সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• ‘হিচকক ৯’
অ্যালফ্রেড হিচকক। পুরো নাম— স্যর অ্যালফ্রেড জোশেফ হিচকক, কেবিই (নাইট কমান্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার)। সিনেমা জগতে তাঁর অবদানই তাঁকে এনে দিয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি। নির্বাক চলচ্চিত্র দিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও, ‘টকিজ’-এর যুগেও তাঁর কাজ সমান ভাবে সমাদৃত। হিচকক ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র নির্দেশক হিসেবে খ্যাত। প্রায় ছ’দশকের কর্মজীবনে তিনি ৫০টিরও বেশি ছবি পরিচালনা করেন। জন্মসূত্রে ব্রিটিশ হলেও, কর্মসূত্রে থাকতেন হলিউডে। ১৯৫৫ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৫ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তাঁর নির্দেশিত ন’টি নির্বাক চলচ্চিত্র ইউনেস্কো পরিচালিত ‘ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ তালিকায় জায়গা করে নেয় গত মাসের মাঝামাঝি। ২০১২ সালের লন্ডন ফেস্টিভ্যালে এই ছবিগুলি প্রদর্শনের জন্য বিগত তিন বছর পুনঃস্থাপনের কাজ করেছে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট (বিএফআই)। ‘হিচকক ৯’ তালিকায় উল্লেখযোগ্য তাঁর প্রথম নির্দেশিত ছবি ‘দ্য প্লেসার গার্ডেন’, বক্সিং নিয়ে ‘দ্য রিং’, লন্ডনের এক সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে ‘দ্য লজার: আ স্টোরি অফ দ্য লন্ডন ফগ’, সামাজিক ছবি ‘শ্যাম্পেন’ ও ব্ল্যাকমেল (নির্বাক ও সবাক)। আরও একটি নির্বাক ছবি ‘দ্য মাউন্টেন ইগল’ অবশ্য পাওয়া যায়নি। বিএফআই-এর প্রধান কিউরেটর রবিন বেকার যার পর নাই খুশি এই স্বীকৃতি পাওয়াতে। এই মাসে ন’টি ছবিই প্রদর্শিত হবে বিএফআই-র সাউথব্যাঙ্কে। হিচকক ৯-এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা ও মিউজিয়াম থেকে প্রাপ্ত আরও ১০টি দ্রব্য আছে ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার তালিকায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য ডুমসডে বুক’, ‘টাইন অ্যান্ড উইয়ার শিপইয়ার্ড’-এর কিছু নিদর্শন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নষ্ট হয়ে যাওয়া মানচিত্র।

• ধর্মের অবক্ষয় টিমবাক্টুতে
আহমেদ বাবা অল-মাসুদি অল-টিমবাক্টু একাধারে ছিলেন লেখক, বিদ্বান ও রাজনীতিবিদ। পশ্চিম আফ্রিকার এই মানুষটি ‘আহমেদ বাবা দ্য ব্ল্যাক’ নামেও পরিচিত। ১৫৫৬ সালের ২৬ অক্টোবর আরাজনে জন্ম হলেও, খুব ছোট বয়সেই বাবার সঙ্গে চলে আসেন টিমবাক্টুতে। শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিত মহম্মদ বাগায়োগো ও বাবার কাছে শুরু হয় তাঁর পঠনপাঠন। জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি বই লিখেছিলেন আহমেদ বাবা। ১৫৯৪ সালে তাঁকে মরক্কোয় স্থানান্তরিত করা হয় রাজদ্রোহের অভিযোগে। ১৬০৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন আহমেদ এবং শোনা যায় তাঁর বেশির ভাগ লেখার সৃষ্টি এই সময়ই। তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখনী— মরক্কোর ধর্মীয় নিয়মনীতির প্রধান প্রবর্তক মহম্মদ আব্দঅল-করিম অল-মাঘিলির জীবনকথা।

আহমেদ বাবাকে টিমবাক্টুর সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতী বলা হয়। শহরের একমাত্র গ্রন্থাগারটি তাই তাঁরই নামানুসারে— আহমেদ বাবা ইনস্টিটউট। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার পাণ্ডুলিপি, যার বেশির ভাগই ১৪ থেকে ১৬ শতকের। মূলত আরবি ভাষায় লেখা হলেও, আঞ্চলিক সংঘাই, তামাশেখ ও বামানানকান ভাষায় লেখা পাণ্ডুলিপিও রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। তুর্কি ও হিব্রু ভাষাও স্থান পেয়েছে এখানে। নানা বিষয় যেমন সাহিত্য, কবিতা, ইসলামি আইন, চিকিত্সাবিদ্যা, জ্যোতিঃশাস্ত্র এমনকী মালি তথা সুদানের ইতিহাস— সবই পাওয়া যায় এই গ্রন্থাগারে। এমন ঐতিহ্য ভাণ্ডার যাতে অটুট থাকে তাই ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে গত জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে সে সবের ‘ডিজিটাইজেশন’-এর কাজ।

১৯৭৩ সালে নির্মিত ‘আহমেদ বাবা ইনস্টিটউট অফ হায়ার লার্নিং অ্যান্ড ইসলামিক রিসার্চ’ সংগ্রহশালার পাশাপাশি গবেষণাগারও বটে। পুরনো বাড়িটির উপরই পুনর্নির্মাণ করে বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। প্রায় ৪৬০০ বর্গ মিটার জায়গার উপর তৈরি ভবনটি সম্পূর্ণ রূপে বাতানুকুল যাতে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে কোনও অসুবিধা না হয়। বাড়িটির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাও স্বয়ংক্রিয়। কিন্তু এত কিছু করেও টিকিয়ে রাখা যায়নি ঐতিহ্যের এই বিশাল সম্ভার। জানুয়ারির ২৮ তারিখ ফরাসি ও মালির সৈন্যরা প্রায় বিনা যুদ্ধেই ইসলাম বিদ্রোহীদের হটিয়ে দেয় শহর থেকে। কিন্তু তারা শহর ছাড়ার আগে আহমেদ বাবা ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। ২৮ হাজার পাণ্ডুলিপি সেই আগুন থেকে বাঁচানো গেলেও, প্রায় দু’হাজার পাণ্ডুলিপির কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। ইসলাম ধর্মের গবেষণাগার নষ্ট হল ইসলাম বিদ্রোহীদের হাতেই!

