ঐতিহ্য |
• বন্দে মাতরম ভবন |
সে বহু যুগ আগের কথা— লখনউয়ের এক ব্যবসায়ী মালিক কাশিম হুগলি নদীর পাড়ে এক বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেন, বর্তমানে যার ঠিকানা হুগলি জেলার চুঁচুড়া মহকুমা। প্রায় ৮ বিঘা জমির উপর বিশাল বাড়িটির ঠিক মতো দেখভাল না করতে পেরে কাশিমের ছেলে তা বিক্রি করে দেয় হাজিবাবা কাজারেনি নামে এক ব্যক্তির কাছে। পরবর্তী কালে বাড়িটি আরও এক দফায় হাতবদল হয়ে আসে পদ্মলোচন মণ্ডলের জিম্মায়। দু’টি ঘাট বিশিষ্ট এই বাড়িটির বর্তমানে একটিই অবশিষ্ট, অন্য ঘাটটি ঢাকা পড়ে গিয়েছে নানাবিধ নির্মাণের তলায়। এই দুই ঘাটের জন্যই জায়গার নাম ‘জোড়াঘাট’। ঐতিহাসিকদের মতে, পলাশির যুদ্ধের সময় নির্মিত এই বাড়িটির বয়স এখন প্রায় ২২৫ বছর।
ইতিহাস বাদ দিলে মালিক কাশিমের এই বাড়ির আরও একটি দিক আছে। |
|
১৮৭৬-৭৭ সাল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তখন হুগলি জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর পৈতৃক ভিটে নদীর অপর পারে, নৈহাটির কাঁঠালপাড়া গ্রামে। চাকরির সুবাদে তাই বাড়ি ভাড়া করেন চুঁচুড়ায়। লেখালেখির সঙ্গে সঙ্গীত চর্চাও করতেন বঙ্কিমচন্দ্র। বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন মালিক কাশিমের এই বাড়িটি। সেই সময় বাড়ির মালিক ছিলেন কাশিম। তাঁর অগুনতি সৃষ্টির মধ্যে ‘আনন্দমঠ’ রচনা শুরু হয় চুঁচুড়ায় আসার আগে থেকেই। উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের একাদশ প্রচ্ছদের জনপ্রিয় অংশ ‘বন্দে মাতরম’ কবিতাটির যে সুরের সঙ্গে পরিচিত আপামর দেশবাসী, সেই সুর সৃষ্টি হয় এই ভবনেই, তাই নাম হয় ‘বন্দে মাতরম ভবন’। গানটি কবিগুরুর কন্ঠেই সর্বপ্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৯৬ সালে। কবিতায় সুর দিয়েছিলেন ক্ষেত্রনাথ ভট্টাচার্য।
বর্তমানে ‘বন্দে মাতরম ভবন’ চুঁচুড়া পুরসভার ‘হেরিটেজ কমিটি’র তত্ত্বাবধানে। লাগোয়া ঘাটের দিক থেকে দু’টি ঘর খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। প্রথম ঘরে বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর পারিবারিক বেশ কিছু ছবি আছে। দ্বিতীয় ঘরে রয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন মুহূর্ত-সহ নানা স্থাপত্যের ছবি। আসবাবহীন দু’টি ঘরের দ্বিতীয়টিতে রাখা আছে একটি আরামকেদারা। রামগতি ন্যায়রত্নের পরিবারের তরফ থেকে আরামকেদারাটি উপহার দেওয়া হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রকে।
|
• ইতিহাসের মাদ্রু উপত্যকা |
সারাকেনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্ডোরার স্থানীয়রা তাঁকে সাহায্য করায়, প্রথানুয়ায়ী শার্লাম্যান দ্য গ্রেট সেই গোষ্ঠীর যাজককে তাদের প্রধান স্বীকৃত করেন ৮০৫ সালে। মাদ্রু-পেরাফিতা-ক্লারোর এ দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহত্ জলজ স্থান। আদতে মাদ্রু হল হিমবাহ বিশিষ্ট একটি উপত্যকা। আন্ডোরার প্রায় ৯ শতাংশ জায়গা জুড়ে এই উপত্যকা দেশের সর্বপ্রথম ও এখনও পর্যন্ত এক মাত্র বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত স্থান। ২০০৪ সালে এর নাম নথিভুক্ত হয় এবং ২০০৬ সালে উপত্যকার পার্শ্ববর্তী কিছুটা অঞ্চলও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিন পাশ পাহাড় বেষ্টিত এই উপত্যকা ও আন্ডোরার মূল ভূমি পায়ে হাঁটা কয়েকটি ‘ট্রেল’ দ্বারা যুক্ত। গাড়ি চলাচলের কোনও অবকাশই নেই! এ কারণেই জনবসতি সে ভাবে গড়ে ওঠেনি এই অঞ্চলে। যে অল্প সংখ্যক মানুষ এখানে থাকে তাদের জীবনধারণের প্রধান রসদ প্রাণীসম্পদ। বর্তমানে অবশ্য পর্যটন শিল্প ও নানাবিধ ‘পাহাড়ি’ খেলাধুলোর রমরমায় এই জায়গায় গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু ‘স্কি রিসর্ট’। প্রকৃতির অকৃপণ দান ও তার সঙ্গে ত্রয়োদশ শতকের এক অভূতপূর্ব প্রাদেশিক জমি অধিগ্রহণ প্রথা— এই দুই কারণের জন্যই এই উপত্যকা যথার্থই ঐতিহ্যমণ্ডিত।
|
• নানা রূপে ভিনালে উপত্যকা |
কিউবার পিনার দেল রিও অঞ্চলের প্রায় ১৩২ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ভিনালে উপত্যকা— দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রোর খুবই পছন্দের জায়গা।
বেলেপাথরে তৈরি কিউবার এই জায়গা ক্ষয় হয়ে উপত্যকার রূপ নিয়েছে, যার প্রায় গোড়া থেকেই উঠে গিয়েছে খাড়া পাহাড়। খাড়া হলেও পাহাড়চূড়াগুলি গোলাকৃতি, খানিকটা ধানের গোলার মতো। তাই তাদের আঞ্চলিক নাম ‘মোগটস’, যার অর্থ ধানের গোলা। পাহাড়ের গায়ে গাছগাছালি না থাকলেও, মাথায় তাদের সবুজের সমাহার। অনেক গুহা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাহাড়ের পাদদেশে। কথিত আছে, বহু যুগ আগে মানুষের বসবাস ছিল এই গুহায়।
উপত্যকার নামানুসারে সৃষ্ট ভিনালে গ্রামটির গোড়াপত্তন হয় ১৮৭৫ সালে। ঐতিহাসিক গুণসম্পন্ন উপত্যকাটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বেশ কিছু সামরিক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে চাষাবাদের কাজ হয় এই অঞ্চলে— মূলত তামাক চাষ। উপত্যকার উর্বর মাটি ও আবহাওয়ার বিশিষ্টতার জন্য বেশ কিছু লুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণী দেখা যায় এখানে, যেমন বি হামিংবার্ড, কিউবার ট্রোগোন, টোডি, সলিটেয়ার ও গ্লাসকুইট। দেশের সব থেকে ‘সবুজ’ জায়গা এই ভিনালে উপত্যকা। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-এর টানে উপত্যকাটি হয়ে উঠেছে স্থানীয় পর্যটন স্থানও— রক ক্লাইম্বিং, হাইকিং করতে আশপাশের ভ্রমণপিপাসুরা আসেন এখানে।
১৯৯৯ সালে মরোক্কোর মারাকেশে আয়োজিত ইউনেস্কোর ২৩তম অধিবেশনে ভিনালে ভ্যালি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার ‘সাংস্কৃতিক’ বিভাগে নথিভুক্ত হয়। ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাসের যুদ্ধ— তার সঙ্গে এই অঞ্চলের স্থাপত্যশিল্প, হস্তশিল্প ও সঙ্গীত এবং সবশেষে হাজার বছর ধরে চলে আসা চাষ পদ্ধতি— ঐতিহ্যর পক্ষে বোধহয় একটু বেশিই!
