সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• ৫০০ বছরের পরোয়ানা ও ‘দ্য প্রিন্স’
খ্রিস্টীয় চোদ্দ শতকে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে রাজনীতি, অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘ফ্যামিলিয়া দ্য মেডিসি’ নামে এক পরিবারের উত্থান হয়। এক সময় তাদের পরিচয় হয় রাজ-পরিবার হিসেবে। তাদের রাজত্ব কালেই সুনাম অর্জন করেন জনৈক নিকোলো দি বার্নার্দো দেই মেকিয়াভেলি। রাজনীতিক, কূটনীতিক, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক, এমনকী লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে রেনেসাঁস-এর সেই সময়ে। তাঁর কর্মজীবনের একটি অধ্যায়ে মেডিসি পরিবার রাজনীতিগত ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হলেও ফিরে আসে প্রায় তেরো বছর পর, ১৫১২ সালে। মেকিয়াভেলি তত দিনে গণতান্ত্রিক ফ্লোরেন্সের ‘সেকেন্ড চান্সরি’র সচিব। মেডিসির কুনজরে পড়েন তিনি। জারি করা হয় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা। রাজ-পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দায়ে তাঁকে বন্দি করা হয়, চলে অকথ্য অত্যাচার। শেষে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় শহর থেকে দূরে এক বাড়িতে। এই সময়ই মেকিয়াভেলি রচনা করেন ‘দ্য প্রিন্স’ নামক এক রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তাতে বলা ছিল— ক্ষমতা লাভের জন্য কোনও পন্থাই সেই অর্থে অনৈতিক নয়।
ফ্লোরেন্সে গবেষণারত প্রফেসর স্টিফেন মিলনর আচমকাই সন্ধান পান মেকিয়াভেলির নামে জারি করা ‘সেই’ পরোয়ানা। ১৫১৩ সালের সেই নথি যে কতটা উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার, তা বোঝাতে গিয়ে প্রফেসর মিলনর বলেন, এটা ভেবেই অদ্ভুত লাগছে যে এই সামান্য নথিই ছিল তত্কালীন এক দাপুটে রাজনীতিবিদের অবনতির কারণ। এই সমনের সঙ্গে আবিষ্কৃত হয়েছে আরও কিছু নথি— চার জন ঘোড়সওয়ারকে দেওয়া টাকার রসিদ, যাদের কাজে লাগানো হয় মেকিয়াভেলিকে খুঁজে বের করার জন্য।
সেই সঙ্গে এ বছর ফ্লোরেন্স শহরে সগর্বে পালিত হচ্ছে ‘দ্য প্রিন্স’-এর ৫০০তম বছর।

• লুম্বিনির নতুন অধ্যায়
খ্রিস্টপূর্ব ৬৪২-এর মে মাস। শাক্য বংশের মহারানি মায়াদেবী, তখন তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা, পিতৃগৃহে যাওয়ার পথে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন হিমালয়ের পাদদেশে এক সুন্দর বাগানে। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন গৌতম বুদ্ধ। শাল গাছের সারিতে ছায়াবৃত সেই জায়গাটি নেপালের লুম্বিনি।
সম্রাট অশোক এই স্থানেই চারটি বৌদ্ধ স্তূপ ও একটি শিলাস্তম্ভ নির্মাণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ২৪৯-এ। ১৯৯৬ সালে এই এলাকায় খননকার্যের সময় উদ্ধার হয় সেই স্তূপগুলি-সহ এক বিচিত্র পাথর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, সম্রাট অশোকই এই প্রস্তরখণ্ড রেখেছিলেন ভগবান বুদ্ধের সঠিক জন্মস্থান নির্ধারণ করতে। তাদের মতে, এই তথ্য যদি প্রমাণিত হয়, তা হলে, লুম্বিনির ধার্মিক অবস্থান বহুল অংশেই বৃদ্ধি পাবে। সঙ্গে অবশ্যই আছে এই জায়গার ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শনগুলি— বৌদ্ধ স্তূপ, স্তম্ভ এবং একটি মন্দির, যাকে মায়াদেবীর মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর আছে চৈনিক পর্যটক ফা হিয়েন ও জুয়াং ঝাং (হিউয়েন সাঙ নামে পরিচিত)-এর লেখনীতে এ স্থানের মাহাত্ম্য।
ধর্ম, ইতিহাস, স্থাপত্যশিল্প— সব মিলিয়ে লুম্বিনি ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্থানের তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। সম্প্রতি ইউনেস্কোর কাঠমান্ডু শাখার উদ্যোগে একটি ওয়েবসাইট প্রকাশিত হয়েছে— লুম্বিনি: পাস্ট, প্রেসেন্ট অ্যান্ড ফিউচার। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান ছাড়াও এই জায়গার অন্যান্য দিকগুলিতে আলোকপাত করা হয়েছে এই ওয়েবসাইটে।

• ঐতিহ্য রক্ষায় নাম না-পাল্টানোর নয়া দাবি
কে না জানে কিং খান শাহরুখের বসত বাংলোটির নাম ‘মন্নত’। কিন্তু ক’জনই আর জানেন যে বাংলোটির আসল নাম ‘ভিলা ভিয়েনা’!
মুম্বইতে ইদানীং যখন তখন রাস্তা-গলির নাম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কোনও রাজনৈতিক নেতার নামে। বাড়ি-বাংলোর নামে থাকছে নতুন মালিকের পছন্দের ‘শব্দ’। এ হেন জটিল অবস্থায় মুম্বই হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি দাবি তুলেছে রাস্তা ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের আসল নাম বজায় রাখার। এই মর্মে কমিটির তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, নতুন নামের পাশে ‘ব্র্যাকেট’-এ পুরনো নামের উল্লেখ রাখতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান ভি রঙ্গনাথনের বক্তব্য, এই ভাবে নতুনের সঙ্গে পুরনো নাম থাকলে, ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ি বা রাস্তা চিহ্নিত করতে অসুবিধা হবে না। তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে কেবলমাত্র বাড়ির ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। পরবর্তী কালে রাস্তাগুলিকেও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

