‘সাফল্য’ পুঁজি করে লগ্নি টানতে দিল্লিতে অন্য মমতা
যাঁর প্রতিবাদী চেহারা সংসদের ভিতরে ও বাইরে এর আগে বহু বার দেখেছে দিল্লি, আজ তাঁকে দেখল একেবারে অন্য রূপে। সকলকে বিস্মিত করে তিনি আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ হাজির বঙ্গভবনে। ঢুকে গেলেন রান্নাঘরে। ঘুরে দেখলেন খাওয়ার জায়গাটিও। কর্মীদের বললেন, “অনেক দূর দূর থেকে সবাই এখানে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ব্যবহারটা কিন্তু ভাল করবেন।” আর ভবন-কর্তাদের প্রতি তাঁর দু’টি প্রয়োজনীয় নির্দেশ, মূল প্রবেশদ্বারের সামনে লাগানো হোক দার্জিলিঙের ছবি! আরও যত্ন নেওয়া হোক বাইরের অ্যাকোয়ারিয়ামটির।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ‘পরিবর্তনের’ পর নয়াদিল্লিতে এ বার অন্য এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি রাজ্যের বিরোধী নেত্রীর পোশাক ছেড়ে উন্নয়নের দিশা খুঁজছেন। এবং সে কারণেই দায়িত্বশীল প্রশাসক হিসেবে বিনিয়োগ টানতে উদ্যোগী। এই নতুন ‘দিল্লি অভিযানের’ প্রতিপদে যিনি সংবাদমাধ্যমকে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, তিনি থাকতে চান মাটির কাছাকাছি, এক জন ‘সাধারণ মানুষের’ মতোই। গত কাল রাতে দিল্লি পৌঁছনোর পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে নৈশভোজে মমতা মুখোমুখি হন অনিবার্য প্রশ্নটির। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, কোন তকমাটি বেশি পছন্দ এখন তাঁর? নিজস্ব ঢঙে মমতার জবাব, “কোনওটাই নয়। আমি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ সাধারণ মানুষ হিসাবেই।”
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, উগ্র বিরোধী নেত্রী থেকে দায়িত্বশীল প্রশাসকের ভূমিকায় উত্তরণের চেষ্টা এক কথায় মমতার চলতি সফরের ‘থিম’ এটাই। গত মাসে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে স্বল্প সময়ের জন্য দিল্লি এসেছিলেন তিনি। সে বার কেন্দ্রের সামনে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কথা তুলে ধরেছিলেন। এ বারের সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ ছ’মাসের ‘সাফল্যকে’ পুঁজি করে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজের রাজ্যের বিপণন।
সংসদ সকালেই মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও আজ সেন্ট্রাল হলে যেতে পারেননি মমতা। অথচ, মুলায়ম সিংহ যাদব থেকে দারা সিংহ চৌহান প্রত্যেকেই দেখা করতে চান পশ্চিমবঙ্গের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তৃণমূল সাংসদদের কাছে তাঁরা মমতার খোঁজ নিয়েছেন গোটা দিনই। লোকসভায় তৃণমূলের নবনির্বাচিত নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেন্ট্রাল হলে দেখা হলে আজ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও খোঁজ নিয়েছেন মমতার। তৃণমূল সূত্রের খবর, সময় পেলে আগামিকাল সংসদের সেন্ট্রাল হলে এসে প্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গে কিছু লঘু মুহূর্ত কাটাবেন মমতা। তবে প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ বারে ফের ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে বৈঠক করে সময় নষ্ট করতে চান না তিনি। তাঁর নিজের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা একাধিকবার সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁরা সবটাই জানেন। এ বারে আর আলাদা করে ওঁদের সঙ্গে বৈঠক করছি না। ওঁরাও ব্যস্ত। আমি কারও সময় নষ্ট করতে চাই না।”
আগামিকাল বিকেলে মমতা যাবেন প্রগতি ময়দানে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ‘রাইজিং বেঙ্গল’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ডাকা হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে। এই আলোচনাচক্রের মাধ্যমে বিদেশি লগ্নি টানাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য। এখনও পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন ইতালি, শ্রীলঙ্কা এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চিনের রাষ্ট্রদূত। তৃণমূল নেতৃত্বের কথায়, পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী এই দেশটি। বরং তারা এখন মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই এগোতে বেশি আগ্রহী। তবে আমন্ত্রণ করা হলেও কিন্তু আগামিকাল উপস্থিত থাকছেন না ফ্রান্স, জাপান, ব্রাজিল এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। একই ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে চার জনকে (প্রণব মুখোপাধ্যায়, পি চিদম্বরম, জয়রাম রমেশ এবং সুবোধকান্ত সহায়) আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা একমাত্র জয়রাম রমেশেরই। বাকিরা এখনও অনিশ্চিত। আলোচনাসভার শেষে মমতা যাবেন পশ্চিমবঙ্গের প্যাভেলিয়ন দেখতে। তার পরে যাবেন বাণিজ্যমেলার প্রেক্ষাগৃহে, রাজ্যের কারাবন্দিদের অভিনীত ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ দেখতে (যে নাটকটি এখানে এসেছে তাঁরই উদ্যোগে)। প্রগতি ময়দানের কর্মসূচি শেষ হলে তিনি সোজা যাবেন তৃণমূলের পার্টি অফিসে। সেখানে বাংলার আমলাদের সঙ্গে নৈশভোজ।
এ বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বিষয়, ‘ভারতীয় হস্তশিল্প ঈশ্বরপ্রদত্ত হাতের জাদু’। কিন্তু জোট রাজনীতির জটিলতায় মমতার অনুষ্ঠানে প্রথমে ডাকা হয়নি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ না জানালেও দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করে দিয়েছিলেন মানস ভুঁইয়া। আজ সন্ধ্যায় অবশ্য মমতা নিজে ফোন করেন মানসকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁকে কাল দ্রুত দিল্লি পৌঁছাতে বলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পশ্চিমবঙ্গে তুলে ধরার প্রয়াসকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়েই এই রাজনৈতিক উদারতা দেখালেন মমতা, এমনটাই বলছে তৃণমূল শিবির।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.