হাতে গড়া মিঠাই
বেশ জমাটি ঠান্ডা এ বার। আর তাতেই বঙ্গ-হৃদয় ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। তবে শুধু গড়ের মাঠেই যে জমে উঠেছে শীতের আমেজ, তা নয়—
স্বাদবদল ঘটাতে আপনার রসুইখানাও হাতে গড়া মিঠাইয়ে মজে উঠতে পারে, এই শীতে যার জুড়ি খুঁজতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

চকো-নাড়ু
উপকরণ
নারকেল কোরা: ২ কাপ চিনি: পরিমাণ মতো চকোলেট: ২ প্যাকেট

প্রণালী
কড়াইয়ে নারকেল কোরা আর চিনি দিয়ে হাল্কা আঁচে ভাল করে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
পুরোপুরি মিশে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে মিশ্রণটাকে ঠান্ডা করে নিন।
একটা চকোলেটের প্যাকেট থেকে বাটিতে চকোলেটের টুকরোগুলোকে ভেঙে রাখতে হবে।
এ বার ওই বাটি গরম জলের একটা বড় পাত্রের ভিতর
বসিয়ে দিন, যাতে চকোলেট আস্তে আস্তে গলে যায়।
আরও একটি বাটিতে অন্য চকোলেটের টুকরোটি আদা ঘষার যন্ত্র দিয়ে কুরিয়ে রাখতে হবে।
এ বার নারকেল ও গুঁড়ো চকোলেট এক সঙ্গে মিশিয়ে, নাড়ুর আকারে বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন।
ঘণ্টা দুয়েক পর নাড়ুগুলি বের করে গলে যাওয়া চকোলেটে ডুবিয়ে আরও এক বার ফ্রিজে রাখুন।
আধ ঘণ্টা পর বের করে পরিবেশন করুন চকো-নাড়ু।

গাজরের হালুয়া
উপকরণ
মাঝারি মাপের গাজর: ৪-৫ টি দুধ (একটু ঘন): ১/২ কাপ
চিনি: ২/৩ কাপ ছোট এলাচ গুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ
ঘি: ৩ টেবল-চামচ কেশর: উষ্ণ গরম দুধে ভেজানো সামান্য
আমন্ড ও পেস্তা কুচি: ১ -২ টেবল-চামচ

প্রণালী
গাজরের খোসা ছাড়িয়ে কুরিয়ে নিতে হবে।
এ বার একটি মাঝারি ডিপ প্যানে ঘি গরম করে কোরানো গাজর দিয়ে মাঝারি আঁচে
সমানে নেড়ে যেতে হবে, যত ক্ষণ না গাজরের রং পাল্টায় এবং ভাজার সুগন্ধ আসছে।
প্রায় ৭-৮ মিনিট ধরে ক্রমাগত নেড়ে যেতে হবে।
এ বার দুধ মিশিয়ে আবার নাড়তে হবে, যখন ঘন হয়ে আসবে, চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
তার ভিতর এ বার এলাচের গুঁড়ো ও দুধে ভেজানো কেশর দিতে হবে।
যখন প্যানের গা থেকে ছেড়ে ছেড়ে আসবে, বুঝতে হবে, গাজরের হালুয়া তৈরি।
ইচ্ছে হলে উপর থেকে ১ চা-চামচ গলানো ঘি দেওয়া যায়।
এ বার একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে উপর থেকে বাদাম-পেস্তা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
গাজরের হালুয়া গরম খেতেই বেশি ভাল লাগে।


নলেনগুড়ের সন্দেশ চন্দ্রপুলি
উপকরণ

ছানা: ১ লিটার দুধের
দুধ: ৫০০ মিলিলিটার
মিল্কমেড: ২ টেবল-চামচ
নলেনগুড়: ২০০ গ্রাম
ঘি: ১ চা-চামচ
পেস্তা কুচি

