১ আষাঢ় ১৪১৯ শুক্রবার ১৫ জুন ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।

ঐতিহ্য
• গদি হারানোর মুখে আমেরিকার আবিষ্কর্তা
আমেরিকা— নামটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জুড়ে গিয়েছিল ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নাম। পৃথিবীর চোখে আমেরিকাকে পরিচিতি দিয়েছিলেন তো তিনিই। কিন্তু আমেরিকার আবিষ্কারকের গদি বোধহয় এ বার টলমল। সৌজন্যে, ইতিহাসের স্তূপ ঘেঁটে গবেষকদের আবিষ্কার করা কয়েকটি চিঠি আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সম্প্রতি গবেষণা পত্রিকা হিস্টোরিক্যাল রিসার্চে ইতিহাসবিদ ফ্রান্সেসকো গুইডি ব্রুসকোলির আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষক দাবি করেছেন, কলম্বাস নয়, বরং জনৈক ইতালীয় ব্যবসায়ী জন ক্যাবোটই প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেন। এত দিন জানা ছিল, ১৪৯২ সালে ক্যারিবীয় উপকূলে পা রাখেন কলম্বাস। তবে তিনি আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছেছিলেন অনেক বছর পরে। ১৪৯৮-এ। ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইতিহাসবিদ ব্রুসকোলি একটি সংগ্রহশালা থেকে কয়েকটি চিঠি খুঁজে পান। এর মধ্যে জিওভানি ক্যাবোত্তে তথা জন ক্যাবোটকে লেখা ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরির একটি চিঠি রয়েছে। সেই চিঠিতে ক্যাবোটকে ‘দ্য নিউ ল্যান্ড’ খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তাঁকে ৫০টি রাজকীয় মুদ্রা (স্টার্লিং) দক্ষিণাও দেওয়া হয়েছে। এর পরেই ১৪৯৬, ১৪৯৭ ও ১৪৯৮ সালে তিন বার ব্রিস্টল থেকে ‘নিউ ল্যান্ড’-এর উদ্দেশে পাড়ি দেন। নথি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ১৪৯৭ সালে ‘নিউ ফাউন্ডল্যান্ডে’ তিনি পদার্পণও করেন। ব্রুসকোলির মতে এই ‘নিউ ল্যান্ড’ বা ‘নিউ ফাউন্ডল্যান্ড’-ই আজকের আমেরিকা। অর্থাৎ কলম্বাসের এক বছর আগেই আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছেছিলেন ক্যাবোট।

• ২৫০ বছর পরেও জনপ্রিয় স্যান্ডউইচ
স্যান্ডউইচ ভালবাসেন এমন মানুষ গোটা বিশ্বে নেহাত কম নেই। আর বয়সও কম হল না এই জনপ্রিয় খাবারটির। সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী স্যান্ডউইচের ২৫০তম জন্মদিন পালন করল ব্রিটেনের স্যান্ডউইচ শহর। তার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিশাল অনুষ্ঠানেরও। ১৭৬২ সালে এই শহরেই খাওয়া হয়েছিল প্রথম স্যান্ডউইচটি। আজও সেই শহরে মন্টেগু বংশের আর্লডম (সামন্ত-শাসন) প্রতিষ্ঠিত। যদিও তা রাজবংশের মতোই প্রতীকী। তবে ২৫০ বছর আগে সেই বংশেরই চতুর্থ আর্ল প্রথম স্যান্ডউইচটি খেয়ে বিশ্বের খাদ্য রসিকদের খাবার তালিকায় এই অভিনব ‘স্ন্যাক্স’-টির সংযোজন করেন। স্যান্ডউইচের জন্মকাহিনিও বেশ মজার। বন্ধুদের সঙ্গে বসে খোশমেজাজে তাস খেলছিলেন চতুর্থ আর্ল। খেলা ছেড়ে যাতে উঠতে না হয়, সেই জন্য দু’টি পাউরুটির মাঝখানে রোস্ট করা গরুর মাংস দিয়ে পরিবেশন করার আদেশ দেন তিনি। তাঁর বন্ধুরাও স্যান্ডউইচের মতো ওই খাবারই খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ ভাবেই জন্ম এবং নামকরণ হয়েছিল সবার প্রিয় স্যান্ডউইচের।