• ‘রেফারেল’-এ জাতীয় উদ্যান
হিমাচল প্রদেশের কুলু অঞ্চলে প্রায় ১১৭১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয় ‘গ্রেট হিমালিয়ান ন্যাশনাল পার্ক’। ১৯৮৪ সালে নির্মিত এই পার্ক ভারতের জাতীয় উদ্যানের তালিকায় নবতম সংযোজন। খাতায় কলমে প্রায় ৭৫৮ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে এই উদ্যান। উদ্যানের চারটি নদীর মধ্যে তির্থন ও সাঁঝ নদীর পাড়ে রয়েছে হাল্কা জনবসতি। তবে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনানুসারে উদ্যানের চার পাশে পাঁচ কিলোমিটার জায়গা ‘বাফার জোন’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাফার অঞ্চলের পর আরও ৩২৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে তির্থন অভয়ারণ্য ও প্রায় একশোরও বেশি ছোট গ্রাম। অন্য দিকে সাঁঝ অভয়ারণ্য ও নদীর পার্শ্ববর্তী দু’টি গ্রাম— শক্তি ও মারোরও জাতীয় উদ্যানের অংশ। জাতীয় উদ্যানের হিমবাহ থেকে সৃষ্ট চারটি নদীই এই অঞ্চলের জল সরবরাহ করে। গ্রামীণ জীবনের জীবিকা নির্বাহও হয় এই বনাঞ্চল থেকে— জ্বালানীর কাঠ, ফুল, মধু, বাদাম সংগ্রহ করেন গ্রামবাসীরা।

এই বছর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির বার্ষিক অধিবেশনে কুলুর এই জাতীয় উদ্যান ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পায়নি ঠিকই, কিন্তু তার নাম একেবারে বাদও যায়নি। কমিটির ‘রেফারেল’ তালিকায় জায়গা হয়েছে আপাতত। ভারত থেকে যে ষোলো জন প্রতিনিধি কাম্বোডিয়ার নম পেনে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন এই জাতীয় উদ্যানের উপদেষ্টা অজয় শ্রীবাস্তব। রেফারেল তালিকায় নাম থাকায় উচ্ছ্বসিত শ্রীবাস্তবজি এখন চেষ্টায় আছেন তির্থন ও সাঁঝ অভয়ারণ্য দু’টি উদ্যানের আওতায় আনার। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে সেই কাজ সম্পন্ন হলে, ২০১৪র কমিটির বার্ষিক অধিবেশনে হয়তো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পাবে গ্রেট হিমালিয়ান ন্যাশনাল পার্ক, আশাবাদী অজয় শ্রীবাস্তব।

• লুম্বিনি— ইতিহাসের পাতা থেকে
কুশিনগর, বোধগয়া, সারনাথ— এই তিন বৌদ্ধ তীর্থস্থানের সঙ্গে অবশ্যই যোগ করা যায় লুম্বিনির নাম। মায়াদেবীর কোলে যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম। জন্মের পর ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর জীবন কেটেছে নেপালের রূপনদেহী জেলার লুম্বিনিতেই। পরবর্তী কালে এই জায়গায় গড়ে ওঠে প্রচুর মন্দির ও বৌদ্ধ মঠ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মায়াদেবীর মন্দির। কথিত আছে, প্রসবের পূর্ব মুহূর্তে যে পুকুরে তিনি স্নান করেন, সেটি এখানে রয়েছে এখনও। কপিলাবস্তু প্রাসাদের অংশবিশেষও পাওয়া যায় মন্দিরের কিছু দূরে। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের সময় সম্রাট অশোক যখন এই জায়গায় আসেন, তখন একটি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছিল এখানে। ১৮৯৬ সালে নেপালের এক প্রত্নতত্ত্ববিদ আবিষ্কার করেছিলেন এই স্তম্ভ। খ্রিস্টপূর্ব ২৪৫ সালে নির্মিত এই স্তম্ভ যে অশোকের সময়েরই তা চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েনের লেখা থেকেও প্রমাণিত। হিন্দু ধর্মে ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারের নবম অবতার রূপে বুদ্ধ পূজিত হন। বৈশাখী পূর্ণিমায়, বুদ্ধ জয়ন্তী উপলক্ষে বৌদ্ধ-হিন্দু নির্বিশেষে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় লুম্বিনিতে। এমন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত হয়।

তবে সম্প্রতি সম্রাট অশোকের সময় ছাড়িয়ে আরও পুরনো ইটের তৈরি একটি মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই খননকার্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন নেপাল ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা। দলের সহ-উপদেষ্টার মতে, প্রথমে কাঠের কাঠামোর উপরে তৈরি করা হয় মায়াদেবীর ইটের মন্দির। আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ সালের একটি গ্রামও। বুদ্ধ এবং তার আগের সময় ও তখনকার জীবনযাপন কেমন ছিল, তা অনেকাংশেই জানা যাবে এই আবিষ্কারের ফলে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• প্রায় ১০০ কোটি বছরের পুরনো জল
সৃষ্টির আদিযুগের জলের খোঁজ পাওয়া গেল মধ্য কানাডার টিমিন্সের সোনার খনিতে। এই জলের ‘বয়স’ ১০০ থেকে ২৫০ কোটি বছর পর্যন্ত হতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার নীচে আবিষ্কৃত এই জলের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে আণুবীক্ষণিক জীবের অস্তিত্বও। সূর্যালোক ছাড়াও প্রাণ ধারণে সক্ষম তারা, জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগে কানাডার এই অঞ্চল ছিল সমুদ্র-গর্ভস্থ। ধীরে ধীরে জল সরে স্থলভূমি দেখা দিলেও ভূপৃষ্ঠের কিছু গর্তে থেকে যায় জলের অংশবিশেষ। জমে থাকা সেই জল পরীক্ষা করে তার মধ্যে হাইড্রোজেন, মিথেন-সহ বিভিন্ন দ্রবণীয় গ্যাসের অস্তিত্বের প্রমান পান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা এই ধরনের গ্যাসই জলের নীচের আণুবীক্ষণিক জীবের শক্তির মূল উত্স। আরও পরীক্ষানিরীক্ষা করে জমা জলের মধ্যে হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, জেনন প্রভৃতি আদর্শ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। গ্যাসগুলির আইসোটোপ পরীক্ষা করে জমা জলের প্রাচীনত্ব বিষয়ে নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। তবে জলের প্রাচীনত্বের থেকেও তার মধ্যে আণুবীক্ষণিক জীবের অস্তিত্বই বেশি আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের। সূর্যের আলো ছাড়া প্রাণ ধারণে সক্ষম এই জীবগুলি যদি আবিষ্কৃত জলের মতোই প্রাচীন হয় তবে এক সম্পূর্ণ নতুন সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর থেকে প্রায় সমসাময়িক মঙ্গল গ্রহের পাথরের কেন্দ্রে, যেখানে হয়তো এখনও কিছু জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে, সেখানে প্রাণের ইতিবাচক সম্ভাবনার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর তা হলে উন্মোচিত হবে অজানা তথ্যের এক বিপুল ভাণ্ডার।