প্রণালী

১ লিটার দুধকে ভিনিগার দিয়ে ছানা বানিয়ে নিতে হবে।
একটি সাদা কাপড়ে ছানাটা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে দিন ৪-৫ ঘণ্টা।
এই সময়ের মধ্যে সমস্ত জল ঝরে যাবে।
এ বার একটি বড় পাত্রে অল্প ঘি দিন।
ঘি গরম হলে দুধটা দিয়ে দিতে হবে।
ভাল করে ফুটে উঠলে ছানাটাও ওর ভিতর দিয়ে দিন।
এ বার ভাল ভাবে নাড়তে হবে।
শুকনো শুকনো হয়ে এলে মিল্কমেড
ও নলেনগুড়টা এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন।
অল্প আঁচে অনেক ক্ষণ ধরে নাড়তে হবে।
প্রায় শুকনো হয়ে এলে আভেন বন্ধ করে দিন।
এ বার হাতের তালুতে ঘি লাগিয়ে যেমন
খুশি তেমন ভাবে গড়ে তুলুন মিষ্টিগুলো।
বাড়িতে ছাঁচ থাকলে ছাঁচে ফেলে সুন্দর মিষ্টি তৈরি করা যাবে।
মিষ্টিগুলো বানানো হয়ে গেলে কিছু
ক্ষণের জন্য ফ্রিজে রাখতে হবে।
এ বার উপর থেকে পেস্তা কুচি ছড়িয়ে দিন।
খুব অল্প সময়েই তৈরি হয়ে গেল নলেনগুড়ের সন্দেশ।

উপকরণ

ময়দা: ২৫০ গ্রাম চিনি: ১৫০ গ্রাম খোয়াক্ষীর: ১৫০ গ্রাম
সুজি: ১০০ গ্রাম ঘি: ২ টেবল-চামচ দুধ: ৫০ মিলিলিটার


পুরের জন্য
১টি নারকেলের পুরোটা কোরানো খোয়াক্ষীর: ১৫০ গ্রাম
চিনি: ১০০ গ্রাম দুধ: ৫০ গ্রাম

প্রণালী
পুর বানাতে
কড়াইতে দুধ দিয়ে বাকি সব উপকরণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে
অল্প আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। এর পর ভাল করে নেড়ে শুকনো পুর বানিয়ে নিন।

চিনির রস

৫০০ গ্রাম চিনিকে জলে ফুটিয়ে গাঢ় ঘন রস বানাতে হবে।

প্রথমের সব উপকরণ মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিতে হবে,
যাতে সহজে লুচির মতো তৈরি করা যায়।
ময়দা দিয়ে বানানো মিশ্রণটিকে ছোট ছোট লুচির মতো বেলতে হবে।
এ বার তার মধ্যে নারকেল আর খোয়াক্ষীরের পুর দিন।
এই লুচিটিকে এর পর একটা মুখের সঙ্গে আর একটা মুখ জোড়া
লাগিয়ে দিন এমন ভাবে, যাতে ভিতর থেকে পুর বেরিয়ে না যায়।
এ বার লুচির জোড়া লাগানো দিকটাকে সুন্দর
করে মুড়ে দিতে হবে যাতে দেখতে ভাল লাগে।
কড়াইতে ঘি গরম করতে হবে।
প্রতিটা চন্দ্রপুলি ভাল করে ঘি তে ভেজে চিনির
ঘন রসে ডুবিয়ে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন।
ঠান্ডা হয়ে গেলে চন্দ্রপুলির গায়ে চিনির রস শুকনো হয়ে লেগে থাকবে।

রাঙাআলুর পুলি

উপকরণ

রাঙাআলু: ৭৫০ গ্রাম ময়দা: ২ টেবল-চামচ
ঘি বা গলানো মাখন: ১/২ টেবল-চামচ কুরানো নারকেল: ১ কাপ
ছোট এলাচের গুঁড়ো: ১/২ চা-চামচ চিনি: ৪ কাপ
জল পরিমাণ মতো গুঁড়ো দুধ: ৪-৫ টেবল-চামচ
/৩ কাপ খোয়াক্ষীর
৭-৮টি আমন্ড
কিসমিস কুচানো: ২ টেবল-চামচ
ভাজার জন্য পরিমাণ মতো সাদা তেল।