• বুদ্ধ বিনাশ: বামিয়ান ও তালিবান
সলসল ও শামামা— বিশ্বের সর্ববৃহত্ দাঁড়ানো বুদ্ধমূর্তি, যা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় ২০০১ সালে। তবে এই মূর্তি দু’টির নির্মাণ ও ধ্বংসের ইতিহাস বেশ পুরনো।
হিন্দুকুশ পর্বতমালার বামিয়ান উপত্যকা, ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রুট’-এর এক অন্যতম অংশ। বাণিজ্য পথের সঙ্গে সঙ্গে এই উপত্যকা ছিল বৌদ্ধধর্মের এক প্রাণচঞ্চল উপনিবেশ। দুই থেকে সাত দশকের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত এই পর্বতমালার ছোট ছোট গুহায় বসবাস করতেন বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা। নবম শতকে উপত্যকার শাসনভার পুরোপুরি চলে যায় মুসলমান শাসকদের হাতে। এবং তখন থেকেই শুরু হয় এই ভাস্কর্যের অবক্ষয়। ১২২১ সালে প্রথম হামলা চালান চেঙ্গিস খান, তার পর মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব, আরও পরে আঠারো শতকে পারস্য-রাজ নাদের আফসার। শেষে সলসলের অবয়ব নষ্ট করতে সক্ষম হলেন আফগানি রাজা আব্দুর রহমান খান, ১৮৪৭ সালে। এর পর ২০০১ সালের মার্চ মাসে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়ে তালিবানরা ‘সফল’ হয় গান্ধার শিল্পের এই দুই মূর্তিকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করতে।
বামিয়ান উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের পরিচিত সলসল ও শামামা আদতে ভগবান বুদ্ধের দু’টি ভিন্ন রূপ— ভৈরোকণা ও শাক্যমুনি। হাতের মুদ্রা থেকেই এই রূপ নির্ধারণ করা হয়। মাটি থেকে মূর্তি দু’টির উচ্চতা যথাক্রমে ৫৮ ও ৩৮ মিটার। কুষাণ যুগে নির্মিত দু’টি মূর্তিই ছিল উজ্জ্বল রঙের, সোনা ও মূল্যবান গহনায় সাজানো। শামামা— ছোট মূর্তিটি নির্মিত হয় ৫৪৪ থেকে ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অন্যটির নির্মাণ কাজ পরে শুরু হয়, ৫৯১ সালে, এবং শেষ হয় ৬৪৪ সালে।
চৈনিক পর্যটক জুয়াং ঝাং (হিউয়েন সাঙ) ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে এই উপত্যকায় আসেন। তাঁর কথায়, এখানে দশটারও বেশি বৌদ্ধ গুম্ফা ও হাজারেরও বেশি বৌদ্ধ সাধক ছিলেন। তাঁর লেখনী থেকে জানা যায় যে, এই দুই মূর্তির অদূরে ছিল আরও একটি মূর্তি, শায়িত বুদ্ধের। বর্তমানে চিনের গানসু প্রদেশের বিংলিং মন্দিরে একটি মূর্তি আছে যা বামিয়ান মূর্তির শৈল্পিক ধাঁচে নির্মিত।
এ হেন ধর্মীয় ও শিল্প নিদর্শন মণ্ডিত উপত্যকাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার তকমাটা একটু আলাদা— প্রথম ১০০টি বিলুপ্তপ্রায় স্থানের একটি! ২০১১ সালে প্যারিসের বৈঠকে ইউনেস্কো ঠিক করে বামিয়ানের ছোট মূর্তিটি বিশেষ এক প্রকারের ‘সিলিকন কম্পাউন্ড’ দিয়ে পুনর্গঠন করা হবে। ৩৯ রকমের পন্থার কথা উল্লেখ করা হয় এই উপত্যকা রক্ষার্থে। এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্প শুরু করার কথাও বলা হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• বারো হাজার বছরের পুরনো গুহাচিত্র বেতুলে
মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলায় আবিষ্কৃত হল প্রায় বারো হাজার বছর আগের গুহাচিত্র। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলার সাতপুরা পর্বতশ্রেণির একাধিক অঞ্চলে গবেষণা চালিয়েছিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের একদল বিজ্ঞানী। সাতপুরার গাবিলগড় পর্বতে তারা খোঁজ পেয়েছেন ৭১ টি পাথরের ‘বাড়ি’ ও প্রচুর গুহাচিত্রের। তা ছাড়াও এই অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অমরাবতী জেলাতেও আবিষ্কৃত হয়েছে শতাধিক অসজ্জিত গুহা। গুহাগুলি আদিম মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। স্থানীয় লোকগাথা অনুযাযী বিদর্ভ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল আদিম মানুষের অবাধ বিচরণের জায়গা। এই আবিষ্কার উপকথাগুলির সত্যতা প্রমাণ করছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। গাবিলগড়ের গুহাগুলির দেওয়াল, মেঝে ও ছাদ জুড়ে রয়েছে অসামান্য কারুকাজ। চালকোলিথিক যুগের এই গুহাচিত্রগুলির সঠিক সময়কাল নির্ণয় না করা গেলেও এগুলি কমপক্ষে বারো হাজার বছরের পুরনো বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। তবে প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিল্পকর্মগুলি ‘সভ্য’ মানুষের অত্যাচারে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত।

