অম্লান অতীত |
মোম গলে যায়, বিশ্বাস নেভে না |
আঁধার গড়িয়ে নামছে, চিলতে আলোয় ইফতার। সারা দিনের ম্লানতা ধুয়ে দেয় নমাজ। কোন সে ভোরে এ পলকে আতর হয় ফজর, জহর, আসর, মাগরিব। অবশেষে এষা উড়িয়ে দেয় আজান। ষাট ওয়াটের সূর্যে মিশ্র ভৈরবী মৌলবি নাসিমুল হকের কণ্ঠে। মুখর পুরাতন মসজিদ। চুন-সুরকির সীমিত আভিজাত্যে আজও দাঁড়িয়ে জলপাইগুড়ি মুসলিমদের এই হৃদপদ্ম। কোনও ট্রাস্টি বোর্ড নেই। শুধুমাত্র কালু সাহেবের মাজারে সর্ব ধর্মের ভিক্ষায় এই মসজিদের আজান, দু’বেলা ভাত, কোনও দিন বা ক্ষুধাতুর মনও আল্লাকে আহ্বান করে।
তবকৎ-ই-নাসিরি-তে আছে, ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজি (৫৯৬-৬০২ হিজরি) যখন সিকিম অভিযান করেন, তখন তাঁর পথ প্রদর্শক ছিলেন আলিমেচ। এই আলিমেচই ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে জলপাইগুড়ির এই মসজিদ গড়ে দেন। দিলু গোমস্তার জমিতে জুমাবক্স ওয়াকবের তত্ত্বাবধানে অতীতের মতো আজও দিঘির জলে মুখ থেকে মুসলমান। গোমস্তাপাড়ার ইতিহাসের ঘোড়া আজও ছুটছে, পিঠে চড়ে আব্দুস সালাম, দরবেশ কালু সাহেব। ফারসি শব্দ দরগাই থেকে দরগা। অর্থ পীরের মাজার। মুসলিম ধর্মে পীর হলেন মুর্শেদ অর্থাৎ সিদ্ধপুরুষ। সেই জ্ঞানে আজও জলপাইগুড়ির গোমস্তাপাড়ায় প্রতি শুক্রবার মোম জ্বলে কালু সাহেবের মাজারে। মোম গলে যায়, তবু বিশ্বাস নেভে না। এই আলো শ্রদ্ধার আলোয়ানে জড়িয়ে ধরে মানুষকে। অকূলের কূল, অগতির গতি, কিংবা অনাথের নাথ এই কালু সাহেব। রোগ মুক্তির স্বপ্নভূমি এই পুরাতন মসজিদ। তাই তো আশ্চর্যজনক ভাবেই জলপাইগুড়ির প্রথম নমাজ এখানে। পরবর্তীতে দানবীর সোনাউল্লা সাহেব শহরে আরও মসজিদ গড়ার লক্ষ্যে একে একে বহু ইটভাটা গড়ে দেন। এই ছিল তাঁর ধর্মীয় চেতনার উন্মেষ। অবশেষে সোনাউল্লা এক দিন বৃদ্ধ হয়ে মসজিদের পাশেই বনস্পতি ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়লেন। ১৯৬৮-র বন্যায় শহর তলিয়ে গেল। তবু মসজিদের শরীরে জল লাগেনি! ধীরে ধীরে অবহেলায় মস-ফার্নের জঙ্গলে হারিয়ে গেলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। পুরসভা, মাইনরিটি বোর্ড ছবি নিল। খবর হলেন। তবু এক বার খবর হল না, বন্যার জল সে দিন স্পর্শ করেনি যাঁর কবর, সেই সোনাউল্লা বোধহয় ছিলেন এমন মানুষ, যিনি সবার উপরে সত্য। তাই তাঁকে ধরাও কষ্ট, ছোঁয়াও সাধ্যাতীত! আর তাই প্রবল বন্যাতেও কুতুব, হেকমতওয়ালা দ্বীপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন দশের সেবায়। দুশো বছর ইতিহাসের যোগ্য কি না সময় বলবে। কিন্তু এ মসজিদের বয়স নির্ধারণে খনন দরকার নেই। প্রাণহীন দালানও দৈর্ঘ্যে বাড়ে আকাশ ছোঁবে বলে। কারণ, ধর্মের কোনও কারাগার নেই। যেমন এই মাজারে দীপাবলির মোমে কোনও ভেদ নেই, সূর্যের মতো এই আলো সব্বার! সবটাই মিলে যাচ্ছে দীপাবলি, মাজার আর মোমের সৌজন্যে!
