নিম্ন মানের খাদ্যশস্য সরবরাহের অভিযোগকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী ও রেশন ডিলারদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। নিম্ন মানের চাল-গম সরবরাহের প্রতিবাদে রেশন ডিলারেরা বুধবার তাঁদের লাইসেন্স জমা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আর খারাপ চাল-ডাল দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আহ্বান, রেশন ডিলারদের কাছে প্রচুর ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে। তাঁরা লাইসেন্সের সঙ্গে তা জমা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
ডিলারদের ‘হুমকি’র কাছে রাজ্য সরকার যে মাথা নোয়াবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি পাল্টা হুমকি দেন, যে-সব ডিলার লাইসেন্স জমা দিতে চাইবেন, সরকার তাঁদের লাইসেন্স জমা নেবে। সেই জায়গায় নিয়োগ করা হবে নতুন ডিলার।
ডিলারেরা লাইসেন্স জমা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করতে চান কেন? রেশন ডিলারদের অভিযোগ, সরকার দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের (বিপিএল) জন্য রেশনে যে-পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করার কথা ঘোষণা করছে, ডিলারদের তা সরবরাহ করা হচ্ছে না। নিম্ন মানের চাল দেওয়ায় ডিলাররা মানুষের রোষের মুখে পড়ছেন। বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যেই আট জন ডিলার নিগৃহীত হয়েছেন। এ-সব বন্ধ না-হলে তাঁরা ১২ ডিসেম্বর খাদ্য দফতরে গিয়ে নিজেদের লাইসেন্স জমা দেবেন।
রেশন-মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট ফোরাম ফর পিডিএস ডিলার্স ও ডিস্ট্রিবিউটরের সভাপতি আব্দুল মালেক ও সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর দাবি, “আমরা ১২ ডিসেম্বর থেকে খাদ্য ভবনে অনশনে বসব। এর ফলে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তার দায় রাজ্য সরকারের।”
খাদ্যমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, “ওই সংগঠন রাজ্যের বেশির ভাগ ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরের লাইসেন্স খাদ্য দফতরে জমা দেওয়াতে পারলে মন্ত্রিত্বই ছেড়ে দেব। আসলে সংগঠন ভেঙে যাওয়ায় নেতারা আতঙ্কিত। তাই তাঁরা হুমকি দিচ্ছেন।” ডিলারদের অভিযোগ, গত তিন সপ্তাহ জঙ্গলমহলে বিপিএলের চাল বরাদ্দই করা হয়নি। ফলে ডিলারেরা সেখানে তিন সপ্তাহ চাল দিতেই পারেনি। খাদ্যমন্ত্রী এ দিন জঙ্গলমহলেই ছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এখানে সব ডিলারই চাল দিচ্ছেন। গত ছ’মাসে এখানে রেশন দোকানে কোনও সমস্যা হয়নি।”
ডিলারেরা বলছেন, প্রতিদিন নতুন নতুন ফরমান জারি হচ্ছে এবং তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একাধিক সংস্থাকে। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তাঁরা চান, নজরদারির দায়িত্ব শুধু খাদ্য দফতরের হাতেই থাক। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ভর্তুকির টাকার চাল কাউকেই নয়ছয় করতে দেওয়া হবে না। সেই জন্যই একাধিক কর্তৃপক্ষকে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিলারদের অভিযোগ, ন্যায্য কমিশন এবং পরিবহণ ভাতা বাড়ানো হচ্ছে না। মন্ত্রীর জবাব, “ডিলারদের কাছে এখনও এক কোটি ন’লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে। তাঁরা আগে সেগুলি জমা দিয়ে নিজেদের সততার প্রমাণ দিন। তার পরে তাঁদের দাবি মেনে কমিশন, পরিবহণের খরচ সবই বাড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ |