সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• হারিয়ে যাওয়া ভাষা
১৯৯৬ সালে গুজরাতের বদোদরায় প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ভাষা রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেন্টার’ (বিআরপিসি)। ভারতের আদিবাসী ও যাযাবর সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি এবং সে সবের সম্প্রসারণই এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। দীর্ঘ চার বছরের পরিশ্রমে সংস্থার প্রায় ৩ হাজার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী মিলে তৈরি করেছেন ৩৫ হাজার পাতার এক বিশাল সমীক্ষাপত্র। ৫০ খণ্ডের এই সমীক্ষার প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি তথা দার্শনিক সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে— ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩। শেষ খণ্ডটি প্রকাশিত হবে আগামী ডিসেম্বরে।

সমীক্ষানুসারে, ১৯৬১ সালে ভারতে ১১০০টি ভাষা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২২০টি একেবারেই শোনা যায় না, জানিয়েছেন সমীক্ষার নেতৃত্বে থাকা গণেশ দেভি। তাঁর মতে, সমগ্র দেশে এই মুহূর্তে ৭৮০টি ভাষার ব্যবহার হলেও, প্রায় ১০০টির মতো তাঁদের সমীক্ষায় ধরা পড়েনি। এই হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলির বেশির ভাগই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাযাবর সম্প্রদায়ের। ছন্নছাড়া জীবনযাপন, ‘নিম্ন শ্রেণির ভাষা’র তকমা ও পরবর্তী কালে দেশের ভাষা সংরক্ষণ পদ্ধতি এই তিনটি কারণই অবলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয় তাদের এই ভাষাগুলিকে। সরকারি নিয়মানুসারে দশ হাজারের বেশি মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, কেবলাত্র সেই ভাষাই নথিভুক্ত হবে। দেশের ভাষা সংরক্ষণ পদ্ধতির ১৯৬১ সালের সেনসাসে ১৬৫২টি ভাষা প্রচলনের তথ্য পাওয়া গেলেও, তা কমিয়ে আনা হয় ১১০০তে। ১৯৭১ সালে সংখ্যাটি কমে হয় ১০৮। বাকি ভাষা থেকে গিয়েছে অন্ধকারেই। অবশ্য বিআরপিসি-র দাবি যে তারা সব ভাষাই নথিভুক্ত করেছে। উদাহরণ ত্রিপুরার ‘ছৈমল’ ভাষা, বর্তমানে এই ভাষায় সাকুল্যে চার-পাঁচ জন কথা বলেন। দাভির মতে, কোনও ভাষার অবলুপ্তির প্রধান কারণ তার প্রতি অবজ্ঞা। মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখা পরবর্তী প্রজন্মের দায়বদ্ধতা। ভাষার ঐতিহ্য বজায় রাখা তাই আমাদেরই কর্তব্য।

• দেশভাগে বিপন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
১৮৮২ সালে লাহৌরে নির্মিত হয় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৭ সালে, দেশ ভাগের সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ও ভেঙে যায়। বিভাজন প্রকট করতে ভারতে তার নামকরণ হয় ‘পঞ্জাব ইউনিভার্সিটি’। এর পর প্রায় ১০০ বছর হিমাচল প্রদেশের সোলান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যভার পরিচালনা করা হতো। নিজস্ব কোনও ক্যাম্পাস না থাকায় পড়াশোনার তত্ত্বাবধান করা হতো তিনটি জায়গা থেকে— হোশিয়ারপুর, জলন্ধর, দিল্লি এবং অমৃতসর। ১৯৫৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্স্থাপিত করা হয় চণ্ডীগড়ে। তত্কালীন বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি ল কর্বুসিয়েরের তত্ত্বাবধানে পিয়ের জনেরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রূপ দান করেন। লাল বেলেপাথরের তৈরি ক্যাম্পাসে সামঞ্জস্য রেখে নানা ভবন তৈরি করেন জনেরে। চণ্ডীগড়ের ১৪ ও ২৫ সেক্টরে প্রায় ৫৫০ একর জমির উপর নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের আমলের পুরনো টেবিল চেয়ারও নির্মাণ করেন জনেরে। এ হেন ঐতিহ্যমণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তার হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। মূলত সেক্টর ২৫-এ। তবে, শহরের এক স্থপতির মতে, সম্প্রসারণের কাজ চলছে সব রকম নিয়ম মেনেই। চণ্ডীগড়ের হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটির সম্মতি অনুসারেই কাজ হচ্ছে ঐতিহ্যের পঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে।

• হেরিটেজ ‘পোর্টাল’-এ বাপু
এই প্রথম সপ্তাহব্যপী ‘মহাত্মা গাঁধী হেরিটেজ উইক’ পালন করা হল সবরমতি আশ্রমে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল কমলা বেনিয়াল। গাঁধী পরিবারের তরফ থেকে বক্তব্য রাখেন মহাত্মার পৌত্র রাজমোহন গাঁধী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয় সপ্তাহজুড়ে। সেখানে তুলে ধরা হয়, আশ্রমে তাঁর জীবনযাপনের ধরন। ছোটরা অংশগ্রহণ করেছিল নানা কর্মকাণ্ডে।
অন্য দিকে গাঁধীজির জন্মবার্ষিকীর এক মাস আগেই তাঁর নামে এক ‘হেরিটেজ পোর্টাল’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি বলেন, মহাত্মা গাঁধী এ দেশের বর্তমানে যেমন আছেন, তেমন ভবিষ্যতেও থাকবেন। বাপুর জীবনযাপনের নানা দিক, তাঁর রচিত পাণ্ডুলিপি, তাঁর চিন্তাধারা— সব কিছুই পাওয়া যাবে এই পোর্টালে। প্রধানমন্ত্রী মতে, এ সব ‘ইলেকট্রনিক’ নথি থেকে প্রাক্ স্বাধীনতা যুগের সংগ্রামীদের জীবনধারা, তাঁদের সংঘর্ষ, হারা-জেতার নানান দিক উদ্বুদ্ধ করবে বর্তমান প্রজন্মকে। গাঁধীজি যে আদর্শ মেনে চলতেন সেই ভাবধারার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বর্তমান প্রজন্মকে তাতে উত্সাহিত করতে অনেকটাই সাহায্য করবে এই পোর্টাল।
প্রথমে পাঁচ লক্ষ দিয়ে শুরু হলেও, পরবর্তী কালে তা ১৫ লক্ষের বেশি পাতা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

