পরিবর্তনের আগে ছিল ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল’। পরিবর্তনের পরে হয়ে গেল ‘রিসারজেন্ট বেঙ্গল’ (পুনরুজ্জীবিত বাংলা)।
বিশ্বের দরবারে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি তুলে ধরার অভিমুখ ঠিক করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিলে আগের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেটা ছিল সিঙ্গুর-পরবর্তী অধ্যায়। যখন ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’ প্রবল ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে, বহু লোকের সঙ্গে কথা বলে গত বছর ডিসেম্বরে একটি রিপোর্ট পেশ করে সংস্থাটি। কিন্তু তত ক্ষণে কার্যত ভোটের দামামা বেজে যাওয়ায় এক কোটি টাকা খরচে তৈরি সেই রিপোর্ট নিয়ে রাজ্য সরকার আর এগোয়নি। ক্ষমতায় এসে সেই রিপোর্ট ছুঁয়ে দেখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, বাংলার ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য বামফ্রন্ট সরকার কিছুই করেনি। ফলে ওই রিপোর্টের কোনও মূল্যই নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সরকার নতুন ভাবনা দিয়ে বিষয়টি সাজাতে চাইছে।
সেই কাজের দায়িত্ব স্যাম পিত্রোদাকে দিয়েছেন মমতা। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মন্ত্রকের কাজের পরামর্শদাতা হিসেবে পিত্রোদাকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেই গাঁটছড়া আরও দৃঢ় হয়েছে রাজ্যের পরিবর্তনের পর। প্রথমে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি এবং তার পর বাংলার পুনরুজ্জীবন নিয়ে পিত্রোদার পরামর্শ চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’টি প্রস্তাবেই রাজি হয়েছেন পিত্রোদা। কোন পথে রাজ্যের পুনরুজ্জীবন সম্ভব এবং কী ভাবে পুনরুজ্জীবিত রাজ্যের ছবি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যাবে, তা নিয়ে সরকারকে পরমার্শ দেবেন তিনি। বস্তুত এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন পিত্রোদা।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, গত অগস্ট মাসে পিত্রোদা তাঁর ‘ভাবনা’-র কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে স্পষ্ট, ক্ষমতা বদলের যে পরিবর্তন দেখল রাজ্যবাসী, সেই পরিবর্তনের ডাককেই তিনি পুনরুজ্জীবনের প্রধান হাতিয়ার করতে চান। এই ভাবনাকে সামনে রেখে গত অক্টোবর এবং চলতি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অফিসারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন পিত্রোদা। তাঁর ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সম্প্রতি হলেন রাজ্যের দুই আইএএস অফিসার সুব্রত গুপ্ত ও শান্তনু বসুকে নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই কমিটির সঙ্গেও পিত্রোদার কথা হয়েছে।
কোন পথে এগোতে চাইছেন পিত্রোদা?
সরকারি সূত্র বলছে, একেবারে সাত সকালের চায়ের টেবিল থেকেই শুরু করতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে মলাটের নজরকাড়া একটি বই। যার নাম ‘কফি টেবিল বুক অন বেঙ্গল’। এই বইয়ে রাজ্যের প্রাক্-স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা-পরিবর্তী ইতিহাস উঠে আসবে ছবিতে, টুকরো টুকরো লেখায়। পরিবর্তনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববাসীকে এই বার্তা দিতে চান পিত্রোদা। তাঁর ইচ্ছা, বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক, কূটনীতিক এবং ভিন দেশে ছড়িয়ে থাকা এক হাজার বাছাই করা বাঙালির কফির টেবিলে পৌঁছে যাক পুনরুজ্জীবিত বাংলার এই বই।
পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। যেখানে গোটা বিশ্ব দেখবে অবিরত কী ঘটে চলেছে এই রাজ্যে। কেউ চাইলে পরামর্শও দিতে পারবেন এখানে। পুনরুজ্জীবনের পথে দক্ষতা বাড়াতে চান পিত্রোদা। এ জন্য একটি গোষ্ঠী তৈরি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করা হবে।
এক সময় উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এলাকাকে কেন্দ্র করে ছিল থিয়েটার পাড়া। শিল্প-সংস্কৃতির সেই গৌরব পুনরুদ্ধারে কলকাতায় ‘থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন পিত্রোদা। কলকাতা, হলদিয়া এবং শান্তিনিকেতনএই তিন শহরকে বাংলার ‘থিম’ হিসেবে তুলে ধরার কথাও বলেছেন তিনি। এ জন্য ওই তিন শহরের পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
ঠিক হয়েছে, ‘রিসারজেন্ট বেঙ্গল’-এর একটি অফিস তৈরি হবে মহাকরণে। সেখানে ‘টিম পিত্রোদা’ কাজ করবে। |