|
|
|
|
নিরাপত্তা নিয়ে সরব মুন্ডা |
দুনের আগুনে কার্যত
খারিজ অন্তর্ঘাত তত্ত্ব
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
|
দুন এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করেছিলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বুধবার সেই আশঙ্কা কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে অর্জুন মুন্ডার নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকার।
সোমবার রাতে গিরিডির পারসনাথ ও নিমিয়াঘাট স্টেশনের মাঝখানে হাওড়া থেকে দেরাদুনগামী ট্রেনটির দু’টি বাতানুকূল কামরায় আগুন লাগার ঘটনায় রেলের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন মুন্ডা। তিনি রেল-কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়ার ‘পরামর্শ’-ও দিয়েছেন। ওই অগ্নিকাণ্ডে এ-পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই ট্রেনের আরও দু’জন যাত্রীকে এখনও পাওয়া যায়নি বলে রেল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য রেলমন্ত্রীর অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কিছুটা তির্যক সুরেই তিনি বলেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত রেলের। এর সঙ্গে অজস্র যাত্রীর জীবন জড়িত।” তবে ঝাড়খণ্ড পুলিশের এডিজি (রেল) কুমুদ চৌধুরী এ দিন সরাসরিই বলেন, “অন্তর্ঘাতের যুক্তি এখনও পর্যন্ত ধোপে টিকছে না। পুলিশি তদন্তে শীঘ্রই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
রেলের মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার (পূর্বাঞ্চল) ভি কে যাদবের নেতৃত্বে এ দিনই রেলের তরফে ওই অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের একটি দলও এ দিন পুড়ে যাওয়া কামরা দু’টি পরিদর্শনে গিয়েছিল। রাঁচি থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও গোমো স্টেশনে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দু’টি কামরা থেকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছেন।
রেলকর্তারা জানান, মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার (পূর্বাঞ্চল) ভি কে যাদব এবং ধানবাদের ডিআরএম সুধীর কুমার এ দিন সকালেই গোমো স্টেশনে বি-১ ও বি-২ কামরা দু’টি খুঁটিয়ে দেখে আগুনের উৎস ও কারণ জানার চেষ্টা করেন। তার পরে পারসনাথ স্টেশনে গিয়ে তাঁরা কথা বলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির চালক, গার্ড ও অন্য কর্মীদের সঙ্গে।বিকেলে গোমোয় যান রাজ্য পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এ কে সিনহা এবং বশির আহমেদ। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাঁরাও দু’টি কামরা পরীক্ষা করেন। পুলিশি সূত্রের খবর, কামরার হিটার থেকে আগুন ছড়িয়েছিল কি না, বেশ কিছু ক্ষণ ধরে তা পরীক্ষা করা হয়। দমকলকর্তারাও কামরা দু’টি পরীক্ষা করেছেন।
আজ, বৃহস্পতিবার রেলের নিরাপত্তা কমিশনার, ফরেন্সিক দল ও দমকল ধানবাদের ডিআরএম অফিসে আলোচনায় বসবেন বলে রেল সূত্রের খবর। ওই অফিসে একটি পৃথক কাউন্টার খুলে ওই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ও তথ্য নেওয়া হবে বলেও রেল-কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন। বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই কাজ চলবে।
কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলির বাসিন্দা বিষ্ণুরাম নাগরের (৬২) দেহ এ দিন ধানবাদের মর্গে গিয়ে শনাক্ত করেছেন তাঁর আত্মীয়স্বজন। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী উষাদেবীর দেহ আগেই শনাক্ত করা হয়েছিল। বিষ্ণুবাবুর ভাই অজয়রাম নাগর বলেন, “আমার দাদা-বৌদির বড় মেয়ের শ্বশুর কয়েক দিন আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতেই ওঁরা বারাণসী যাচ্ছিলেন। আমিই ওঁদের টিকিট কেটে দিয়েছিলাম। কে জানত, এটাই দু’জনের শেষ সফর হবে!”
নাগর দম্পতির ছোট মেয়ে দিশাকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য এ দিনই ধানবাদ স্টেশনে আসতে বলেছিলেন রেল-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলের তরফে পরে জানানো হয়, মৃতদের ডিএনএ পরীক্ষার পরেই আত্মীয়দের টাকা দেওয়া হবে। নাগর দম্পতি ও তরুণী চিকিৎসক অনুমিতা সিংহের শেষকৃত্য এ দিন ধানবাদেই সম্পন্ন হয়েছে। অনুমিতার স্বামী চিকিৎসক নীরজ সিংহ এখনও ধানবাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অল্পের জন্য আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া তিন অস্ট্রেলীয় নাগরিককে এ দিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মৃত অস্ট্রেলীয় তরুণী এমিলি রোজের দেহ শনাক্তকরণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসের এক কর্তা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে সরকারি সূত্রের খবর। |
|
|
|
|
|