• ঐতিহ্যের বুজকাশি খেলা
হঠাত্ দেখলে অমিতাভ বচ্চন-শ্রীদেবী অভিনীত ‘খুদা গাওয়া’ ছবিটির এক বিশেষ দৃশ্যের কথা মনে হবে, যেখানে অনেক খেলোয়াড়দের মাঝখান থেকে শিকার ছিনিয়ে বিজয়ের হাসি নায়ক-নায়িকার মুখে। পোলোর মতো ঘোড়ায় চড়ে লম্বা হকি স্টিক দিয়ে এই খেলার নাম বুজকাশি। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় খেলা। তবে পোলো খেলার মতো বল নয়, বুজকাশিতে থাকে ভেড়া প্রজাতির মৃত জন্তু। দেশের তালিবান অধ্যুষিত হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে বামিয়ান অঞ্চলে হয় বার্ষিক এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ২০১৩ সালের মে মাসে ছিল এই আয়োজনের পঞ্চম বছর। আদতে জনমানবহীন এ দেশের এক মাত্র জাতীয় উদ্যান ‘বান্দ-ই-আমির’ কয়েক দিনের জন্য সরগরম হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে।
ইতিহাসের বাণিজ্যপথ সিল্ক রুট এক সময় গমগম করত ব্যবসায়ী-পর্যটক-স্থানীয় বাসিন্দাদের বহমান জীবনধারায়। তার পর এক সময় চেঙ্গিস খানের আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় এই অঞ্চল। শোনা যায়, এখানকার আবহাওয়ায় সৈনিকদের গা গরম রাখতে খান সাহেবই নাকি এই খেলার জন্ম দেন। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এই খেলা এখন পর্যটক টানতে এবং দেশের এই দরিদ্র অঞ্চলের আর্থিক সহায়তার কাজ করে। খানিক নৃশংসতা থাকলেও, খেলাটি দেশের ঐতিহ্য তো বহন করে চলেছে!

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• স্তন্যপায়ীরাই প্রথম লোমশ প্রাণী কি না জল্পনা
মানব সভ্যতায় পশমের ব্যবহার বহু প্রাচীন। আদিম মানুষ ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পশুর চামড়া ব্যবহার করত। এমনকী পশমের ব্যবহার জানত মানুষের পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথালরাও। তবে পশমের ব্যবহার যত প্রাচীনই হোক না কেন বিশ্বে প্রথম লোমশ প্রাণীর আবির্ভাব ঠিক কবে তা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। স্তন্যপায়ীরা যে বিশ্বের প্রথম লোমশ প্রাণী তা নিয়ে এত দিন কোনও সন্দেহ ছিল না। সম্প্রতি মঙ্গোলিয়ায় আবিষ্কৃত এক জীবাশ্ম স্তন্যপায়ীদের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছে বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জীবাশ্মটি প্রায় সাড়ে ষোলো কোটি বছর আগের স্তন্যপায়ীদের এক পূর্বজর— বৈজ্ঞানিক নাম মেগাকোনাস মাম্মালিয়াফরমিস। প্রাণীটিকে স্তন্যপায়ী না বলার অন্যতম প্রধান কারণ এদের কান ও চোয়াল সরীসৃপদের মতো আটকানো। পায়ের হাড়ের গঠনেও সরীসৃপদের সঙ্গে মিল। বিশালদেহী ডাইনোসরদেরও অনেক আগে পালকযুক্ত ডাইনোসরদের সমসাময়িক এই প্রাণীটি আকারে কাঠবিড়ালির থেকে কিছুটা বড়। আত্মরক্ষার জন্য এদের পায়ে ‘বিষাক্ত খুর’ থাকত। পুরুষ হংসচঞ্চুদের পায়ে এই ধরনের খুর দেখতে পাওয়া যায়। এ থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা আবিষ্কৃত জীবাশ্মটি পুরুষ প্রাণীর। তবে লোমশ এই প্রাণীগুলির পেটের কাছে কোনও লোম ছিল না। মেগাকোনাসরা সম্ভবত ছিল সর্বভুক। তাদের খাদ্যতালিকায় ছিল ছোট গাছপালা, পতঙ্গ এবং ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণীও। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, লোমশ ও আধা স্তন্যপায়ী মেগাকোনাসের আবিষ্কার প্রাণীদেহে লোমের বিবর্তনকে অনেকটাই পিছিয়ে দিল।

• রহস্যময় গোরস্থান
কম্বোডিয়ায় পাহাড়ঘেরা এক গভীর জঙ্গলে খোঁজ মিলল প্রায় ছ’শো বছরের পুরনো গণসমাধির। তবে প্রথাগত সমাধি থেকে এটি বেশ অন্য রকমের। এখান থেকে মিলেছে মানুষের খুলি ও হাড়ভর্তি শতাধিক কলসি ও ডজনখানেক কফিন। আকারে বেশ ছোট এই কলসিগুলিতে কোনও শিশুর পক্ষে থাকাও বেশ কষ্টকর। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী কম্বোডিয়ায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অত্যন্ত পবিত্র কাজ। সেখানে পাহাড়ের প্রায় ১০০ মিটার উচ্চতায় মৃতদেহের হাড়ের এ ভাবে ‘সংরক্ষণ’ অবাক করেছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। বিজ্ঞানী দলটির অন্যতম প্রধান ও কার্বন ডেটিং বিশেষজ্ঞ ন্যান্সি বিভানের মতে হাড়গুলি প্রায় ছ’শো বছরের পুরনো আঙ্কোর যুগের। তবে হাড়গুলি কাদের আর কোথা থেকেই বা এখানে এল তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে মতভেদ রয়েছে। কারও মতে এগুলি প্রাচীন কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, কারও মতে হাড়গোড়গুলি এসেছে তাইল্যান্ড অর্থাত্ তদানীন্তন স্যাম দেশ থেকে। ২০০৫ সালে কো কং প্রদেশে এক মত্স্যজীবী মাছ ধরার সময়ে একই রকম কয়েকটি কলসি উদ্ধার করেন। এই ধরনের কলসি প্রাচীন তাইল্যান্ডে তৈরি হতো। আবার কারও মতে আঙ্কোর আমলের এই হাড়গুলি বিখ্যাত আঙ্কোরভাট মন্দিরের দাসদেরও হতে পারে। রহস্য উন্মোচন করতে এই কলসি ও হাড়গুলি নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

• উদ্ধার ৯ কোটি বছরের প্রাচীন মাছের জীবাশ্ম
‘মাছে-ভাতে’ বাঙালির পাতে আজ মাছেরই বড় অভাব। পুঁটি, মৌরলা, ফ্যাসা-সহ আরও বহু মাছ বিলুপ্তপ্রায়। দুর্দিনের এই বাজারে নতুন মাছের আবিষ্কার বাঙালির হাসি চওড়া করতে পারে বইকি! কিন্তু বাঙালির সে আশা আপাতত পূরণ হল না। কেন না সম্প্রতি মেক্সিকোর চিয়াপাস প্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন মাছ নয়, প্রাচীন মাছের জীবাশ্ম। প্রায় ৯ কোটি বছর আগে এই অঞ্চলে তাদের পাওয়া যেত। প্রখ্যাত জার্মান প্রকৃতিবিদ ও বিজ্ঞানী কার্ল থিওডর স্যাপারের নামানুসারে প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয় স্যাপেরিচথিস চিয়াপানেসিস। মেক্সিকোর চিয়াপাস প্রদেশের ওকোজোকুয়াউটলা শহরের বাইরে এল চ্যাঙ্গো অঞ্চলে প্রায় দু’দশক ধরে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন এক দল বিজ্ঞানী। সেখানেই প্রায় ২৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন তাঁরা। এর মধ্যে ১৫টি প্রজাতির শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। শনাক্ত হওয়া জীবাশ্মের শেষতম সংযোজন এই স্যাপেরিচথিস চিয়াপানেসিস। বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৯ কোটি বছর আগে মেক্সিকোর এই অঞ্চলে একটি গভীর ও উষ্ণ সমুদ্র ছিল। মেসোজোয়িক যুগে সেই সময় দাপিয়ে বেড়াত বিশালদেহী ডাইনোসর। আবিষ্কৃত নতুন জীবাশ্মটি সেই সময়ের আবহাওয়া ও পরিবেশ সম্বন্ধে বিশদ জানতে সাহায্য করবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। জীবাশ্মটি জনসাধারণের দেখার জন্য চিয়াপাসের রাজধানী টাক্সলা গুতিয়েরেজের যাদুঘরে রাখা হয়েছে।

• ‘টেকনো’ নিয়ান্ডারথালের কাহিনি
উন্নত যন্ত্রপাতির আবিষ্কার কারা আগে শুরু করেছিল? নিয়ান্ডারথাল না আধুনিক মানুষ? বহু দিন ধরে চলা এই প্রশ্নে বেশ কয়েক পা এগিয়ে ছিল আধুনিক মানুষ। তবে সম্প্রতি এক আবিষ্কার এই বিতর্কটাকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের আব্রি পেরনি অঞ্চলে প্যালিওলিথিক যুগের একটি গুহায় খননের কাজ চালাচ্ছিলেন বোরদঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সেখানেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন হাড় দিয়ে তৈরি কিছু যন্ত্রপাতি। এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত নিয়ান্ডারথালদের যন্ত্রপাতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই ভোঁতা যন্ত্রটি চামড়া মসৃণ করার কাজে ব্যবহৃত হতো। সবচেয়ে আশ্চর্যের, এই ধরনের যন্ত্র এখনও ব্যবহৃত হয়। প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের গুহায় আধুনিক যুগের যন্ত্রের আবিষ্কার চমকে দিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। ইউরোপে আধুনিক মানুষের আগমন ঘটে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে। মূলত হাড়ের সূচালো যন্ত্রপাতিই ছিল তাদের সঙ্গে। এত দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল হাড়ের উন্নত যন্ত্রপাতির প্রবর্তক আধুনিক মানুষই। কিন্তু ‘নব্য’ নিয়ান্ডারথালরা এই ধারণা বদলে দিল বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• গন্ধ দিয়ে যায় চেনা
‘জামার পরে নাক ঠেকিয়ে— শুঁকল কত গন্ধ’... সুকুমার রায়ের ‘গন্ধ বিচার’ কবিতার সেই বৃদ্ধ নাজিরের মতো টিকালো নাক তাদের নেই বটে, তবে গন্ধ-বিচার করেই এরা অচেনা পথের বাধা এড়িয়ে নিজের বাড়ির রাস্তা ঠিক চিনে নেয়। তারা আর কেউ নয়, এক প্রকার সামুদ্রিক মাছের লার্ভা। সম্প্রতি মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডক্টর ক্লের প্যারিসের গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। ডক্টর ক্লের ও তাঁর সতীর্থেরা গ্রেট বেরিয়ার রিফের দক্ষিণে ‘ওয়ান ট্রি আইল্যান্ডে’ গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কার্ডিনাল ও ড্যামসেল নামক দু’টি মাছের লার্ভা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই প্রাচীরের গন্ধ শুঁকেই তাদের চেনা বাসস্থানে ফিরে আসতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বে কুইন্সল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রবাল সাগরে প্রায় ২৬০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত গ্রেট বেরিয়ার রিফ। সেখানে রয়েছে অন্তত ৯০০টি ছোট বড় দ্বীপ ও ৩ হাজারেরও বেশি প্রবাল প্রাচীর। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ডক্টর জেলে অ্যাটেমা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ‘গন্ধ-বিচার’ করেই লার্ভারা এই অসংখ্য প্রবাল প্রাচীরগোষ্ঠীকে আলাদা করে চিনতে পারে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রগর্ভে তাঁদের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ‘ও ডিস্ক’-এর (ওশেন ড্রিফটিং ইন সিটু চেম্বার) সাহায্যে এই গবেষণার সত্যতা প্রমাণ করেছেন। বিশেষ উপায়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর দ্বারা লার্ভাদের অবস্থান ও স্থানান্তরণ পর্যবেক্ষণ করাই ‘ও ডিস্ক’ যন্ত্রটির কাজ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, লার্ভাদের স্থানান্তরণ স্রোতের গতির উপর নির্ভরশীল নয় বরং সম্পূর্ণ ভাবেই গন্ধ সংক্রান্ত। এই স্থানাগমন আবার লার্ভার প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন রকম হয়। যেমন কার্ডিনাল মাছেদের লার্ভাদের চলন কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হয় না। অর্থাত্ গন্ধের উৎস সন্ধানে এদের স্থানাগমন বিক্ষিপ্ত। অন্য দিকে ড্যামসেল লার্ভারা পুরোপুরি কম্পাসের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিক ধরে চলতে থাকে। এর আগেও পূর্ণবয়স্ক হাঙর ও স্যামন মাছেদের গন্ধের উত্স নির্ণয় করে সাঁতার কাটতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু লার্ভাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য সর্বপ্রথম লক্ষ করলেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে প্রাচীরের গন্ধ লার্ভাদের কাছে অনেকটা সঙ্কেতের মতো কাজ করে। অর্থাত্ এই গন্ধ চুম্বকীয় অথবা শব্দতরঙ্গের আকারে স্রোতের মধ্যে দিয়ে লার্ভাদের কাছে পৌঁছয়। এবং এই বিশেষ সঙ্কেতই তাদের অচেনা পথ ধরে পরিচিত ‘বাড়ি’র পথে নিয়ে যায়।

