সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• সংকীর্তনের মহিমা
ইউনেস্কো ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিটির অষ্টম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আজারবাইজেনের বাকু-তে। এই অধিবেশনে মোট ২৪ জন সদস্য থাকেন যাঁরা দেশের রাজনৈতিক দলের সদস্যও বটে। ২ থেকে ৭ ডিসেম্বর— পাঁচ দিনের এই অনুষ্টানে এ বছর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’-র তালিকাভুক্ত হয়েছে ভারতের মণিপুর রাজ্যের ‘সংকীর্তণ নৃত্য’। দশ বছর আগে শুরু হওয়া এই বিভাগে ভারতের এটি চতুর্থ তকমা। এর আগে সংস্কৃত নাট্যধারা কুটিয়াট্টম, বৈদিক গান ও রামলীলা এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
আঠারো শতকে মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহের আমলে তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় এই সংকীর্তণ নৃত্য শৈলীর প্রচার ঘটে। নাচ-গানের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের জীবনগাথা ভক্তদের সামনে তুলে ধরাই এই শৈলীর মূল মন্ত্র। মন্দির প্রাঙ্গনে দু’জন খোল বাদক ও দশ জন গায়ক-নর্তক পরিবেশন করেন সংকীর্তণ নৃত্য।
বর্তমানে ভারতের সংগীত নাটক অকাদেমিতে সংগৃহীত রয়েছে এই নৃত্যশৈলীর প্রায় চল্লিশ ঘণ্টার ভিডিও যাতে রয়েছে ২৫টি একক ও ১৮টি সমবেত অনুষ্ঠান এবং বাইশ ঘণ্টার অডিও যাতে রয়েছে ১৫টি একক ও ৪টি সমবেত গীতি অনুষ্ঠান।
ইউনেস্কোর এই তকমার ফলে দেশের সরকারও তত্পর হয়েছে এই নৃত্যধারার অবক্ষয় রুখতে। পেশাদার শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা, গবেষণার সুযোগ এবং ‘ফেলোশিপ’ ও ‘স্কলারশিপ’ প্রদান তারই নমুনা। ১৯৫৪ সালে ইম্ফলে প্রতিষ্ঠিত ‘জওহরলাল নেহরু মণিপুর ডান্স অ্যাকাডেমি’-র একটি বিষয় হল এই সংকীর্তন নৃত্য। ভারতের জাতীয় অ্যাকাডেমির (নৃত্য, সংগীত ও নাটক) তরফ থেকে এ যাবত্ ৩০ জন সংকীর্তণ ‘গুরু’-কে সম্মানিত করা হয়েছে।

• স্বাদের বাহার
এ বছর ইউনেস্কোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’-র তালিকায় স্থান করে নিয়েছে জাপানের ‘ওয়াশুকু’ রন্ধনপ্রণালী। এই তালিকায় ওয়াশুকু বাইশতম সংযোজন। এর পাশাপাশি স্থান পেয়েছে দেশের কাবুকি নৃত্যনাট্য, নোহ গীতিনাট্য ও বুনরাকু পুতুল-নাচ।
প্রত্যেক দেশের মতোই জাপানের একটি বিশেষ ঐতিহ্য তার রন্ধন ঘরানা। উপকরণ, প্রণালী ও খাওয়ার ধরন— এই তিনটি বিষয়ই ওয়াশুকু-কে ঐতিহ্য তালিকার সম্মান এনে দিয়েছে। জাপানের মূল খাদ্য ভাত ও মিসো স্যুপ এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যা বিভিন্ন ঋতুর বৈশিষ্ট। মাছ ও নানা ধরনের সবজিও বেশ প্রচলিত আহার এই দেশে। সমুদ্র লাগোয়া দেশ হওয়ায় মাছ ছাড়াও বিভিন্ন ‘সি-ফুড’ জায়গা করে নিয়েছে এ দেশের খাদ্য তালিকায়। গ্রিলড ও কাঁচা মাছ যা ‘সুসি’ নামে পরিচিত এবং সবজির সঙ্গে ভাজা সি-ফুড এক অনবদ্য স্বাদের সৃষ্টি করে।
২০১২ সালে দেশের খাদ্য সম্ভারের নথি জমা করে এক বছরের মধ্যে তা ইউনেস্কো অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্বভাবতই অভিভূত সে দেশের সরকার। পৃথিবী জুড়ে তাদের কৃষিজাত দ্রব্যের আরও বিকিকিনি এবং সেই সঙ্গে ওয়াশুকুর স্বাদ নিতে জাপানে আরও পর্যটকের ভিড় যে স্বাভাবিক ভাবেই দেশের আর্থিক উন্নতির পথ, তাতে খুশি সমগ্র দেশ।

• সৈকত শহর টিপাজা
আলজিরিয়ার সমুদ্র সৈকতের একটি জনবসতি টিপাজা শহর। এক সময় এই শহর ছিল দেশের বাণিজ্য কেন্দ্র। ভূমধ্য সাগরের পাড় ঘেঁষা এই কেন্দ্রটি রোমান সম্রাট ক্লদিয়াস জয় করে নেয় এবং পরবর্তীকালে তা পরিণত করে সেনা ছাউনিতে। তিনটি ছোট পাহাড়ের ওপর নির্মাণ করা হয় আস্ত একটি রোমান শহর। বর্তমানে সেই শহরের কিছুই প্রায় নেই। অবশিষ্ট আছে তিনটি গির্জার ধ্বংসাবশেষ— পশ্চিম পাহাড়ের ওপর গ্রেট ব্যাসিলিকা ও ব্যাসিলিকা আলেকজান্ডার এবং পূর্ব পাহাড়ের ওপর ব্যাসিলিকা অফ সেন্ট সালসা, দুটি কবরস্থান, স্নানাগার, অ্যাম্ফিথিয়েটার। পূর্ব পাহাড়ের পাদদেশ খুঁড়ে পাওয়া গেছে সমুদ্র বন্দরের হদিশ। চতুর্থ শতকে আফ্রিকার রোমান রাজা হুনারিকের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় এই সৈকত শহর। পরবর্তীকালে, ছয় শতকের সময় এই স্থানের নাম হয় টিফাসেদ, আরবী ভাষায় যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো সেই কারণেই ২০০২ সালে ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ইন ডেঞ্জার’-এর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে টিপাজা।