• ম্যান্ডেলা মামলার নথি সংরক্ষণ
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার ১৯৬৪ সালের মামলার সমস্ত নথিপত্র সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। এই মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল ম্যান্ডেলার। ওই মামলায় বিচার হয়েছিল আরও দশ জনের। মামলা চলাকালীন ম্যান্ডেলা যে ভাষণ দিয়েছিলেন, পরবর্তী কালে তা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের ইস্তাহার হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৬৪-র সেই ঐতিহাসিক মামলার নথিপত্র-সহ তাঁর লেখা বহু চিঠিপত্র, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। গোটা প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সাহায্য করবে গুগল। গুগলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ম্যান্ডেলার জীবনের উপর একটি ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি করেছে ‘দ্য নেলসন ম্যান্ডেলা সেন্টার অফ মেমরি ইন মার্চ’ নামক দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংস্থা। সংস্থার প্রধান ভার্ন হ্যারিস জানিয়েছেন, ‘‘এই মামলার খুবই কম সংখ্যকই নথি পাওয়া গিয়েছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘‘বর্ণবৈষম্য-বিরোধী বহু রাজনৈতিক মামলার নথিপত্র নষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে যা কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে, তা সংরক্ষণ করা হবে।’’

• হেরিটেজ মিউজিয়াম
ভারতে প্রথম মিউজিয়াম স্থাপিত হয় ১৮১৪ সালে। ঐতিহাসিক বস্তু সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড কার্জনের উদ্যোগ ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯০৪ সালে তাঁরই আগ্রহে ঐতিহাসিক ‘অ্যানসেন্ট মনুমেন্টস অ্যাক্ট’ পাশ হয়েছিল। প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বে বাংলার অন্যান্য অংশের মতো উত্তরবঙ্গেও বেশ কিছু মানুষ ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্র। তাঁর উদ্যোগে এবং দিঘাপতিয়ার কুমার শরৎকুমার রায়ের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি ও সংগ্রহশালা’। ১৯৬৫-তে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিনয়েন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা স্থাপিত হয়। এর নামকরণ হয় অক্ষয়কুমার মৈত্রের নামে। সেটি-ই পরবর্তীতে নাম সামান্য পরিবর্তন করে হয় ‘অক্ষয়কুমার মৈত্র হেরিটেজ মিউজিয়াম’। সংযোজিত অংশটি ‘রাজারাম কালেকশন’। এটি মালদহের শ্রীশান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরীর ব্যক্তিগত সংগ্রহ। মিউজিয়াম গ্যালারিতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের ছবি। কষ্টি পাথর, বেলে পাথরের তৈরি পাল-সেন যুগের বিষ্ণু, সূর্য, মনসা, দুর্গা ও অষ্টধাতুর মূর্তি। আছে দারু নির্মিত মুখোশ, দোতারা, সারেঙ্গি ইত্যাদি লোকশিল্প, তুলট ও তালপাতার পুঁথি, টোরাকোটার সংগ্রহ, মুদ্রা এবং অন্যান্য দলিল-দস্তাবেজ, পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্র ও অন্যান্য পুরাবস্তুর সংগ্রহ।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• মায়া সভ্যতার শিল্প নিদর্শন ও পঞ্জিকা
গুয়েতেমালার উত্তরাঞ্চলে জুলথুনের ‘আর্কিওলজিক্যাল সাইট’-এ মায়া সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন উদ্ধার হয়েছে। অন্যান্য বস্তু ছাড়াও জুলথুনের ধ্বংসস্তূপে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে মায়া সভ্যতার একটি পঞ্জিকা। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এই পঞ্জিকাটি নবম শতকের প্রথম দিককার। এখনও পর্যন্ত পাওয়া মায়া-পঞ্জিকার মধ্যে এটি-ই সবথেকে পুরনো। জানা গিয়েছে, এই রকমের একটি পঞ্জিকাতেই ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল— ২০১২-তে পৃথিবী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে! খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার সালে মধ্য আমেরিকা দখল করেছিল মায়ানরা। পঞ্চদশ শতক ও তার পরবর্তী কালে স্পেনীয় ঔপনিবেশিকতার প্রভাবে ধীরে ধীরে এই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯১২ সালে সর্বপ্রথম জুলথুনের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলে। ১৯৭০ সালে এই ধ্বংসাবশেষের কাঠামোগত মানচিত্র প্রায় অনেকটাই তৈরি করা হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখানে ৩৫ মিটার উঁচু একটি পিরামিড আবিষ্কার করেছেন। অবশ্য এখনও প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সন্ধান কার্য বাকি রয়েছে। এখানে এমন তিনটি ঘর পাওয়া গিয়েছে যার চারটে দেওয়াল ও ছাদগুলি প্রায় অক্ষত এবং সেখানে আঁকা রয়েছে প্রচুর ছবি। পঞ্জিকাগুলি মায়া-হরফে দেওয়ালের গায়েই খোদাই করা ছিল। এই পঞ্জিকায় প্রায় ৭ হাজার বছরের ভবিষ্যত লেখা আছে!