• প্রজাপতি সংরক্ষণে উদ্যান
কর্নাটকের প্রথম ও ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি প্রজাপতি উদ্যান চালু হল ম্যাঙ্গালোরে। ম্যাঙ্গালোর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে বেলুভাইয়ের কাছে প্রায় ৭.৩৫ একর এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা স্যামিলান শেঠির তৈরি এই উদ্যানে বর্তমানে ১১৮টি প্রজাতির রংবেরঙের ‘তিতলি’ আছে। এই উদ্যানে ‘ব্লু নবাব’, ‘সিলভারলাইন’, ‘চেস্টনাট অ্যানজেল’-সহ বিচিত্র ও বিরল প্রজাতির প্রজাপতিদের সন্ধান মিলবে বলে জানিয়েছেন স্যামিলান। পর্যটক টানার পাশাপাশি এই উদ্যোগ প্রজাপতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন ‘বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’র আইস্যাক কেহিমকার। তিনি জানিয়েছেন, ২০১১ সাল অর্থাত্ উদ্যানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার সময় থেকেই প্রজাপতিদের প্রজনন ও খাবারের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। ভারতের প্রথম প্রজাপতি উদ্যানটি গড়ে ওঠে ২০০৬ সালে ব্যাঙ্গালোরের বানারঘাটা জাতীয় উদ্যানে। ৭.৫ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই উদ্যানটিতে প্রজাপতিদের পাখা মেলে ওড়ার জন্য রয়েছে মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাশাপাশি তাদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ঘর, পরীক্ষাগার ও শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও-ভিস্যুয়াল ব্যবস্থা। উদ্যানের তরফে জানানো হয়েছে, পলিকার্বনেট ছাদ দিয়ে তৈরি সংরক্ষণশালাটির ভিতরে কৃত্রিম ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও উদ্যানের শোভা বাড়াতে কৃত্রিম ঝরনা, প্রজাপতিদের আকৃষ্ট করতে পছন্দের গাছাগাছালি রয়েছে। আর এ সবই পর্যটকদের মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ভারতের অপর উল্লেখযোগ্য প্রজাপতি উদ্যানটি রয়েছে হিমাচলপ্রদেশের সিমলায়। প্রায় ১০ একর জমির উপর ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা উদ্যানটিতে ৩০০টি প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান মেলে। জীববিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে কমপক্ষে ১৮০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে যাদের মধ্যে ১৫০৪টি প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। পরিবেশবিদ পিটার মেটাসেকের জানিয়েছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা ভারত-সহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫০টি নতুন প্রজাপতিকে শনাক্ত ও সংরক্ষণ করেছেন। ভারতে মূলত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ১২০০-৫০০০মিটার উচ্চতায় বিরল প্রজাতির প্রজাপতিদের দেখা মেলে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে ‘চকোলেট প্যানসি’, ‘অরেঞ্জ ওকলিফ’, ‘কমন জেসটার’, ‘ইয়েলো কোসটার’ ইত্যাদি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
প্রজাপতি সংরক্ষণের জন্য ভারতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি উদ্যান গড়ে তোলার কাজ চলছে।

• উষ্ণায়ণের প্রভাবে ‘ঘরছাড়া’ গাছেরাও
বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের উদ্ভিদেরা। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা এখন পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কেন ফিলে-র গবেষণায়। উষ্ণায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনই তাদের ঠেলে দিচ্ছে বাসভূমি থেকে দূরে, অপেক্ষাকৃত শীতল ও আর্দ্র পরিবেশে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মৌসুমী বায়ুর প্রভাব, উচ্চতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যে ক্রান্তীয় অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অরণ্য অন্যান্য অরণ্যের থেকে আলাদা। মূলত নিরক্ষীয় থেকে ক্রান্তীয় অঞ্চলেই এই অরণ্যের ব্যপ্তি দেখা যায়। অতিবৃষ্টি অরণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমাজনের বৃষ্টি অরণ্য। নিকরাগুয়া, বেলিজ-সহ মধ্য আমেরিকায় এই অতিবৃষ্টি অরণ্য দেখা যায়। আন্দিজ বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম রিসার্চ গ্রুপের বিজ্ঞানীরা আমাজনের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন। জীববিজ্ঞানী ফিলে ও ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইলস সিলমান এই সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন ক্রান্তীয় আমাজন বেসিনের কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ অপেক্ষাকৃত শীতল পরিবেশের সন্ধানে আরও বেশি উচ্চ ঢালের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। প্রতি বছরে গড়ে এই স্থানান্তরণ হয় অন্তত ৮ থেকে ১২ ফুট (উল্লম্বভাবে)। তবে এই স্থানান্তরণ খুব ধীরগতিতে ঘটে। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এই স্থানানন্তরণ প্রতি বছরে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে হওয়া প্রয়োজন। বিজ্ঞানী সিলমান জানিয়েছেন ক্রান্তীয় বৃষ্টিঅরণ্যের স্কেফলেরা নামক উদ্ভিদ ধারাবাহিক ভাবে প্রজননের মাধ্যমে অনেক তাড়াতাড়ি স্থানান্তরিত হয়। ২০১০-র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে স্কেফলেরা উদ্ভিদের ৩৮টি প্রজাতি বছরে প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে যেখানে অন্যান্য উদ্ভিদের স্থানান্তরণ হয়েছে মাত্র ৫ ফুট। প্রাথমিক ভাবে আমাজন বেসিনের উচ্চ ঢালযুক্ত এলাকায় বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা চালিয়েছেন যেখানে প্রতি ৮০০ ফুট লম্ব উচ্চতায় তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ও উচ্চতার পার্থক্যে উদ্ভিদের প্রজাতির মধ্যেও বিভিন্নতা রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে আগামী ২১০০ সালের মধ্যে অন্তত ৫০ রকম প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