• পথতলে উদ্ধার সোনার ‘রিথ’
গ্রিসে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার লম্বা ‘থেসালোনিকি সাবওয়ে’র কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু গোড়া থেকেই এ কাজের প্রধান ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘প্রাচীন’ গ্রিস। ভূগর্ভ খননের সময়ে বারেবারেই পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য, সমাধিক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। তবে এই তালিকায় নবতম সংযোজন একটি সোনার ‘রিথ’। নবনির্মিত রিপাবলিক স্টেশনের কাছে ম্যাসিডন যুগের একটি সমাধিক্ষেত্রের মধ্যে একটি কঙ্কালের মাথায় জড়ানো ছিল এই স্বর্ণ মুকুটটি। তবে ‘রিথ’টির সঠিক সময়কাল বা গুনগত মান সম্পর্কে এখনও সঠিক ভাবে কিছু জানা না গেলেও সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষ ভাগ অথবা তৃতীয় শতকের প্রথম ভাগের নিদর্শন এটি। প্রসঙ্গত এর আগেও আটটি ‘রিথ’ উদ্ধার হয়েছে এই নির্মাণস্থলের বিভিন্ন জায়গা থেকে। ২০০৮-এর জুন মাসে অলিভ পাতায় মোড়া চারটি সোনার ‘রিথ’, কানের দুল এবং হেলেনিস্টিক যুগের সাতশো সমাধিক্ষেত্রের খোঁজ মেলে সিনট্রিভানি জেলার নির্মাণস্থল থেকে। রিপাবলিক স্টেশনের কাজ যেখানে হচ্ছে, তার কাছেই খুঁজে পাওয়া ‘রিথ’টি সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণার জন্য সেটিকে থেসালোনিকির প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

• অপেরা গায়ক নিয়ান্ডারথাল
বিরাট এক হলঘরের মধ্যে অপেরা গাইছেন একদল গায়ক। তাঁদের ঘিরে অনুষ্ঠান শুনছেন একদল মানুষ। ফ্রান্স, জার্মানি বা ইতালির কোনও প্রেক্ষাগৃহ নয়, এই সঙ্গীতানুষ্ঠান আজ থেকে ২-৩ লক্ষ বছর আগের, আমাদের পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথালদের আমলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক স্টিফেন মিথেনের দাবি অনুযায়ী নিয়ান্ডারথালরা অপেরা জাতীয় গান গাইত। তবে মনোরঞ্জনের জন্য নয়, তারা এই গান গাইত নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করতে। “শব্দের ব্যবহার না জানায় নিয়ান্ডারথালরা র‌্যাপ জাতীয় গান গাইতে পারত না”, ‘আক্ষেপ’ করেছেন মিথেন। তাঁর আরও দাবি, অপেরার এই ভাবভঙ্গি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়নি নিয়ান্ডারথালরা। বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অঙ্গভঙ্গির ‘আবিষ্কার’ করত তারা। প্রসঙ্গত প্রায় এক লক্ষ বছর আগে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের পর শুরু হয় ভাষার ব্যবহার। ৩৩ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত এই প্রজাতি কোনওদিনই আর ভাষার ব্যবহার শেখেনি!

• বিশ লাখ বছর আগেকার শেয়ালের জীবাশ্ম
দক্ষিণ আফ্রিকার মালাপায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালানোর সময়ে পাওয়া গেল প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শেয়ালের জীবাশ্ম। এই প্রজাতির শেয়ালের খোঁজ এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। জোহানেসবার্গের উইট্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রত্নতাত্ত্বিকের সহায়তায় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল শেয়ালের এই অজানা প্রজাতির খুলি ও চোয়ালের কিছু অংশের জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত পরিবেশবিদ জন স্কিনারের নামানুসারে এই প্রজাতির নামকরণ করা হয় ‘ভালপেস স্কিনেরি’। দক্ষিণ আফ্রিকার মাংসাশী-স্তন্যপায়ীদের মধ্যে শেয়াল সম্পর্কে এখনও বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। এই আবিষ্কার শেয়ালদের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মালাপা চিরকালই প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে ‘স্বর্ণখনি’। ২০১০ সালে এখান থেকেই মানুষের এক প্রাচীন পূর্বসূরি অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবার জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• মধুকরের কাছে তরঙ্গ বেয়ে পৌঁছয় মধুর বার্তা
মধুভাণ্ডারের খবর আসে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মারফত্। এই তরঙ্গই ফুল থেকে ফুলে সঞ্চারিত হয়ে পৌঁছে যায় মধুকরের কাছে— এমনটাই দাবি করেছেন ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ‘বাম্বল বি’ বা ‘বোম্বাস’ প্রজাতির মৌমাছিরা এই সঙ্কেত বুঝতে খুবই পটু। পরাগসংযোগের আগে ফুল থেকে এক ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বহু দূর অবধি সঞ্চারিত হয়ে পৌঁছে যায় মৌমাছিদের রাজ্যে। সে তরঙ্গই পথ চিনে মৌমাছিদের ফুলের কাছে ছুটে আসতে সাহায্য করে। তরঙ্গের আবার রকমফের আছে। সঠিক ফুল চিনে নেওয়ার জন্য মৌমাছিদের একান্ত প্রয়োজন ‘পজিটিভ’ তরঙ্গের। ঝরে পড়া ফুলের তরঙ্গ আবার ‘নেগেটিভ’! অন্য দিকে, ফুল থেকে ফুলে পরাগ সংগ্রহের সময় মৌমাছিদের দেহ নিঃসৃত পজিটিভ তরঙ্গের কিছু অংশ সঞ্চারিত হয় ফুলের মধ্যে। পারস্পরিক তরঙ্গ বিনিময়ের এই প্রক্রিয়াই ফুলের পরাগসংযোগে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত ফুলের উজ্জ্বল রং, গন্ধ এবং পরাগের প্রকারভেদের উপর এই তরঙ্গের বিভিন্নতা নির্ভর করে। আবার কখনও ভুল সঙ্কেত ছড়িয়েও কোনও কোনও ফুল বারবার টেনে আনে ‘বিভ্রান্ত’ মৌমাছিদের। তরঙ্গের আদানপ্রদান নিয়ে নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানীরা গাছের গায়ে তড়িতবিশ্লেষক পদার্থ লাগিয়ে ফুল ও মৌমাছিদের এই পারস্পরিক ‘বৈদ্যুতিন কথোপকথন’ লক্ষ করেছেন। অবশ্য তরঙ্গের মারপ্যাঁচই হোক বা সঙ্কেতের হাতছানি, এই ‘দেওয়া নেওয়া’র মধ্যেই লুকিয়ে আছে নতুন প্রাণ সৃষ্টির রহস্য।