• মিলল শেক্সপিয়রের থিয়েটার
পোশাকি নাম তার ‘কার্টেন থিয়েটার’, আসলে সে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের নাট্যকর্মের অন্যতম ‘মঞ্চ।’ লন্ডনের অদূরে শোর্ডিচে সেই কার্টেন থিয়েটারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে মিউজিয়াম অফ লন্ডন আর্কিওলজি (মোলা)। এই থিয়েটারেই প্রথম অভিনীত হয়েছিল শেক্সপিয়র রচিত ‘হেনরি ৫’ নাটক। সেখানেই কার্টেন থিয়েটারকে ‘দিস উডেন ও’ নামে পরিচিতি দিয়ে যান স্বয়ং শেক্সপিয়র। মোলার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শোর্ডিচে মাটির তিন মিটার নীচে পাওয়া গিয়েছে থিয়েটারের মঞ্চ এবং গ্যালারির কিছু অংশ। ২০১২-র শেষ দিক থেকে শুরু হবে পুরোদস্তুর খননকাজ। ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হবে এটি। মোলার এক মুখপাত্রের কথায়, “গোটা জিনিসটা অদ্ভুত সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। শেক্সপিয়রের অন্য থিয়েটারগুলোর তুলনায় এর অবস্থা অনেক ভাল।” কিন্তু ঠিক কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই কার্টেন থিয়েটার? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৫৭৭ সালে খোলা হয়েছিল কার্টেন থিয়েটার। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জেমস বারবেজ। ১৫৯৭ থেকে ১৫৯৯ পর্যন্ত কার্টেন থিয়েটার ছিল ‘লর্ড চেম্বারলিনস মেন’ নাট্যদলের প্রধান আখড়া। সেই দলেরই সদস্য ছিলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়র। কারও কারও মতে ‘হেনরি ৫’ ছাড়াও শেক্সপিয়র রচিত ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ও প্রথম অভিনীত হয়েছিল এখানেই।

• ‘বেথলেহেম’ মুদ্রা
দু’হাজার সাতশো বছরের পুরনো মুদ্রা খুঁজে পেলেন ইজরায়েলি প্রত্নতত্ত্ববিদরা। বেথলেহেম নামের মাটির তৈরি এই মুদ্রাটি খুঁজে পাওয়ায় একটি বিষয় পরিষ্কার, যিশুর জন্মের বহু বছর আগে থেকেই বেথলেহেম শহরের অস্তিত্ব ছিল। জেরুজালেমের পুরনো শহরের একটি এলাকায় খনন কাজের পর ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছিল। সেখানেই মাটির মুদ্রাটি হঠাত্ই পাওয়া যায়। মুদ্রার গায়ে প্রাচীন হিব্রু ভাষায় ‘ইন দ্য সেভেন্থ’, ‘বেথলেহেম’ ও ‘টু দ্য কিং’ এই তিনটি লাইন খোদিত আছে। ইজরায়েলি পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফ থেকে এই খনন কাজের নেতৃত্বে থাকা এলি শুকরন এই মুদ্রাটি পরীক্ষার পর জানিয়েছেন, ‘‘মনে হচ্ছে কোনও রাজার শাসনকালের সপ্তম বছরে বেথলেহেম থেকে জেরুজালেমের সম্রাটের উদ্দেশে সপ্তম বা অষ্টম শতকীয় খ্রিস্টপূর্বে একটি জাহাজ রওনা হয়েছিল।’’ এই রাজার নাম নিয়ে যদিও সংশয়ে রয়েছেন এলি। তাঁর মতে এই রাজার নাম হতে পারে হাজেকিয়াহ বা মানাশেহ অথবা জোসাইয়াহ।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• ভূমিক্ষয়-রোধী উদ্ভিদ ধ্বংস অবাধে, সঙ্কটে সৈকতকেন্দ্র
দিঘার লাগোয়া সৈকত পযর্টনকেন্দ্র মন্দারমনির সমুদ্র সৈকতে অবৈধ নির্মাণ, সমুদ্রতটে মোটরযান চলাচল, আর প্রশাসনিক উদাসীনতার জেরে ভূমিক্ষয়-রোধকারী উদ্ভিদের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে কমছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একটি গবেষকদল। অধ্যাপক অমলকুমার মণ্ডল এবং সংযুক্তা পারুইয়ের অধীনে এক দল তরুণ গবেষক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভিতরকণিকা থেকে চাঁদবালি, তালসারি, উদয়পুর, দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর ও মন্দারমনি পর্যন্ত ৩২৫ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকায় গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা লক্ষ করেছেন, তাজপুর ও মন্দারমনি সৈকত এলাকায় জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটছে খুবই দ্রুততার সঙ্গে। অমলকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, “সমুদ্রতীরের ভূমিক্ষয়-রোধকারী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ আইপোমিয়া বাইলোবা ও স্পিনিফেক্স স্কোয়ামোসাস— যা সৈকতের বালির মধ্যে কার্যত মুখ গুঁজে থাকে—তা সমুদ্রতীরে হোটেল-রিসর্ট গড়ার জন্য কোথাও ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আবার কোথাও পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। যদিও এরা সমুদ্রতীরে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মায়।” দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর বা উদয়পুরে সুন্দরবন বা ভিতরকণিকার মতো ম্যানগ্রোভের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু ম্যানগ্রোভ অ্যাসোসিয়েটেড অঞ্চল হিসেবে এই সব এলাকায় ‘অ্যাকানথাস ইলিসিফোলিয়াস’, ‘প্যান্ডানাস ফেসিকুলারিস’, ‘কৃনাম’, ‘কেনাভেলিয়া লিনেটা’, ‘কেনাভেলিয়া চাইনেনসিস’ প্রভৃতির সঙ্গেই রয়েছে ‘আইপোমিয়া বাইলোবা’ ও ‘স্পিনিফেক্স স্কোয়ামোসাস’ উদ্ভিদ। যারা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভূমিক্ষয় রোধ করতে পারে। কিন্তু এই সব জায়গায় এই দুই উদ্ভিদের যে বীজ উৎপন্ন হয়, সে-গুলি অঙ্কুরিতই হতে পারছে না মানুষের নানা অত্যাচারে। এমনকী বিলুপ্ত হতে বসেছে সৈকতে বিচরণকারী লাল-কাঁকড়ার প্রজাতিও।