• সমুদ্র সম্পদ
গত ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর ফরাসি দ্বীপ অ্যাজাসিও এবং কর্সিয়ায় হয়ে গেল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মেরিন সাইট ম্যানেজার্স কনফারেন্স। সভ্যতার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের সামুদ্রিক সম্পদে পূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন। ১৯৮১ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মেরিন সাইট-এ তালিকাভুক্ত হয়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ খাদ্য, বাণিজ্য তথা জীবনধারনের জন্য সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। তাই সভ্যতার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে স্বচেষ্ট হয় এই সংগঠন। বিশ্বের ৩৫টি দেশের ৪৬টি স্থান বর্তমানে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মেরিন সাইট-এর অন্তর্ভুক্ত। তেমনই একটি হল ফরাসি দ্বীপ অ্যাজাসিও এবং কর্সিয়ায়।
তিন দিনের এই কর্মযোগ্যে বিশ্বের সামুদ্রিক ও খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ স্থানগুলির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বৈঠকে নানা দিক নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। কনফারেন্সে প্রধান বক্তব্য রাখেন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্কের ম্যানেজার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান আধিকারিক রাসেল রিচেল্ট। ফ্রেঞ্চ মিনিস্ট্রি অফ এনভায়রনমেন্ট-এর বিশেষ সহযোগিতায় এই কনফারেন্স সাফল্যমণ্ডিত হয়। এর পরই ফ্রান্সের মার্সেলে ২১ থেকে ২৭ অক্টোবর গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• প্রাচীনতম চিনা মূষিকের খোঁজ
সরকার থেকে সাধারণ মানুষ— ইঁদুরের উপদ্রবে ব্যতিব্যস্ত সকলেই। মহাকরণ থেকে কর্পোরেশন, আর জি কর থেকে মেডিক্যাল কলেজ— সর্বত্রই এদের অবাধ যাতায়াত। সুড়ঙ্গ তৈরিতে সুপটু এই মূষিককূলকে বাগে আনতে সবাই ‘ফেল’। সম্প্রতি এই ‘ভয়ঙ্কর’ চতুষ্পদের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষের খোঁজ পাওয়া গেল চিনে। চটপটে এই প্রাণীটি গাছে উঠতে, সুড়ঙ্গ তৈরি করতে তো বটেই খাওয়ার বিষয়েও ছিল অত্যন্ত পটু। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন রুগোসোডন ইউরাসিয়াটিকাস। গাছে ওঠার সুবিধার জন্য ৬৫-৮০ গ্রাম ওজনের এই প্রাণীগুলির গোড়ালি ছিল নমনীয়। অত্যন্ত ধারাল দাঁত দিয়ে খেতে পারত অন্য ছোট প্রাণী থেকে গাছপালা পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই। বিজ্ঞানীদের মতে এই অভিযোজনগুলিই অন্য সমসাময়িক প্রাণীদের তুলনায় রোডেন্ট পর্যায়ের প্রাণীদের সবচেয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। প্রসঙ্গত রোডেন্ট পর্যায়ের প্রাণীরাই সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকা স্তন্যপায়ী। প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে ‘আবির্ভূত’ হয়ে পরবর্তী ছ’কোটি বছর ‘রাজত্ব’ করেছে এরা। এর পর ধীরে ধীরে এদের জায়গা দখল করে আধুনিক রোডেন্টরা। এদেরই এক ‘জাতভাই’য়ের জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে পর্তুগালে। এ থেকে এদের ইউরোপ ও এশিয়া জোড়া বিস্তৃতির প্রমাণ মেলে।

• ফিরে এল ডাইনোসর
প্রায় ৯৪০ কোটি বছর পরে পৃথিবীর বুকে ‘হেঁটে বেড়াল’ ডাইনোসর। তবে রক্ত-মাংসের নয়। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্জেন্তিনার একদল গবেষকের প্রচেষ্টায় এই প্রথম কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে ডিজিটালি বিশ্বের বৃহত্তম ডাইনোসর তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা। ৮০ টন ওজনের এই অতিকায় প্রাণীটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৫ মাইল। প্রথমে ক্রিটেসিয়াস আর্জেন্তিনোসরাসের প্রায় ৪০ মিটারের একটি কঙ্কাল লেসার স্ক্যান করেন বিজ্ঞানীরা। এর পর উন্নত কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে ডাইনোসরটির হাঁটা ও দৌড়নোর বিভিন্ন মুহূর্ত পুনর্গঠন করেন তাঁরা। এই পরীক্ষা বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী এই ধারণাকে নস্যাত্ করে দেয় যে স্থূল শরীরের জন্য চলাফেরা করতেই অসুবিধা হতো অতিকায় এই প্রাণীদের। “ডাইনোসররা কী ভাবে হাঁটত সেটা বোঝার সেরা উপায় কম্পিউটার সিমুলেশন”, জানিয়েছেন প্রকল্পের বিজ্ঞানী বিল সেলার্স। পরীক্ষায় প্রমাণিত, আমেরিকার অধুনা প্যাটাগোনিয়া প্রদেশে দাপিয়ে বেড়াত আর্জেন্তিনোসরাস। বর্তমানের কোনও প্রাণীর সঙ্গে ডাইনোসরের চলনের মিল না থাকায় প্রকল্পটি বার বার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষার ফলে ডাইনোসরদের পেশীর গঠনের বিষয়ে আরও নতুন তথ্য জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আর কে জানে, এ ভাবেই হয়তো এক দিন বাস্তবের মুখ দেখবে ‘জুরাসিক পার্ক’।

