তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আর্থিক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের। এই অবস্থায় রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বরখাস্তের সুপারিশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স জারির পরে এই প্রথম কোনও উপাচার্যকে সরানোর সুপারিশ করা হচ্ছে।
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ করে অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যদিও উপাচার্য তা অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধেই। উপাচার্য বলছেন, ফেল করা এক ছাত্রীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের তরফে ‘অনুরোধ’ জানানো হলেও তিনি তা করেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।
সরকারের উদ্দেশে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়ে উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার প্রমাণ দেখানো হোক।”
ক্ষমতায় এসে নতুন সরকার রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে অনেক অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিতও হয়েছে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বুধবার বলেন, “প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে চারটি তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে। একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে উচ্চশিক্ষা সংসদ, একটি দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতরের উপদেষ্টা কমিটি। তৃতীয় রিপোর্টটি দিয়েছেন সরকারি অডিটর। দফতর থেকেও একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে।” সব ক’টি রিপোর্টেই উপাচার্য সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্ত্রীর দাবি। এ দিন তিনি বলেন, “আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, সরকারি অর্থ নয়ছয়, চরম পক্ষপাত, ছাত্রছাত্রী-অধ্যাপকদের অযথা হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। রিপোর্টগুলি রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
খড়্গপুর আইআইটি-র ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক সব্যসাচীবাবু রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন ২০০৮-এ। তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। তার আগেই তাঁকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। উপাচার্যের কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে তাঁকে পদ থেকে সরানোর সংস্থান রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইনে এত দিন ছিল না। শিক্ষার অঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সরকার যে-অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, তাতে উপাচার্যকে বরখাস্তের সুযোগ আছে। সেই অর্ডিন্যান্স মেনেই সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। মন্ত্রী অবশ্য বলেন, “রাজ্যপাল এখন কলকাতায় নেই। ২৬ নভেম্বর ফিরবেন। তার পরে ওঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছি। অভিযোগগুলি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”
সব্যসাচীবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব কৌশিক বসাক এবং রাজ্যের অন্য এক মন্ত্রীর ‘অনুরোধ’ না-রাখার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে সরকার। কৌশিকবাবু এই অভিযোগ মানতে চাননি। যদিও উপাচার্য এ দিন বলেন, “একটি বেসরকারি কলেজের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের এক ছাত্রী ফেল করা সত্ত্বেও তাকে পাশ করানোর জন্য বেশ কিছু দিন ধরে আমাকে অনুরোধ করছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। আমার পক্ষে এই অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়। সেটা ওঁকে জানিয়ে দিয়েছি। বুধবার সকালে কৌশিকবাবু ফের এই অনুরোধ জানিয়ে ফোন করেন। ওঁকেও একই কথা জানিয়েছি।” |