প্রণালী

প্রথমেই রাঙাআলু ধুয়ে প্রেসার কুকারে ভাল করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
এর পর স্টিম বেরোতে শুরু করলে দেখে নিতে হবে, ভাল ভাবে নরম হয়েছে কি না।
এ বার কুকার থেকে বের করে, জল ঝরিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে হাত দিয়ে ভাল করে চটকে নিন।
এর ভিতর ময়দা ও মাখন মিশিয়ে রাখতে হবে।
গ্যাসের আভেন চালু করে একটা নন-স্টিক প্যানে নারকেল কোরা ও ১/২ কাপ চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
৪-৫ মিনিট পর ওতে গুঁড়ো দুধ বা খোয়াক্ষীর মিশিয়ে আরও একটু নাড়তে হবে।
যখন প্যান থেকে ছেড়ে আসছে দেখা যাবে তখন আভেন বন্ধ করে দিন।
এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে বাদাম-কিসমিস কুচি মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
একটু ঠান্ডা হলে, এগুলি থেকে ছোট ছোট পুর বানিয়ে রাখুন।
আর ওই রাঙাআলু মাখা থেকে খানিকটা করে নিয়ে গোল চ্যাপ্টা করে ওর ভিতর নারকেলের পুর ভরে মুখ ভাল করে বন্ধ করুন।
এ ভাবে সবগুলো গড়ে নেওয়ার পর, কড়াইতে তেল গরম হতে দিন।
আঁচ সামান্য কমিয়ে পুলিগুলিকে ডুবন্ত তেলে বাদামি করে দু’পিঠ ভাল করে ভেজে নিতে হবে।
সবগুলো ভেজে পেপার টাওয়েল-এ রাখুন।
আগে থেকে সসপ্যানে চিনি ও জল দিয়ে রস বানিয়ে রাখতে হবে।
রসটা হবে রসগোল্লা ও পান্তুয়ার মাঝামাঝি।
চিনির রসের পরিবর্তে নলেনগুড়ের রসও করা যেতে পারে, পছন্দ অনুযায়ী।
পুলিগুলি দেওয়ার আগে রসটা এক বার ফুটিয়ে পুলিগুলি ওতে ছেড়ে আভেন বন্ধ করে দিন।
এক ঘণ্টা পর পুলি পরিবেশন করুন।
ইচ্ছে হলে মাইক্রোওয়েভে একটু গরমও করে নিতে পারেন, পরিবেশনের আগে।

গোকুল পিঠে

উপকরণ

পুরের জন্য
দেড় কাপ কোরানো নারকেল /৩ কাপ চিনি প্রায় দেড় কাপ গুঁড়ো দুধ
(তবে খোয়াক্ষীর হলে সবচেয়ে ভাল হয়) ১ চা-চামচ ছোট এলাচের গুঁড়ো

গোলা বা ব্যাটারের জন্য
১ কাপ ময়দা ১ কাপ দুধ (দুধে একটু গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে ঘন করে নিন)
১ টেবল-চামচ ঘি /৩ চা-চামচ খাওয়ার সোডা

রসের জন্য
আড়াই কাপ চিনি ২ কাপ জল

ভাজার জন্য
বেশি করে তেল এবং ১ টেবল-চামচ ঘি

প্রণালী

প্রথমে একটি প্যানে নারকেল ও চিনি মিশিয়ে মাঝারি আঁচে পাক দিতে হবে।
একটু পরে গুঁড়ো দুধ বা খোয়াক্ষীর মিশিয়ে নাড়তে থাকুন।
যখন দেখবেন প্যানের গা থেকে আলগা হয়ে আসছে তখন এলাচের গুঁড়ো মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
একটু ঠান্ডা হলে ওই মাখা থেকে খানিকটা করে নিয়ে গোল গোল চ্যাপ্টা আকারের গড়ে রাখুন।
এর পর গোলা বা ব্যাটারের জন্য ময়দাতে খাওয়ার সোডা ও ঘি বা মাখন মিশিয়ে নিন।
এর ভিতর আস্তে আস্তে দুধটা ঢালতে থাকুন।
গোলাটা একটু ঘন হবে।
বেশি ঘন মনে হলে সামান্য জল বা দুধ মেশানো যেতে পারে।
আবার পাতলা মনে হলে একটু ময়দাও মেশাতে পারেন।
এটাকে ঢাকা দিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
এর পর চিনি ও জল দিয়ে রসটা তৈরি করুন।
রসটি ঘন ও চ্যাটালো হবে।
এর পর ডিপ প্যানে তেল ও ঘি গরম করে গোল চ্যাপ্টা করে গড়ে রাখা
পিঠেগুলো ময়দা-দুধের গোলাতে ডুবিয়ে দু’পিঠ বাদামি করে ভেজে তুলুন।
সবগুলো ভাজা হলে গরম-ঘম রসে খানিকটা সময় রেখে তুলে নিন।
তৈরি হয়ে গেল গোকুল পিঠে।

চকো-নাড়ু

মহুয়া দত্ত
তাইওয়ান
গাজরের হালুয়া, রাঙাআলুর পুলি ও গোকুল পিঠে

সুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফিজি
নলেনগুড়ের সন্দেশ ও চন্দ্রপুলি

পৌলমী বিশ্বাস
টরন্টো

আপনারাও পাঠাতে পারেন নতুন পুরনো ভিন্ন স্বাদের নানা রেসিপি, ছবি-সহ, নীচের ঠিকানায়
হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।

 
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