|
• দার্জিলিং-এর টয় ট্রেনের জন্য ইউনেস্কোর ৪০ কোটি |
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইন সংরক্ষণ করে তা পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দিতে না পারলে দার্জিলিং রেলকে ‘এনডেনজার’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে রেলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যদি শেষ পর্যন্ত ওই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় তবে তাতে দেশের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। আর এ কারণে দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা মন্ত্রকের। পাগলাঝোরা ও তিনধারিয়ায় ভূমিকম্পের জেরে ৮৮ কিলোমিটার এই রেললাইন এখন কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত। ফলে নিউজলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং— এই গোটা রুটটির বদলে পর্যটকদের কথা ভেবে ভাগ ভাগ করে ট্রেন পরিষেবা চালু রাখতে বাধ্য হয়েছে রেল। মন্ত্রক জানিয়েছে, বর্তমানে দার্জিলিং ও ঘুমের মধ্যে ৪টি ট্রেন ছাড়াও দু’টি ট্রেন চালানো হয় দার্জিলিং এবং কার্শিয়াঙের মধ্যে। এ ছাড়া, জঙ্গল সাফারি নামে একটি ট্রেন চলছে শিলিগুড়ি এবং রংটং-এর মধ্যে। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় থাকা ওই লাইনের মেরামতি কে করবে তা নিয়ে বিবাদ এখনও মিটিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্যের পূর্ত দফতর ও কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। তাই লাইন মেরামতির কাজে এগিয়ে এসেছে ইউনেস্কোই। এই কাজের জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা মঞ্জুর করবে তারা।
|
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার |
সাহারার মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রপাড়ে |
সময়কাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলের ওয়েসেল দ্বীপপুঞ্জের ঘটনা। দ্বীপগুলির একটিতে অবসর সময় কাটাতে গিয়েছিলেন এক অস্ট্রেলীয় সেনা। তাঁর নাম মরি আইসেনবার্গ। সমুদ্রসৈকতে বসে মাছ ধরার সময় হঠাত্ই বালির মধ্যে থেকে অনেকগুলো মুদ্রা খুঁজে পেলেন তিনি। মুদ্রাগুলো কোন সময়ের এবং কোথা থেকেই বা এল তা জানার জন্য সেগুলোকে তিনি মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যে জায়গা থেকে আইসেনবার্গ মুদ্রাগুলি পেয়েছিলেন মানচিত্রে সেই জায়গাটি ‘X’ চিহ্নিতও করে রাখলেন। আবিষ্কৃত মুদ্রাগুলির ইতিহাস ধামাচাপাই থাকত যদি না প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাকিনটস উদ্যোগ নিতেন! পরীক্ষা করার পর তিনি জানতে পারেন মুদ্রাগুলি ১ হাজার বছরের পুরনো। পাশাপাশি এই আবিষ্কার কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছে। প্রথমত, এত পুরনো মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ার সুদূর জনমানবহীন দ্বীপে কী ভাবে এল? দ্বিতীয়ত, ক্যাপ্টেন জেমস কুকের আগে অন্য কোনও পর্যটক কি তা হলে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছিলেন?
ম্যাকিনটস ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দল মুদ্রাগুলির সময়কাল পরীক্ষা করেন। তাঁরা দেখেন, এদের মধ্যে পাঁচটি মুদ্রার সময়কাল ৯০০-১৩০০ অব্দের। অর্থাত্ এগুলি আফ্রিকার কিলওয়া রাজত্বকালের। জানা যায়, ১৩ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে ভারতের সঙ্গে কিলওয়ার সমুদ্রবাণিজ্য চলত। ম্যাকিনটস জানিয়েছেন, যে তাম্র মুদ্রাগুলি পাওয়া গিয়েছে সেগুলি আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলেই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সুদূর অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপে প্রাপ্ত মুদ্রাগুলি ওই অঞ্চলে ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে বলে মত তাঁর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এক হাজার বছর আগে পূর্ব আফ্রিকা, আরব ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রবাণিজ্যের কারণে মুদ্রাগুলির দেশান্তরীকরণ হয়েছে। এ দিকে আইসেনবার্গ জানিয়েছেন, তাঁর প্রাপ্ত তাম্র মুদ্রাগুলির মধ্যে চারটি ১৬৯০ সালের ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। কিছু মুদ্রার সময়কাল জানা গেলেও পুরো বিষয়টি সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড় করতে ওয়েসেল দ্বীপপুঞ্জে অভিযান চালাবেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকিনটস। শুধু তাই নয়, দ্বীপের বাসিন্দা ও তাদের ঐতিহ্য-রীতি কেমন ছিল তা জানতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে বলে অভিমত তাঁর।
|
• একাই ঘোরে প্রাচীন মূর্তি |
‘মমির অভিশাপ’— টিনটিনের বিখ্যাত কমিকস। এ বার সেই ‘অভিশাপ’ বাস্তবে দেখা দিল ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার জাদুঘরে। অন্তত এমনটাই দাবি জাদুঘরের কিউরেটরদের। জাদুঘরের মধ্যে একটি কাচের বাক্সে রাখা ছিল প্রায় ৪ হাজার বছর আগের একটি মূর্তি। হঠাত্ই এক দিন ঘুরে যায় এই মূর্তির মাথা। ১৯২০ সালে প্রায় দশ ইঞ্চি লম্বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এই মূর্তিটি ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এক ফারাওয়ের মমির সঙ্গে আবিষ্কার করেন একদল বিজ্ঞানী। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী তখন থেকেই নেমে আসে ‘ফারাওয়ের অভিশাপ’। জাদুঘরের অন্যতম প্রধান কিউরেটর ক্যাম্পবেল প্রাইসের মতে এই ঘটনার সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগ স্পষ্ট। তার মতে মমির আত্মা বেরিয়ে এসে মূর্তিটির মধ্যে ঢুকে পড়ায় শুরু হয়েছে যত বিপত্তি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সিসি টিভির ফুটেজ দেখেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে দেখা যায় বাইরের কোনও প্রভাব ছাড়াই নিজে থেকে ঘুরছে মূর্তির মাথা। তাঁদের মতে জাদুঘরে দর্শকদের হাঁটা চলার জন্য যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবেই সম্ভবত ঘুরে গিয়েছে মূর্তির মাথা। কিন্তু ক্যাম্পবেলের প্রশ্ন বহু দিন ধরে একই বাক্সে বন্ধ থাকা মূর্তিটি হঠাত্ই হাঁটা চলার কম্পনের ফলে ঘুরতে শুরু করল কী করে? এই ভুতুড়ে চলনের রহস্য সমাধানে উঠেপড়ে লেগেছেন বিজ্ঞানীরা।