• আজব দেশ সকোত্রা
স্টিভেন স্পিলবার্গের ছবির গল্পের মতোই বিচিত্র সে দেশ। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার পূর্বে ভারত মহাসাগরের সবচেয়ে স্বতন্ত্র দ্বীপটির নাম সকোত্রা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গে আকৃতিগত দিক থেকেও ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের সকোত্রাকে পৃথিবীর ‘মোস্ট এলিয়েন লুকিং প্লেস’ বলে বর্ণনা করা হয়। দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে ১৩২ কিলোমিটার ও প্রস্থে প্রায় ৪৯.৭ কিলোমিটার। জীববিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বিরলতম ৮০০টি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জে। শুধু তাই নয় এখানে এমন কিছু উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদের বয়স ২০ কোটি বছরেরও বেশি। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে সকোত্রা দ্বীপের প্রাণিবৈচিত্র ও জলবায়ুর তারতম্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে আনুমানিক ৬০-৭০ লক্ষ বছর আগে সকোত্রা আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র দ্বীপের চেহারা নেয়। সকোত্রার মূল ভূখণ্ড তিন ভাগে বিভক্ত— সংকীর্ণ উপকূলীয় সমভূমি, চুনাপাথরের মালভূমি ও প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতার পর্বতমালা। এই দ্বীপের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন, বেশির ভাগ অংশেই উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া দেখতে পাওয়া যায়। কিন্ত আশ্চর্যজনক ভাবে সকোত্রা দ্বীপের জীবেরা এই প্রতিকূল পরিবেশেও তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। ‘সেন্টার ফর মিডল ইস্টার্ন প্ল্যান্টস’-এর উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় হাওয়াই, নিউ ক্যালিডোনিয়া ও গ্যালাপাগোস দ্বীপের পাশাপাশি সকোত্রাকেও সবচেয়ে বৈচিত্রময় দ্বীপের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত সমীক্ষাপত্রে দেখা গিয়েছে, বিশ্বের ৮২৫টি উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে ৩০৭ রকম প্রজাতিই রয়েছে সকোত্রা দ্বীপে। বিশ্বের অন্য কোথাও এই সব প্রজাতি আর পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালে সকোত্রার ২৭ রকম প্রজাতির উদ্ভিদকে বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ‘ড্রাগন ব্লাড’ যার লাল বর্ণের রজন চিকিত্সার কাজে ব্যবহৃত হয়। সকোত্রা দ্বীপে প্রায় ১৪০ রকমের পাখি দেখতে পাওয়া যায় যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— সানবার্ড, বান্টিং, গোল্ডেন-উইংড গ্রসবিক ইত্যাদি। আশ্চর্যের বিষয় এই দ্বীপে কোনও উভচর প্রাণী নেই এবং স্তন্যপায়ীদের মধ্যে শুধুমাত্র বাদুড়ের দেখা পাওয়া যায়। ৩৬৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার এই দ্বীপপুঞ্জকে ২০০৮ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব হেরিটেজের তকমা দেয়।

পার্বণ
• খড়্গপুরে পুষ্পমেলা ও প্রদর্শনী
ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা থেকে মোরগঝুঁটি, গোলাপ— এ সব রকমারি ফুল মানুষের মনকেও নিমেষে মৌমাছির মতো চঞ্চল করে দিতে পারে। রেলশহর খড়্গপুরের কাছেই তালবাগিচা, সেখানে বাহারি ফুল নিয়েই পুষ্পমেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতাও। সঙ্গে থাকে লোকসংস্কৃতি অনুষ্ঠান। তাই উত্তুরে বাতাস বইতে শুরু করলেই অপেক্ষায় থাকা খড়্গপুরবাসীর প্রহর গোনা শুরু হয়ে যায়।
বেশি দিন নয়, মাত্র ১২ বছর পার করেছে উৎসবের আকার নেওয়া শীত কালের এই পুষ্পমেলা ও প্রদর্শনী। প্রথম দিকে জনপ্রিয়তা না থাকলেও বছর কয়েক ধরে প্রসার বেড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মন কেড়েছে এই আয়োজন। এ মেলায় থাকে না কোনও স্টল। মূলত ছোট্ট চারা গাছে বিশাল গাঁদা, স্থলপদ্ম, চন্দ্রমল্লিকার মতো প্রায় ৮০ রকমের ফুল নিয়ে নানা বিভাগে হয় প্রদর্শনী। একই সঙ্গে থাকে বাঁধাকপি, ফুলকপি, কুমড়োর মতো প্রায় ২৫ রকমের সব্জি ও ক্যাকটাসের টব। প্রতি বছরই প্রায় পনেরোশোটি টব নিয়ে আসেন অংশগ্রহণকারীরা। তাঁদের উৎসাহ দিতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট একটি মাত্র স্টল থেকে চলে পছন্দের ফুল-ফলের চারাগাছ কেনাকাটা। প্রতিদিনই মেলা ও প্রদর্শনী দেখতে সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৭ হাজার মানুষ ভিড় জমান।
এ বারেও শুরু হয়ে গিয়েছে এই পুষ্পমেলা ও প্রদর্শনীর প্রস্তুতি। ঠিক হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাসেই হবে এই মেলা। তবে পুজোর মরসুমের অকাল বৃষ্টি মুখ ভার করেছে উদ্যোক্তাদের। ফুল, ফলের বৃদ্ধি ঠিক মতো হয়নি বলে অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের কাছে। ফলে প্রতি বছর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহতে শেষ হয়ে যাওয়া এই মেলা এ বার হয়চো শুরুই হবে তৃতীয় অথবা চতুর্থ সপ্তাহে। প্রতি বছরের মতো লোকসংস্কৃতি অনুষ্ঠানে বাউল, লোকগীতির শিল্পীদের সন্ধানও চলছে জোরকদমে। খরচ বাঁচিয়ে এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৭০ জন কৃতি পড়ুয়াকে সংবর্ধনাও দেওয়া হবে। সমগ্র আয়োজনের বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।