• প্রাচীন মিশরীয় রক্ষীর দেহাবশেষ উদ্ধার
প্রায় ১৪০০ বছর আগে যুদ্ধে নিহত এক রক্ষীর দেহাবশেষের খোঁজ পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সম্প্রতি মিশরের দক্ষিণে আসোয়ানে একটি খেতের মধ্যে খোঁড়াখুড়ির সময়ে এই দেহাবশেষের খোঁজ পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। মিশর ও নুবিয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে পাওয়া এই দেহাবশেষ নুবিয়ার সৈনিকের বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বর্তমান মিশরের দক্ষিণাংশ ও সুদানের উত্তরপ্রান্তের কিছুটা অংশ নিয়ে ছিল প্রাচীন নুবিয়া। মিশর ও নুবিয়ার মধ্যে যুদ্ধের সময়ে মৃত্যু হয় ২৫-৩৫ বছরের এই সৈনিকের। বুকের ঠিক নীচেই ছুরি মারা হয়। এর পর তার দেহ সীমান্ত প্রাচীরের মধ্যেই পুঁতে দেওয়া হয়। যুদ্ধের শেষে ভেঙে যায় সেই প্রাচীর। ফলে মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় প্রাচীর-সহ ওই সৈনিকের দেহ। সৈনিকের দেহাবশেষ বেশ ভাল অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

• প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথের প্রদর্শনী জাপানে
সম্প্রতি জাপানের ইয়োকোহামায় প্রদর্শিত হল একটি উলি ম্যামথ। প্রায় তিন মিটার লম্বা এই স্ত্রী ম্যামথটির বয়স প্রায় ৩৯ হাজার বছর। ২০১০ সালে রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ায় ইয়াকুটিয়া প্রদেশ (সাখা প্রজাতন্ত্র) থেকে আবিষ্কৃত হয় এই প্রাগৈতিহাসিক হাতির দেহাবশেষ। প্রদেশের নামানুসারে ম্যামথটির নাম দেওয়া হয় ‘ইউকা’। আবিষ্কৃত এই প্রাণীটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্ বলে ধারণা প্রত্নতাত্ত্বিকদের। প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষিত ম্যামথের দেহ এতটাই ভাল ভাবে পাওয়া গিয়েছে যে, এত বছর পরেও অবিকৃত রয়েছে তার শুঁড়, দাঁত এমনকী গায়ের লোমও। ইউকার শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করতেও সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার ম্যামথের বিলুপ্তি রহস্য জানতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইয়োকোহামায় ‘দেখা মিলল’ ইউকার।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• এক উড়ানেই ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় অ্যালবাট্রস
১৭৯৮ সালে প্রকাশিত স্যামুয়েল টেলরের লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য রাইম অফ দ্য অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার’-এ সেই পরোপকারী পাখিটির কথা সকলেরই কম বেশি জানা, যে কিনা চরে আটকা পড়া নৌকার পালে বাতাস ভরে তাকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং যাত্রীদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। আশ্চর্য সেই পাখিটি হল অ্যালবাট্রস। বিশাল এই সামুদ্রিক পাখিটি তার সাড়ে তিন মিটার ডানা বিস্তার করে সমগ্র পৃথিবী প্রায় ৪৬ দিনেই পাড়ি দিতে পারে। এমনই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করলেন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, ৫০ বছর বয়সী একটি অ্যালবাট্রস তার জীবনকালে অতিক্রম করে ন্যুনতম ৬০ লক্ষ কিলোমিটার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, প্রায় ১১ কিলোগ্রাম ওজনের এই বিশাল পাখিটি হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয় একবারও ডানা না ঝাপটে। বিজ্ঞানীরা ‘জিপিএস ট্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে ২০টি অ্যালবাট্রসের উপর পর্যবেক্ষণ চালান। ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ে চলার সময় তাদের গতিপথের খুঁটিনাটি রেকর্ড করেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, বায়ুর বাধা কাটাতে অন্যান্য পাখিরা যেমন বারংবার ডাটা ঝাপটায়, অ্যালবাট্রসেরা সেখানে বাতাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায়। বায়ুর ঘনত্ব বিচার করে বিশেষ কৌশলে কখনও ঊর্ধ্বমুখে প্রচণ্ড বেগে, আবার কখনও বেগ কমিয়ে নিম্নগামী উড়াল দেয়। এ ভাবেই এরা উড়বার সময় শক্তি সংগ্রহ করে। নীচে নামার সময় এক ধাপেই অর্ধবৃত্তাকারে ১০০ মিটার পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। এবং বিজ্ঞানীদের মতে, এ সময় এদের গতিবেগ থাকে কমপক্ষে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০৮ কিলোমিটার। বারংবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অ্যালবাট্রসেরা তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় বিশেষ এই পদ্ধতিটিকে ‘ডায়নামিক সোরিং’ বলা হয়। ‘এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি’ নামের একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় অ্যালবাট্রসদের এই উড়ান পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হয়। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার গটফ্রায়েড স্যাকসের মতে, ১৮৮০ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা ‘ডায়নামিক সোরিং’ পদ্ধতিটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হামিং বার্ড-এর ওজন মাত্র ২.২ গ্রাম, কিন্তু ওড়বার সময় সেকেন্ডে অন্তত ৭০ বার ডানা ঝাপটিয়ে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।