• ডাইনোসরের দন্তশূল!
দাঁতের সমস্যায় অল্পবিস্তর ভোগেন না, এমন মানুষ মেলা দুষ্কর। বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষ তথা স্তন্যপায়ীদের মধ্যে দাঁতের সমস্যা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তাই বলে ডাইনোসরের দন্তশূল! সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে এমনই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৭ সালে চিনের ইউনান প্রদেশে আবিষ্কৃত হয় সাইনোসরাসের চোয়ালের অংশবিশেষ ও কিছু হাড়। পূর্বেকার নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন আবিষ্কৃত সাইনোসরাসটির উপরের দিকের চোয়ালের দু’টি দাঁত অনুপস্থিত। ‘এক্স রে’ পরীক্ষায় দেখা যায় অনুপস্থিত দাঁতগুলির জায়গায় হাড়ের উপস্থিতি। এর থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন বাইরের কোনও আঘাত নয়, দন্তশূলই প্রাণীটির দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার আসল কারণ। স্তন্যপায়ীদের মধ্যে দাঁতের সমস্যা স্বাভাবিক হলেও সরীসৃপ তথা ডাইনোসরের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অত্যন্ত বিরল। সাইনোসরাসের সঙ্গে এই বিষয়ে এক ধরনের লেমুরের মিল খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই লেমুররা শক্ত বীজ জাতীয় খাবার পছন্দ করলেও এগুলি ভাঙতে গিয়ে প্রায়ই দাঁত ভেঙে ফেলে। তেমনই সম্ভবত কোনও শক্ত হাড় খেতে গিয়ে দাঁতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি। আর সেখান থেকেই শুরু হয় দাঁতের সমস্যা। আবিষ্কৃত জীবাশ্মটি ১৯ কোটি বছরের পুরনো হওয়ায় এটিই দাঁতের সমস্যার প্রাচীনতম নিদর্শন বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

• কর্কট রোগে আক্রান্ত নিয়ান্ডারথাল
ক্যানসার— আধুনিক যুগের এক অন্যতম ভয়ঙ্কর মারণরোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে এর জন্য দায়ী আধুনিক জীবনযাপন ও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ। তাঁদের আরও দাবি, অতীতে এই ধরনের ‘নিওপ্লাস্টিক’ রোগের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু তাঁদের এই দাবিকে নস্যাত্ করে দিল সদ্য আবিষ্কৃত একটি জীবাশ্ম। সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ার উত্তরে ক্রাপিনা প্রদেশ থেকে আবিষ্কৃত হয় নিয়ান্ডারথালের একটি পাঁজরের অংশবিশেষ। পরীক্ষা করে কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পাঁজরটিতে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। এর পর ফাইব্রাস ডিসপ্লেসিয়া আক্রান্ত পাঁজরটিতে ক্যানসারের চিহ্ন খুঁজে পান গবেষকরা। প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর আগে এই নিয়ান্ডারথালের দেহে ক্যানসারের অস্তিত্ব চমকে দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। গবেষকদলের প্রধান ডেভিড ফ্রেয়ারের মতে, মানব জীবাশ্মে ক্যানসারের অস্তিত্ব অত্যন্ত বিরল। দূষণহীন পরিবেশে বসবাসকারী নিয়ান্ডারথালদের দেহে এই রোগ কী ভাবে এল তা নিয়ে ধন্দে বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত এর আগে মানবদেহে ক্যানসারের অস্তিত্বের নিদর্শনটি মাত্রই ১-৪ হাজার বছরের পুরনো। এই আবিষ্কার ক্যানসারের বিবর্তন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

• মূষিকসম ‘মানব’
মানুষের আদি পুরুষের আকার নাকি ছিল লিলিপুটের মতো। চিনের হুবেই প্রদেশের জিনঝাউয়ের ঝিল থেকে ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হয় একটি নর-বানরের জীবাশ্ম। দীর্ঘ দশ বছর গবেষণার পর আমেরিকা, ফ্রান্স ও চিনের একদল গবেষক দাবি করেছেন এটিই পৃথিবীর আদিমতম নর-বানরের জীবাশ্ম। প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগের এই প্রাণীটি আকারে ইঁদুরের থেকেও ছোট ছিল। লম্বায় ৭০-৭১ মিলিমিটারের প্রাণীটির ওজন ছিল মাত্র ২০-৩০ গ্রাম। ইওসিন যুগের প্রথম পর্যায়ের এই জীবাশ্মটি এত দিন পর্যন্ত জানা প্রাচীনতম জীবাশ্মের থেকেও প্রায় ৭০ লক্ষ বছরের পুরনো। গাছে চড়তে ও লাফাতে অতি পটু এই চতুষ্পদের সূচলো দাঁত ও ছোট চোখ দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এরা অত্যন্ত চতুর শিকারী ছিল। তবে এদের মূল খাদ্য ছিল পোকামাকড়। জীবাশ্মটিকে টারসিয়ের ও অ্যান্থ্রোপয়েড শ্রেণির মধ্যবর্তী সংকর প্রজাতি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে আর্কিসিবাস অ্যাকিলিস যার অর্থ প্রাচীন লম্বা লেজবিশিষ্ট বানর। স্তন্যপায়ীদের জীবনপঞ্জীতে একেবারে নীচের দিকে রাখা হয়েছে এই প্রাণীকে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• পিঁপড়েদের ‘ট্র্যাফিক’ আইন
বাড়ির আনাচে-কানাচে, দেওয়ালের গায়ে সারিবদ্ধ ভাবে যে ক্ষুদ্র প্রাণীগুলির আনাগোনা, তারাও আমাদের মতো স্তন্যপায়ী দ্বিপদ জীবদের থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করে। এমনকী তারা পথ চলার সময় মেনে চলে ট্র্যাফিক আইনও। তাজ্জব কথা মনে হলেও সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল জীববিজ্ঞানী। পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাজিদ সারভি ও তাঁর সতীর্থগণ ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করে তুলতে পিঁপড়েদের গতিবিধি অনুসরণ করার কথা বললেন। তাঁদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা পথ দুর্ঘটনা— সহজ ও নিরাপদ বাঁচার উপায় বাতলে দিতে পারে পিঁপড়েরাই। কী ভাবে?