|
• মধ্যযুগীয় নরখাদকের সন্ধান |
নরখাদক নিয়ে বিশ্বে বহু কাহিনি প্রচলিত আছে। পাশাপাশি এদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রচুর প্রামাণ্য তথ্যও পাওয়া যায়। সম্প্রতি আমেরিকার ‘মধ্যযুগীয়’ জেমসটাউনে স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি-র গবেষকরা নরখাদকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। উত্তর আমেরিকার প্রথম ব্রিটিশ কলোনি গড়ে উঠেছিল জেমসটাউনে। প্রায় ৩০০ বাসিন্দা থাকত এখানে। ১৬০৯-১০ সালের মধ্যে ওই অঞ্চলে প্রবল দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইতিহাসবিদরা এই সময়কে ‘স্টার্ভিং টাইম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গবেষকদের ধারণা, খাদ্যের শেষ দানাটুকু নিঃশেষিত হওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বহু মানুষ। যাঁরা বেঁচেছিল উপায়ান্তর না দেখে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ থেকেই খিদে মেটাতে শুরু করে তারা। বিষয়টি প্রথম সামনে আসে একটি চোদ্দো বছরের মেয়ের কোপানো খুলি ও সিনবোনের অংশবিশেষ পাওয়ার পর। গবেষকরা মেয়েটির নাম দেন ‘জেন’। ১৬০৮ সালের জেমস ফোর্ট সংলগ্ন একটি বাড়ির গুমঘর থেকে উদ্ধার হয় এগুলি। গবেষক ডগ ওসলে জানান, ক্ষুধার্তেরা মূলত ঘিলু, জিভ ও মুখের মাংসের কারণেই মেয়েটির মৃত্যুর পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় তাকে। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে নরখাদকের শিকার মানুষের দেহের কাটা চিহ্নগুলির সঙ্গে ‘জেন’-এর অনেক মিল পাওয়া গিয়েছে। কপালের উপর চারটি কোপানোর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এর থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রথমে খুলিটা সামনের দিক থেকে কাটার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় খুলির পিছনের দিকটা ফাটিয়ে ঘিলু বের করা হয়েছে। শুধু জেন-ই নয়, আরও বহু মৃত মানুষের মাংস প্রাণ বাঁচিয়েছিল প্রায় ৬০ জন বাসিন্দার। ওই অঞ্চলে নরখাদক সম্পর্কে এত দিন পাঁচটি ঘটনার লিখিত বর্ণনা পাওয়া গেলেও এই প্রথম সেই তথ্য প্রমাণিত হল বলে জানিয়েছেন স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম ডিরেক্টর উইলিয়াম কেলসো।
|
• ভয়নিশ পাণ্ডুলিপির ‘মর্মোদ্ধার’ |
বিশ্বের সর্বাধিক রহস্যজনক পাণ্ডুলিপি ভয়নিশ। পঞ্চদশ শতকের প্রথম দিকের এই পাণ্ডুলিপিটি প্রায় পাঁচশো বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। অবশেষে ১৯১২ সালে ইতালির এক পুরনো বই বিক্রেতার মাধ্যমে এটি জনসমক্ষে আসে। পাতলা পার্চমেন্ট কাগজে বাঁধানো এই বইটির বেশ কিছু পাতা হারিয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট ২৪০ পাতার বেশির ভাগেই লেখার সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ছবি। বিভিন্ন গাছ ও তাদের ওষধি গুণ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে এই পাণ্ডুলিপিতে। কিন্তু আধুনিক গাছপালার সঙ্গে কোনও মিল নেই পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত গাছগুলির। এমনকী বইতে লেখা ভাষাও সম্পূর্ণ অজানা। এর পর থেকেই শুরু হয় লিপি পাঠোদ্ধারের কাজ। পেশাদার, অপেশাদার বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেন। লিপি পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সাঙ্কেতিক ভাষার বিশেষজ্ঞরা। তবে ব্যর্থ হন সকলেই। ধীরে ধীরে এটিকে মধ্যযুগের ‘ফাঁকি’ বলে মন্তব্য করতে শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৬৯ সালে ভয়নিশ পাণ্ডুলিপি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে স্থান পায়। সম্প্রতি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ মার্সেলো মন্টেমুরো পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নকশার খোঁজ পান। এই ধরনের নকশা যে কোনও চলতি ভাষার ক্ষেত্রে দেখা যায়। এর পর থেকেই ফের নতুন করে শুরু হয়েছে ভয়নিশ পাণ্ডুলিপির মর্মোদ্ধারের কাজ। খুব শীঘ্রই এর পাঠোদ্ধার করা যাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
|
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ |
• চৌকিদার হাঁস |
অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই রক্ষণবেক্ষণের কাজ এরা ভালই সামলায়। চ্যাপ্টা হলদেটে ঠোঁট ও গলার কর্কশ ডাক— এ দু’টি হাতিয়ারই যথেষ্ট। চিনের জিনঝিয়াং প্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় বহু দিন থেকেই পুলিশ ফাঁড়ি পাহারা দিচ্ছে হংসকুল। চৌকিদারের ভূমিকা পালনে এতটুকু খামতি নেই তাদের, হাসিমুখে জানিয়ছেন সেখানকার পুলিশকর্মীরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ছেড়ে হঠাত্ হাঁসেদের উপর এত ভরসা কেন পুলিশকর্মীদের? সাংবাদিকদের কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা জানিয়েছেন, কম কাঠখড় পুড়িয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হাঁসেদের দিয়ে হয়ে যায় এবং এর জন্য কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। অডোবন কানেক্টিকাটের