• রোগা হতে ‘ডায়েট’ করছে এ বার বেড়াল
চেহারা নিয়ে চিন্তিত স্পঞ্জ বব। তাই এ বার সে-ও ‘স্লিম’ হতে চায়। সর্ব সাকুল্যে তার ওজন ১৩.৫ কিলোগ্রাম। কিন্তু মার্জার বাহিনীর হৃষ্টপুষ্টতম সদস্য হওয়ার রেকর্ডটি আপাতত তারই। রোগা হওয়ার জন্য এ বার সে শুরু করেছে ব্যায়াম আর ‘ডায়েট’। এই কাজে ন’বছরের বেড়াল ববকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে আমেরিকার ‘অ্যানিমাল হাভেন’ নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর কেন্দ্রা মারা জানিয়েছেন, ওকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রোটিন জাতীয় খাবার। এখন ববের খাবারের তালিকায় রয়েছে মুরগির মাংস, মাছ, নানা ধরনের সব্জি। তবে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একদমই বাদ। খাওয়ার পাশাপাশি করা হয়েছে তার ব্যায়ামের ব্যবস্থাও। তবে একটু অন্য ভাবে। এমনিতেই মোটাসোটা বব খুব একটা নড়তে-চড়তে পছন্দ করে না। তাই মাঝে মধ্যে সারা ঘরে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে খাবারের ছোট ছোট টুকরো। আর সেগুলি খেতে বাধ্য হয়েই সারা ঘর জুড়ে হাঁটতে হচ্ছে স্পঞ্জ ববকে। ফলে দু’মাসের মধ্যেই এক কিলোগ্রাম মতো ওজন কমেছে তার। সংস্থাটির কর্মীরা আশাবাদী, এই পদ্ধতিতে প্রতি মাসে তার ওজন ঝরবে দ্রুত। আর এই গতিতে চলতে থাকলে আট মাসের মধ্যেই একদম স্লিম হয়ে যাবে সে। তখন হয়তো নিজের মতোই খোশমেজাজি কোনও পরিবারে গিয়ে মহা আদর-যত্নে থাকবে বব।