গবেষণাগারে পিঁপড়েদের জন্য কয়েকটি ঘরওয়ালা আয়তাকার ‘কৃত্রিম বাড়ি’ বানিয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে তাদের বৈচিত্রময় জীবন পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ‘বাড়ি’টির বৈশিষ্ট্য হল এখানকার বিভিন্ন ঘর থেকে বেরোনোর জন্য দু’রকমের পথ আছে। সেই ছিদ্রপথের অবস্থান দেওয়ালের মাঝখানে ও একটা কোণে। প্রথমে বাড়িটিতে রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে পিঁপড়েদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেল, দেওয়ালের মাঝের ছিদ্র অপেক্ষা কোণের ছিদ্র দিয়ে পিঁপড়েদের বেরোনোর হার প্রায় ৯৩ শতাংশ বেশি। এর পর নানারকম ভাবে ছিদ্র পথে বাধা সৃষ্টি করা হল, দেখা গেল প্রতি বারই পিঁপড়েদের গতিপথ অপরিবর্তিত থাকছে। সারভি জানিয়েছেন, পিঁপড়েরা বেরোনোর জন্য এমন পথই বেছে নিচ্ছে যেখানে মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম। অর্থাত্ দু’টি ঘরের মাঝের দেওয়ালের ছিদ্রপথে দু’টি পিঁপড়ের গতিপথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অন্য দিকে, দেওয়ালের কোণের ছিদ্র দিয়ে বেরোনোর জন্য অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হয়। বিজ্ঞানীদের মতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রেও যদি এই ধরনের নিয়ম মেনে চলা হয় তা হলে হয়তো দুর্ঘটনার হাত থেকে অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে।

• অক্টোপাসের নীল রক্ত
সমুদ্রের ভিতরে শীতলতম তাপমাত্রায় দিব্যি আটটি পা নাচিয়ে হেসেখেলে বেড়ায় অক্টোপাসরা। শামুক শ্রেণিভুক্ত মোলাস্কা পর্বের অন্তর্গত এই অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বাঁচার রহস্য আবিষ্কার করলেন জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগনার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। দলের মুখ্য গবেষক মাইকেল ওয়েলারম্যান, হ্যান্স পোর্টনার ও ফেলিক্স মার্কের গবেষণাপত্র অনুযায়ী হিমাঙ্কের থেকে কম তাপমাত্রায় আন্টার্কটিক অক্টোপাসদের প্রতিটি দেহকোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে ‘হিমোসায়ানিন’ নামক এক প্রোটিন। হিমোসায়ানিন তাম্রঘটিত রঞ্জকপদার্থ যা মূলত অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তরসে থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন উষ্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী অক্টোপাসদের সঙ্গে শীতলতম এলাকাবাসীদের হিমোসায়ানিন কার্যগত ভাবে পৃথক। এমনকী এদের জিন গঠনেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। অক্টোপাসরা আসলে খুবই অলস প্রকৃতির প্রাণী। ধীরগতি সম্পন্ন, এমনকী পরিবর্তিত পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার মতো শক্তিও তাদের নেই। সেই অভাব পুষিয়ে দেয় ‘নীল রক্ত’ অর্থাত্ রক্তের হিমোসায়ানিন— এটি এক প্রকার মেটালোপ্রোটিন যার মধ্যে দু’টি কপার অণু একটি অক্সিজেন অণুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। বর্ণহীন প্রথম কপার অণু ও অক্সিজেনযুক্ত নীল বর্ণের দ্বিতীয় কপার অণুর কারণেই অক্টোপাসদের রক্তের রং হয় নীল। হিমশীতল তাপমাত্রায় যেখানে লৌহঘটিত হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন সরবরাহে অপারগ, তাম্রঘটিত হিমোসায়ানিন সেখানে দ্রুততার সঙ্গে প্রতিটি দেহকোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে ও রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা নেমে গেলেও অক্টোপাসেরা বেঁচে থাকতে পারে। ওয়েলারম্যানের মতে, তাপমাত্রা -১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৮.৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) নীচে নামলেও ‘নীল রক্ত’ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রার পার্থক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখে, জমাট বেধে যায় না।

• কী নামে ডেকে, বলব তোমাকে
‘ডাক নাম’ ধরেই প্রিয় সঙ্গীকে সম্বোধন করে ডলফিনেরা। স্কটল্যাণ্ডের পূর্ব উপকূলে ‘বটল নোস’ ডলফিনদের উপর গবেষণা চালিয়ে সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানালেন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুস-এর একদল গবেষক। অধ্যাপক ভিনসেন্ট জনিকের মতে পরস্পরের সঙ্গে কথোপকথনের জন্য ডলফিনেরা ‘স্বতন্ত্র সুর’ ব্যবহার করে। জনিক ও তাঁর সতীর্থেরা স্কটল্যাণ্ডের সমুদ্র উপকূলে ১৫০-১৮০টি ডলফিনের একটি দলের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেন দলের সদস্যেরা একে অপরকে একটি নির্দিষ্ট সুরে সম্বোধন করছে এবং অপর পক্ষ তার কাঙ্ক্ষিত উত্তরও দিচ্ছে। জনিকের জানিয়েছেন, ডলফিনেরা সমুদ্রের গভীরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের মধ্যে যেমন নামের রকমফের আছে তেমনি ডলফিন সমাজেও প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট সম্বোধনসূচক সুর আছে। সমুদ্রের গভীরে দল বেঁধে এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় যাওয়ার সময় কোনও কারণে কেউ দলচ্যুত হলে নির্দিষ্ট নাম ধরেই তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। আর এই সম্বোধনের বুলিই সাহায্য করে পছন্দের জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নিতে। শুধু তাই নয়, শিকারকে প্রভাবিত করা থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন, সহবত প্রদর্শন বা আক্রমণের পূর্বাভাস প্রকাশের জন্য রয়েছে নানাবিধ সুর। সেন্ট অ্যাণ্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক প্রাণী বিভাগের গবেষক স্টিফেনি কিং-এর মতে প্রতিকূল পরিবেশে ডলফিনেরা অনেক সময় অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর ডাকও নকল করে থাকে। ১৯৮৪-২০০৯ পর্যন্ত কিং ও তাঁর সতীর্থেরা ডলফিনের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ডলফিনদের সুর প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায় এবং সুরের তীক্ষ্ণতা সম্পূর্ণ ভাবেই সমুদ্রের গভীরতার উপর নির্ভর করে।