পক্ষী সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্ণধার প্যাট্রিক কামিনস জানিয়েছেন, হাঁসেদের শ্রবণশক্তি খুব বেশি, পাশাপাশি এদের দৃষ্টিশক্তিও যথেষ্ট প্রখর। খুব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুও এদের চোখ এড়ায় না, এমনকী যা মানুষের অসাধ্য অর্থাত্ আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিও এদের চোখের পর্দায় ধরা পড়ে। আবার পালন পোষণেও খুব বেশি খরচ নেই। সামান্য ভুট্টার দানা ও ঘাসেতেই দু’বেলার খোরাক হয়ে যায়। পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থানার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখলেই এরা তারস্বরে চিত্কার-চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। এদের সমবেত কণ্ঠের প্যাঁকপ্যাঁকানিতে রাতের সুখনিদ্রাও ভাঙতে বাধ্য। তাই অনেকসময় গ্রামবাসীরা তাদের মুরগির খামার পাহারা দেওয়ার দায়িত্বও হাঁসেদের উপর ছেড়ে নিশ্চিন্ত থাকে। লোভ দেখিয়ে এদের বশে আনা কঠিন। গ্রামবাসীদের মতে, কোনও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি যদি লোভনীয় খাবার ছুঁড়ে এদের বশে আনার চেষ্টা করে তা হলে এরা রীতিমতো চোখ পাকিয়ে তার দিকে তেড়ে যায়। এর পর চিনের কোনও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় যদি কোনও সত্ ও সাহসী হাঁসকে চোখ পাকিয়ে তেড়ে আসতে দেখা যায়, তা হলে ধরে নিতে হবে ‘অন ডিউটি’তেই এরা কোনও চোরের পিছনে ধাওয়া করেছে।
|
• খরা রুখবে ‘নতুন গাছ’ |
সুপার হিউম্যানদের পৃথিবী রক্ষার গল্প তো অনেক হল। কল্পবিজ্ঞানের জগত্ ছেড়ে এ বার বাস্তবের মাটিতে পা রাখলেন বিজ্ঞানীরা। তৈরি করলেন ‘সুপার প্ল্যান্ট’। কাজ সেই একই— বিশ্ববাসীর মঙ্গল। খোদার উপর খোদগারি করার মতোই কৃত্রিম উপায়ে বিশেষ জিনগতপ্রযুক্তির সাহায্যে সর্ব গুণ সম্পন্ন ‘সুপার প্ল্যান্ট’ তৈরি করলেন ইজরায়েলের একদল বিজ্ঞানী। এই গাছ শুধু খরা প্রতিরোধই করবে না, জল ছাড়াই বাঁচবে বহু বছর এবং অনেক বেশি খাদ্য উত্পাদন করবে, এমনটাই দাবি হাইফার টেকনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের। এই গবেষণার বিষয়টি সর্ব প্রথম প্রকাশিত হয় আমেরিকার ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সাইন্সেস’-এ। ভবিষ্যত্ পৃথিবীর খাদ্য সমস্যা মেটাতে এই গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মত টেকনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রেসিডেন্ট ও মুখ্য গবেষক সিমসন জেপস্টেইনের। বিজ্ঞানীরা জানালেন, কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধিজ অঙ্গে সাইটোকাইনিন হরমোনের আয়ু বাড়িয়ে গাছের জীবত্কাল বহু গুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। সাইটোকাইনিন হরমোন সাধারণত উদ্ভিদের কোষ বিভাজন ঘটায় এবং জরা বা বার্ধক্য রোধে অগ্রনী ভূমিকা নেয়। সিমসন জানিয়েছেন, কৃত্রিম পদ্ধতিতে সাইটোকাইনিনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র গাছেদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিই নয় উদ্ভিদজাত ফল বা শস্যের সতেজতাও বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ লেটুস যেখানে ৫-৬ দিন অবধি তাজা থাকে সেখানে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বা ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ লেটুস কমপক্ষে ২১ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকবে। ‘সুপার প্ল্যান্ট’দের অপর একটি বিশেষত্ব— অন্যান্য উদ্ভিদের থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ কম জল পেলেই এরা বহু দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে, এমনকী খরাপ্রবণ অঞ্চলে জল ছাড়াই বছরের পর বছর এরা জীবনধারণে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই উদ্ভিদজাত দ্রব্য মানব শরীরের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও খুব শীঘ্রই গ্রিনহাউসের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে এর প্রয়োগ শুরু করা সম্ভব হবে।
|
• জেব্রাদের পথ চলা |
আফ্রিকা নামটির সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে রহস্যময়তা। আদিম, বন্য কোনও অচেনা হাতছানি। জানা ও অজানা বিচিত্র পশুপাখির সহাবস্থান এখানে। বিশাল আফ্রিকা মহাদেশে পশু সংরক্ষণের জন্য তাই গড়ে উঠেছে অসংখ্য অভয়ারণ্য। নাসার জিপিএস স্যাটেলাইট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আফ্রিকার দক্ষিণে অবস্থিত স্থলবেষ্টিত দেশ বটসওয়ানাতেই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেব্রাদের উপস্থিতি। বটসওয়ানা একটি অর্ধ-ঊষর মালভূমি, সমুদ্র সমতল থেকে যার গড় উচ্চতা ১,১০০ মিটার। এখানকার জলবায়ু উপক্রান্তীয় এবং এটি প্রায় বৃক্ষহীন সাভানা তৃণভূমিতে আবৃত। বটসওয়ানার দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান, পশ্চিম ঘিরে রেখেছে নামিবিয়া এবং আফ্রিকার ন’টি দেশ। দেশজুড়ে থাকা বিশাল কালাহারি মরুভূমি দখল করে আছে বটসওয়ানার প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা। নাসা সূত্রে খবর, এখানকার প্রায় ২২ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম অন্তর্দেশীয় বদ্বীপ ‘ওকাভাঙ ডেল্টা’ অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি জেব্রাদের দেখা যায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, অন্তত ৫৮০ কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ করে বটসওয়ানার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ম্যাকগ্যাডিকগাড়ি সল্ট প্যানেও জেব্রাদের গতিবিধি নজরে এসেছে। জায়গাটি মূলত শুষ্ক খরাপ্রবণ এলাকা হলেও মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার জন্যই জেব্রারা সুষম খাদ্যের সন্ধানে একস্থান থেকে অন্য স্থানে বিচরণ করে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জেব্রাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নাসার জিপিএস নেটওয়ার্ক বটসওয়ানা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিবর্তনও নথিবদ্ধ করে। ২০০৮ সালে জেব্রাদের গতিবিধি সংক্রান্ত গবেষণা ‘দি জেব্রা মাইগ্রেশন রিসার্চ প্রজেক্ট’ প্রথম শুরু হয়। ১৯৭০-এ বর্ষা শুরুর প্রারম্ভে বটসওয়ানার ওকাভাঙ ডেল্টা থেকে ম্যাকগ্যাডিকগাড়ি সল্ট প্যান অবধি জেব্রাদের চলাচল প্রথম নজরে আসে বিজ্ঞানীদের। এর পর নানা কারণে ১৯৬৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশেষ উপায়ে বেড়া দিয়ে এই স্থানান্তরণ আটকে দেওয়া হয়। ২০০৪-এর পর থেকে ফের এক বার এই বেড়া সরিয়ে দিলে জেব্রাদের বিচরণ শুরু হয় এবং জিপিএস কলারের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এই চলাচলের খুঁটিনাটি ধরে রাখা শুরু করেন। শুষ্ক ও খরাপ্রবণ বটসওয়ানার কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সবুজ উদ্ভিদ আছে তা জানতে নাসা প্রেরিত ‘টেরা’ ও ‘অ্যাকোয়া’ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়াও নাসার ‘ট্রপিক্যাল রেইনফল মেজারিং মিশন ডেটা’ সাপ্তাহিক ও মাসিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধরে রাখে। এই তথ্যগুলিকে পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে জেব্রাদের স্থানাগমন বংশগত বা স্বভাবজাত নয়, বরং খাদ্য ও জলবায়ুর পরিবর্তন এই দুইয়ের প্রাদুর্ভাবই জেব্রাদের স্থানান্তরিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই তথ্যগুলির সাহায্যেই ভবিষ্যতে পশু সংরক্ষণের আরও অভিনব পন্থার উদ্ভাবন হয়তো সম্ভব হবে।
|
• চরিত্রবান মাকড় |
আকারে ছোট ও ছ’টি পায়ে হাঁটে বলে এদের তুচ্ছ ভাবার কোনও কারণ নেই। মনুষ্য সমাজের মতো ব্যক্তিত্বের দৌড়ে পিছিয়ে নেই মাকড় সমাজও। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপিকা লিনা গ্রিনস্টেড জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় মাকড়সারা। বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সাদের উপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ৪৪ হাজার মাকড় প্রজাতির মধ্যে মাত্র ২৫ রকমের প্রজাতি দলবদ্ধ ভাবে থাকে। এদের মধ্যে স্টেগোডাইফাস সারাসিনোরাম নামক প্রজাতির মাকড়সারা অনেক বেশি সঙ্ঘবদ্ধ। এরা কলোনি তৈরি করে থাকে। এক একটি দলে বিভিন্ন স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মাকড়সা থাকে। এদের মধ্যে কেউ খুব সাহসী, কেউ বা আবার ভীরু প্রকৃতির। কেউ আক্রমণাত্মক তো কেউ বা লাজুক প্রকৃতির। সাহসীদের কাজ শিকার ধরা ও জালের রক্ষণাবেক্ষণ। ভীরুরা প্রধাণত রাজমিস্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে জাল বোনে ও জালের দেখভাল করে। লাজুক ও মুখচোরারা আবার শান্ত স্বভাবের। এরা কথায় কথায় চোখ রাঙায় না, বরং এক জায়গায় থাবা গেড়ে বসে ড্যাবডেবে আটটি চোখ মেলে প্রকৃতির শোভা দেখে। অনেক সময় আবার গম্ভীর মুখে বিচার-বিবেচনার কাজও সামলায়। দলের মহিলারাও কাজের নিরিখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এদের কাজ বাড়ির সকল সদস্যকে ঠিকঠাক খাবার পরিবেশন করা, ডিমের তদারকি করা আবার অনেকসময় সাহসী মহিলারা পুরুষদের ধরে আনা ‘অবাধ্য’ শিকারকে বশে আনতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রিনস্টেড দেখেছেন, পরিবারের বাইরের কেনও সদস্য বা অন্য প্রজাতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে যে সব স্টেগোডাইফাসরা তারা অনেক বেশি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী। আবার নতুন নতুন অতিথিদের সঙ্গে যাদের নিত্য ওঠাবসা তারা বহুমুখী চরিত্রের পরিচয় দেয়।
|
পার্বণ |
• ভাদর মাসে ভাদু পুজো |
পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার একটি পার্বণ ভাদু। ভাদ্র মাসে এখানকার গ্রাম্য নিঃসন্তান মহিলারা ভাদু দেবীর পুজো করেন সন্তান লাভের আশায়। তবে শুধু সন্তান লাভ নয়, অবিবাহিত মেয়েরা তাদের মনের মতো স্বামী পাওয়ার আশায় ভাদু দেবীর আরাধনা করেন। ভাদ্র মাসের প্রথম দিন থেকে সারা মাস ধরে চলে এই পরব। ভাদু উত্সবের পেছনে একটা কাহিনি আছে।
এ দেশে তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ভদ্রাবতী বা ভাদু যাঁকে কেন্দ্র করে বছরের পর বছর ধরে বাংলার এই ভাদু উত্সব, তিনি ছিলেন পুরুলিয়ার এক জমিদার পরিবারের মেয়ে। পাশের গ্রামের এক কবিরাজের ছেলে অঞ্জনকে ভালবাসতেন তিনি। জমিদারের অজান্তেই যত দিন যায় তাঁদের প্রেম হয়ে ওঠে আরও গভীর। দেশে তখন সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় সিপাহীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে ভাদুর পিতা জমিদার ধ্রুবচাঁদকে বন্দি করল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বেশ কিছু দিন পর মুক্তি পেয়ে ঘরে ফিরলেন ধ্রুবচাঁদ। লোকমুখে শুনতে পেলেন মেয়ের ভালবাসার কথা। |
|
রেগে গিয়ে কবিরাজের ছেলে অঞ্জনকে খাস পেয়াদা দিয়ে তুলে এনে গুমঘরে বন্দি করলেন জমিদার। দিনের পর দিন অঞ্জনের দেখা না পেয়ে আকুল হয়ে গান গেয়ে পথে পথে খুঁজে বেড়াতে থাকলেন ভদ্রাবতী— আশা, এই গান শুনে যদি অঞ্জন সাড়া দেয়! কিন্তু দিন যায়, মাস ঘুরে বছর পেরোয়, দেখা মেলে না অঞ্জনের। এ দিকে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে অঞ্জনকে মুক্তি দিলেন ধ্রুবচাঁদ। কিন্তু ততদিনে হারিয়ে গিয়েছে ভাদু। অনেক খুঁজেও মেয়ের খোঁজ পেলেন না ধ্রুবচাঁদ। অঞ্জনের খোঁজে ব্যাকুল ভদ্রাবতীর এই গাওয়া গানগুলিই ভাদু গান নামে পরিচিত।