• পাখিদের ‘বিপদ-সঙ্কেত’
বিপদে পড়লে নিজস্ব বুলিতে বিচিত্র ধবনি তুলে ‘জাতভাই’দের কাছে সঙ্কেত পাঠায় পাখিরা। জটিল ও রহস্যময় অরণ্যজীবনে এই বিপদ-সঙ্কেত পাঠানোর কৌশল অরণ্যের প্রাণীদের মধ্যে বহুল প্রচলিত। এত দিন চারপেয়ে জীবদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এ বার খেচর প্রাণীদের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য দেখা গেল। ‘অ্যানিমাল বিহেভিয়র’ নামের একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী। ওই দলের মুখ্য গবেষক তোসিতাকা সুজুকি জানিয়েছেন, এই সঙ্কেত, শিকারি প্রাণিভেদে ভিন্ন। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, সাপের সামনাসামনি হলে পাখিরা ‘জার’-এর মতো ধ্বনি তুলে আগাম সতর্কবার্তা পাঠায়। আবার কাক বা বেজি দেখলে ‘চিকা’র মতো আওয়াজ বার করে। সুজুকি পাখির বাসার সামনে পর্যায়ক্রমে কখনও সাপ, কখনও কাক বা বেজি রেখে দেখেছেন, প্রতি বারই এই ‘জার’ বা ‘চিকা’র মতো আওয়াজ করে বাসার প্রাপ্তবয়স্কেরা কাছাকাছি অন্যান্য বাসাগুলির সদস্যদের সাবধান করে দিচ্ছে। এবং আশ্চর্যের বিষয়, সবাই দল বেধে এগিয়ে এসে আসন্ন বিপদের মোকাবিলা করছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালী হবে ধ্বনির তীব্রতা তত বেশি হয়। এবং ক্ষেত্রবিশেষে নানা ধরনের অস্পষ্ট ধ্বনি একত্রিত হয়ে তীব্র ও তীক্ষ্ণ সঙ্কেতবার্তা তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিলেন ‘কম্বিনেটোরিয়াল কমিউনিকেশন সিস্টেম’। কাক ও বেজি দেখলে একই রকম ‘চিকা’ ধ্বনি বেরোলেও বিজ্ঞানীদের দাবি, শিকারির রকম, আক্রমণের কৌশল ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তিত হয়। ‘চিকা’ আসলে একটি মিশ্র ধ্বনি যার মধ্যে অন্তত ১৭৫ রকমের স্পষ্ট-অস্পষ্ট ধ্বনি বা শব্দের মিশেল আছে, যা শিকারি ভেদে বদলে যায়। এ ছাড়া অন্য প্রাণীদের মধ্যে এই পদ্ধতি তো আগেই প্রমাণিত। যেমন, চিতাবাঘ বিপদ বুঝলে কাছাকাছি গাছের দিকে দৌড়ে পালায়, ঈগল বা বাজপাখিরা উপরের দিকে তাকায় ও নিকটবর্তী ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে। সাপেরা আবার লেজের উপর দাঁড়িয়ে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বোলায়। মৌমাছিরা খাবারের খোঁজ পেলে নেচে ও গেয়ে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

• ট্যাবে মজে কপিকুল
‘আয় হনুমান কলা খাবি?’...হনুমান বা বানর সম্প্রদায়ের প্রাণিদের নিয়ে ঠাট্টা তামাশার দিন বোধহয় শেষ। লোভনীয় খাবার বা বিচিত্র অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তাদের প্রলুব্ধ করার এমন প্রচেষ্টায় কার্যত দাঁড়ি টেনে দিলেন ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। কারণটা খুবই সহজ, আজকের ‘জেন-এক্স’ সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তো! ল্যাপটপ-কম্পিউটারের গণ্ডি পেরিয়ে টাচ-স্ক্রিন সুবিধাযুক্ত আধুনিক ট্যাবে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মজে রয়েছে ‘ম্যাকাকা’ প্রজাতির প্রাণীরা। এ হেন জীবদের মতিগতি বুঝতে তাদের এমনই প্রশিক্ষণ দিলেন পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা। হ্যাম্পসায়ারের ‘মারওয়েল ওয়াইল্ডলাইভ’ প্রাণিসংরক্ষণ কেন্দ্রে সুলাওয়েসির বিখ্যাত কালো বানরদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালালেন বিজ্ঞানীরা। সুলাওয়েসি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ। এখানকার প্রাণিকুলের মধ্যে বিখ্যাত ও বর্তমানে লুপ্তপ্রায় প্রাণিটি হল ম্যাকাকা নিগ্রা বা ‘সুলাওয়েসি ক্রেস্টেড ম্যাকাকা’ বা কালো বানর। গবেষকেরা জানালেন এই প্রজাতির প্রাণিদের নিয়ে খুব কমই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ১৮৬৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার দু’টি দ্বীপে এরা প্রথম বিজ্ঞানীদের নজরে আসে। ‘পাবলিক লাইব্রেরি অফ সায়েন্স’ নামক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, সুলাওয়েসির কালো বানরেরা অনেক বেশি দলবদ্ধ ভাবে থাকে, জীবনযাত্রা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং এরা খুব জটিল সামাজিক নিয়মকানুন মেনে চলে। মুখভঙ্গি, দেহভঙ্গিমা ও কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে এরা কথোপকথন চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান জেমি হোয়াইটহাউস জানালেন, দলের নেতা গোছের কয়েক জনকে ট্যাবের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে বাকি সদস্যদের মধ্যে সাময়িক প্রশস্তির ভাব লক্ষ করা গিয়েছে। উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা পাড়ি দিয়েছিলেন সুলাওয়েসির অরণ্যে। বিজ্ঞানী রোসেনবন ও তাঁর সতীর্থদের গবেষণায় জানা গেল এই প্রজাতির প্রাণীরা মুলত সুলাওয়েসি ও সন্নিহিত এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে দল বেধে থাকে। ছ’সপ্তাহের একটি সমীক্ষায় বিজ্ঞানী ও’ব্রিয়েন্ড ও কিন্নার্ড জানালেন, এরা দিনের প্রায় ৬০ শতাংশ সময় খাবার সংগ্রহ ও ভ্রমণের কাজে লাগায় এবং বাকি সময় বিশ্রাম ও সামাজিক আদান প্রদানের কাজ সারে। দলের সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য হয় নেতা, যে বাকি সদস্যদের উপর জোর খাটায়। এমনকী দলের সবচেয়ে সুন্দরী, তন্বী রমণীও এদের হস্তগত হয়।
তাই ‘ট্যাব’-এর কৃপায় দলের হোমরাচোমরারা যদি কিছু ক্ষণের জন্যও ব্যস্ত থাকে তা হলে বাকি অর্থাত্ তুলনামূলক ভাবে নিম্নপদের সদস্যদের আনন্দের কারণটা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে শুধু তাই নয়, ‘জেন-এক্স’ প্রযুক্তি আপন করে নেওয়ায় এদের চালচলনেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে, গোমড়ামুখোদের মুখেও হাসির চমক দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এর পরে কখনও আপনারই পাশে কোনও বানরকে ট্যাব হাতে একমনে নেট সার্ফ করতে দেখলে মনে করবেন আপনিই হয়তো এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছেন!