• পলির তলায় ঢেকে থাকা অরণ্য
সমুদ্রের গভীরে পলির আস্তরণ সরিয়ে সবুজ সাইপ্রাস গাছের জঙ্গল দেখে চমকে গেলেন স্কুবা ডাইভার। এ কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। এমনটাই ঘটেছে আলাবামা সমুদ্রউপকূলে গাল্ফ অফ মেক্সিকোর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ মিটার গভীরে। মার্কিন স্কুবা ডাইভার বেন রেনস জানিয়েছেন, সমুদ্রের অন্দরে অন্তত ০.৮ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো এই অরণ্য দীর্ঘ পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে পলির তলায় চাপা পড়েছিল। ২০০৫-এ ভয়াবহ ‘ক্যাটরিনা’ ঝড়ের দাপটের পর প্রথম এই স্থানটি নজরে আসে। ওই এলাকায় মাছেদের আনাগোনা অন্যান্য জায়গার তুলনায় কিছু বেশি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই মত্স্যজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পল নামে এক মত্স্যজীবী জানিয়েছেন, পলির নীচে অজানা কিছু চাপা পড়ে আছে বলে মনে হয় তাদের। এর পর ২০১২ সালে স্কুবা ডাইভার বেনস এই স্থানের রহস্য উন্মোচন করেন। বেনস জানিয়েছেন, ৫০ হাজার বছরের পুরনো এই সাইপ্রাস গাছের জঙ্গলটি তার আদিম রূপ নিয়েই সমুদ্র গর্ভে চাপা পড়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরে স্তরে স্তরে পলি চাপা পড়ে জঙ্গলটি কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীরের রূপ নেয়। এর পর এখানে মাছেদের পাশাপাশি পাকাপাকি ভাবে বাস জমায় বিভিন্ন কবচি ও কম্বোজী শ্রেণির প্রাণীরা। এই অরণ্য সম্পর্কে বিশদ জানতে দক্ষিণ মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডেনড্রোক্রোনোলজিস্ট’ গ্র্যান্ট হারলে ও লুসিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী ক্রিস্টিন দেলং জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাল্ড সাইপ্রাস গাছেদের জীবতকাল হাজার বছরেরও বেশি এবং এই অরণ্যের গাছগুলির কাণ্ডের দৈর্ঘ্য প্রায় দু’মিটারের কাছাকাছি। গাছেদের বৃদ্ধি বলয় দেখে কার্বন আইসোটোপ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গিয়েছে সাইপ্রাস গাছগুলির বয়স প্রায় ৫২ হাজার বছর। বিজ্ঞানীদের মতে এই অরণ্যটি ‘উইসকনসিন গ্লেসিয়াল’ পর্যায়ের এবং সেই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমান সময়ের থেকে অনেক কম ছিল। সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত এই অরণ্য আরও অজানা রহস্যের দ্বার খুলে দিতে পারে বলেই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

পার্বণ
• দেওঘর থেকে তারকেশ্বর— শ্রাবণী মেলা
শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের পাশাপাশি দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধামেও বসে শ্রাবণী মেলা। দু’জায়গাতেই দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী আসেন শিবলিঙ্গে জল দিতে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ২২ জুলাই থেকে এই দুই জায়গাতেই শুরু হয়েছে শ্রাবণী মেলা। চলবে এক মাস অর্থাত্ ২২ অগস্ট পর্যন্ত। এত দিন দেওঘরের বৈদ্যনাথ তথা বাবাধাম মন্দিরের শিবলিঙ্গে জল ঢালা হত ‘স্পর্শ’ পদ্ধতিতে। নিরাপত্তার কারণে এ বার প্রথম সেখানে মন্দিরের গর্ভগৃহে পুণ্যার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য প্রশাসন। ফলে এ বছর গর্ভগৃহের বাইরে থেকে ডোঙার মাধ্যমে ভক্তদের শিবলিঙ্গে জল দিতে হবে। নতুন এই ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে ‘অর্ঘ্য’ পদ্ধতি। পশ্চিমবঙ্গের তারকেশ্বরের আদলেই চালু করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। ভক্তদের ঢালা জল পাইপের মাধ্যমে সোজা শিবলিঙ্গের মাথায় গিয়ে পড়বে। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়ে দুর্ঘটনা এড়াতে তারকেশ্বরে শ্রাবণী মেলার সময় পুণ্যার্থীদের মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে যেতে দেওয়া হয় না। তার বদলে মন্দিরের বাইরেই এমন ব্যবস্থা করা হয় যাতে পুণ্যার্থীর ঢালা জল সরাসরি শিবলিঙ্গের মাথায় গিয়ে পড়ে। গর্ভগৃহের বাইরে থাকে তামার ডোঙা। সেই ডোঙায় ভক্তরা জল ঢেলে দেন। জল গিয়ে গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের উপরে পড়ে। তারকেশ্বরের মতো দেওঘরেও প্রতি দিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। এ বার শ্রাবণী মেলায় ও বাবাধাম মন্দির নিরাপত্তার বেড়াজালে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের বেশে মন্দিরের ভিতরে রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশি নজরদারি। মন্দিরের বিভিন্ন কোণে ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি মন্দিরের প্রতিটি প্রবেশপথেই বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টরওয়ালা দরজা। শ্রাবণী মেলায় যাঁরা বাবাধামে আসেন, তাঁরা মূলত বিহারের সুলতানগঞ্জ থেকে গঙ্গার জল নিয়ে প্রায় একশো কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দেওঘরে পৌঁছন। ঝাড়খণ্ড তো বটেই পশ্চিমবঙ্গ, বিহার বা উত্তর প্রদেশের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাবাধামে মানুষ আসেন শিবলিঙ্গে জল ঢালতে। ভিড় সামলাতে এ বার থেকে বারকোড যুক্ত বিশেষ ‘ভিআইপি পাস’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে দেওঘরে। পাস পেতে অনুদান দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। মেলা কমিটির বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বিলি করা হচ্ছে এই পাস। সাধারণ লাইনে দাঁড়ালে যেখানে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে জল ঢালতে ভিআইপি পাসে সেখানে লাগছে অল্প সময়। এক মাস ধরে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী তারকেশ্বরেও শিবলিঙ্গে জল ঢালতে আসেন। শ্রাবণী মেলায় তারকেশ্বর সেজে উঠেছে। রাজ্যের পর্যটন দফতর তারকেশ্বর মন্দিরের প্রবেশপথে বৈদ্যপুর চৌমাথায় বিশাল তোরণ তৈরি করেছে। শ্রাবণী মেলার সময় অসংখ্য মানুষ নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে জল নিয়ে খালি পায়ে হেঁটে তারকেশ্বরে যান। শনি ও রবিবারগুলিতে বৈদ্যবাটি চৌমাথা থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা থাকছে না। যানজট সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।

