|
|
|
|
সংসদ সচল হতে পারে আজ |
বিল পাশের দায়ে সায় ‘নরম’ মুলতুবি প্রস্তাবে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মূল্যবৃদ্ধি ও কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে আগ্রাসী বিরোধী আক্রমণে প্রথম দু’দিন সংসদ অচল থাকার পর অবশেষে বরফ গলার সম্ভাবনা দেখা দিল। আর সেটা সম্ভব হয়েছে সরকার ও বিরোধী, উভয় পক্ষই কিছুটা নমনীয় হওয়ায়। এক ধাপ এগিয়ে সরকার যেমন এখন কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে বিজেপি-র মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছে, তেমনই ওই প্রস্তাবের বয়ান কিছুটা লঘু করার ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রধান বিরোধী দলও। এর ফলে আগামিকাল সংসদের অচলাবস্থা কাটতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে এই প্রথম কোনও মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে এ দিন।
ভোটাভুটি হয় এমন কোনও প্রস্তাব মেনে নিতে সরকার রাজি না নয়, অথচ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের দাবিতে সিপিএম অনড়। কক্ষ-সমন্বয়ের সমঝোতা বজায়ে রাখতে বিজেপি-ও রয়েছে সিপিএম-এর পাশে। এই পরিস্থিতিতে আজও অচল হয়ে যায় সংসদ। পাশাপাশি বিজেপি এবং সিপিআই-ও জানিয়ে দেয়, কালো টাকা উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে কাল তারা মুলতুবি প্রস্তাব আনবে। ফলে এমন আশঙ্কাও দেখা দেয় যে, শুধু প্রথম দু’দিন নয়, গোটা সপ্তাহটাই হয়তো অব্যাহত থাকবে অচলাবস্থা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নরম হওয়ার ইঙ্গিত দেয় সরকার। শাসক জোটের শীর্ষ সূত্রের খবর, লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় অচলাবস্থা কাটাতে বিজেপি নেতৃত্বকে এই বার্তা দেন যে, সরকার যে কোনও বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি। তবে সেই প্রস্তাবের বয়ানে যেন ‘সরকারের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার’ কথা বলা না থাকে। তাতে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দেয় বিজেপি-ও। মুলতুবি প্রস্তাবে কালো টাকা উদ্ধারে সরকারের ‘ব্যর্থতার’ বদলে এ ব্যাপারে ‘সভার উদ্বেগ ও কেন্দ্রের গৃহীত ব্যবস্থা’ সম্পর্কে আলোচনার প্রস্তাব রাখার কথা জানায় তারা। বরফ গলার ক্ষেত্র তৈরি হয় এতেই।
প্রণববাবুর সঙ্গে কথা বলার পরে বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ সন্ধ্যায় সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তকে ফোন করে জানান, সরকার মুলতুবি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। ফলে নতুন কোনও অঘটন না ঘটলে কালো টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও গুরুদাস দাশগুপ্তের আনা মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে কাল লোকসভায় আলোচনা হবে। পরে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সোমবার স্বল্প সময়ের আলোচনা হতে পারে। সিপিএম নেতাদের মতে, কালো টাকা নিয়ে বিজেপি-র মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নিয়ে সরকার তাদের জমি ছাড়ছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গকে গুরত্ব না দেওয়াটা কতটা সঙ্গত, মানুষই তার বিচার করবেন। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ভাবমূর্তি উদ্ধারে এ বারের অধিবেশনেই লোকপাল বিল, খাদ্য সুরক্ষা বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোটা একান্ত জরুরি সরকারের পক্ষে। তাই সংসদ মসৃণ ভাবে চালানোর বড় তাগিদ রয়েছে সরকারের। ফলে বিরোধীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগের মতো অনমনীয় নয় সরকার। আবার সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে যে কোনও মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মতো নমনীয়তাও দেখাতে চাইছে না কেন্দ্র। কারণ প্রস্তাবে কেন্দ্রের ব্যর্থতার কথা থাকলে ভোটাভুটিতে এখন সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা মুশকিল। উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে সপা-বসপা-র মতো ইউপিএ-র সমর্থক দলগুলিও বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটাই প্রমাণ হয়ে যাবে যে সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।
বিপরীতে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলেও কোনও বিরোধী দলই এখন নির্বাচন চায় না। সেই সঙ্গে বিজেপি ও বাম শিবিরের বড় অংশ এ-ও তুলে ধরতে চায় না যে, তাদের কারণে সংসদ দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে। ফলে সরকার যেমন সংসদ চালানোর জন্য উপায় বার করতে চাইছে, তেমনই বিরোধীরাও চাইছে সংসদ চলুক। কিন্তু তার আগে, মূল্যবৃদ্ধি ও কালো টাকা উদ্ধারের মতো বিষয় নিয়ে কেন্দ্র-বিরোধিতার সুর উঁচু তারে বেঁধে দিয়ে তবেই সংসদ চালাতে সমঝোতা করতে চাইছিল বাম ও বিজেপি। সেই বার্তা দিতে তারা অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলে মনে করছে। তাই আগামিকালও সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চাইলেও সিপিএম নেতৃত্ব এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সংসদ অচল করে রাখতে চান না। অন্য দিকে কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের বয়ান কিছুটা লঘু করতে রাজি হয়েছে বিজেপি।
বস্তুত, সংসদ যাতে স্বাভাবিক ভাবে চলে সে জন্য বিরোধী সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন লোকসভার নেতা প্রণববাবু-সহ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। আজও সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রণববাবু। বরফ গলছে এই লাগাতার আলোচনায়। |
|
|
|
|
|