|
|
|
|
আজ ঝাড়গ্রামে খাদ্যমন্ত্রী |
ধান কেনা নিয়ে খাদ্য দফতর, জেলা পরিষদের চাপানউতোর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ধান কেনা নিয়ে জেলা খাদ্য দফতর ও জেলা পরিষদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হল। আজ, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে আসবেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর উপস্থিতিতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে সহায়ক-মূল্যে ধান কেনা শুরু হওয়ার কথা পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলা পরিষদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই জেলার ৩৪টি রাইল-মিল মোট ৫০ হাজার ৯০৩ কুইন্টাল ধান কিনেছে বলে দাবি করেছে। বুধবারই এমন তথ্য পৌঁছেছে। অথচ, রাইস মিলগুলি যে ধান কেনা শুরু করেছে, তা জেলা পরিষদকে পর্যন্ত আগে জানানো হয়নি। কাদের কাছ থেকে এই পরিমাণ ধান কেনা হল, জেলা খাদ্য-দফতরের কাছে তার তালিকা তলব করেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। ৭ দিনের মধ্যে চাষিদের নামঠিকানা-সহ এই তালিকা চেয়েছেন তিনি। সভাধিপতি বলেন, “ওই তালিকা ব্লক অফিসে টাঙানো থাকবে। তা হলে সবাই জানতে পারবেন কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হল।” তাঁর কথায়, “এতে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতাও থাকবে।” জেলা খাদ্য নিয়ামক প্রদীপ ঘোষের বক্তব্য, “সভাধিপতির কাছে তালিকা পাঠানো হবে।”
অভাবী ধান বিক্রি বন্ধ করতেই প্রতি বছর অগ্রহায়ণ নাগাদ চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক-মূল্যে ধান কেনে রাজ্য সরকার। কৃষকরা কিছুটা ন্যায্য দাম পান। অন্তত, সরকারের কাছে ধান বেচে ক্ষতির মুখ দেখতে হয় না। পাশাপাশি, বাজারে ফসলের দামটাও ঠিক থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনতে পারেন না। সেই মতো এ বারও ধানের মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। সাধারণ ধানের মূল্য ১০৮০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। আর সরু ধানের মূল্য ১১৩০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। কিন্তু, অভাবী বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। বাজারে ধানের মূল্য যাচ্ছে খুব বেশি হলে প্রতি কুইন্টালে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এখন চাষে খরচও বেড়েছে। সার, কীটনাশকের দাম থেকে শ্রমিকদের মজুরি--সবই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে ধানের দাম না-বাড়লে বহু চাষিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। সহায়ক-মূল্যে তৎপরতার সঙ্গে ধান কেনা না-হলে চাষির ধান আর চাষির কাছে থাকবে না। এক এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা ফোড়ে তাঁদের কাছে পৌঁছে যাবে। কম টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য করবে চাষিদের। পরে সুযোগ বুঝে সেই ধানই খোলাবাজারে (কিংবা বেনামে রাইসমিলে) বিক্রি করে ফুলেফেঁপে উঠবে ফোড়ে-দালালরাই। প্রতি বছরই এমন অভিযোগ ওঠে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। খাদ্য দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, এ বার তৎপরতার সঙ্গেই চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। নগদে নয়, টাকা দেওয়া হবে চেকে। এর ফলে, চাষিদের আর ঠকানোর সুযোগ থাকবে না।
তবে, কয়েকটি সমস্যা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছে জেলা পরিষদ। যেমন, এ বার ধান বিক্রির জন্য চাষিদের সরাসরি রাইলমিলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৬০টি মিল রয়েছে। কিন্তু লালগড়, বেলপাহাড়ি-সহ সমগ্র জঙ্গলমহল এলাকায় মিলের সংখ্যা কম। ফলে, সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষিরা সমস্যায় পড়বেন। জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ দীপক ঘোষ বলেন, “লালগড়ে কোনও রাইসমিল-ই নেই। তা হলে, এই এলাকার চাষিরা ধান বিক্রির জন্য কোথায় যাবেন? সরকারের উচিত, আগের বারের মতো এলাকায় এলাকায় ক্যাম্প করে ধান সংগ্রহ করা।” জেলা খাদ্য নিয়ামকের অবশ্য আশ্বাস, “ক্যাম্প করেও সহায়কমূল্যে ধান কেনা হবে।” জেলায় যে রাইসমিলগুলি ধান কেনা শুরু করেছে, সেই সম্পর্কিত কোনও তথ্য জেলা পরিষদের হাতে ছিল না। বুধবার বিষয়টি জানতে পেরেই সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে খোঁজখবর নেন সভাধিপতি। তাঁর কথায়, “কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হল, তার তালিকা চেয়েছি। খাদ্য দফতরের কাছে ওই তালিকা না-পেলে তথ্য জানার আইনে ওই তালিকা চাইব।” |
|
|
|
|
|