• অনুকরণে পটু ‘জাপানি ম্যাকাক’ বাঁদর
মানবপ্রজাতির পূর্বপুরুষ যে বাঁদর ছিল, সে কথা ফের এক বার প্রমাণ হল জাপানের রাইকেন ব্রেন সাইন্স ইন্সটিটিউটের একদল বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। কয়েক জোড়া ‘ম্যাকাক’ বাঁদরদের নিয়ে বেশ ক’টি পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা তাদের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে বাঁদরদের জোড়ায় জোড়ায় একসঙ্গে একটি ‘বোতাম টেপা মেশিন’-এর সামনে রেখে তাদের বোতাম টেপার সময়টি লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বাঁদরদের একসঙ্গে না রেখে তাদের আগের পরীক্ষার ভিডিও দেখানো হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়ে তাদের সম্পূর্ণ আলাদা রেখে পরীক্ষা চালানো হয়। তিনটি পর্যায়েই বিজ্ঞানীরা বাঁদরদের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার জন্য বাঁদরদের বোতাম টেপার সময়ের অদল বদল ঘটেছে। আশ্চর্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তারা সঙ্গীর প্রতিটি পদক্ষেপ অনুকরণ করছে এবং এই সমন্বয় সব থেকে বেশি দেখা যায় যখন বাঁদরেরা তাদের সঙ্গীদের দেখতে ও শুনতে পায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এই অনুকরণ ক্ষমতা তাদের সহজাত। পরিকল্পিত ভাবে তারা সমন্বয় রক্ষা করতে একেবারেই অক্ষম। ব্যবহারের এই সামঞ্জস্যতার প্রকৃত কারণ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা। এই বিষয়ে তাঁরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

• সঙ্গী রক্ষায় দলবদ্ধ উদ্যোগ
সঙ্গীকে বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চলছে। মানুষ নয়, এই প্রাণপণ চেষ্টা করছে এক দল ডলফিন! দক্ষিণ কোরিয়ার উলসানের পূর্ব সাগরে এমনই এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন বিজ্ঞানীরা। ডলফিন ও তিমিদের মধ্যে এই প্রবণতা এর আগেও লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘বটলনোজ ডলফিন’ পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছে তার অসুস্থ শিশু বা তাদের মুমূর্ষু সন্তানকে অতি স্নেহে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টার মুহূর্ত বিভিন্ন সময়ে ক্যামেরাবন্দি করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ সব ঘটনার ক্ষেত্রে একটি অথবা দু’টি ডলফিনকেই দেখা গিয়েছে ‘উদ্ধারকাজ’ করতে। জোটবদ্ধ হয়ে উদ্ধারকাজ, তাও আবার সঙ্গীকে— উলসানের সমুদ্রে ডলফিনদের এমন প্রচেষ্টাকে ‘বিরলতম’ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী কিউম জে পার্ক। ডলফিনদের নিয়ে সমীক্ষা করার সময় তাঁর নেতৃত্বাধীন দলের নজরে আসে ডুবন্ত সঙ্গীকে বাঁচাতে ১২টি ডলফিনের একটি দল ভেলার মতো আকৃতি নেয়। এদের মধ্যে এক জন তার ‘ফ্লিপার’-এর সাহায্যে ডুবন্ত সঙ্গীর দেহকে তুলে ধরে। ইতিমধ্যে অপর ১০ জন তাদের ঘিরে ধরে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। সঙ্গীর মৃত্যু আসন্ন বুঝলে দলের পাঁচ ডলফিন নিজেদের শ্বাস দিয়ে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়, যত ক্ষণ না পর্যন্ত ‘রিগর মরটিস’-এর লক্ষণ দেখা যায়।

• ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচাতে গবাদি পোষ্য বিক্রি
ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচাতে বাড়ির গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ থেকেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। ২০০৯ সালে আয়লার তাণ্ডবের পর তাঁদের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে আরও বেশি মনোযোগ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামের এক গৃহবধূ— স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় নিজেদের গ্রামে যিনি প্রায় ১৮ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছের চারা লাগিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়— সুন্দরবনের গ্রামগুলিতে, যেখানে গবাদি পশুপালনই জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায়, সেখানে সেই পশু বিক্রির সিদ্ধান্তে এগিয়ে এসেছে খোদ গ্রাম পঞ্চায়েত। এমনকী ম্যানগ্রোভের কেউ ক্ষতি করলে তাকে দিতে হবে জরিমানাও। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার বদ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবনেই বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। জাতীয় গড় যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের মোট আয়তনের মাত্র ১৪ শতাংশ বনাঞ্চল! ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি লাভ করে। কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই অরণ্যের প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারই বাংলাদেশের মধ্যে। বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আয়তন বর্তমানে তার প্রকৃত আয়তনের ১/৩ অংশ মাত্র। ১৯০৩-এ প্রকাশিত প্রেইনের হিসাব মতে প্রায় ২৪৫টি শ্রেণি ও ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ সমৃদ্ধ সুন্দরবনে খোঁজ পাওয়া যায় ১০০টি প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাসভূমি বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি কাঠ এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বর্তমানে ম্যানগ্রোভ অরণ্য লুপ্তপ্রায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উষ্ণায়ন ও সমুদ্র জলস্তরের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবনে বসবাসকারী ৫০ লক্ষ মানুষের মধ্যে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ বাস্তহারা হয়ে পড়বেন। প্রসঙ্গত লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির রিপোর্টে জানা গিয়েছে ম্যানগ্রোভের বিলুপ্তির কারণে প্রতি বছর উপকূলবর্তী অঞ্চলে ২০০ মিটার নোনাজমির ক্ষয় হয়। এ সব কথা মাথায় রেখে গ্রামবাসীদের এমন সিদ্ধান্ত সাধুবাদ যোগ্য।

পার্বণ
• নটরাজের বন্দনায় নাট্যাঞ্জলী
ভক্তির সঙ্গে নৃত্যের একটা গভীর যোগ রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। পাশ্চাত্যের মতো এ দেশে নাচকে শুধুমাত্র বিনোদনের অঙ্গ হিসাবে দেখা হয় না। বেশ কিছু ভারতীয় নাচের ঘরানা গড়ে ওঠার মূলেই রয়েছে দীর্ঘ দিনের ধর্মীয় চর্চা। হিন্দু ধর্মে শিবকে তো নৃত্যের দেবতা ‘নটরাজ’ হিসাবে বন্দনা করার রেওয়াজও আছে। ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য উপস্থাপনায় সারা দেশ জুড়ে বছরের নানা সময়ে নৃত্যোত্সবের আয়োজন করা হয়। ‘নাট্যাঞ্জলি নৃত্য উত্সব’ তাদেরই অন্যতম। তামিলনাড়ুর চিদম্বরমে প্রতি বছর শিবরাত্রিতে সূচনা হয় পাঁচ দিনের এই উত্সবের। এখানকার চিদম্বরম মন্দিরে নৃত্যের দেবতা ‘নটরাজ’কে নিবেদন করেই এই আয়োজন। হাজার বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে নাট্যাঞ্জলি ট্রাস্টের সঙ্গে যৌথ ভাবে নৃত্যোত্সবের আয়োজক কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক ও তামিলনাডু রাজ্য পর্যটন বিভাগ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা নামকরা শিল্পীদের উপস্থিতিতে এই উত্সব সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। চিদম্বরম মন্দিরের স্বর্ণালী ছাদের নীচের স্তম্ভগুলিতে তাণ্ডবরত নটরাজের ১০৮টি ভঙ্গিমা প্রদর্শিত হয়। নৃত্যকলার এ এক আশ্চর্য প্রদর্শনী। শিল্পী ও দর্শক— উভয়ের কাছে এই উত্সবে উপস্থিতি এক স্মরণীয় প্রাপ্তি এবং গর্বেরও। তবে শুধু প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাই নন, এই উত্সবের মঞ্চে অনামী গুণী শিল্পীও নিজের শিল্পকলা পরিবেশন করতে পারেন।

• পরিপল্লির গজমেলা
যে উত্সবে হাতি নেই, সে উত্সব অসম্পূর্ণ। কেরলে এমনটাই মনে করা হয়। কারণ এখানে হাতি গণেশ রূপে পূজিত হয়। বেশ কিছু মন্দিরে হাতিকে পোষ্য হিসেবেও রাখা হয়। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের দিনে শোভাযাত্রায় দেবতাদের মূর্তিও বহন করে এরা। আগের দিনে কেরলে ধনী ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিরা বাড়িতেও হাতি পুষতেন। ‘সে’ যেন পরিবারেরই এক জন! বিশেষ উত্সবের দিনে বর্ণাঢ্য ভাবে সাজিয়েগুছিয়ে বাইরের জগতের কাছে তাদের উপস্থাপন করা হত। পরিপল্লির গজমেলা তেমনই এক জনপ্রিয় ও অনন্যসাধারণ বাত্সরিক উত্সব। কেরলের পরিপল্লিতে কোড়িমুটিল শ্রীভদ্রকালী মন্দিরে এই মেলা আয়োজিত হয়। মালায়লম শব্দ ‘গজম’-এর অর্থ হাতি। মেলার দশম দিনে পঞ্চবাদ্য সহযোগে ৫০টি হাতির এক বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ মহামিছিল বেরোয় তিরুঅনন্তপুরমের পরিপল্লিতে। ভক্তরা নিজেদের সমৃদ্ধি ও প্রতিপত্তি বজায় রাখতে হাতি উত্সর্গ করেন এ সময়ে ভদ্রকালী মন্দিরে। এই প্রথাকে ‘নার্চ’ বলা হয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ‘গজমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব চলাকালীন প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গনে দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত এবং নৃত্যের আসর বসে। প্রতি বছর বসন্ত কালে দশ দিনের এই গজমেলা তিরুঅনন্তপুরম থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরের পরিপল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়।