• তথ্যচিত্র ‘ভালচারস অন রানি’
নবেন্দ্যু ঘোষকে মেখলিগঞ্জ চেনে অপরিচিত ভারসাম্যহীনদের-এর পাশে দাঁড়ানো এক তরুণ হিসেবে। সেই তরুণই চমকে দিলেন ১৪ দিনে ২৩ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে। ফিল্ম ডিভিশন অব ইন্ডিয়া, মুম্বইয়ের প্রযোজনায় নির্মিত এই তথ্যচিত্রটির বিষয়: শকুনের হারিয়ে যাওয়া। অসমের জোড়াশাল রিজার্ভ ফরেস্টের রানিতে রয়েছে শকুনের ক্যাপটিভ ব্রিডিং সেন্টার। নব্যেন্দু জানালেন, বোম্বে ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটি (বিএনএইচটিএস) হরিয়ানার পিঞ্জর, অসমের রানি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজাভাতখাওয়ার শকুন প্রজনন কেন্দ্রটি দেখভাল করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সহায়তায়। বিশেষজ্ঞদের মতামত উপস্থাপন করে তিনি তথ্যচিত্রটিতে দেখিয়েছেন যে ডাইক্লোফেনাক নামের এক ধরনের রাসায়ানিকই শকুন হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। ‘স্লেন্ডার বিলড’ এবং ‘হোয়াইট ব্যাকড’ প্রজাতির শকুন ছাড়াও তিনি তথ্যচিত্রটিতে তুলে ধরেছেন ‘হিমালয়ান গ্রিফন’ প্রজাতির শকুনদের কথা। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে শকুনের জুড়ি মেলা ভার। তাদের হারিয়ে যাওয়া এবং কী ভাবে অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়া থেকে তাদেরকে রক্ষা করা যায়, তার উপর নির্মিত এই তথ্যচিত্রটি।

• সাপ নিয়ে কর্মশালা
কোনও সাপকে লোকালয় থেকে উদ্ধার করে বন দফতর বা বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্মীরা সাধারণত সেই সাপটিকে দূরের কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসেন। এই প্রবণতাকে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে দাবি করলেন বিশেষজ্ঞরা। সাপকে দূরের এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হলে আশি শতাংশ ক্ষেত্রেই সাপের মৃত্যু হয়। যার ফলে পরিবেশগত বাস্তুতন্ত্রে খারাপ প্রভাব পড়ছে। একটি সাপ লোকালয়ে ধরা পড়লে সেটিকে এলাকার জনবিরল বা ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ জনবহুল এলাকাতেই সাপ থাকে। তারা সাধারণত প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে না। কখনও মানুষের আঘাত পেয়ে বা অন্য কোনও বিশেষ কারণে সাপ বের হয়ে পড়ে। সেই সাপকে ধরে দূরের কোনও এলাকায় ছেড়ে আসলে সে তার মানানসই পরিবেশ পায় না। তার সঙ্গীদেরও খুঁজে পায় না। নতুন এলাকায় খাবারের সঙ্গেও তার স্বাভাবিক পরিচিত ঘটে না। তাই তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ কথা জানালেন সর্প এবং সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ রেজি মার্টিন। বেঙ্গালুরুর এই সর্প বিশেষঞ্জ তাঁর এক ব্রিটিশ সঙ্গীকে নিয়ে সম্প্রতি অরুণাচলে সমীক্ষার কাজ করেছেন। সেখান থেকে তাঁরা জলপাইগুড়ি জেলায় আসেন। জলপাইগুড়ির প্রয়াস হলে বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, এনসিসি সদস্যদের নিয়ে একটি কর্মশালা করেন তিনি।

পার্বণ
• গরু দেখে চাঁদা ধার্য হয় রামপুরের পুজোয়
গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা মন্দিরেই পুজো হয় মা শীতলার। কিন্তু আড়ম্বরে দুর্গা পুজোর থেকে কোনও অংশে কম যায় না দুবরাজপুরের রামপুর গ্রামের শীতলা পুজো। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার দিনভর চলে পুজোপাঠ, হোম। সেবাইত থাকলেও এই পুজো বর্তমানে সর্বজনীন। সব চেয়ে বেশি ধুম হয় যখন মন্দির থেকে শীতলার শীলামূর্তি শোভাযাত্রা সহযোগে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয়। অন্য দিকে, মন্দির ঘিরে বসে এক দিনের মেলা। ভিড় জমান ওই গ্রাম-সহ আশপাশের অন্যান্য গ্রামের মানুষজনও। যত ক্ষণ না পুজো হচ্ছে গোটা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই উপোস করে থাকেন। তবে সবচেয়ে অভিনব— এই পুজোকে ঘিরে চাঁদা তোলার পদ্ধতি। যে পরিবারে যতগুলি গরু আছে, সেই পরিবারে গরু প্রতি ১৫ টাকা করে চাঁদা ধার্য করা হয়। সেবাইত পরিবারের দুই সদস্য ফটিক সূত্রধর ও সনাতন সাহাদের কথায়, “এক সময় গ্রামে প্রচুর গরু মারা যেত। গরুগুলি যেন সুস্থ থাকে, গ্রামের শীতলা পুজোয় গরু পিছু দু-আনা করে চাঁদা দেওয়ার কথা স্থির করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর বহু বছর আগেকার সেই নিয়ম আজও চলে আসছে। পুজোর খরচের ক্রমবর্ধমান হারের কথা ভেবে ধীরে ধীরে চাঁদার পরিমাণ বেড়েছে। তবে এই বিষয়ে গ্রামবাসীদের কোনও আপত্তি নেই।”

