আপনার কলমে


বনভোজনে বড়দিনে বাঁধের ধারে
অমিতাভ ঘোষ
(সিউড়ি, পশ্চিমবঙ্গ)
প্তাহ খানেক ধরে বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। গায়ে কাঁটা দেওয়া কনকনে ঠান্ডা বাতাস, সান্তা ক্লজের দেওয়া উপহার, গির্জার ঘণ্টাধ্বনি, বড়দিনের বাহারি কেকের হাতছানি, নলেনগুড়ের পিঠে-পুলি-সন্দেশ নরম রোদে পিঠ দিয়ে খাওয়া— এ সবই শীতকালের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। আর সব কিছুকে ছাপিয়ে বনভোজন শব্দটা শীতের সঙ্গে কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। শীতে বনভোজনে যাননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কিন্তু মুশকিল। বড়দিন থেকে ‘নিউ ইয়ার’— এটাই তো বেড়ানোর আদর্শ সময়।

অদূরে তিলপাড়া ব্যারেজ

জলাধারের শুকনো গর্ভ
শীতের কুয়াশা ঢাকা প্রকৃতি এ সময় এমন মোহময়ী হয়ে ওঠে যে, চেনা প্রকৃতিও হিমেল স্পর্শে অচেনা রূপ ধারণ করে। কাছের মানুষদের নিয়ে সারাটা দিন অচেনা প্রকৃতির কোলে কাটাবার আয়োজনই তো বনভোজন। আর সে উদ্দেশ্যেই গত বারের বড়দিনের ছুটিতে সারাটা দিন কাটালাম তিলপাড়া ব্যারেজে। বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির অদূরে ‘তিলপাড়া ব্যারেজ’ বনভোজনের জন্য এ অঞ্চলের অন্যতম সেরা জায়গা। তারাপীঠ ও বক্রেশ্বর— এই দুই বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে এই সুবিশাল জলাধারকে ছুঁয়েই যেতে হয়।

তারাপীঠ যাওয়ার পথে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক সিউড়ি শহর ছাড়তেই বাঁ দিকে দেখা মেলে এই সুবিশাল জলাধারের। কিছুটা এগোলেই দেখা যায় মূল জলাধারটিকে। ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে বয়ে আসা মযূরাক্ষী নদীর জল ম্যাসাঞ্জোরের পর এখানেই ধরে রাখা হয়েছে। ১৯৫১ সালের ২৯ জুন তিলপাড়া জলাধারটির উদ্বোধন হয়। জলধারণের ক্ষমতা এক সময় ৫ লাখ কিউসেক হলেও, এখন মজে যাওয়ার ফলে অনেক কমে গিয়েছে। বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে জলাধারের কাছে পৌঁছলে সুবিশাল জলরাশির সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। এক দিকে মেঠো রাস্তা, দু’পাশ গাছ দিয়ে সাজানো— নানা পাখি, প্রজাপতি ও ফড়িংয়ের আস্তানা। মাছ শিকারি বকের সংখ্যাও এখানে প্রচুর। মাছ ধরতে ব্যস্ত ছোট ছোট জেলে ডিঙিকেও এক দিক থেকে অন্য দিকে নীল জল কেটে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। শীতের ছোঁয়া লাগলেই দূর দূরান্তের ছয়-সাত রকমের পরিযায়ী পাখি এখানকার জলে ডেরা বাঁধে কিছু দিনের জন্য। বিশাল বাঁধের উপরে পানকৌড়িরা রৌদ্রস্নানে ব্যস্ত থাকে সারা দিন। একটু হেঁটে জলাধারের নির্জন দিকটায় গেলে পাখিদের খুব কাছ থেকে দেখতে পাওয়া যায়। ওদের কোনও রকম অসুবিধা না করে শুধু ‘দর্শক’ হিসেবে দাঁড়ালেই দুর্লভ সব মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া যায়।

জলাধারের বিপরীত দিকে নদীর প্রায় শুকনো গর্ভে বাঁধের চুঁয়ে পড়া জলের ধারা বয়ে চলেছে। ৫০-৬০টি সিঁড়ি পেরিয়ে তবেই নদীগর্ভে পৌঁছনো যায়। নদীর তীর বরাবর আমাদের মতো অসংখ্য উত্সাহী বনভোজনকারী, দলে দলে। তাঁদের সৌজন্যে সমস্ত অঞ্চল জনপ্রিয় হিন্দি ও বাংলা গানের সুরে ‘মুখরিত’। ঘুরে বেড়িয়ে, ছবি তুলে, গান শুনে, খেলে— এক কথায় এলাকার সমস্ত আনন্দ শুষে নিয়ে বড়দিনের ছুটির পালা সাঙ্গ করে ফেরা হল সেই সন্ধেবেলা।

পানকৌড়ি

পরিযায়ীর ঝাঁক

জলাধার

শিকারে ব্যস্ত বক



বীরভূম জেলার সিউড়ি শহরে বসবাস। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও পেশায় জীবনবিমা কর্মী। নানা জায়গায় ভ্রমণের নেশা। সেই সূত্রেই ছবি তোলা ও ঘোরাঘুরির উপর লেখালেখি করাটা একটা অভ্যাস। নানা পত্র-পত্রিকাতে লেখা ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

ছবি: লেখক

রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