১ আষাঢ় ১৪১৯ শুক্রবার ১৫ জুন ২০১২


 
 
হারিয়ে যাওয়ার পথে
নদীর মৃত্যু
পরিবেশপ্রেমীরা গঙ্গা দূষণ রোধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সরকার গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করতে অর্থ বরাদ্দ করেছে। অথচ উত্তরবঙ্গের নদীগুলো নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। যে সব নদীর জলে গঙ্গা-সহ দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলো পুষ্ট হয়, সেই উত্তরবঙ্গের নদীগুলোকে বছরের পর বছর দূষিত করে তোলা হচ্ছে।
মূলত তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, কালজানি, মহানন্দা-সহ ছোট বড় নদীগুলোতে ঢালাও প্রতিমা বিসর্জন, প্লাস্টিক ফেলা, বর্জ্য পদার্থ ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে এদের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। এর উপর একটি চক্র মাছ মারার জন্য নদীতে বিস্ফোরক কিংবা বিষ প্রয়োগ করে চলেছে। প্রতি দিনই তিস্তা, তোর্সা, কালজানি, মহানন্দায় মরে ভেসে উঠেছে প্রচুর মাছ। মারা যাচ্ছে অনেক বিরল প্রজাতির মাছও। এই তালিকায় ঢুকে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিরল মাছ বোরলি, মহাশোল।
অথচ এ নিয়ে কেউ ভাবছে না। পরিবেশপ্রেমীরাও আশ্চর্যজনক ভাবে নিশ্চুপ। যে নদীগুলো উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদের একমাত্র প্রাণস্বরূপ, তারা নিঃশব্দে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।
নদীগুলো শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়ায় সর্বাধিক দূষণের শিকার হচ্ছে। যেমন মহানন্দা নদী শিলিগুড়ির উপর দিয়ে প্রবাহের সময় বীভৎস ভাবে দূষণের কবলে পড়ছে। নদীর বুকে যত্র-তত্র গজিয়ে উঠছে খাটাল, বস্তি। চলছে নদীর চর দখল করে চাষবাস ও পশুপালন। শহরের বহু জায়গায় নদী চুরি করে গড়ে উঠছে কংক্রিটের ঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। একই অবস্থা জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া করলা নদীরও।
বিষয়গুলি নিয়ে দ্রুত ভাবার সময় এসেছে। নদীর মৃত্যু মানে একটা সভ্যতার মৃত্যু। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের নদীগুলি কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে?
প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য যেমন নদীর বহমানতা প্রয়োজন, তেমনই পানীয় জল, সেচের জল, বন্যার জল বের করা— এ সবের জন্য নদীর গুরুত্ব আবহমান কাল থেকেই। মানুষ স্রেফ স্বার্থসিদ্ধির জন্য যেমন বন-জঙ্গল ধ্বংস করছে, দূষণ বাড়িয়ে দূষিত করছে প্রকৃতিকে, তেমনই প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ বিভিন্ন নদীকেও রূপ দিচ্ছে শ্মশানের। এ রাজ্যের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা শোচনীয়। অবৈধ ভাবে বালি তোলা, ড্রেন-নালার জল নদীতে ফেলা (যেখানে পলি-প্লাস্টিকের আবর্জনাই বেশি), মজে যাওয়া নদীকে সংস্কার না-করা— এ সবই দায়ী নদীগুলির প্রায় বিলুপ্তির জন্য। এ ছাড়া নদীর পাড়গুলি একটু একটু করে দখল হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি তৈরির জন্যও। আশা করব, সরকার নদীগুলির পুনরুদ্ধার তথা জীবনদানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবে।


অবলুপ্তির পথে ডাহুক

ডাহুক পাখির ডাক এখন আর শোনা যায় না। পক্ষীবিশারদদের দাবি, ডাহুক (হোয়াইট ব্রেস্ট হেন) ভীষণ দ্রুত অবলুপ্তির পথে হাঁটছে। বলা ভাল দৌড়চ্ছে।
অথচ এক সময় গৃহস্থের বাড়ির পাশে ছোট-বড় জলাশয়ে হামেশাই দেখা যেত এই ডাহুকদের। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার জলায় ডাহুক দর্শন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আজ জলাশয়ের বিপন্নতায় গেঁড়ি, গুগলি, পোকা, ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখিরা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সম্প্রতি বালুরঘাটের পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘দিশারী সংকল্প’-এর ব্লক ভিত্তিক পরিবেশ সমীক্ষায় সমগ্র দিনাজপুরে মাত্র ৭৭টি ডাহুকের দেখা মিলেছে। আগে যেখানে অজস্র ডাহুক দেখা যেত— যাদের ডাকে অলস দুপুরের নৈঃশব্দ্য ভাঙত। ডাহুকদের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল কারণ কংক্রিটের জঙ্গল। এগুলোর জন্য হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। ফলে টান পড়ছে ডাহুকের খাদ্যভাণ্ডারে। ডাহুকের মাংস খাওয়ার প্রবণতাও আর একটি ভয়ঙ্কর দিক। জলে মেশা বিভিন্ন রাসায়ানিক ডাহুকের বংশবিস্তারের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সভ্যতার মূর্তিমান লজ্জা হয়ে আমরা এখনও আছি ঠিকই। নেই ডাহুকরা ও কুক কুক ডুক ডুক ডাক।


—নিজস্ব চিত্র

আমরা ছাড়াও কেমন আছে এই জীবজগতের অন্যান্য বাসিন্দারা? তারই কয়েক ঝলক...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
 
 


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