• শোলার মালায় বন্ধুতার উৎসব চন্দ্রকোনার গ্রামে
শোলার মালা পরালেই নতুন বন্ধু। সাক্ষী মা মনসা। এ ভাবেই হাজার হাজার মানুষ বন্ধুতার সম্পর্কে বাঁধা পড়েন। দু’বছরের শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নতুন বন্ধুর খোঁজে ঘুরে বেড়ান মিষ্টির প্যাকেট ও শোলার মালা হাতে। মনের মতো বন্ধুর সন্ধান পেতেই মনসার সামনে গিয়ে মালা বদল আর মিষ্টিমুখ। যিনি মন মতো বন্ধু পেলেন না, তিনিও নিরাশ হন না। মা মনসাকেই শোলার মালা পরিয়ে বন্ধু হিসেবে বরণ করে নেন। এমনই এক বন্ধুতার উৎসব হয়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানা এলাকার পরমানন্দপুর গ্রামে। উৎসবের নাম ‘সইলা’। সই অর্থাৎ বন্ধু থেকেই শব্দটির জন্ম। ‘সইলা’ নিয়ে নানা জনশ্রুতিও রয়েছে। গ্রামে রঙ্কিনী দেবীর মন্দির রয়েছে। সেখানেই রয়েছে শিব ও মনসার মূর্তি। কথিত আছে, পুরোহিতকে স্বপ্ন দিয়ে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেবী মনসা। আর তার পরই গ্রামে হয় ‘সইলা’। বেশ কয়েক বছর পর পর জ্যৈষ্ঠ মাসে কালীপুজোর পর দিন এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। রীতিমতো মেলা বসে যায়। আশপাশের ২০-২৫টি গ্রাম তো বটেই দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন।

• নাগৌর মেলা
নাগৌর রাজস্থানের একটি ছোট্ট শহর। জয়পুর, জোধপুর, জয়সলমীর, বিকানির-এর মতো উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রগুলির অদূরেই অবস্থিত নাগৌরের আকর্ষণ সারা বছর পর্যটকদের কাছে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন-চার দিন এই শহরটিই যেন হঠাৎ জেগে ওঠে। এই সময় পর্যটক, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে রাজস্থানের বাকি শহরগুলিকে টেক্কা দেয় সে। কারণ এই সময় নাগৌর শহরে অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর বৃহত্তম পশু বিপনন উৎসব— নাগৌর মেলা। এ বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গবাদি পশু, উট-সহ আরও কত কী— হাজারে হাজারে জড়ো হয় এই চার দিনের মেলায়। ২০১১ সালের স্থানীয় সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৭০ হাজার গবাদি পশু এবং ২৫ হাজার উট এই মেলা থেকে বিক্রি হয়েছে। মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব তাই অপরিসীম। পশু বিপননের সঙ্গে সঙ্গে নাগৌরের বিখ্যাত শুকনো লঙ্কা, চামড়ার বিভিন্ন জিনিস, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী গয়না এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। পাশাপাশি মেলার অন্যতম আয়োজন— সুফি সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং তার সঙ্গেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত-ভজন, যা নাগৌর মেলার পরিবেশকে সঙ্গীতমুখর করে তোলে। সব মিলিয়ে এই মেলা সারা বছর ঘুমিয়ে থাকা শহরকে কোনও এক অজানা জাদুকাঠির স্পর্শে জাগিয়ে তোলে, মাতিয়ে তোলে, করে তোলে উৎসবের প্রাণকেন্দ্র।

