পদত্যাগ, চেয়ার ছোড়ায়
বেনজির সিপিএম সম্মেলন
রাজ্যের ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর দলের অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে সিপিএমে। ঝাড়গ্রামে একাধিক লোকাল কমিটির সম্মেলনে দলের উপরতলার দিকে আঙুল তুলছেন প্রতিনিধিরা। লোকাল কমিটিগুলিতে নতুন মুখ আনার উপর জোর দিয়েছিলেন শীর্ষনেতৃত্ব। অথচ বাস্তবে তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন সদস্যদের একাংশ। কেন্দ্রীয় কমিটি-রাজ্য কমিটির শত নির্দেশিকা সত্ত্বেও ‘দুর্নীতি’, ‘ঠিকাদারি’, ‘জমির দালালি’, ‘অসংযত আচরণ’, ‘সুবিধাবাদী কার্যকলাপে’ জড়িতরা কমিটিগুলিতে থেকে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বরং ‘ভুল’ প্রবণতার বিরোধিতা যাঁরা করছেন, তাঁরা কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে দেওয়া’র প্রবণতা নিয়েও তাঁরা সরব হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে ঝাড়গ্রাম শহরে একাধিক লোকাল কমিটি-সম্মেলনে বেশ কয়েক জন দলীয়-পদ থেকে অব্যহতিও চেয়েছেন বলে দল সূত্রেই খবর। শহরের একটি লোকাল কমিটির অন্তর্গত ৫ জন শাখা সম্পাদক রয়েছেন পদত্যাগ-ইচ্ছুকদের দলে। এক জন যুব-সংগঠনের লোকাল কমিটির সম্পাদক পদেও ইস্তফা দিয়েছেন। সম্মেলন চলাকালীন এ ধরনের ঘটনা তাঁদের দলে নজিরবিহীন বলেই মানছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। মঙ্গলবার ২-নম্বর শহর লোকাল কমিটির সম্মেলন ছিল। ১১ জনের নতুন কমিটিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এক তরুণ সদস্যের ঠাঁই না-হওয়া বরং শহরের প্রভাবশালী এক নেতার দাদার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সম্মেলনে ধিক্কার-শ্লোগান উঠেছে বলে খবর। সম্মেলন নিয়ে রাজ্য পার্টির নির্দেশিকার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক শিবনাথ গুহ অবশ্য বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না।” তবে দলের এক জেলা-নেতা স্বীকার করেছেন, কমিটির সদস্য নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন।” তাঁর দাবি, “দলে গণতন্ত্র আছে বলেই সম্মেলনে প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্য রাখছেন। গোলমালের কিছু হয়নি।”
ওই জেলা-নেতা এমন বললেও সিপিএমের সম্মেলন ঘিরে দলে দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেই। উচ্চ-নেতৃত্বের বিরুদ্ধে শাখা ও লোকাল কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ তো উগড়ে দিচ্ছেনই। খড়্গপুরের ইন্দা লোকাল কমিটির সম্মেলনে ভোটাভুটি চেয়ে চেয়ার ছোড়াও হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। যদিও শেষ পর্যন্ত অনেক বুঝিয়ে প্রতিনিধিদের শান্ত করে ভোটাভুটি এড়িয়ে লোকাল কমিটির সম্পাদক পরিবর্তন করা হয়। প্রকাশ্যে সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য সম্মেলনে অশান্তির কথা স্বীকার করেননি। খড়্গপুরে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মনোজ ধর বলেন, “গণ্ডগোলের কথা আমার জানা নেই। আমাদের দলে গণতন্ত্র রয়েছে। সেখানে প্রত্যেকেই নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন।”
মঙ্গলবার ছিল ইন্দা লোকাল কমিটির সম্মেলন। সম্মেলনের শুরু থেকেই জেলা নেতৃত্ব অশান্তির আঁচ পেতে শুরু করেন। অনেক প্রতিনিধির বক্তব্যই ছিল চাঁছাছোলা। শেষে লোকাল কমিটির বর্তমান সম্পাদক গৌতম দত্তকে বাদ দেওয়ার কথা ওঠে। কারণ, দেখানো হয়, গৌতমবাবু তিন বার সম্পাদক পদে ছিলেন। গৌতমবাবুর অনুগামীরা তাঁকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতায় সোচ্চার হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গৌতমবাবুর পরিবর্তে সৌমেন মহাপাত্রকে লোকাল কমিটির সম্পাদক করা হয়। এর পর লোকাল কমিটির সদস্য নির্বাচন নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। দুই গোষ্ঠীই যে যার অনুগামীদের নাম প্রস্তাব করতে থাকেন। বিতর্ক থেকে বচসা শুরু হয়। ভোটাভুটির দাবিতে সোচ্চার হন কয়েক জন প্রতিনিধি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে চেয়ার ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। বিকেল চারটেয় শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ করতে রাত ১টা বেজে যায়!
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ জন সদস্যের মধ্যে চিত্ত সরকার, মুকুল সাঁই শারীরিক অসুস্থার কারণে ইস্তফা দেন। উৎপল বিশ্বাসকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল। সম্মেলনে অলোক ভট্টাচার্যকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে বাদ দেওয়া হয়। দেবল চৌধুরী নামে এক জন নতুন সদস্যকে লোকাল কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। বাকি তিন সদস্য পরে ঠিক করা হবে বলে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই এখন সিপিএমের লোকাল কমিটিগুলির সম্মেলন চলছে। প্রায় প্রতিটি লোকাল কমিটি-সম্মেলনেই দলের শীর্ষনেতাদের সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন প্রতিনিধিরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫ মিনিটের মধ্যে বক্তাদের বক্তব্য শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। সময় শেষ হলেই বাজানো হচ্ছে ‘ঘণ্টা’। এরও সোচ্চার প্রতিবাদ হচ্ছে। এমনকী প্রতিনিধিরা নেতাদেরই পাল্টা কম বলার কথা বলছেন! কোনও নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল আবার কোন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও হয়তো বহিষ্কার না করে পার্টি তাঁকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেসে নিয়ে রীতিমতো কৈফিয়ৎ চাওয়া হচ্ছে।
সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “আমাদের দলের সম্মেলনে এমনটা হতে পারে কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। আগে জেলা নেতৃত্ব যা ঠিক করতেন সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হত। এখন সবাই প্রতিবাদ করছেন। এমনকী ‘চাপিয়ে দেওয়া চলবে না, কমিটির সিদ্ধান্ত মেনেই চলতে হবে’ সম্মেলনের দলিলে তার উল্লেখ করতেও বাধ্য করা হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.