ার কথা। ফিরে গিয়ে আমি ব্যবস্থা নেব। আর গ্লাভসের ঘাটতি থাকায় ব্যবহৃত গ্লাভসকে স্টেরিলাইজ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক বার ব্যবহার করার পরেই গ্লাভস নষ্ট হয়ে যায়।’’ তবে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার। তিনি বলেন, ‘‘প্রসূতিরা বিছানা নোংরা করেন বলে হাসপাতাল থেকে কোনও তোশক বা চাদর দেবে না? এই নিয়ম ওখানে কে চালু করল? সুপারই বা কেন এত দিন ব্যবস্থা নেননি আমি বুঝতে পারছি না। আমি নিজে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। আর জেলার সব হাসপাতালেই ওষুধের যে ঘাটতি আছে। সেই সমস্যাও খুব শীঘ্রই মিটে যাবে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.