• উত্তরপ্রদেশের গড় গঙ্গামেলা
উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরবর্তী ছোট্ট শহর গড়মুক্তেশ্বর। জায়গাটির মূল পরিচিতি যদিও গঙ্গামেলার জন্য। প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাটির নাম গড় গঙ্গামেলা। ওই দিন কয়েক লাখ পূণ্যার্থী গড়মুক্তেশ্বরের গঙ্গায় পূণ্যস্নানের জন্য আসেন। অন্য আর একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় দশেরার দিন। এ দিনও মানুষের ঢল নামে। পূণ্যস্নানের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই গড়মুক্তেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁবুতে আশ্রয় নেন। ১৯৭৯ সাল থেকে জেলা পরিষদের উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘গাধো কা মেলা’ নামে আরও একটি মেলা গড় গঙ্গা মেলার সঙ্গে জড়িত। গাধা, খচ্চর ও ঘোড়া কেনাবেচার জন্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।

• চিত্র-বিচিত্র মেলা
গুজরাত ও রাজস্থানের সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম গাম্ভাখারি। সবরমতী, আকর ও বকর— তিন নদীর সঙ্গমস্থলে ভীল উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামটি প্রতি বছর মেতে ওঠে বসন্ত উত্সবে। আর এই উত্সবকে ঘিরেই গ্রামের মন্দির চত্বরে আসর বসে চিত্র-বিচিত্র মেলার। হোলির পর থেকে পনেরো দিন ধরে চলে মেলা। এ সময় আশপাশের গ্রাম থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন মেলায়। শুধু ভীল উপজাতি নয় রাজ্যের অন্যান্য উপজাতিদেরও কাছেও এই মেলা জনপ্রিয়। ভীল ও গারাসি উপজাতির পুরুষ ও মহিলারা প্রথামাফিক রংবেরঙের পোশাক পরে দল বেঁধে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মেলায় হাজির হন। লোকনৃত্য পরিবেশন করেন বিভিন্ন উপজাতির মহিলারা। এই মেলাতেই উপযুক্ত পাত্রপাত্রীরা তাঁদের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। মেলাকে ঘিরে কয়েকটি জনশ্রুতি ও বিশ্বাস প্রচলিত আছে। বলা হয়, এই মেলার জন্ম মহাভারতের যুগে। মহাকাব্য অনুসারে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন শান্তনুর দুই ছেলে চিত্রবীর ও বিচিত্রবীর। তিনটি নদীর মিলনস্থলে শিব মন্দির আছে এমন একটি জায়গাতেই তাঁদের পাপস্খলন হবে বলে উপদেশ দেন এক ঋষি। খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা এই গাম্ভাখারি গ্রামের সন্ধান পান। তার পর থেকেই এই জায়গার নাম হয় চিত্র-বিচিত্র।

• গুজরাতের ভৌথা মেলা
শোনপুরের পশুমেলা ঐতিহ্য ও প্রাচীনত্বের ধারক ও বাহক হলেও এ ধরনের মেলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই গুজরাতের ভৌথা মেলা। এটি রাজ্যের বৃহত্তম পশু মেলা। রাজস্থানের পুষ্কর মেলার সঙ্গে সমোচ্চারিত এই মেলা প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমার দিনে সবরমতী ও বতরক নদীর সঙ্গমস্থলে পাঁচ দিন ধরে চলে। হিন্দু দেবতা কার্তিককে উত্সর্গ করেই সূচনা হয়। প্রায় ৩-৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলার আসর বসে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পশু ব্যবসায়ীরা এখানে হাজির হন। এখানে সাধারণত উট ও খচ্চর কেনাবেচা হয়। স্থানীয়দের মতে, প্রতি বছর প্রায় চার হাজার খচ্চর বিক্রির জন্য এই মেলায় নিয়ে আসা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের, খচ্চরগুলির গায়ে রং দিয়ে সুন্দর করে নকশা এঁকে সাজানো হয়। আর এই বৈশিষ্ট্যই মেলার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

পর্যটন কেন্দ্র
• সাজছে ফুকেত
আগামী বছরের পর্যটন মরসুমের কথা মাথায় রেখে সেজে উঠছে তাইল্যান্ডের ফুকেত শহর। গত ২০ অক্টোবর বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে শুরু হয়েছিল ফুকেতের নয়া ভিউপয়েন্ট মনুমেন্টের নির্মাণ কাজ। ১৮ মিলিয়ন তাই মুদ্রা ব্যয়ে ফুকেতের রাং হিলে গড়ে উঠবে এই মনুমেন্ট। পরিকল্পনার খরচ গোটাটাই বহন করবে ফুকেতের পর্যটন ও ক্রীড়া মন্ত্রক। এই মনুমেন্ট ছাড়াও পর্যটক টানতে শহরের আরও একটি সৌধ সংস্কার করবে পর্যটন মন্ত্রক। বহু বছরের অবহেলায় পড়ে থাকা শহরের ওল্ড ক্লক টাওয়ারকে নতুন করে সকলের সামনে আনতে উদ্যোগী হয়েছে তাই সরকার। এ ক্ষেত্রেও খরচ একই, সেই ১৮ মিলিয়ন ভাট। সরকারের তরফে আশা করা হচ্ছে, এই দুই জায়গায় পর্যটকদের নিয়মিত ভিড় হবে। ফুকেতের পর্যটন ক্রীড়া মন্ত্রকের ডিরেক্টর সান্টি পালাই জানিয়েছেন, “দু’টি প্রকল্প এক সঙ্গে শুরু হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।” তিনি আরও জানান, পর্যটনস্থল হিসেবে ফুকেত শহরের আকর্ষণ বাড়ছে।