• হাতিপুজো রাজস্থানে
ইতিহাস থেকে পুরাণ, ভারতে হাতি বরাবরই যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হয় দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত। এ ছাড়াও রাজা-বাদশাদের সামরিক বাহিনী থেকে প্রমোদ সফরে হাতি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হাতিকে সংসারের সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক মনে করা হয়। রাজা-বাদশাদের আমল গিয়েছে, নেই জমিদার বা সামন্ত প্রথাও। তবু আজও নানা উত্সবে, অনুষ্ঠানে হাতি ভীষণ ভাবে সমাদৃত। রাজস্থানের জয়পুরে এমনই একটি উত্সব পালিত হয় প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে হোলির দিনে। রাজস্থানী অলঙ্কার-বস্ত্রে সুসজ্জিত সারে সারে দাঁড়িয়ে থাকা হাতি বন্দনাই এই উত্সবের মূল সুর। ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও সঙ্গীত-সহ জয়পুরের ছগন স্টেডিয়াম হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত হয়ে ওঠে।

• ঐতিহ্যের ‘চাপচার কুট’
মিজোরামের কৃষিপ্রধান উৎসব— চাপচার কুট। আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুট’ শব্দের অর্থ উৎসব। মিজোরামের তিনটি প্রধান কৃষি উৎসব— চাপচার কুট, মিম কুট এবং পাওল কুট—এর মধ্যে প্রথমটি অন্যতম। ঝুম চাষের প্রস্তুতি হিসেবে নানা রকমের খাওয়াদাওয়া এবং ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের মাধ্যমে প্রতি বছর বসন্তের শুরুতে এই উৎসব আয়োজিত হয়। ১৪৫০ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দর মধ্যে সুয়াইপুরী নামের এক গ্রামে চাপচার কুটের সূচনা। আট থেকে আশি— সকলেই উৎসবের রঙিন পোশাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নেয়। খালি পায়ে নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা এ উৎসবের মূল রীতি। বাঁশের সারির মাঝে পা ফেলে ফেলে তালে তালে মিজো-মহিলাদের নাচ দেখার মতো। ঝুম চাষের জন্য গাছগাছালি কেটে শুকোতে দেওয়ার ফাঁকে মিজোরামের গ্রামে গ্রামে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রচলিত রীতি মেনে লোকসংস্কৃতির অঙ্গ চাপচার কুট-এর আয়োজন করা হয়।

পর্যটন কেন্দ্র
• রবীন্দ্রনাথের চশমা ও চাদর আসছে বিশ্বভারতীতে
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সংগ্রহ থেকে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় ফিরছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চশমা ও চাদর। ১৯২৪-২৫ সালে আর্জেন্তিনা সফরে রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে (কবি যাঁকে ‘বিজয়া’ নামেই ডাকতেন) ওই সামগ্রী উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন। সামগ্রীগুলি দান করছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। কবির চাদর, চশমা ও স্বাক্ষরিত বইগুলি দীর্ঘ দিন ধরে ছিল ওকাম্পোর সচিব মারিয়া কুরার কাছে। তাঁর কাছ থেকেই ওই দুর্মূল্য জিনিসগুলি সংগ্রহ করেন শ্যামাপ্রসাদবাবু। রবীন্দ্র গবেষক ও অনুরাগীদের জন্য আরও ভাল খবর, একই দিনে অন্নদাশঙ্কর রায়কে লেখা কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য চিঠিও পেতে চলেছে রবীন্দ্রভবন। সেই চিঠি সংগ্রহশালায় দান করবেন তাঁর পুত্র আনন্দরূপ রায়। ১৯২৪ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারি পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আর্জেন্তিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে। সঙ্গী ছিলেন এলম্হার্স্ট। তখনই বেশ কিছু দিন ওকোম্পোর বাড়িতে নিমন্ত্রিত ছিলেন কবি। আর্জেন্তিনায় লেখা পূরবীর কবিতাগুলি তিনি প্রিয় বিজয়াকেই উৎসর্গ করেন। রবীন্দ্রনাথ ওকাম্পোর বাড়ির ব্যালকনিতে বসে অদূরে বয়ে যাওয়া নদীটি দেখতে খুব ভালবাসতেন। বসতেন একটি সুদৃশ্য চেয়ারে। পরে ওকাম্পো নিজেই সেই চেয়ার উপহার হিসাবে শান্তিনিকেতনে পাঠিয়েছিলেন। সেই চেয়ার এখন রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালাতেই শোভা পাচ্ছে।