• শীতের শুরুতে ডানা মেলে হাজির পরিযায়ীর দল
উত্তুরে হিমেল বাতাসের ছোঁয়া জানান দিচ্ছে শীত আসছে। মিঠে নরম রোদের পরশ মেখে ডানা মেলল হাজার পরিযায়ীর দল। প্রতি বছর শীত শুরুর আগেই হাজির হয় তারা। আকাশপথের অতিথি ছাড়াও শীতের মরসুমে ওড়িশা উপকূলে ভিড় জমায় সমুদ্রপথের বার্ষিক অতিথি অলিভ রিডলেরাও। বন দফতর সূত্রে খবর, সাইবেরিয়া, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান ও হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে এ বছর ওড়িশার কেন্দাপাড়ার সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে আস্তানা গেড়েছে অন্তত ২৫ হাজার পরিযায়ী পাখি। বন দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এরা আসা শুরু করে এবং ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়। পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতবর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩৭০ প্রজাতির পরিযায়ীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে ১৭৫টি প্রজাতির পাখিরা আসে মধ্য এশিয়ার নানা প্রান্ত থেকে। ভিন্ দেশি অতিথিদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যেই অভয়ারণ্যের চারদিকে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে ওড়িশা সরকার। রয়েছে ৭৫ জন আধিকারিককে নিয়ে গঠিত ১৫টি চোরাচালান বিরোধী বিশেষ দল। অন্য দিকে, ভিতরকণিকার গহিরমথা সাগরবেলায় ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে অলিভ রিডলেরা। সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির অলিভ রিডলেদের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি যাতে নির্বিঘ্নে হয় তার জন্য উপকূল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত ট্রলার ও যন্ত্রচালিত দেশি নৌকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে ওড়িশা সরকার।
পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রতি বছরই পরিযায়ীদের সংখ্যার হেরফের ঘটে। সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১১-তে ১০ হাজারেরও বেশি পাখি ভিড় জমায় ভিতরকণিকায়। ২০১০-এ যেখানে এই সংখ্যা ছিল অনেক কম ৪৫,৬১০। আবার ২০০৮ সালে পরিযায়ীর সংখ্যা ছিল ১,০১২৯৩ এবং ২০০৯-এ ১,০৫৯৪৯। পাশাপাশি, ওড়িশার চিলিকা হ্রদও পরিযায়ী পাখিদের জন্য বিখ্যাত। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১১ সালে ১০১ রকম বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত সাড়ে চার লক্ষ পরিযায়ীর আগমন ঘটেছিল চিলিকায়। ২০১০-১১ সালের মধ্যে স্থানীয় ও পরিযায়ী-সহ সর্বাধিক ৯ লাখ ২৪ হাজার পাখির ভিড়ে রেকর্ড কড়ে চিলিকা। শুধুমাত্র শীতকাল নয়, বর্ষার শুরুতেও বিভিন্ন জলজ পরিযায়ীদের সাময়িক বাসস্থান হয়ে ওঠে ভিতরকণিকা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে বর্ষাকালে দেশের নানা প্রান্ত ও বিদেশ থেকে অন্তত ৪০ হাজার পরিযায়ী আসে এখানে। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০০৭-এ এই সংখ্যা ছিল ৫২,০৯৬। ২০০৮-এ ৭১,৩৮৩। ২০০৯ সালে ৭০,৪৮৪। ২০১০-এ ৪১,১৬৮। ২০১১-এ ৫৯, ৯৭৩ এবং ২০১২-এ ৭০,১০৫।

পার্বণ
• পর্যটনের মোড়কে শিল্প-সংস্কৃতির উত্সব বিষ্ণুপুর মেলায়
বিষ্ণুপুর মেলা ২০১২
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর বিখ্যাত তার অসংখ্য ছোট বড় প্রাচীন মন্দিরের জন্য। ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা এই সব মন্দিরের বেশির ভাগই তৈরি হয়েছিল বাংলার মল্লরাজাদের আমলে। এ ছাড়াও বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার কাজের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। টেরাকোটার নিপুণ শিল্পে এখানকার মন্দিরের গায়ে ফুটে উঠেছে নানান ঐতিহাসিক কথা ও পুরানের কাহিনি। ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ঐতিহ্যের টানে দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটকের ভিড় সারা বছর লেগেই থাকে বিষ্ণুপুরে। তবে বিষ্ণুপুর মেলার সময়টায় সেই ভিড় সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই মেলাটি আয়োজিত হয়। এ বছর মেলা শুরু হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখানকার বিখ্যাত মদনমোহন মন্দিরের কাছেই এই মেলা বসে। বর্তমানে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাওয়া এই মেলার উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতর। রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এই মেলাকে পর্যটকদের কাছে অন্য রূপে তুলে ধরে।
মেলায় বসা অসংখ্য দোকানে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য এবং শিল্পকলার পসরা। কী নেই সেখানে! টেরাকোটার নিখুঁত কাজে সমৃদ্ধ ছোট-বড় পুতুল, মূর্তি, ঘর সাজানোর উপকরণ, বাঁশ ও কাঠের উপর কাজের পাশাপাশি পাথর খোদাই করে বানানো নানাবিধ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিষ্ণুপুরী সিল্ক শাড়ির সম্ভার— সবেরই দেখা মেলে এই মেলায়। আর বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত সেই ঘোড়া! এ ছাড়াও গ্রামীণ নানা রকম মুখরোচক খাবার ও মিষ্টির জন্য এই মেলা পর্যটকদের ভীষণ প্রিয়।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত-সহ নানা ধারার লোকসঙ্গীত এবং লোকনৃত্যের আসর বসে এই মেলায়। শতাব্দী প্রাচীন বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীতও পরিবেশিত হয়। পর্যটনের মোড়কে বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য, শিল্প স্থাপত্য, চিত্রকলা ও সাহিত্য-সংস্কৃতিকে একই অঙ্গনে পেয়ে তার সঙ্গে পর্যটকরা পরিচিত হন, একাত্ব হন এই মেলায় এসে।