আজও গোটা ভাদ্র মাস জুড়ে গ্রাম বাংলায় মেয়ে বউরা ভাদু গান গেয়ে থাকেন। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার পাশাপাশি বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলাতেও এই পরব নিষ্ঠার সঙ্গেই পালিত হয়। ভাদু উত্সবকে ঘিরে এই চার জেলায় অসংখ্য ছোট বড় মেলা বসে। ভাদ্র মাসের শেষ দিনে ভাদু দেবীর বিগ্রহ বা ছবি বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এই উত্সব শেষ হয়।
|
• ছাতা পরব |
পুরুলিয়ার একটি জনপ্রিয় লোক উত্সব ছাতা পরব। বিগত প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ দিনে এই পরব পালিত হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে পঞ্চকূট রাজপরিবারের সদস্যদের হাতে এক বিশাল সাদা ছাতা খোলার মধ্যে দিয়ে আজও এই উত্সবের সূচনা হয়। এই ছাতাটিকে বলা হয় ‘ইন্দ্রধ্বজ’। প্রতি বছরই চাকোলতোড়ের মাঠে সারা রাত ধরে নাচ, গান হৈহুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে পালিত হয় ছাতা পরব। বর্ষার দেবতাকে তুষ্ট করে নিয়ম মেনে পুজো দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরবে অংশ নেন হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ। তাঁদের (অবিবাহিত যুবক-যুবতী) কাছে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার পরব— ছাতা পরবকে তাই সামাজিক সয়ম্বরসভাও বলা চলে। বিশাল শাল গাছের খুঁটির উপর বিরাট ছাতার নীচে সমবেত কয়েক হাজার আদিবাসী যুবক-যুবতীর জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় এই সময়। ছাতা পরব তাদের কাছে ভালবাসা আদানপ্রদানের একটি পবিত্র পার্বণ। এই উত্সবেই পুরুলিয়ার বিখ্যাত নাচনিদের দেখা মেলে। সারা রাত ধরে মহুয়া আর মাদোল— গানের নেশায় আচ্ছন্ন থাকে কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষ। সঙ্গে উত্সবের টানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা অসংখ্য পর্যটক।
|
• সাইর মেলা |
হিমাচল প্রদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মেলা সাইর। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে এই মেলা পালিত হয়। সাইর উত্সবের মূল আকর্ষণ এখানে আয়োজিত ষাঁড়ের লড়াই। হিমাচল প্রদেশের সোলানে এই লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। সামান্য প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভিড় জমান ষাঁড়ের লড়াই দেখতে। তবে শুধু ষাঁড়ের লড়াই নয়, বিভিন্ন ধারার নাচ ও গানের অনুষ্ঠানের আকর্ষনীয় আসর বসে। এই অনুষ্ঠানের টানেই শুধু হিমাচল নয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন পর্যটকরা। বাকি আর পাঁচটা মেলার মতোই বাহারি জিনিসের হাজারো সামগ্রির পসরা সাজিয়ে বসেন স্থানীয় দরিদ্র ব্যবসায়ীরা। রংবেরঙের পোশাকে নিজেদের রাঙিয়ে বর্ণময় হিমাচলের বৈচিত্র আরও বাড়িয়ে এই সাইর মেলায় আসেন স্থানীয় মহিলা ও শিশু। মেলায় হিমাচলের প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ধারার সংস্কৃতির মিশেল ঘটে।
|
• করম পরব |
করম পরব পুরুলিয়ার একটি অন্যতম শস্য উত্সব। অগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় অর্থাত্ বাংলার ভাদ্র মাসে পালিত হয় এই পরব। এই পরবটি মূলত পুরুলিয়ার কৃষিজীবী পরিবারগুলি পালন করে। একটি বেতের ঝুড়িতে মাটির মধ্যে একই সঙ্গে একাধিক প্রকারের শাক-সব্জির চারা লাগানো হয়। নানা ধরনের সব্জির চারা লাগানো এই বেতের ঝুড়িটির স্থানীয় নাম জওয়া। দিনের বেলায় জওয়াটিকে রেখে দেওয়া হয় একটি অন্ধকার ঘরে। আর সন্ধে হলেই এই বেতের ঝুড়িকে ঘিরে গ্রাম্য যুবতী-বধূরা মেতে ওঠেন নাচে গানে। এই জওয়াই তখন তাদের কাছে হয়ে ওঠে ঈশ্বরের দান, অন্নপুর্ণার কৃপা। এটি নেহাতই গ্রাম্য মেয়ে-বউদের ঘরোয়া একটি পার্বণ হলেও পুরুলিয়ার কৃষিজীবী পরিবার বা স্থানীয় আদিবাসী মানুষের কাছে এর গুরুত্ব অনেক।
|
পর্যটন কেন্দ্র |
• চিনের ‘লিটল ভেনিস’ |
‘ভাসমান শহর’ শুনলেই ইতালির ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যময় শহর ভেনিসের কথা মনে আসে! কিন্তু এ শহরেরও যে একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ আছে সে কথা অনেকেরই অজানা। তবে সেই জায়গাটি ইতালিতে নয়, চিনে। সেখানকার এক ছোট্ট শহর ঝুজিয়াজিয়ো। চিনের সবচেয়ে ভাল ভাবে সংরক্ষিত জায়গাগুলির মধ্যে একটি। সাংহাই থেকে মাত্র দু’ঘণ্টার পথ। দিয়ানশান হ্রদের তীরে গড়ে ওঠা ১৭০০ বছরের পুরনো এই শহরটিই পরিচিতি পেয়েছে ‘লিটল ভেনিস’ নামে। টিকিট কাটার পরই শহরে প্রবেশের ছাড়পত্র পাবেন পর্যটকরা। ৬০ ইউয়ানের বিনিময়ে কাটা ওই টিকিটে ১০টি দর্শনীয় স্থান ও রিকশায় প্রমোদ ভ্রমণেরও সুযোগ মিলবে। ১৭০০ বছর আগের ছোঁয়া পাওয়া যায় এখানকার বাড়ি ও রাস্তাঘাটগুলিতে। শহররটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট নদী। পারাপারের জন্য রয়েছে ৩০টি পুরনো সেতু। বাড়িগুলি নদীগুলির গাঁ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। শহরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও আকর্ষণীয় স্থাপত্য ফ্যাংশেঙ সেতু— ১৫৭১ সালে মিঙ রাজত্বকালে তৈরি সবচেয়ে বড় পাঁচ খিলানবিশিষ্ট পাথরের সেতু। পুরো শহরকে চাক্ষুস করতে ৭০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুই আদর্শ স্থান। দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় মানুষদের মাছ ধরার রীতিনীতি ও সরঞ্জামের সংগ্রহশালা ‘ফিশারসম্যান হাউস’, চাইনিজ ফার্মাসি, কেঝি উদ্যান, ইউয়ানজিন বৌদ্ধ মন্দির ইত্যাদি। খাদ্যরসিকরা এখানকার সেরা কুইজিন ‘জারু’র স্বাদ নিতে যেন ভুলবেন না!