• নুনের গুণ গাইতে সংগ্রহশালা বুলগেরিয়ায়
প্রাচীন সময় থেকেই রান্নার গুরুপূর্ণ অংশ হিসেবে বিশ্ব জুড়ে বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়ে এসেছে ‘লবণ’। দুষ্প্রাপ্যতার জন্য এক সময় একে ‘সাদা সোনা’ও বলা হত। এই ‘সোনা’র ইতিহাস তুলে ধরতে ইউরোপের পূর্বে বুলগেরিয়ার পোমোরিতে ২০০২ সালে তৈরি হয়েছে ‘সল্ট মিউজিয়াম’। সংগ্রহশালা দেখেতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। কৃষ্ণসাগরের উপকূলে লবণাক্ত ভূমির এই শহর বুলগেরিয়ার দ্বিতীয় বৃত্তম শহর বুর্গাস থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেরও আগে থেকেই এই এলাকা নুন এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থে সম্বৃদ্ধ। এই মিউজিয়ামে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া নুনের নমুনা রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে ছবির গ্যালারি, তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ঘর এবং প্রাচীন কালে ব্যবহার হওয়া নুন তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, যা এখনও ব্যবহার যোগ্য। অন্য দিকে, গরমের সময় কী ভাবে লবণ তৈরি হয় তা দেখানো হয় পর্যটকদের। সব থেকে আশ্চর্যের, এখনও পোমোরিতে প্রায় দু’ শতকের প্রাচীন ‘অ্যালকিয়ালোস’ বা সমুদ্রের জলকে বাষ্পীভূত করে লবণ তৈরি করা হয়। তবে শুধু মিউজিয়ামই নয়, এখানকার অসাধারণ সুন্দর সমুদ্রতটগুলিও পর্যটকদের রীতিমতো আকর্ষণ করে। রয়েছে নিজেদের পকেট অনুযায়ী ছোট-বড় প্রমোদতরীতে সমুদ্র ভ্রমণের ব্যবস্থা। আর প্রাচীন শহর ‘অ্যাঙ্কিয়ালোস’ (পোমোরির প্রাচীন নাম) দেখতে পর্যটকরা হারিয়ে যান খ্রিস্ট পূর্ব সময়ে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ‘সল্ট মিউজিয়াম’ পোমোরিকে মাত্র দু’ বছরের মধ্যে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে।

• বাংলার জীববৈচিত্র চেনাতে শহরের নতুন পার্ক
কলকাতার নিউ টাউনে ইকো পার্কের মধ্যেই এ বার তৈরি হচ্ছে ইকো ডাইভার্সিটি পার্ক। বাংলার গাছগাছালি থেকে শুরু করে জীববৈচিত্রকে চেনা যাবে এখানে। হিডকোর দাবি, শহরে এ রকম পার্ক এই প্রথম। এমনকী, দেশেও ইকো ডাইভার্সিটি পার্ক বেশি নেই। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘আজকের প্রজন্মের কাছে বাংলার জীববৈচিত্র ও ইকো সিস্টেমকে তুলে ধরতেই এই নতুন ধরনের পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতাও তৈরি করবে এই ইকো ডাইভার্সিটি পার্ক।” গত বছর ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইকো পার্কের উদ্বোধন করে নাম দিয়েছিলেন ‘প্রকৃতি তীর্থ’। ৪৮০ একর জমির উপরে এই পার্কের ২০০ একর জলাশয়ে রয়েছে বোটিংয়ের সুবিধা। আছে গোলাপ থেকে শুরু করে নানা ধরনের ফুলের বাগান। এ ছাড়া বাংলার গাছপালা থেকে শুরু করে ঘাস, পাখি, পোকামাকড়, মাছের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করানো হবে। কোন গাছের কত বয়স বা কোন পাখি বাংলার কোথায় পাওয়া যায়, তা-ও জানতে পারবেন দর্শকেরা। দেবাশিসবাবু জানান, শহরে বা শহরতলিতে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা অনেকেই গ্রামবাংলার পরিবেশ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। বাংলার জীববৈচিত্র সম্পর্কেও ধারণা কম। তাই ইকো ডাইভার্সিটি পার্ককে ইকো পার্কের মধ্যেই তৈরি করা হবে। হিডকোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ইকো ডাইভার্সিটি পার্কটি তৈরি হবে পার্কের জলাশয়ের কাছেই, ফুড স্টলের সামনে। পার্কে তৈরি হবে একতলার একটি কাঠের বাড়ি। সেখানে থাকবে জীব বৈচিত্রের নানা নিদর্শন।

• শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে সাফারি পার্ক
অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ করে দিতে সাফারি পার্ক তৈরি করতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে সেবকের কাছে সরিয়া পার্ক লাগোয়া মহানন্দা অভয়ারণ্যে ২৯৭ হেক্টর জায়গায় আন্তর্জাতিক মানের ওই সাফারি পার্ক তৈরি করা হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা (ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাগপুরের একটি সংস্থাকে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, দ্রুত ডিপিআর তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি বনাঞ্চলের ওই এলাকায় গাছ লাগানো এবং নার্সারি তৈরির কাজ শুরু করা হবে। শিলিগুড়ির কাছে ওই পার্ক গড়ে উঠলে পর্যটকদের কাছে তা অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হবে বলে মনে করেন গৌতমবাবু। সংস্থার এমডি আসফাক আহমেদ জানিয়েছেন, বনাঞ্চলের ওই পরিবেশ রক্ষা করেই সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হবে। পার্কের নির্দিষ্ট বাস, জিপসিতে বনাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বন্যপ্রাণ দেখতে পারবেন উৎসাহীরা। পার্কে ঢোকার পর ছোট ছোট কটেজ ও বসায় জায়গা থাকবে। থাকবে কাফে, বিভিন্ন হাতের কাজের সামগ্রী কেনাকাটার দোকান ও রেস্টুরেন্ট।