• মেলার নাম সীতাবরী
রাজস্থানের কিলওয়াড়া থেকে ১ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর সীতাবরী। হিন্দুদের কাছে এই শহরের এক ধর্মীয় গুরুত্ব আছে। শোনা যায়, রাবনের লঙ্কা থেকে সীতাকে উদ্ধার করার পর রাম যখন আবার তাঁকে বনবাসে পাঠালেন, তখন তিনি এখানেই ছিলেন। তাঁর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম সীতাবরী। এখানে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী এক বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়— সীতাবরী মেলা। কথিত আছে, তৃষ্ণার্ত সীতাকে জল পান করানোর জন্য লক্ষ্মণ মাটিতে বাণ নিক্ষেপ করে জলাধার সৃষ্টি করেন। এই জলাধার বা কুণ্ডগুলি আজও রয়েছে সীতাবরীতে। স্থানীয় ভাষায় এগুলিকে ‘লক্ষ্মণ বভুখা’ বলা হয়। এই কুণ্ডে পুণ্যস্নান করে ‘সীতা মাতা’র উদ্দেশে পুজো দিতে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন এখানে। পুণ্যার্থীদের বেশির ভাগই মহিলা। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সীতাবরীতে বেশ বড় এক মেলাও বসে এই সময়। কী নেই সেই মেলায়— পুজোর সামগ্রী, বাহারি পোষাক, স্থানীয় হস্তশিল্পীদের তৈরি চামড়া আর কাঠের উপর নকশা করা ঘর সাজানোর নানান নজরকাড়া সামগ্রী থেকে শুরু করে মুখরোচক খাবারদাবার— প্রায় সবকিছুই। মেলার আর একটি বিশেষত্ব আছে। এর একটা বিরাট অংশ জুড়ে বসে পশুর হাট। মেলার পাশাপাশি পশুহাটে বিক্রির জন্য উট, গরু, ছাগল-সহ নানা গৃহপালিত জীবজন্তুর পসরা দেখার মতো।

• ইরাবতীর তীরে মিঞ্জর মেলা
আমাদের নবান্নের মতো হিমাচল প্রদেশের অন্যতম কৃষিপ্রধান উত্সব মিঞ্জর। প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষ থেকে অগস্ট মাস শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে সাত দিন ধরে হিমাচল প্রদেশের চম্বা উপত্যকায় ‘মিঞ্জর’ মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। ইরাবতী নদী সংলগ্ন এখানকার হরি রাই মন্দির চত্বরে মিঞ্জর উত্সব পালিত হয়। সাত দিন ধরে মন্দিরের চারপাশ জুড়ে বসে বিরাট মেলা। এই সময়টায় যেমন খেত থেকে ভুট্টা তোলার সময়, তেমনই কিছু আঞ্চলিক খরিফ শস্য ঘরে তোলার সময়। আর সেই ফসল তোলাকে কেন্দ্র করেই এক সপ্তাহ ধরে চলে পুজো-পাঠ, উত্সব, নাচ-গান, মেলা। সারা বছরের চাষাবাদ ও কঠিন পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার আনন্দের সঙ্গে মাটির টান মিশে যাওয়ায় কয়েক হাজার গ্রামবাসী মেতে ওঠে হিমাচল প্রদেশের এই নবান্ন উত্সবে। আঞ্চলিক সংস্কৃতির অঙ্গ সমবেত নৃত্যগীত অনুষ্ঠান কুঞ্জর মল্লার এই উত্সবের এক বিশেষ আকর্ষণ। আর পাঁচটা গ্রামীণ মেলার সঙ্গে হয়তো তেমন কোনও তফাত্ নেই এই মিঞ্জর মেলার, তবে এখানকার দরিদ্র মানুষের কাছে এই মেলা ও উত্সবের গুরুত্ব অপরিসীম।

• ঠুমরি উত্সব ২০১৩
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি অন্যতম ধারা হল ঠুমরি। ঠুমরি গানের কথা মূলত দু’টি ভাষায় লেখা— অবধি এবং ব্রিজি। দু’টিই উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন আঞ্চলিক ভাষা। ঠুমরিতে ব্যবহৃত রাগগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিলু, কাফি, খামাজ, ভৈরবির। পুরনো লখনউয়ের নবাব-জলসায় পরিবেশিত এই ঠুমরি স্থান কালের গণ্ডি পেরিয়ে আজও একই ভাবে জনপ্রিয়। আজও এর সুরের নেশায় বুদ হয়ে যান রসিক মানুষ। কাল-প্রজন্মের বাধা পেরিয়ে ঠুমরি আজ তাই উত্সবের চেহারা পেয়েছে খোদ রাজধানী শহর দিল্লিতেই। সাহিত্য কলা পরিষদ এবং রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগে প্রতি বছর অগস্ট মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় ঠুমরি উত্সব। দিল্লির কোপার্নিকাস মার্গের মান্ডি হাউসের কামানি প্রেক্ষাগৃহকে এ বছর চতুর্থ ঠুমরি উত্সবের মঞ্চ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট,—এই তিন দিন ধরে চলবে এই লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহা উত্সব। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিল্পীদের উপস্থিতিতে এই উত্সব সমৃদ্ধ, মুখরিত হয়ে উঠবে। ২০১২ সালের ঠুমরি উত্সবে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, গিরীজা দেবী, শুভা মুদগল প্রমুখ দিকপাল শিল্পীরা। তাঁদের পরিবেশিত ঠুমরির সুর মুর্ছনায় মুগ্ধ হয়েছিলেন শতাধিক শ্রোতা। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও ঠুমরি উত্সবে থাকবেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহাতারকারা— শ্রুতি সাদোলিকর, দেবাশিস দে, অজয় পোহানকর, পণ্ডিত চানুলাল মিশ্র, মৌমিতা মিত্র, কাকলী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতিদিন সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান।