• ঝাপান উৎসব
হিন্দু ধর্মের এক দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় প্রতি বছর অগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় এক ধর্মীয় উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়— ‘ঝাপান উৎসব’। শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে দেবী মনসার আরাধনা, পুজোর পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে বাঁকুড়ার অসংখ্য মানুষ। এই দিন ঘরে ঘরে দেবী মনসার মূর্তি প্রতিষ্ঠা, দেবীর পুজো সহযোগে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চলতে থাকে। যে হেতু ‘মনসা’ সাপের দেবী রূপে পরিচিত, তাই এ দিন সাপের বন্দনা, সাপের খেলা, সাপকে ভোগ নিবেদন— এইসবের আয়োজন করা হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলাগুলি নিতান্তই সাধারণ ও গ্রাম্য সরলতায় ভরা, অথচ স্থানীয় কুটির শিল্পের অসাধারণ সামগ্রীর সম্ভারে আকর্ষনীয়। মেলাগুলিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাপুড়েদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। আর সাপুড়েদের সঙ্গে আসা বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি ও ভয়াবহ এক পাল জ্যান্ত সাপ এই ঝাপান উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

পর্যটন কেন্দ্র
• ময়ূরের দেশে
গ্রামের রাস্তাঘাটে, বাড়ির চালে নির্ভয়ে নেচে বেড়ায় ময়ূর-ময়ূরী। বর্ষায় পেখম তুলে নাচে তারা। মানুষের সাহচর্যে এতটুকু অস্বস্তি নেই। বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলার গ্রামটির আদি নাম মাধোপুর-গোবিন্দ। ময়ূরের সঙ্গে সহাবস্থানে আশপাশের মানুষের মুখে মুখে গ্রামের নাম বদলে হয়েছে ‘মোর গাঁও’। এ বার গ্রামটিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। জাতীয় পাখীর এই বিচরণ ভূমিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ পর্যটনে উৎসাহিত প্রশাসন গ্রামের নাম পাল্টে ‘ময়ূর বিহার’ করার কথা ভাবছে। মোর গাঁওয়ের বাসিন্দা প্রমোদ কুমারের কথায়, “বছর ষাটেক আগে শোনপুরের মেলা থেকে চন্দ্রিকা সিংহ নামে এক গ্রামবাসী এক জোড়া ময়ূর কিনে নিয়ে আসেন। সেই থেকেই ধীরে ধীরে গ্রামে ময়ূরের সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে।” এখন গ্রামে ময়ূরের সংখ্যা শতাধিক। গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ময়ূরেরা। প্রমোদের কথায়, “ওরাও এখন এই গ্রামের বাসিন্দা।” সন্তোষ সিংহের মতো গ্রামবাসীরা এর জন্য গর্ব অনুভব করেন। তাঁর কথায়, “আমরা এই ময়ূরদের নিয়ে সুখে থাকি। বিশেষ করে বর্ষাকালে ময়ূর যখন পেখম মেলে নাচে, তখন গ্রামের চেহারাটাই যায় বদলে। গ্রাম রঙিন হয়ে ওঠে।” জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে মানুষ আর ময়ূরের সহাবস্থান রাজ্যের কাছে এক উদাহরণ হয়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার ‘জাতীয় পাখি’-র জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে উদ্যোগী প্রশাসনও।

• খনির নীচে দুনিয়া কেমন, দেখাতে চায় পর্যটন দফতর
ব্যাপারটা অনেক আগেই বুঝে ফেলেছিল গুপী-বাঘা। হীরক রাজ্যে বর্ষপূর্তি উৎসবে গিয়েই রাজার কাছে তাদের আর্জি, খনিটা এক বার দেখা যায়? ঢোক গিলে রাজা রাজি। তার পরে, খনিতে গিয়ে গুপী-বাঘার তো চক্ষু চড়কগাছ! কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কারও যদি খনি দেখতে ইচ্ছে হয়, সেই ইচ্ছে পূরণ হওয়া মোটেই মুখের কথা নয়। নতুন সরকারের বর্ষপূর্তিতে অবশ্য নতুন করে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। কিছু দিন আগেই আসানসোলে এসে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ জানিয়েছেন, কয়লা শিল্পকে পর্যটন মানচিত্রে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় একাধিক পরিত্যক্ত খোলামুখ ও ভূগর্ভস্থ কয়লা খনি আছে। ইসিএল সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার গভীরতম কয়লাখনিটি অবস্থিত আসানসোল শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে চিনাকুড়িতে। আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত জানান, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খনিগুলিকে চিহ্নিত করে ভ্রমণ পিপাসুদের দেখার ব্যবস্থা করলে পর্যটনে আকর্ষণ বাড়ানো যাবে। মন্ত্রীকে দেওয়া প্রস্তাবনায় বণিকসভার সদস্যেরা জানিয়েছেন, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার, পর্বতারোহণের জন্য বিখ্যাত জয়চণ্ডী ও মুক্তাইচণ্ডী পাহাড় এবং পানিফলা উষ্ণ প্রস্রবন কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি দু’একটি উল্লেখযোগ্য কয়লা খনিকে যুক্ত করা হলে একটি চমৎকার ‘প্যাকেজ ট্যুর’-এর ব্যবস্থা হতে পারে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। কয়লাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র হলেও হয়তো শুধু নিরাপদ খনিতেই যাওয়ার সুযোগ থাকবে।