পরিষেবা
• জিপ সাফারি চালুর আর্জি
এক দিকে গয়েরকাটা চা বাগান। অন্য দিকে সবুজ মরাঘাট জঙ্গল। মধ্যে তিরতির করে বয়ে চলেছে মধুবনী নদী। এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এই জঙ্গলে বেড়াতে আসেন। কিন্তু এখানে জিপ সাফারি-সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা না থাকায় কেউ রাত কাটাতে চান না। অথচ এই এলাকায় রয়েছে রাভাদের গ্রাম খুকলুং বস্তি। পর্যটকরা সহজে সেখানকার বাসিন্দা গনৎ রাভার নাচের দলের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেতে পারেন। এ ছাড়াও কাছে গোঁসাইহাট ঝিলে প্রতি বছর শীতে পরিযায়ী পাখি দেখার সুযোগ মিলবে। তাই মরাঘাট জঙ্গলে ‘জিপ সাফারি’ চালু করার দাবি তুললেন ডুয়ার্সের গয়েরকাটার বাসিন্দারা। এটা চালু হলে জলদাপাড়া, গরুমারা চিলাপাতার মতো এখানেও ভিড় বাড়বে বলে আশা স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, এখান থেকে পর্যটকরা খুট্টিমারি, সোনাখালি, তোতাপাড়ায় বেড়ানোর সুযোগ পাবেন।

• মন্ত্রীর উদ্যোগে ঢেলে সাজবে রেল
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লি থেকে মুম্বই ও কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য দু’টি যুবা ট্রেন চালানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখেই সে ট্রেনের ভাড়া ৮০ টাকা থেকে ৩৯৯ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছিল। চলতি ত্রৈমাসিকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা লোকসানে চলা রেলের আয় বাড়াতে এ বার এই ট্রেনগুলিতে এসি থ্রি টিয়ার কোচ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে দেশের দু’টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুটে এই ট্রেন চলাচল করে। তাই সারা বছর টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে। তাই বাড়তি কোচ লাগিয়ে যাত্রীসংখ্যা বাড়িয়ে রেলের আয় বাড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে ১০ লক্ষের বেশি যাত্রীসংখ্যা, গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও পর্যটনস্থল অনুযায়ী দেশের একশোটি রেলস্টেশনকে চিহ্নিত করে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পবনকুমার বনশল এ ব্যাপারে রেলের সমস্ত জেনারেল ম্যানেজারদের চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হলে একটি বিশেষ আধিকারিক দল সব স্টেশনে গিয়ে কাজের মান খতিয়ে দেখবে। রেলমন্ত্রী নিজেও কয়েকটি স্টেশনে গিয়ে তদারকি করবেন। পাশাপাশি দূষণ কমাতে সব ট্রেনে ‘বায়ো-টয়লেট’ বসানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। রেলযাত্রায় পরিবেশিত খাবারের মান বাড়াতে বিশেষ ‘প্যান্ট্রিকার’-এর উদ্যোগ নিয়েছে রেল।

• রেল জুড়ল চণ্ডীগড়-লুধিয়ানাকে
চণ্ডীগড় থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত নতুন রেললাইনে পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেন চালাল উত্তর রেল। এখানে ১১২ কিলোমিটার রাস্তাটি মোট ৩ ভাগে ভাগ করে লাইন পাতা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম ভাগে চণ্ডীগড় থেকে মোরিন্দা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার লাইন ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ভাগে সাহেনওয়াল থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার লাইনে ২০১২ সালে নভেম্বর মাসে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। তৃতীয় ভাগে নিউ মোরিন্দা থেকে সাহেনওয়াল পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার লাইনে পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেল চালাল উত্তর রেল। রেল সূত্রের খবর, প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি কাজ শেষ করে গোটা পথটি জুড়ে রেল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

• আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থাগুলির নতুন উদ্যোগ
যাত্রী সংখ্যা বাড়ায় ভারত থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উড়ানের টিকিটের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নিল বিমান সংস্থাগুলি। এই তালিকায় রয়েছে ফ্লাই এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মতো বিমান সংস্থা। অন্য দিকে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে টিকিটের দাম কমাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইস জেট এবং ইন্ডিগোর মতো ভারতীয় সংস্থা। অগ্রিম টিকিট বুকিং-এর ক্ষেত্রে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত এই সুবিধা যাত্রীরা পেতে পারেন। অন্য দিকে কলকাতা থেকে মালয়েশিয়ার উড়ান সংখ্যা বাড়াচ্ছে এয়ার এশিয়া। সে দেশের সস্তার এই বিমানসংস্থা এত দিন কলকাতা-কুয়ালালামপুর রুটে সপ্তাহে তিন দিন উড়ান চালাত। সংস্থা জানিয়েছে, গড়ে তাদের উড়ানে ৮০ শতাংশ যাত্রী হওয়ায় মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে দৈনিক উড়ান চালাবে। এই সংস্থাই শহর থেকে ব্যাঙ্ককে দৈনিক উড়ান চালাচ্ছে।
পাশাপাশি পূর্ব ভারত তথা কলকাতা থেকে পর্যটক বাড়াতে উদ্যোগী ফিলিপিন্স। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার এই দেশের পর্যটন উন্নয়ন নিগমের কর্ত্রী সুজান ডেলমুন্ডো সম্প্রতি প্রথম বার শহরে এসে জানান, ২০১২ সালে ভারত থেকে যে ৩৫ হাজার পর্যটক ফিলিপিন্সে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশ পর্যটক ছিলেন পূর্ব ভারতের। এ শহরের পর্যটকদের নিয়ে যেতে ফিলিপিন্স এয়ারলাইন্সকে সরাসরি কলকাতা-ম্যানিলা উড়ান চালানোর অনুরোধও করবেন সুজান। মাথা পিছু ৫০ হাজার টাকা খরচ করলে কলকাতা থেকে ফিলিপিন্সে গিয়ে তিন রাত-চার দিন ভাল হোটেলে থেকে-খেয়ে ঘুরে আসা যাবে। তবে, কলকাতা-ম্যানিলা উড়ান চালু হলে আরও কমবে খরচ।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