|
• চেন্নাইয়ের কোল ঘেঁষা ইতিহাসের ‘হাতছানি’ |
চেন্নাইয়ের আনাচে-কানাচে প্রচুর পর্যটনস্থল। একটু নথি ঘেঁটে অল্প সময়ের মধ্যেই দেখে নেওয়া যেতে পারে সেই জায়গাগুলি। এর সঙ্গে শহরের কোল ঘেঁষা কয়েকটি ঐতিহাসিক দূর্গও অনায়াসে ঘুরে নেওয়া যায়। কেননা এই শহরে এসে ইতিহাসকে চাক্ষুস না করাটা পর্যটকদের পক্ষে বড়ই বেমানান। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে রয়েছে—
• আলামপারাই ফোর্ট: মুঘল আমলে নির্মিত সপ্তদশ শতাব্দীর এই দুর্গটি রয়েছে কাদাপক্কমে। মহাবলীপুরম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্র সংলগ্ন দুর্গটির অধিকর্তা ছিলেন নবাব দোস্ত আলি খাঁ। তাঁর রাজত্বকাল শেষে ১৭৫০ সালে দুর্গটি ফরাসিদের উপহার দেন সুবেদার মুজফ্ফরজঙ। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা ফরাসিদের পরাজিত করে দুর্গটি দখল করে নেয়। আজও এর জৌলুসহীন গৌরব উপভোগ করার মতো। দুর্গটিকে ঘিরে থাকা ব্যাকওয়াটারে নৌকাভ্রমণ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
• রঞ্জনকুড়ি ফোর্ট: সপ্তদশ শতাব্দীর এই দুর্গটি পেরামবালুরের ১৭ কিলোমিটার উত্তরে। ১৭৫১ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও দাক্ষিণাত্যের নবাব চান্দা সাহিবের সঙ্গে বিখ্যাত ভালিকোন্ডা যুদ্ধের সাক্ষীবহ এই স্থান। |
|
|
|
উপরে জিঞ্জি, বাঁ দিকে আলামপারাই ও ডান দিকে রঞ্জনকুড়ি দুর্গ। |
|
• জিঞ্জি ফোর্ট: এটি তামিলনাড়ুর অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম। সাধারণত এই দুর্গটিকে ‘ট্রয় অফ দ্য ইস্ট’ বলা হয়ে থাকে। নবম শতকে চোল রাজারা এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। কালক্রমে এটি ফরাসি ও ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। দুর্গের ভিতরের শোভা, কল্যাণ মহল ও সামরিক ব্যায়ামাগার দেখার মতো।
• ভেল্লোর ফোর্ট: ষোড়শ শতাব্দীতে বিজয়নগরের সম্রাটরা এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। দুর্গটির বিশেষত্ব— মন্দির-মসজিদ-চার্চের সহাবস্থান।
|
• ‘আনকোরা’ লোলাবের হাতছানি |
আরও পর্যটক টানতে ভূস্বর্গকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিল জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন দফতর। নিত্য জঙ্গি হানায় জর্জরিত ভূস্বর্গের সৌন্দর্যকে পর্যটকবিমুখতা রুখতে কোনও কসুরই রাখছে না পর্যটন দফতর। ভূস্বর্গের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম কুপওয়ারা। এই জেলার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু লোলাব উপত্যকা। এর অপর নাম ‘ল্যান্ড অফ লাভ অ্যান্ড বিউটি’। সুদৃশ্য পাহাড়ঘেরা লোলাবের প্রধান আকর্ষণ ঝরনা ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাহার। উপত্যকা জুড়ে তার রঙিন শোভা অতুলনীয়। এই সৌন্দর্যকে নির্ভাবনায় উপভোগ করার মতো পরিবেশ তৈরিতে উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী জি এ মীর। তিনি জানান, লোলাব ছাড়াও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হবে বাঙ্গাস ও দ্রাঙ্গিয়ারির মতো জায়গাগুলিকে। তাই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এই খুশির বার্তা পৌঁছে দিতে এ বছরে লোলাব, বাঙ্গাস ও দ্রাঙ্গিয়ারিতে পর্যটন উত্সবের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের ট্রেকিং কেন্দ্র ছিল এই উপত্যকা। পরিস্থিতির চাপে ক্রমে তাতে ভাটা পড়েছে। মীর জানিয়েছেন, এই ট্রেকিং রুটকে পুনরায় চালু করলে স্থানীয় যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানেরও কিছুটা সুরাহা হবে। এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসাও অনেকটা চাঙ্গা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মীর।
|
• ‘গেটওয়ে অফ শ্রীনাথজি’— নাথদ্বার |
উদয়পুর থেকে মাত্র ৪৮ কিলোমিটার দূরে আরাবল্লী পাহাড়ের একটি ছোট্ট শহর নাথদ্বার। অপর নাম ‘গেটওয়ে অফ শ্রীনাথজী’। এই শহরের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু শ্রীনাথজি মন্দির। এখানকার আরাধ্য দেবতা কৃষ্ণ। তিনি এক হাতে গোবর্ধন পর্বত নিয়ে দণ্ডায়মান। ইতিহাস বলছে, প্রথম দিকে মথুরায় এই মূর্তিটির পুজো হত। কিন্তু মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের হিন্দু-বিদ্বেষ নীতির কারণে ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে মূর্তিটি নাথদ্বারে নিয়ে আসা হয়। তত্কালীন মেবারের রাজা রাজ সিংহের তত্ত্বাবধানে শ্রীনাথজির মন্দির নির্মাণ করা হয়। ভোর চারটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে মন্দির খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। খোলা থাকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত। মন্দির দর্শনের আদর্শ সময় সকাল ৬টা। এখানে বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। পিচোয়াই পেন্টিং, টেরাকোটা, ও হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসের জন্যও বিখ্যাত নাথদ্বার।
|
পরিষেবা |
• ১৭টি নতুন বিমানবন্দর গড়ার পরিকল্পনা |
দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছোট-বড় নানা জায়গায় ১৭টি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করার পরিকল্পনা নিল কেন্দ্র। বিমান প্রতিমন্ত্রী কেসি বেনুগোপাল রাজ্যসভায় এ কথা জানিয়ে সম্প্রতি বলেছেন, এর প্রধান লক্ষ্য দেশের শতরতলিগুলির মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এতে সার্বিক ভাবে দেশে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। অন্য দিকে, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সুগম হবে। কর্মসংস্থানও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। প্রস্তাবিত ১৭টি বিমানবন্দর গড়া হবে যথাক্রমে, মোপা, গোয়া, বিজাপুর, হাসান, শিমোগা, কর্নাটক, অরনমুলা, কন্নুর, সিন্ধুদুর্গ, নবি মুম্বই, শিরডি, দারবা, করাইকল, কুশিনগর, অণ্ডাল-ফরিদপুর, ইটানগর, কিষাণগড় এবং দেওঘর-এ।