• কালো ঘোড়া শিল্প মেলা
মুম্বইতে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় ন’দিনের কালো ঘোড়া শিল্প মেলা। স্থানীয় কুটির ও হস্তশিল্পের অগ্রগতি এবং ক্ষুদ্র শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের উন্নতিকল্পে ১৯৯৯ সাল থেকে এই মেলা হয়ে আসছে। দৃশ্যকলা, নৃত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, বক্তৃতা, আলোচনাসভা ও কর্মশালা, হেরিটেজ ওয়াক, শিশুদের জন্য বিশেষ ইভেন্ট— যে কোনও বিভাগে অংশ নেওয়া যায় বিনা প্রবেশমূল্যে। দেশের বাণিজ্য নগরীতে অনুষ্ঠিত এই মেলায় বই, বাদ্যযন্ত্র, গান ও সিনেমার সিডি, ছোটদের বিনোদনের জন্য ম্যাজিক, পুতুল নাচের আসর সবেরই দেখা মিলবে। এ ছাড়াও মেলায় মনোরঞ্জনের জন্য নাচগানের জমজমাট আসর বসে। কর্মব্যস্ততা ভুলে হাজার হাজার মানুষ কালো ঘোড়া শিল্প মেলায় আসেন। এই ন’দিন তাঁরা দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আসা শিল্প রসিক মানুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপভোগ করেন ভারতীয় শিল্পকলার আমেজ।

• মাওবাদী থেকে মঙ্গলকাব্য, পটের উৎসব নয়া গ্রামে
বছরের পর বছর ওঁদের হাতেই ফুটে উঠছে রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গলের ছবি। গাছের পাতা, ফুল, ফলের রং দিয়ে সাজানো সেই পটের ছবিই পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামের শিল্পীদের দেশ-বিদেশে পরিচিতি দিয়েছে। যে সূত্রে বিস্তার বেড়েছে এই শিল্পের, সেই পট-মেলার এ বার চতুর্থ বর্ষ। গ্রামে ঢুকলেই মনপ্রাণ ভরে যায়। বাড়ির দেওয়াল থেকে উঠোন, সর্বত্র পটের ছোঁয়া। শিল্পীরা বাড়ির সামনেই নিজেদের আঁকা পটচিত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পরিবারের খুদে সদস্য থেকে বাড়ির কর্তা, সকলেই এই শিল্পে সামিল। ইদানীং মাটির সরা বা হাল ফ্যাশনের শাড়িতেও জায়গা করে নিয়েছে পট। পটুয়া জয়া চিত্রকর, ইয়াকুব চিত্রকর, আনোয়ার চিত্রকররা সকলেই মুসলিম। কিন্তু শিল্পীর তো আলাদা জাত থাকে না। তাই খোল বাজিয়ে গেয়ে চলা পটের গানে সাবলীল ভাবেই ফুটে ওঠে রামায়ণ, মহাভারত, মঙ্গলকাব্যের কাহিনি। ‘পটমায়া’ উৎসবে আলাদা গান মেলারও আয়োজন রয়েছে। মঞ্চে হচ্ছে বাউল গান। মেলার সভাপতি বাহাদুর চিত্রকর বলেন, “আমাদের মেলা এ বছর চতুর্থ বর্ষে পড়ল। সরকার নজর দিলে এই মেলার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।” গত কয়েক বছরে পট-গ্রাম নয়ার কথা দেশ বিদেশের বহু মানুষের কানে পৌঁছেছে। তাঁদের অনেকে এখানে এসেওছেন। মেলায় ঘুরে ভেষজ রং পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত দক্ষিণ ভারতের গবেষক চারণ্য টিসিএ। তিনি বলেন, “আমি প্রকৃতি থেকে পাওয়া সবুজ রং নিয়ে গবেষণা করছি। এই ভেষজ রং যেমন বহুদিন থাকে, তেমনই উজ্জ্বল। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এই রং বানিয়ে ওঁরা কাজ করেন। তিনটে দিন ওঁদের সঙ্গে থেকে রঙের খুঁটিনাটি জানতেই এখানে আসা।”

• তানসেন সঙ্গীত সমারোহ
এ বছর ডিসেম্বরের চার দিন— ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত হয়ে গেল তানসেন সঙ্গীত সমারোহ। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহীরূহ তানসেনের সম্মানে ফি বছরই গ্বালিয়রে বসে এর আসর। রসিক শ্রোতাদের মন ভরাতে এখানে আসেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহারথীরাও। মধ্যপ্রদেশ সরকারের উদ্যোগে তানসেনের সমাধিতে চলে এই সম্মেলন। ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ইতিহাসে গ্বালিয়র ঘরানার এক অনন্য স্থান আছে। সেটা মূলত ধ্রুপদ গায়কিতে গ্বালিয়রের শিল্পীদের স্বকীয় ভঙ্গিমার জন্য। সঙ্গীত সম্মেলনে হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য তানসেন সম্মান প্রদান করা হয়।