• পর্যটক টানবে এ বার লাইটহাউস
ভারতের পর্যটন মানচিত্রে নয়া আকর্ষণ ‘লাইটহাউস ট্যুরিজম’। দেশবিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সারা দেশের লাইটহাউসগুলিকে কেন্দ্র করে প্রকল্প গড়তে চায় কেন্দ্রীয় পর্যটন ও জাহাজ মন্ত্রক। এই বিষয়ক এক প্রকল্পের উদ্বোধন করে কেন্ত্রীয় পর্যটনমন্ত্রী কে চিরঞ্জীবী জানিয়েছেন, শীঘ্রই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ দেশের নয়া আকর্ষণ হবে মুম্বইয়ের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত কানহোজি আঙরের লাইটহাউস। তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়ে ১৫টি লাইটহাউসকে ঢেলে সাজানো হবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কানহোজি আঙরে লাইটহাউস-সহ বিশাখাপত্তনমের ডলফিন নোজ পয়েন্ট ও চেন্নাইয়ের কাছে মামাল্লাপুরমে একটি লাইটহাউসের সংস্কার করা হবে। এই প্রকল্পে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা করবে কেন্দ্রীয় পর্যটন ও জাহাজ মন্ত্রক। মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা জানান, মুম্বইয়ের লাইটহাউসে প্রদর্শনশালা-সহ একটি দুর্গ সংস্কার করে তাঁবুর মতো একটি আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য এখানে একটি জেটি ও টার্মিনালও গড়ে তোলা হবে। সৌরশক্তির সহায়তায় এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। দেওরার আশা, আগামী ১০ মাসের মধ্যে এই লাইটহাইস সংস্কারের কাজ শেষ হবে। কেন্ত্রীয় পর্যটনমন্ত্রী চিরঞ্জীবী ও প্রতিমন্ত্রী দেওরা দু’জনেই আশাবাদী, এই ধরনের লাইটহাউসের সংস্কারের ফলে জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষা ছাড়াও যুবসমাজের কাছে দেশের নৌসেনার ইতিহাস তুলে ধরা যাবে।

• পর্যটন মানচিত্রে ঘাঘরা
সালটা ১৮৭০। শীতের দুপুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বেলপাহাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ফেড্রেরিক রাইস ঘোড়ায় চড়ে আপন খেয়ালে বেড়াতে বেরিয়েছেন। ঘুরতে ঘুরতে সাহেব এসে পৌঁছলেন জঙ্গলের মাঝে এক জায়গায়। চারদিকে শাল-সবুজের সমারোহ। আর মাঝে বিস্তীর্ণ ব্ল্যাক স্টোনের অজস্র গহ্বর ভেদ করে সাপের ফনার মতো ফুঁসছে জলরাশি। ইতিউতি মাথা উঁচিয়ে আছে টিলা। একাধিক ঝর্না মিলে তৈরি হওয়া ছোট জলপ্রপাতটির অভিঘাতে খানখান হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের নিঃস্তব্ধতা। জনশ্রুতি, ১৪৩ বছর আগে সেখানেই বনভোজন করেছিলেন ফেড্রেরিক। এর পরই ‘ঘাঘরা’ হয়ে ওঠে পিকনিক স্পট। বেলপাহাড়ির এই দ্রষ্টব্য স্থানটি আজও রয়ে গিয়েছে উপযুক্ত প্রচারের আড়ালে। পর্যটকদের জন্য নেই উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা। পথঘাটের অবস্থাও ভাল নয়। ঘাঘরাকে ঘিরে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার সব রকম সম্ভাবনা থাকলেও আজ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। ঘাঘরাকে নিয়ে বেলপাহাড়িবাসীর আবেগ ও ভালবাসা কিন্তু দীর্ঘ দিনের। বেলপাহাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা দেবব্রত ভট্টাচার্য শোনালেন ঘাঘরাকে নিয়ে পুরাতনী গান— ‘উড়ুক ধুলা কেয়ার করব না, আমি ঘাঘরা যাতে ছাড়ব না, গো ছাড়ব না।’ ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “জলরাশির অভিঘাতে পাথরের গহ্বরগুলির আকৃতি অনেকটা কলসি বা ‘গাগরি’র মতো। স্থানীয় ভাষায় বলে ‘গাগরা’। সেখান থেকেই সম্ভবত ঘাঘরা নামের উৎপত্তি। এলাকাটি বহু প্রাচীন। কারণ, এক সময় ঘাঘরা সংলগ্ন তারাফেনি অববাহিকা অঞ্চলে প্রাচীন জীবাশ্ম ও নব্যপ্রস্তর যুগের অস্ত্রের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল।” ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়িতে ঘাঘরা যেতে ঘণ্টাখানেকের পথ। বেলপাহাড়ি ব্লক-সদর থেকে লাল ধুলোর রাস্তা ধরে ৪ কিলোমিটার গেলেই ঘাঘরা।

• ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে ‘ট্যুরিস্ট হাব’ তৈরির সিদ্ধান্ত
মুসলিম গথিক শিল্পশৈলীতে তৈরি ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির এক তলায় থাকার ব্যবস্থা ছিলই। এ বার সেই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে ট্যুরিস্ট হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। নতুন এই ব্যবস্থায় রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, শিশুদের খেলার জায়গা, নৌকাবিহার ও মাছ ধরার বন্দোবস্ত থাকবে। রাজবাড়িতে যাঁরা বেড়াতে আসবেন, তাঁদের শুশুনিয়া, বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, অযোধ্যা পাহাড়-সহ জঙ্গলমহলের সমস্ত দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হবে। রাজবাড়ি চত্বরেই পর্যটকদের থাকার সুবিধা রয়েছে। নাম ‘দ্য প্যালেস ট্যুরিস্ট রিসর্ট’। দু’টি সুপার ডিলাক্স ও দু’টি ডিলাক্স-সহ মোট ১০টি ঘর রয়েছে। আছে তিনটি ডরমেটরিও। এক সঙ্গে প্রায় ৫০ জন পর্যটক এখানে থাকতে পারেন। রাজপরিবার ও রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম যৌথ ভাবে বর্তমানে এই রিসর্টটি চালায়। রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মরসুমে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখানে আসতেন। জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে সংখ্যাটা কমে আড়াইশোয় দাঁড়ালেও এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। রিসর্টের ম্যানেজার অশ্রুকুমার মাইতি বলেন, “ঐতিহ্য ও সুন্দর পরিবেশের জন্য রাজবাড়ির উপর পর্যটকদের আলাদা আকর্ষণ আছেই। এখানে ট্যুরিস্ট হাব হলে সব দিক থেকেই ভাল হবে।”