সন্দীপন নন্দী, বালুরঘাট। |
|
|
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখনই একটু নজর দিন |
নদিয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত শিবনিবাস একটি পুরাতাত্ত্বিক স্থান। এরই পার্শ্ববর্তী গ্রাম কৃষ্ণপুরের রানিনগরে এক সময় আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল মুসলমান এক মরমি পির সাধকের। নাম: জমাদার সাহেব মামুদ জাফর। সময়টা নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকাল (১৭২৮-৮২)। পিরের মাহাত্ম্য দেখে রাজা তাঁকে জমি দান করেছিলেন। এই গ্রামে এখনও সেই শতাব্দীপ্রাচীন পিরের দরগা রয়েছে। কারও কারও মতে, পিরের মাজার, থান, সৌধ ইত্যাদি। দরগাটির স্থাপত্যশৈলী একটু ব্যতিক্রমী। স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও প্রত্নতত্ত্ব রীতির এটিও একটি কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। ‘বাংলার পীর সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থে গিরীন্দ্রনাথ দাস পিরের উদ্ভব, ক্রমবিকাশ ও মাহাত্ম্যের পাঁচালি-কাব্যকথা আলোচনা করেছেন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শুক্লপক্ষ তিথিতে বৃহস্পতিবার পঞ্চমদোলের দিন এখানে সাম্প্রদায়িক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। একটা সময় ছিল বাংলার পির-পয়গম্বররা লৌকিক দেবতা বা গুরু হিসেবেই মান্যতা পেতেন। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে এই পিরের কথা উল্লেখ আছে:
‘সেপাহির জমাদার মামুদ জাফর
জগন্নাথ শিরোপা করিলা যার পর।’
গবেষক হারাধন দত্ত ‘জমাদার সাহেব মামুদ জাফর’, মোহিত রায়-এর ‘মরমী সাধক পীর মামুদ জাফর’ (‘ভূমিলক্ষ্মী’ পত্রিকায় প্রকাশিত), বুদ্ধীশ্বর ঘোষ-এর ‘একটি শতাব্দীপ্রাচীন সাম্প্রদায়িক সংহতি মেলা’ (‘নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত) গ্রন্থে এই পির সম্পর্কে গবেষণামূলক তথ্য আছে। ১৯৭৮ সালে দরগাটি সংস্কার করা হয়, তার পর থেকে এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ দিকে একটু নজর দিন।
নানক নাথ। মাজদিয়া, নদিয়া |
|
|
শীতের মেলা... |
-
জামশেদপুরের 'সবুজ শহর' পৌষ মেলায় নৃত্যশিল্পীরা।
-
পুষ্প মেলা ডোমজুড়ের মৌড়ি চাঁদনিবাগানে।
-
জমে উঠেছে কোচবিহার বইমেলা।
-
কালনার সবলা মেলায় ছৌ।
-
ছৌ-নাচ। ঝাড়গ্রামের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে 'ছৌ-নাচের কর্মশালা ও ছৌ নৃত্যোৎসবে'র
আয়োজন করেছিল ঝাড়গ্রামের 'লোকায়ত সংস্কৃতি পরিষদ'। তারই একটি মুহূর্ত।
-
শিলিগুড়িতে বইমেলা।
-
ময়নাগড়ের প্রাচীন রাস মেলার মূল আকর্ষণ থালার মতো
বড়ো
বাতাসা ও ফুটবলের মতো কদমা।
-
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শান্তিনিকেতনের নন্দন মেলার শিল্পীরা।
-
মেদিনীপুর শহরে লোক উৎসব। অনুষ্ঠানে
যোগদান করেছে বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক দল।
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইতিমধ্যেই পস্তাচ্ছি আমরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল
হাতেনাতে পেয়েও টনক নড়ে
ক’জনের?
ব্যাতিক্রম অবশ্য আছে। আর সেই ব্যাতিক্রমী
মানুষদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করি আমরা। তাঁদের দলবদ্ধ অথবা
ব্যক্তিগত
উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়ে পাঠক সমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনার শরিক হতে চাইলে আমাদের জানান নীচের ঠিকানায়
সংবাদের হাওয়াবদল
হাওয়াবদল
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১
ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com |
|
|