|
|
|
|
চাষিরা সেই অন্ধকারেই |
সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে আজ বৈঠক মেচগ্রামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
অভাবী বিক্রি রুখতে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল কয়েক মাস আগেই। কিন্তু এখনও পূর্ব মেদিনীপুরে ধান কেনা শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। কী ভাবে ধান বিক্রি করবেন তা নিয়ে অন্ধকারে চাষিরাও। এই প্রেক্ষিতে তমলুক-হলদিয়া মহকুমার চালকল ও সমবায় সমিতিগুলিকে নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে বেনফেডের অফিসে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক নসরৎ হোসেন খানের আশ্বাস, “লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহের জন্য চালকল ও সমবায় সমিতির মাধ্যমে শীঘ্রই ধান কেনা শুরু হবে। সমবায় সমিতি ও চালকলগুলি কে, কত ধান কিনবে তা বৈঠকে ঠিক করা হবে। কাঁথি ও এগরা মহকুমার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে এই সংক্রান্ত বৈঠক হবে আগামী ২৮ নভেম্বর।”
ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বোরো ধান বিক্রি করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ দিকে, মাঠে আমন ধান পেকে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান তোলার কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় সরকারি সহায়ক মূল্যে আগের বোরো ধান দ্রুত বিক্রি করতে চাইছেন কৃষকেরা। কিন্তু রাজ্য সরকার মাস কয়েক আগে মূল্য বেধে দিয়ে ধান কেনার কথা ঘোষণা করে দিলেও আদৌ সেই কাজ শুরু করতে পারেনি।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্ট্যাল প্রতি ১০৮০ টাকা স্থির হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে রাজ্য খাদ্য দফতর ৮৩ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে। আর ভারতীয় খাদ্য নিগম সংগ্রহ করবে ১৯ হাজার মেট্রিক টন চাল। চালের আনুপাতিক হারে (১০০ কেজি ধানে ৬৮ কেজি চাল ধরে) ধান কেনা হবে চালকল ও সমবায় সংস্থার মাধ্যমে। কৃষকেরা চালকল ও সমবায় সমিতিতে গিয়ে সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবেন।
সমস্যা হচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরে মাত্র ৩৪টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে তমলুক মহকুমায় মাত্র ২টো চালকল রয়েছেকোলাঘাট ও পাঁশকুড়ায়। বাকি অধিকাংশই কাঁথি ও এগরা মহকুমায়। ফলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চালকল পর্যন্ত ধান বয়ে নিয়ে যাওয়াটা একটা বড় সমস্যা বলে মনে করছেন চাষিরা। এর উপরে গত ১৯ নভেম্বর ৪টি চালকল সিজ করে দিয়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসন। ফলে জেলার চালকল মালিকেরা একজোট হয়ে ধান কেনায় অনীহা প্রকাশ করছেন এখন।
কোলাঘাটের চাপদা গ্রামের সুধীরকুমার নায়েক ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। যা উঠেছিল তার মধ্যে ৬০ কুইন্ট্যালের মতো ধান রয়ে গিয়েছে এখনও। সুধীরবাবু বলেন, “এ বছর দাম পড়ে যাওয়ায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় যাব, কী ভাবে বিক্রি করবকিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” বাঁকাডাঙা গ্রামের চাষি কৃষ্ণপদ সামন্ত বলেন, “১৫ বিঘা জমির ধান এখনও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মুখে প্রশাসনের লোকেরা অনেক কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে কোথাও কোনও ধান কেনা হচ্ছে না।”
এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনিক গড়িমসিকেই দায়ী করছেন কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক নন্দ পাত্র। তাঁর অভিযোগ, “বোরো মরসুমের ধান কেনার জন্য উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। ধান বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে অন্ধকারে চাষিরা। কেউ কিছু জানে না।” পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মিঠু অধিকারীর আশ্বাস, “ধান বিক্রির পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে শীঘ্রই লিফলেট বিলি করা হবে।” |
|
|
|
|
|