• পর্যটনের প্রসারে
পর্যটনের প্রসারে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। সরকারের সাহায্য নিয়ে ‘পর্যটন উৎসব’-এর আয়োজন করছে বাংলার বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থাগুলির সংগঠন ‘টাব’। তবে বেড়ানোর চেনা-অচেনা জায়গার হদিস দিয়েই এর কাজ ফুরোবে না। জালিয়াত ভ্রমণ সংস্থার খপ্পরে পড়ে নাজেহাল পর্যটকের কী করণীয়, তা বোঝাতে সামিল হবে ক্রেতাসুরক্ষা দফতরও। পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ বলেন, “অভিযোগ পেলে ওই ভ্রমণ সংস্থাগুলিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।” টাব-এর সাহায্য নিয়ে সব ভ্রমণ সংস্থাকেই নথিভুক্ত করাতে চায় পর্যটন দফতর। মন্ত্রীর মতে, “এর ফলে বিপদের সময়ে পর্যটকদের পাশে দাঁড়ানো সহজ হবে।”

পরিষেবা
• রেলস্টেশনে এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ
যাত্রী পরিষেবায় গতি আনতে এ বার দেশের ব্যস্ত ও প্রধান ৫০টি রেলস্টেশনে ‘এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ’ বানানোর সিদ্ধান্ত নিল রেল কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ নয়, প্রবীন নাগরিক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যেও থাকবে বিশেষ পরিষেবা। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীরা যাত্রীদের সাহায্য করার জন্য থাকবেন এই লাউঞ্জে। যে সব পরিষেবা এই লাউঞ্জে থাকবে— আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, খাওয়াদাওয়া করার জায়গা, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার ইত্যাদি। প্রযুক্তির দিকেও বিশেষ নজর দিয়ে ওয়াই-ফাই সুবিধা, লকার, প্রসাধনস্থল, ‘বিজনেস সেন্টার’ এবং ফ্যাক্স করার সুবিধা। তবে শেষোক্ত পরিষেবাগুলি মূল্যযুক্ত। এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করতে ২০১২-১৩ সালে ১,১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে মোট ৩২১টি এসকেলেটর বসানোরও পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৫০টি চলতি বছরেই বসানো হবে। বতর্মানে দেশ জুড়ে প্রত্যেক দিন আড়াই লক্ষ চাদর ও কম্বল লাগে বাতানুকুল কামরার যাত্রীদের পরিষেবা দিতে। তবে এগুলি পরিষ্কার করার জন্য মাত্র ১২টি স্বয়ংক্রিয় লন্ড্রি রয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্পের মধ্যে আরও ৬টি নতুন লন্ড্রিও বসানো হবে। এর ফলে যাত্রীদের পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর চাদর ও কম্বল দিতে সুবিধা হবে।

• ভারতীয় রেলের উন্নতিতে সহযোগী জার্মানি
ভারতীয় রেলের উন্নয়নে এ বার সহযোগী দেশ হতে চলেছে জার্মানি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায় জানিয়েছেন ‘‘দু’ দেশের রেলের উন্নতির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে জার্মানির যৌথ সম্পর্ক খুবই দৃঢ়।’’ এবং এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে তিনি সম্প্রতি জার্মানির পরিবহনমন্ত্রী পিটার র‌্যামসুয়ের-এর সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেছেন। এর আগেও ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে জার্মানির একটি মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পুনরায় এই চুক্তিটি বলবৎ করতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চুক্তিটি হলে অত্যাধুনিক কোচ এবং বিভিন্ন সিগন্যাল ব্যবস্থার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে জার্মানি।

• হাওড়া-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে ওয়াই-ফাই
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে হাওড়া-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে যাত্রীদের জন্য থাকবে ওয়াই-ফাই সুবিধা। রেল প্রতিমন্ত্রী কেএইচ মুনিয়াপ্পা লোকসভায় এ কথা জানিয়ে বলেছেন উপগ্রহ থেকে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে এই উন্নতমানের ওয়াই-ফাই ব্যবস্থায়। কাজ শেষ করতে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস অবধি সময় লাগবে। কাজটি সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়...
 
ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