পরিষেবা
• চিন-ইউরোপের মধ্যে রেল পরিষেবা চালু শীঘ্রই
চলতি মাসের শেষেই পোল্যান্ড থেকে দক্ষিণ-পূর্ব চিনের সিচুয়ান প্রদেশ পর্যন্ত রেল পরিষেবা শুরু হচ্ছে। যদিও গত ২৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ভাবে শুধুমাত্র চিন থেকে যাত্রীদের পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হওয়ার পর দু’দেশের যাত্রীরা আসা যাওয়া করতে পারবেন। সিচুয়ানের চেংদু থেকে পোল্যান্ডের লোডজ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ৮২৬ কিলোমিটার পথে তিনটি দেশ— কাজাখস্তান, রাশিয়া এবং বেলারুশ পেরোতে হয়। সময় লাগবে মাত্র ১২ দিন। একই পথ সাধারণ ট্রেনে পাড়ি দিতে প্রায় ১০ দিন বেশি সময় লাগে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, পরিষেবা পুরো দমে চালু হলে শুধু যাত্রী পরিষেবাই নয়, ইউরোপ ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যে অর্থাত্ আমদানি-রফতানিতে গতি আসবে।

• মোবাইলে জানা যাবে ট্রেনের অবস্থান
এখন যে কোনও জায়গায় বসেই নিজের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে যাত্রীরা ট্রেন চলাচলের বিস্তারিত তথ্য পাবেন। সেন্ট্রাল রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার মুকেশ নিগম জানিয়েছেন, যাত্রীরা মোবাইলে সংশ্লিষ্ট স্টেশনের নাম বা ওয়েবসাইটে একটি বিশেষ কোড লিখে ওয়েবপেজে গিয়ে পরবর্তী দু’ ঘণ্টার ট্রেন আসা-যাওয়ার যাবতীয় তথ্য দেখতে পাবেন। ওয়েবপেজটি প্রতি দু’ মিনিট অন্তর ‘রিফ্রেশ’ হয়। ফলে সময়সূচির সামান্য পরিবর্তনও সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে ফুটে ওঠে। তিনি আরও জানান, কোনও যাত্রীর স্মার্ট ফোন না থাকলেও মোবাইলের ইন্টারনেট ব্রাউজারে গিয়ে তিনি এই তথ্য পেতে পারেন। সেন্টাল রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যাত্রীদের সুবিধার্থে সমস্ত বড় স্টেশনগুলিতে স্ক্রিন লাগিয়ে ট্রেনের ‘রিয়েল টাইম স্টেটাস’ দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রসঙ্গত, আগে থেকেই পশ্চিম রেলওয়েতে ‘ট্রেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ থাকায় এই সুবিধা ইতিমধ্যেই সেখানকার বিভিন্ন স্টেশনে রয়েছে।

• ট্রেনে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ খাবার
যে সব যাত্রীদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, রাজধানী ও শতাব্দী এক্সপ্রেসে এ বার তাঁদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করবে ভারতীয় রেল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যসভার সাংসদ জগত্প্রকাশ নাড্ডা রেলমন্ত্রককে একটি চিঠি দিয়ে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের বিশেষ খাবারের বন্দোবস্ত করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গত অগস্ট মাসে রাজ্যসভার অধিবেশনে তিনি তাঁর প্রস্তাবের সপক্ষে সওয়াল করেছিলেন। সেই অধিবেশনেই রেলমন্ত্রক থেকে তাঁকে জানানো হয়, এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী সমস্ত আঞ্চলিক রেল দফতরে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা চালু হবে। তাঁকে আরও জানানো হয়, বিমান সংস্থাগুলির মতো জৈন ধর্মাবলম্বী যাত্রীরা চাইলে তাঁদের জন্যও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করা হবে। এ ব্যাপারে নাড্ডা বলেন, “ডায়াবেটিক ও হৃদরোগের সমস্যায় আক্রান্ত যাত্রীদের ট্রেনে মাখন, চিনি, জ্যাম, আচার ইত্যাদি পরিবেশন করা হলে তাঁরা সেটা খেতে পারেন না। ফলে অনেক খাবার নষ্ট হয়। তাঁদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হলে এই অনাবশ্যক অপচয় বন্ধ হবে।”

• যাত্রী-চাপ কমাতে ৫৬টি বিশেষ ট্রেন
উত্সবের মরসুমে অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপ কমাতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ৫৬টি বিশেষ ট্রেন চালু করল ভারতীয় রেল। রেলমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ও চলতি মাসে অতিরিক্ত যাত্রী ও পর্যটকদের চাপ কমাতে এই ট্রেনগুলি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ৪ হাজার বার যাতায়াত করবে। ৫৬টি ট্রেনের মধ্যে ২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ১১টি অসংরক্ষিত ও ২৫টি সুপার ফাস্ট। পর্যটক ও যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই ট্রেনগুলি দেশের ৩৮টি জনপ্রিয় রুটে যাত্য়াত করবে। উত্সব ও ছুটি থাকায় এই সময় নয়াদিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, জম্মু তাওয়াই, জয়পুর, গুয়াহাটি, লখনউ, পটনা, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, মুজফফরপুর, গোরখপুর, বারানসি, দারভাঙা, পুরী, ইনদওর এবং সেকেন্দ্রাবাদের মতো শহরের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে। ফলে এই অতিরিক্ত যাত্রীচাপ কমাতেই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাত্যহিক ট্রেনের সঙ্গেও অতিরিক্ত কোচ জুড়েও চাপ কমানো হচ্ছে। রেল দফতর সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, প্রয়োজন হলে আরও বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। এই সমস্ত ট্রেনের সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য www.trainenquiry.com ওয়েবসাইটে মিলবে।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