পর্যটন কেন্দ্র
• মেঘমালাইয়ের কোলে
মেঘমালাই— নামটা শুনেই মেঘালয়ের কোনও জায়গার কথা ভাবলে ভুল হবে। মেঘালয় নয় তামিলনাড়ুর থেনি জেলায় পশ্চিমঘাট পর্বতের অংশবিশেষ এই মেঘমালাই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৫০০ মিটার উচ্চতার এই পাহাড়টি ‘হাই ওয়েভি মাউন্টেনস’ নামে যেমন পরিচিত তেমনই একে ‘ল্যান্ড অফ গ্রিন অ্যান্ড ব্লুজ’ও বলা হয়ে থাকে। মেঘমালাইয়ের প্রধান আকর্ষণ চা ও বিভিন্ন ধরনের মশলার বাগান। এখানে রয়েছে জলপ্রপাত, বাঁধ ও রহস্যময়ী অরণ্য। পাহাড়ের বুক চিরে ১৯০ ফুট নীচে পাথরের বুকে আছড়ে পড়া সুরুলি নদীর জোড়া জলপ্রপাতের দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের আপ্লুত করার মতো! সন্ধ্যা নামলেই জলপ্রপাতের কাছে তেষ্টা মেটাতে আসা বন্য প্রাণীদের দেখতে সম্প্রতি রাজ্য বন দফতর ব্যবস্থা করেছে। মেঘমালাই ঘুরতে গিয়ে ভেল্লিমালাইকে ভুললে চলবে না! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৬৫০ মিটার উচ্চতায় মেঘমালাইয়ের প্রাণকেন্দ্রই যে ভেল্লিমালাই। এর অপর নাম ‘দ্য সিলভার মাউন্টেন’। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এখানে মেঘেরা বিশ্রাম নেয়। ভেল্লিমালাইয়ের মানালার বাঁধ থেকে কাম্বান উপত্যকার মনোরম দৃশ্য বড়ই অপরূপ। পর্যটকদের থাকার জন্য পাহাড়ের উপরে কয়েকটি ট্যুরিস্ট লজ ও পঞ্চায়েতের রেস্ট হাউজ আছে। তবে রাত কাটাতে হলে ৩ কিলোমিটার দূরে চিনামানুরে বন দফতরের চেকপোস্ট থেকে অনুমতি নিতে হবে। একটু নিরিবিলি ও কম পরিচিত জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করেন যাঁরা, তাঁদের জন্য মেঘমালাই আদর্শ জায়গা।

• গল্ফের টানে ভিয়েতনামে
গল্ফ খেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের রমরমা বাড়ছে ভিয়েতনামে। কমবেশি প্রায় তিরিশটি গল্ফ কোর্স রয়েছে এখানে। অন্যান্য দেশের তুলনায় সংখ্যাটা নগণ্য হলেও গুণমানে এগুলি পাল্লা দিতে পারে বিশ্বের যে কোনও গল্ফ কোর্সের সঙ্গে। বিশেষত দানাং শহরের মন্টগোমারি লিঙ্কস ও দানাং গল্ফ ক্লাবের মতো বিশ্বমানের গল্ফ কোর্সের টানে এখানে পাড়ি জমাচ্ছেন বহু মানুষ। ফলে ইউনেস্কো স্বীকৃত এ দেশের ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলি ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা ছাড়াও এই গল্ফ কোর্সগুলির জন্যও চাঙ্গা হচ্ছে ভিয়েতনামের পর্যটন শিল্প। গত জুন মাসের গোড়ায় দুবাই থেকে হো চি মিন শহরে এমিরেট এয়ারলাইন্সের প্রাত্যহিক উড়ান চালু হয়েছে। আর তার পর থেকেই এশিয়া ও ইউরোপের গল্ফপ্রেমী পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। ওই দুই গল্ফ কোর্সের বিপনণের দায়িত্ব থাকা গল্ফ কোস্ট ভিয়েতনামের কো-অর্ডিনেটর জন টমলিনসন এমিরেটের উড়ান শুরু হওয়ায় ভীষণ খুশি। তাঁর মতে উড়ান চালু হওয়ায় বিশ্বমানের গল্ফের টানে পর্যটনের নয়া আকর্ষণ হয়ে উঠছে ভিয়েতনাম। মন্টগোমেরি লিঙ্কস-এর কোর্সটির পরিকল্পনা করেছেন আট বারের ইউরোপিয়ান অর্ডার অফ মেরিট বিজেতা বিশ্বখ্যাত স্কটিশ গল্ফার কলিন মন্টগোমেরি। অন্য দিকে দানাং গল্ফ ক্লাবের নকশার দায়িত্বে ছিলেন ব্রিটিশ ওপেনের প্রাক্তন বিজেতা কিংবদন্তী গল্ফ খেলোয়াড় গ্রেগ নরম্যান। ‘ইউএস গল্ফ ডাইজেস্ট’ পত্রিকার বিচারে এরই মধ্যে গত মে মাসে দানাং ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের সেরা নকশাওয়ালা গল্ফ কোর্সের শিরোপা। এ ছাড়াও ভিয়েতনামে নিক ফালডোর পরিকল্পনায় ‘লেগুনা ল্যাং কোং’ নামে আরও একটি গল্ফ কোর্স শুরু হবে এ বছরের শেষে। ভিয়েতনামের অসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ আশা করছে আগামী দু’বছরের মধ্যে অন্তত ৩৪-৩৬ মিলিয়ন পর্যটক আসবে এ দেশে।

• সিঙ্গাপুরে নয়া উদ্যোগ পর্যটনে
সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন পর্যটনস্থলগুলি ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে সে দেশের সরকার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ইউনিভার্সাল স্টুডিও সিঙ্গাপুর, মেরিন লাইফ পার্ক ও মান্দাইয়ের রিভার সাফারি। রিসর্ট ওয়ার্ল্ড সেন্টোসার ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও সিঙ্গাপুর’-এর নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোরকদমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখানকার ‘রাইড’-এর সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৪ যার মধ্যে ১৮টি ‘রাইড’ এক্কেবারে নতুন, যা সিঙ্গাপুরে আগে কথনও ছিল না। ২০১১ সালে রেকর্ড সংখ্যক অর্থাত্ প্রায় ১৯ মিলিয়ন পর্যটক এখানে এসেছিলেন। নয়া নিমার্ণের ফলে এই থিম পার্কে বছরে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন ভ্রমণার্থী আসবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত এই থিম পার্ক ছাড়াও ‘মেরিন লাইফ পার্ক’টিকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। অন্য দিকে মান্দাইয়ের ‘রিভার সাফারি’তে জায়ান্ট পান্ডার জন্য একটি বিশাল ঘেরা অঞ্চল তৈরি করা হবে। মোদ্দা কথা, সিঙ্গাপুরের পর্যটনশিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