পর্যটন কেন্দ্র
• দার্জিলিঙের অদূরে অচেনা চিত্রে
চেনা রাস্তা ছাড়িয়ে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা হতে পারে দার্জিলিং থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরের চিত্রে। কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রেক্ষাপটে চা বাগানের ভরপুর সবুজের মাঝে ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট একটা জনপদ। ক্ষমতায় আসার পর দার্জিলিঙে পর্যটন শিল্পের প্রসারে উদ্যোগী হয়েছে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। এ কারণেই চিত্রেকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিব্বতি রিফিউজি সেন্টার বা লেবং যাওয়ার পথে নির্জন চিত্রের জুড়ি মেলা ভার। এখানকার ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা চায়ের দোকানগুলি ছাড়াও চিত্রে জনপ্রিয় তার মোমো আর থুকপার জন্য। এ ছাড়া চারপাশের চা বাগানগুলির জন্যও ছোট এই জায়গাটির বেশ খ্যাতি। চিত্রের কাছেই একটি মন্দির রয়েছে। আর এখান থেকে কয়েক পা এগোলেই তেনজিং রক ক্লাইম্বিং সেন্টার। জিটিএ-র পর্যটন সচিব সোনম ভুটিয়া জানিয়েছেন, চিত্রের ২৫-৩০টি অস্থায়ী চায়ের দোকানকে স্থায়ী করতে তাঁরা আগ্রহী। দার্জিলিঙের পাশাপাশি আরও একটি উল্লেখযোগ্য টুরিস্ট স্পট হিসেবে চিত্রেকে গড়ে তুলতে অত্যাধুনিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। চিত্রের আধুনিকীকরণের জন্য পুরো দমে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সচিব।

• সাজবে গোয়ার সমুদ্রতট
আলসেমি ভরা ছুটি কাটানোর জন্য গোয়ার সমুদ্রতটে বেড়ানোর মরসুম সাধারণত শুরু হয় অক্টোবরেই। কারণ এ সময় থেকেই গোয়ায় ভিড় জমাতে থাকেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। এ বার সেই বিখ্যাত সমুদ্রতটগুলির সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রক। দক্ষিণ গোয়ার সমুদ্রতটগুলিকে অত্যাধুনিক করে তুলতে টেন্ডারও ডাকা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ গোয়ার কোলবা, গোনসুয়া, বেটালবাটিম ও বেনলিম সি-বিচের ভোল বদলাতে একটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রক। এর মধ্যে উন্নত পার্কিং লটের প্রস্তাবও আছে। এ ছাড়া সমুদ্রসৈকতে বাচ্চাদের খেলার জন্য বাগান-সহ খেলার জায়গা, শৌচাগার, রাস্তা ইত্যাদি তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তাও পাওয়া যাবে বলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। মাস ছয়েকের মধ্যেই এই সৌন্দর্যায়নের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গোয়ার পর্যটনমন্ত্রী দিলীপ পারুলেকর জানান, দক্ষিণ গোয়ার সমুদ্রতটগুলি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এর টানেই প্রতি বছর বহু মানুষ গোয়ায় আসেন। আরও পর্যটক টানতে সৈকতগুলির আরও উন্নয়ন দরকার।

• গ্রেট লেকস-এ স্পোর্টস ট্যুরিজম
গ্রেট লেকস ঘিরে পর্যটকদের বাড়বাড়ন্ত দেখে স্পোর্টস ট্যুরিজমের আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে একটি বিশেষ পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। খেলাধুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের প্রসার কোনও নতুন কথা নয়। বহু পর্যটকই খেলার আসরে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি সে দেশের সংস্কৃতি-সাহিত্য-ইতিহাসের টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ বার ময়দানে নেমে পড়লেন আমেরিকার গ্রেট লেকস কর্তৃপক্ষ। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তঘেঁষা সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি ও অন্তারিও— এই পাঁচটি লেকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা গ্রেট লেকস অঞ্চল ৯৪২৫০ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। বহু বছর ধরেই এখানে খেলার আসর বসছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে এই প্রথম ইলিনয়-এ আয়োজিত হল রাইডার কাপ গলফ টুর্নামেন্ট। এ ছাড়াও এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিত ফুটবল, হকি, বেসবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলার আসর বসে। ফলে প্রতি বছরই এখানে ভিড় জমান খেলাপ্রেমী পর্যটকরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এই পুস্তিকায় এখানে অনুষ্ঠিত পেশাদার বিভিন্ন খেলার গাইড ও অঞ্চলের কার্যবলীসমূহ প্রকাশ করা হয়েছে। পুস্তিকায় বিভিন্ন স্টেডিয়াম, খেলোয়াড় সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে খেলাধুলোর বেশ কিছু অজানা তথ্যও। গ্রেট লেকস ইউএসএ-র মুখপাত্র টোবি ম্যাককারিক জানান, এ বছরের পুস্তিকায় ব্র্যান্ড আমেরিকার স্পোর্টস ট্যুরিজমের প্রসারের কথা সবিস্তার রাখা হয়েছে। ফলে ছুটি কাটানোর ক্ষেত্রে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করবে এই পুস্তিকা।

• নদী-পাহাড়ের কোলে অবসরের নয়া ঠিকানা
একপাশে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে কালিম্পঙের পাহাড় থেকে নেমে আসা মূর্তি নদী। পরিষ্কার আকাশপটে ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। চারদিক সবুজে সবুজ। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের এমনই পরিবেশে গড়ে উঠেছে রাজ্য পর্যটন দফতরের নব নির্মিত ‘মূর্তি রিসর্ট’। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের সমস্ত দফতর এবং ওয়েবসাইট থেকেই এই রিসর্টের বুকিং করা যাবে। পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, এতদিন মূর্তিতে রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের ‘বনানী’ বন বাংলো ছাড়া সরকারি উদ্যোগে কোনও বাংলো, রিসর্ট বা অতিথি নিবাস ছিল না। মূর্তির একপাশে গরুমারা জাতীয় উদ্যান, অন্যদিকে চাপড়ামারি অভয়ারণ্য থাকায় পর্যটকদের কাছে মূর্তি আকর্ষণীয়। প্রায় আড়াই একর জমির উপর রিসর্টটি গড়া হয়েছে। মোট ২৭টি কটেজ রিসর্টটিতে তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০টি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাঠের নকশা করা, ১০টি তাঁবুর ছাদ যুক্ত কটেজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজও রয়েছে। শুধু থাকার কটেজ নয়, রেস্তোরাঁ, পানশালা, কনফারেন্স হলও তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ২০০ আসন বিশিষ্ট কনফারেন্স হলটি অনেকটা থিয়েটারের ধাঁচে তৈরি হয়েছে। রেস্তোরাঁয় ৫০ জনের উপরে একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। বনানী বনবাংলোর ঠিক পিছনের অংশে রিসর্টটি তৈরি হয়েছে। ‘লনে’ তৈরি হয়েছে নকশা করা রাস্তা-সহ হাতি, গন্ডারের মত ডুয়ার্সের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রাণীর মডেলও। থাকছে রকমারি বাহারি গাছের বাগানও। সাত সকালে কটেজ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য বাড়তি আকর্ষণ বলে পর্যটন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ডুয়ার্স বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দ্রুত রিসর্টটিতে একটি আলাদা ‘ট্রাভেল ডেস্ক’ও খোলা হচ্ছে। লাটাগুড়ি এবং চালসা থেকে রিসর্টটি ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে। এখানে এসে গরুমারা, চাপড়ামারি ছাড়াও ঝালং, বিন্দু, সামসিং, জল্পেশের মত এলাকাগুলি যাতে সহজেই পর্যটকেরা বেড়াতে পারেন, সেই জন্য ট্রাভেল ডেস্কটি চালু করা হচ্ছে।

