মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজি, সুচিত্রা, বিকাশের মতো নেতা-নেত্রীরা ঘাঁটি গেড়েছেন, এই খবরের ভিত্তিতে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে টানা তল্লাশি চলছে কুশবনির জঙ্গল ও লাগোয়া গ্রামগুলিতে। পুলিশ-সিআরপিএফ মিলিয়ে ১০ কোম্পানি বাহিনী দিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে কুশবনির নলবনি গ্রাম ঘিরে ফেলা হয়। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত ‘বিশেষ সাফল্য মেলেনি’ বলেই জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। এ বারও মাওবাদী নেতানেত্রীরা পালিয়ে গিয়েছেন বলেই মনে করছেন অভিযানে যোগ দেওয়া রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ-কর্তা। অভিযান চলাকালীন বুধবার কাকভোরে যৌথ বাহিনী-মাওবাদী গুলি বিনিময়ও হয়। তবে কোনও তরফেই হতাহতের কোনও খবর নেই।
গত বছর মার্চে শালবনির লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলেও কিষেণজি-র সন্ধানেই অভিযান চালিয়েছিল যৌথ বাহিনী। প্রবল গুলি বিনিময় হয়েছিল দু’পক্ষে। সে বারও অবশ্য কিষেণজিকে ধরা যায়নি। বুধবারও দিনের শেষে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এলাকার ভৌগোলিক তথ্য নিখুঁত না হওয়াতেই জঙ্গলপথে পালানোর দু’টি পথ অরক্ষিত রয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত ওই পথেই মাওবাদীরা পালিয়েছে। তবে এক মহিলা-সহ সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, তল্লাশি অভিযান চলবে।
গত তিন দিন ধরে কাউন্টার ইনর্সাজেন্সি ফোর্স, সিআরপিএফ এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের একটি বড় দল মিলে বেলপাহাড়ি-ঝাড়খণ্ড সীমানার লবনি, ডাকাই ও লাগোয়া গ্রামগুলিতেও তল্লাশি চালাচ্ছে। সেই তল্লাশি-অভিযানেও মাওবাদী শিবিরের অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পিস্তল, কার্তুজ, ডিটোনেটার, পোশাক, অন্য নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী, পত্র-পত্রিকা উদ্ধার হয়েছে।
জঙ্গলমহলের বাইরেও রাজ্যের অন্যত্র মাওবাদী হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। বিশেষত রেললাইনে এবং পূর্বরেলের শিয়ালদহ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে সতর্কতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে গোয়েন্দা-রিপোর্টে। রেল কর্তৃপক্ষ এই সতর্কবার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে জিআরপি। বহরমপুর জিআরপি থানা এলাকায় শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়া জেলারও বেশ কিছু এলাকা রয়েছে। ওই এলাকায় নকশালপন্থী সংগঠনগুলির কমবেশি সক্রিয়তাও রয়েছে। বহরমপুর জিআরপি থানাকে তাই বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এই থানার ওসি প্রকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঝাড়খণ্ড থেকে এসেও মাওবাদীরা নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা দফতর সতর্ক করেছে। বিভিন্ন স্টেশনে তাই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।” |