• পর্যটন প্রসারে মায়ানমার
পর্যটনের প্রসারে সম্প্রতি একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মায়ানমার সরকার। এর ফলে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি মজবুত হবে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিও। বহু বছর সামরিক শাসনের পর ২০১১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় এ দেশে। কিন্তু অপশাসন ও আন্তর্জাতিক স্তরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ফলে শুরুর দিকে ভেঙে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। ক্ষমতায় আসার পর এই নতুন পরিকল্পনার ফলে অর্থনীতিতেও জোয়ার আসবে বলে মনে করছে সে দেশের সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী মায়ানমারে উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে প্রায় পাঁচশো মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে ম্যান্ডালে ও নেপিইডও বিমানবন্দরের পরিকাঠামোগত নির্মাণ কাজ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থলের উন্নয়ন। এই খাতে ঋণ দিয়েছে নরওয়ে সরকারের তরফে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)। তাদের তরফে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, নয়া এই পরিকল্পনায় পর্যটনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মায়ানমারে কর্মসংস্থানও বাড়বে, সংখ্যাটা প্রায় ১.৪ মিলিয়ন। অর্থনৈতিক উন্নতি ছাড়াও এর ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারও হবে। এডিবি-র আশা, ২০২০ সালের মধ্যে বছর প্রতি ৭.৫ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন ঘটবে মায়ানমারে, এখনকার তুলনায় সেটা প্রায় সাত গুণ বেশি। মায়ানমারের হোটেল ও পর্যটনমন্ত্রী টায় অং জানিয়েছেন, নয়া এই পরিকল্পনার ফলে দেশের পরিবেশ ও ঐতিহ্যের কোনও ক্ষতি হবে না। সরকার সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন।

পরিষেবা
• পাকিস্তান থেকে কাশগড়ে নতুন উড়ান
রায়ান এয়ার ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স সংক্ষেপে পিআইএ-র যৌথ উদ্যোগে নতুন উড়ান চালু হল চিনা শহর কাশগড়ে। ১৪ অগস্ট প্রথম উড়ান চালু হয়েছে। বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, প্রতি বুধবার ইসলামাবাদ থেকে কাশগড় উড়ে যাবে পিকে ১৮৫৫ ও ১৮৫৬—দু’টি বিমান। পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে তুলতেই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের এই উদ্যোগ বলে সে দেশের বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এই উড়ান শুধুমাত্র আয়ই বাড়াবে না, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক দৃঢ় করবে বলে জানান পিআইএ-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহম্মদ জুনেইদ ইউনুস। তিনি আরও জানিয়েছেন, নতুন নতুন পথে পরিষেবা চালু করার পাশাপাশি লাভজনক পথগুলিতে উড়ানের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। অন্য দিকে আগামী ১ নভেম্বর থেকে কেরলের বেসরকারি বিমান সংস্থা কৈরালি এয়ারলাইন্স তাদের পরিষেবা চালু করছে। সংস্থার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কে কে প্রবীণকুমার জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তিরুঅনন্তপুরম, কোচি এবং কোঝিকোড় বিমানবন্দর থেকে এই সংস্থা পরিষেবা শুরু করছে। মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, ম্যাঙ্গালোর এবং লাক্ষাদ্বীপ থেকে অন্তর্দেশীয় উড়ানের সুবিধা মিলবে। শুরুতে কিছু বিমান কিনে ও কয়েকটি ভাড়া নিয়ে পরিষেবা শুরু করা হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রবীণকুমার আরও জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতেও পরিষেবা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে পরিষেবা দেওয়া অন্তর্দেশীয় বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় অন্তত ২৫ শতাংশ কম ভাড়ায় কৈরালি এয়ারলাইন্সে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবে বলে আশা সংস্থাটির।

• ট্রেনে বসেই এ বার বিরিয়ানি-পিত্জা-পাস্তা
ট্রেনে সফর কালে অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীদের ইচ্ছে করে একটু অন্যরকম খাবারের স্বাদ পেতে। যাত্রীদের সেই ‘চাহিদা’র কথা মাথায় রেখে দিল্লি-জম্মু ও দিল্লি-অমৃতসর রুটে এক অভিনব পরিষেবা চালু করছে উত্তর রেলওয়ে। রেল মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, বিরিয়ানি, পিত্জা, পাস্তা, বার্গার বা স্যান্ডউইচের মতো খাবার যা ট্রেনের ‘প্যান্ট্রি’তে পাওয়া যায় না, যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এ বার সে সমস্ত খাবারই ট্রেনে পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু ‘ফুড চেইন’ সংস্থার সঙ্গে ইতিবাচক কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ট্রেনে ওঠার আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করলে ট্রেনের যাত্রীদের আসনেই খাবার পরিবেশিত হবে। দাম মেটানো যাবে খাবার হাতে পাওয়ার পর। আইআরসিটিসি-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিষেবার জন্য একটি ভিন্ন ‘ওয়েবসাইট’ তৈরি করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে, রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এবং শতাব্দীর মতো ট্রেনগুলিতে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। কারণ এই সমস্ত ট্রেনে টিকিটের দামের সঙ্গেই পরিবেশিত খাবারের দাম ধার্য করা থাকে।

• ফের কলকাতা-শিলং বিমান পরিষেবা
গত জানুয়ারি মাসে অনিবার্য কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকাতা ও শিলং-এর মধ্যে বিমান পরিষেবা ফের শুরু করল এয়ার ইন্ডিয়া। গত ১০ জুলাই বুধবার দুপুর ১২.১৫ তে কলকাতা থেকে শিলং-এর উদ্দেশে রওনা হল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই-৯৭১১। এই পরিষেবা পুনরায় শুরু হওয়ায় স্বভাবতই উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুগম হল। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি সোম, বুধ, বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার— সপ্তাহে পাঁচ দিন কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১২.১৫ তে শিলং-এর উদ্দেশে রওনা হবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই-৯৭১১। ফিরতি পথে দুপুর ২.১৫ তে বিমানটি শিলং ছেড়ে কলকাতা পৌঁছবে বিকেল ৩.৫৫ তে।

• রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ততে বাড়তে পারে খাবারের দাম
দেশের সমস্ত রাজধানী এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস ও দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় রেল। প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী, এসি ২ এবং ৩ টিয়ার এবং চেয়ার কারে ভ্রমণরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে খাবারের দাম বাড়ানোর পরিমাণ বেশি হতে পারে। তুলনায় কম বাড়বে এসি ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রীদের ক্ষেত্রে। রেল সূত্রে খবর, খাবারের দাম বাড়ানোর ফলে টিকিটের দাম বাড়ানো হবে কি না তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এই ট্রেনগুলিতে টিকিটের দামের সঙ্গে ট্রেনে পরিবেশিত খাবারের দাম ধার্য করা থাকে। গত দশ বছর যাবত খাবারের দাম বাড়ায়নি রেল। তবে এখন খাবারের মান উন্নত করতে গেলে দাম বাড়ানোটা যে জরুরি সেটা বুঝেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এসি ২ ও ৩ টিয়ার এবং চেয়ার কারে দাম বাড়তে পারে ৮৮ টাকা থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত। তবে এসি ফার্স্ট ক্লাসে সে তুলনায় অনেকটাই কম বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। যদিও গোটা ব্যাপারটি এখন রেলমন্ত্রী সিপি জোশির বিবেচনাধীন।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