পরিষেবা
• মাদুরাই-দুবাই সরাসরি উড়ান
গত নভেম্বরের ২২ তারিখ থেকে মাদুরাই ও দুবাইয়ের মধ্যে প্রত্যহ উড়ান চালু করল স্পাইস জেট। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন এই উড়ান-পথে ১৯০টি আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান চালানো হবে। মাদুরাই ভারতের পঞ্চম শহর, যেখান থেকে দুবাই যাওয়ার সরাসরি বিমান পরিষেবা শুরু করল স্পাইস। প্রত্যহ উড়ানটি রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে মাদুরাই থেকে রওনা হয়ে দুবাই পৌঁছবে সে দেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত ২টো ২০ মিনিটে। ফিরতি পথে ভোর ৩টে ৫০ মিনিটে রওনা হয়ে মাদুরাই পৌঁছবে ভারতীয় সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। প্রাথমিক ভাবে টিকিটের দাম ৬,৯৯৯ টাকা (সমস্ত কর সমেত) ধার্য করা হয়েছে।

• ‘হাই স্পিড’ ট্রেনের জন্য বিশেষ কর্পোরেশন
ভারতে দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেন চালু করতে হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন (এইচএসআরসি) গঠন করল ভারতীয় রেল। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খারগে এই ঘোষণা করে জানান, এইচএসআরসি রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের অধীনস্থ একটি সংস্থা। এর কর্মপদ্ধতি, নিয়মাবলী ইত্যাদি পরবর্তী কালে ঠিক করা হবে। যদিও তিনি গতির বদলে সুরক্ষার উপর জোর দেওয়ায় বেশি আগ্রহী। তাঁর মতে, বিশ্বের অনেক সংস্থা দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেনের বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি করে। তবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে তা সঠিক ভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। কারণ, যাত্রীসংখ্যার বিচারে ভারতীয় রেল বিশ্বের এক নম্বরে রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক কোটি যাত্রী ট্রেনের উপর ভরসা করেন। তাই তাঁদের সুরক্ষার কথাই প্রথমে বিচার্য। তিনি আরও জানান, দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর জন্য সমস্ত পরীক্ষানিরীক্ষার পরই প্রয়োজনীয় রেল লাইন এবং প্রযুক্তি ব্যহার করা হবে।

• ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির লোকসান কমাতে উদ্যোগ কেন্দ্রের
ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির লোকসান কমাতে উদ্যোগ নিল কেন্দ্র। প্রতিটি রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের তরফে বিমানের জ্বালানীর উপর ৪ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট কমানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন রাজ্যে এই জ্বালানীর উপর ৪ থেকে ৩০ শতাংশ ভ্যাট ধার্য করে রাজ্য সরকারগুলি। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির মিলিত লোকসান ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ঋণের পরিমান প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। তার উপর অতিরিক্ত ভ্যাটের ফলে বেশি দামে জ্বালানী কিনতে গিয়ে আরও লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে সংস্থাগুলি। কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ জানান, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি এবং রাজ্য সরকারগুলির চাপানো অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে বিমানের জ্বালানীর (এটিএফ) দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তিনি আরও জনান, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ভ্যাট কমানোর ফলে ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রাইপুর বিমানবন্দরে উড়ানের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিটি রাজ্য বিমান জ্বালানীর উপর ভ্যাট কিছুটা কমালে সেই রাজ্যগুলিতে বিমানসংস্থাগুলি উড়ান বাড়াতে আগ্রহী হবে। একাধারে সংস্থাগুলির খরচ কমবে এবং বিমানযাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে।

• ট্রেনপথে আগরতলা জুড়বে দেশের সমস্ত মেট্রো শহরের সঙ্গে
২০১৫ সালের মধ্যে আগরতলা থেকে দেশের সমস্ত বড় শহরগুলি রেলপথের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হবে বলে রেলের তরফে সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে। নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলের ডিআরএম রাকেশকুমার গোয়েল জানান, অসমের লামডিং থেকে বদরপুর হয়ে ত্রিপুরার কুমারঘাট স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইন পাতার কাজ ২০১৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। কুমারঘাট থেকে আগরতলা পর্যন্ত বর্তমানে ন্যারো গেজ লাইন পাতা রয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই ব্রডগেজ লাইন পাতা হবে। আগরতলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে গোমতী জেলার উদয়পুর পর্যন্ত এই লাইন পাতার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে ত্রিপুরা সরকার। লাইনটি সাবরুম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। তার জন্যেও জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সাবরুম থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দরকে এ মুহূর্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব থেকে ভাল বন্দর হিসাবে গণ্য করা হয়। রেল লাইন পাতা সম্পূর্ণ হলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও দৃঢ় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... সবিস্তার।
 
সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