|
• লখনউ ও গোয়ায় নতুন ট্রেন, চেন্নাই-তাঞ্জাভুরের মধ্যে রেল চালু |
লখনউ-নয়াদিল্লি এসি এক্সপ্রেস চালু করল রেল। সপ্তাহান্তে ট্রেনে যাত্রীদের চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রেল সূত্রে খবর। ট্রেনটিতে একটি এসি-১, চারটি এসি-২ ও আটটি এসি-৩ টিয়ার কামরা থাকবে। প্রত্যেক রবিবার লখনউ থেকে রাত ৮.১৫ নাগাদ ছাড়বে, ভোর ৫.৩৫-এ পৌঁছবে নয়াদিল্লি। দিল্লি যাওয়ার পথে ট্রেনটি থামবে হরদোই, শাহজাহানপুর, বরেলি, মোরাদাবাদ ও গাজিয়াবাদ স্টেশনে। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে লোকমান্য তিলক টার্মিনাস-বারাণসী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে একটি এসি-৩ টিয়ার ও দু’টি স্লিপার কামরা যোগ করা হবে বলেও জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, ১ অগস্ট থেকে মারগাঁও ও কারওয়ারের মধ্যে ডিএমইউ ট্রেন পরিষেবা চালু করল কোঙ্কন রেলওয়ে। রবিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই মারগাঁও থেকে সকাল ১১.৫০-এ ছাড়বে, কারওয়ার পৌঁছবে দুপুর ১.৩৫ মিনিটে। আবার কারওয়ার থেকে ২.৫০-এ ছেড়ে মারগাঁওয়ে পৌঁছবে বিকেল ৪.১০ মিনিটে। দু’টি কামরাবিশিষ্ট ট্রেনটি থামবে বল্লি, ক্যানাকোনা, লোলিয়েম এবং আসনোটি স্টেশনে। এ দিকে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাই ও তাঞ্জাভুরের মধ্যে রেল পরিষেবা চালু করল দক্ষিণ রেলওয়ে। ট্রেনটি প্রত্যহ রাত ১১.৩০ মিনিটে চেন্নাই থেকে ছাড়বে। ভিল্লুপুরম, কুদ্দালোর পোর্ট, মাইলাদুতুরাই এবং কুম্বাকোনাম-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। পর দিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে তাঞ্জাভুর পৌঁছবে। ফেরার সময় তাঞ্জাভুর থেকে রাত ৮.৪৫ মিনিটে ছেড়ে পর দিন ভোর ৪.৫৫ মিনিটে চেন্নাই পৌঁছবে। রেল সূত্রে খবর, চেন্নাই থেকে তিরুচিরাপল্লিগামী পাল্লাভান এক্সপ্রেসকে করাইকুড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গত ২ তারিখ থেকে ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা শুরু করেছে রেল। অতিরিক্ত যাত্রী চাপকে সামলাতে এই পরিষেবা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
|
• স্পাইসজেট-টাইগার এয়ারওয়েজ |
জেট-এতিহাদের পর এ বার ‘লো কস্ট এয়ারলাইন্স’ সংস্থা স্পাইসজেট সিঙ্গাপুরের বিমান সংস্থা টাইগার এয়ারওয়েজের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, দুই বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরা বিমান মন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়মাবলী নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কথা বলেছেন। বিমান মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, জেট-এতিহাদের মতো এই দুই বিমান সংস্থার চুক্তি যাতে কোনও জটিল জটে আটকে না যায় তার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে সংস্থার আধিকারিকরা। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এয়ার এশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে টাটাদের চুক্তি হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাওয়া আরও সহজ হবে। ফলে যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে স্পাইসজেট এই চুক্তি করতে আগ্রহী। যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, গত এক বছরে স্পাইসজেটের ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে (৬৫০ কোটি থেকে বেড়ে ১৪২৯ কোটি)। ফলে বিদেশি বিমান সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হলে তারা সেই ঋণের অনেকটাই মেটাতে সক্ষম হবে।
|
• এসএমএসে অভিযোগ, রেলের নয়া পরিষেবা |
যাত্রাকালীন সময়ে ট্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এ বার সরাসরি যাত্রীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। অবাক করার মতো হলেও ঘটনাটি সত্যি। রেল সূত্রে খবর, কোনও যাত্রী যাত্রাকালীন সময়ে যদি শৌচাগার, কামরা বা হাঁটাচলা করার জায়গায় (কমন প্যাসেজ) জমে থাকা ময়লা দেখেন, তিনি নিজেই সরাসরি তিন সংখ্যার একটি নম্বরে মোবাইলের সহায্যে সে সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগটি সরাসরি রেল দফতরে পৌঁছবে এবং সেখান থেকে ট্রেনে থাকা যাত্রী ও সুপারভাইজারকে একটি ‘কমপ্লেন নম্বর’ পাঠানো হবে। সুপারভাইজার দ্রুত সে সমস্যার সমাধান করে নিজে সেই যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার প্রতিক্রিয়া জানবেন এবং যাত্রী সন্তুষ্ট হলে তাঁকে অনুরোধ করে কমপ্লেন নম্বরে পুনরায় একটি এসএমএস পাঠাতে বলবেন। যত ক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী সেই পরবর্তী এসএমএস-টি না করবেন, ধরা হবে তিনি সন্তুষ্ট হননি। পরিষেবায় স্বচ্ছ্বতা ও দ্রুততা আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল। গত রেল বাজেটের সময় এই মর্মে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। খুব শীঘ্রই সেটি কার্যকর করার কথা ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। রেল সূত্রে খবর, মুম্বই রাজধানী বা বেঙ্গালুরু রাজধানীতে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে এই পরিষেবা চালু করা হবে। পরে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী তা সমস্ত ট্রেনে চালু করা হবে। |
|
|
|