নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
অনুমোদন ছাড়াই দেদার চলছে অটো ও ট্রেকার। তাদের দৌরাত্ম্যে জেরবার হয়ে বেশ কয়েকটি রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
রানিগঞ্জ থেকে নন্ডী হয়ে জামুড়িয়ার দরবারডাঙা পর্যন্ত আগে ৩টি বাস চলত। রানিগঞ্জ থেকে তালতোড় হয়ে চুরুলিয়া পর্যন্ত ৩টি, রানিগঞ্জ থেকে বীরকুলটি ভায়া হিজলগড়া ৩টি এবং রানিগঞ্জ থেকে গৌরান্ডি রুটে ৪টি বাস চলত। এখন সব ক’টি বাসই জামুড়িয়া পর্যন্ত যায়। রানিগঞ্জ থেকে চুরুলিয়া এবং দরবারডাঙা রুটে মোট ৩টি বাস চালানোর অনুমোদন ছিল সন্তোষ মাজির। তিনি জানান, জামুড়িয়ার পর থেকে অটো ও ট্রেকারের দৌরাত্ম্যে আর বাস চালানো যাচ্ছে না, এ কথা জানিয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালতকে জানিয়েছেন, বাসের সামনে সামনে ট্রেকার চলছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে চালক, কনডাক্টররা প্রহৃত হচ্ছেন। এ ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয় জানিয়ে তাঁর বাসগুলির রুটের অনুমোদন জামুড়িয়া থেকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত করে দেওয়ার আবেদন জানান। এই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে বলে জানান সন্তোষবাবু।
বাস মালিকদের অভিযোগ, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে যাত্রী তুলে জামুড়িয়ার বিভিন্ন রুটে ঢুকে যাচ্ছে ট্রেকারগুলি। এর জেরে রানিগঞ্জ থেকে তিরাট পর্যন্ত ৫টি বাস চলত। এখন তা দাঁড়িয়েছে দু’টি। আসানসোল থেকে কুয়ারডি, শ্রীপুর, মাইথন, চিত্তরঞ্জন, হরিপুর, দোমহানি, রানিগঞ্জ থেকে গৌরবাজার, উখড়া রুটে প্রায় ১৩২টি বাস চলত। এখন বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের এক সচিব স্বপন ঘোষ অভিযোগ করেন, প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ পরিষেবার জন্য তাঁরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু তা বিশেষ কার্যকর করা যায়নি। তিনি জানান, আসানসোল থেকে দোমহানি হয়ে গৌরান্ডি এবং রানিগঞ্জ থেকে দোমহানি রুটে ৬টি বাস চালু করা হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু বছরখানেকের বেশি গৌরান্ডি পর্যন্ত বাস চলতে পারেনি। স্বপনবাবু বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে সকালে একটি বাস চালু করেছিলাম আমরা। কিন্তু ট্রেকার মালিকদের প্রতিরোধে বাস চালানো গেল না।” অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর, চাঁদা, কুয়ারডি, পরাশিয়া, চুরুলিয়া, দোমহানি ইত্যাদি এলাকায় ট্রেকারের রমরমা চলছে। যে বাসগুলি এখনও যাতায়াত করছে, সেগুলিও আর কত দিন চালানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা।
শুধু রানিগঞ্জ বা জামুড়িয়ার বিভিন্ন রুটই নয়, আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন বা মাইথন রুটেও একই রকম চিত্র বলে জানা গিয়েছে। আসানসোল-মাইথন রুটে চলাচল করে এমন একটি বাসের মালিক শ্যামল সাধু। তিনি জানান, দেদুয়া থেকেই ট্রেকারের দৌরাত্ম্যে নাকাল হতে হচ্ছে। আসানসোল মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, আসানসোলের হাটন রোড থেকে রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান রুটে অটোর রমরমা চলছে। বার্নপুর থেকে আসানসোল যাওয়ার সময়ে আসানসোল আদালত চত্বর দিয়ে বাস চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু অনুমোদনহীন অটো ওই রুটে যাত্রীদের আসানসোল পৌঁছে দিচ্ছে। সুদীপবাবু অভিযোগ করেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করে পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ডে চলাচলের অনুমোদন রয়েছে এমন সব অটো ও ট্রেকার আসানসোলে চলাচল করছে। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও ফল হচ্ছে না।
আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত জানান, কমিশনারেট গঠনের পরে খনি ও শিল্পাঞ্চলে সব রকম অবৈধ কাজকর্ম বন্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বরাকর ও কুলটিতে কেরোসিন তেলে চলা অটো ধরতে অভিযান চলছে। অন্যত্রও অভিযান হবে। |