চালকল কম, ধান বিক্রি করা নিয়ে চিন্তায় চাষিরা
মাঠ ভরা ধান হলেও স্বস্তিতে নেই পুরুলিয়ার চাষিরা। সমবায়গুলি ধান কিনতে নামেনি। চালকলগুলির মাধ্যমে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হলেও এই জেলায় চালকলের সংখ্যা অত্যন্ত কম হওয়ায় সেখানে ধান নিয়ে যেতে পারছেন না অনেকেই।
খাদ্যমন্ত্রী ধান কেনার জন্য পরে পাঁচ-দশ কিলোমিটার অন্তর শিবির করার আশ্বাস দিলেও ততদিন ধান মজুত করে রাখা অনেকের কাছেই অসম্ভব বলে জানালেন পুরুলিয়ার চাষিরা। কারণ, মহাজনের কাছ থেকে বা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেও সেই ধান সময়মতো বিক্রি না করতে পারার জন্য তাঁদের বাড়তি সুদের বোঝা বইতে হচ্ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের কমেই ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন বলে অনেকে জানিয়েছেন। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “বেনফেডের কাছে এখন ধান কেনার মতো অর্থ নেই। চালকলগুলি কিনতে শুরু করলেও তার সংখ্যা কম। চাষিদের কাছাকাছি এলাকায় ধান কেনার ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা এলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরে ধানের বেশ ভাল ফলন হয়েছে। গত বছর জেলায় অনাবৃষ্টির জন্য মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এ বার ২ লক্ষ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ফলে এ বার ধানের ফলনও গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা অশ্বিনীকুমার কুণ্ডু বলেন, “এ বার বৃষ্টি ও আবহাওয়া ধান চাষের পক্ষে অনুকূল ছিল। তাই গতবার যেখানে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল, এ বার ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান হয়েছে।”
চলছে ধান ঝাড়াই। হুড়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি এই জেলা সফরে এসে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, চাষিরা যাতে ধান বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি অন্য। সরকার জানিয়েছে, এ বার চালকলগুলি থেকে ধান কেনা হবে। আর সেই নির্দেশেই সমস্যায় পড়েছেন পুরুলিয়ার চাষিরা। খোদ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট। সুজয়বাবু বলেন, “এই জেলার ২০টি ব্লকে চালকলের সংখ্যা কাগজে কলমে ১২টি হলেও চালু রয়েছে ১০টি। ফলে ক্ষুদ্র চাষিদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে অল্প পরিমাণ ধান বিক্রি করতে যেতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তাঁরা চাইছেন কাছাকাছি এলাকায় ধান কেনার ব্যবস্থা করা হোক।”
পুরুলিয়া ২ ব্লকের জলেশ্বর গ্রামের চাষি ধরনীধর মাহাতো, গোপাল মাহাতোরা বলেন, “ধান ঘরে তুলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বরাবর প্রথমে অল্প ধান বিক্রি করে খেতের মজুরদের মজুরী দেওয়া হত। এ বার মজুররা মজুরীর জন্য তাগাদা দিচ্ছে। কী করবে ভেবে পারছি না।” আবার হুড়ার চাকলতা গ্রামের কানাই মণ্ডল, রাজেশ মণ্ডলরা বলেন, “প্রথমে কিছুটা ধান বিক্রি করে সংসার চালানোর খরচ জোগাড় করতাম। এ বার ধান তুলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। চালকল এত দূরে যে সেখানে ভাড়ার খরচ দিয়ে লাভ আর থাকবে না। ঘোর সঙ্কটে পড়েছি।” তাঁরা জানান, খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাছাকাছি এলাকায় ধান কেনার শিবির করা হবে। কিন্তু, তা কবে হবে? তত দিন অপেক্ষা করতে গেলে ধান বিক্রির টাকা আটকে থাকবে। মহাজন বা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের জন্য সুদ গুনতে হবে।
বিগত বছরগুলিতে সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে কনফেড, বেনফেডের মতো সংস্থাগুলি ধান কিনত। এ বার সংস্থাগুলি এখনও ধান কিনতে নামেনি। পুরুলিয়া জেলা রাইস মিলার সংগঠনের সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, “সরকারের নির্দেশ মোতাবেক চাল মিলগুলিতে চাষিদের চেকে দাম দিয়ে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। তবে চাষিরা তাঁদের এলাকায় গিয়ে ধান কেনার জন্য বলছেন। কিন্তু মিলের বাইরে ধান কেনায় আমাদের অসুবিধা রয়েছে।” গত রবিবার রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে কয়েকটি গ্রামের চাষিরা দেখা করে তাঁদের সমস্যার কথা জানান। শান্তিরামবাবুর আশ্বাস, “চাষিরা এলাকায় গিয়ে ধান কেনার জন্য দাবি জানিয়েছেন। শীঘ্রই বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে ধান কেনার কাজ শুরু করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.