১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ শুক্রবার ১ জুন ২০১২



 
পর্তুগিজ পত্তনের পাঁচশো বছরে ‘মিলন’
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, নানা সময়ে পর্তুগিজরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে উপস্থিত হয়েছিল। এক এক জনের নেতৃত্বে সেই সব জায়গায় তারা গড়ে তুলেছিল নিজেদের উপনিবেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন পৌঁছেছিলেন বার্থেলেমিউ ডায়াজ, ভাসকো-ডা-গামা যেমন এসেছিলেন ভারতের গোয়ায়, ঠিক তেমনই মালয়েশিয়ার মালাক্কাতেও উচ্চাভিলাষী পর্তুগিজ রাজাদের নির্দেশে বারে বারে তারা দখলের চেষ্টা চালায়।

প্রথমে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে লোপেজ-ডে-সেকুয়েরা বাণিজ্য করার নামে ঢুকে পড়েন মালাক্কায়। কিন্তু ওই দেশেই বাণিজ্য করতে আসা ভারতীয় গুজরাতিরা এদের দূরাভিসন্ধি ধরতে পেরে মালাক্কার রাজাকে সে কথা জানিয়ে দেয়। আর কথাটা শোনা মাত্রই রাজা সতর্ক হয়ে যাওয়ায় সে যাত্রা রক্ষা পায় মালাক্কা। এর পর রাজা সেই সব ‘ষড়যন্ত্রী’ পর্তুগিজদের বন্দি করেন।

সে যাত্রা পিছু হটলেও আবার পর্তুগিজরা ১৫১০ সালে মালাক্কায় ঢুকতে যায়। কিন্তু এ বারও ব্যর্থ হল পরিকল্পনা! তবে ১৫১১ সালে অ্যাফ্যানসো আলবুকার্কের নেতৃত্বে পর্তুগিজরা ‘গসপেল, গোল্ড ও গ্লোরি’র জন্য ১৮টি জাহাজ ও ১২০০ নাবিক-সহ আক্রমণ করে মালাক্কা ও মালাক্কা স্ট্রেইট। আর তার পরই ১৫১১ সালের ২৪ অগস্ট মালাক্কাকে পুরোপুরি দখল করে পর্তুগিজরা গড়ে তোলে উপনিবেশ।

১৫১১ থেকে ২০১১, অর্থাত্ গত বছরই পূর্ণ হল এই ঔপনিবেশিক সূত্রপাতের পাঁচশো বছর। আর সেই উপলক্ষেই মালাক্কায় গত অক্টোবরে আয়োজিত হয় এক মিলনমেলা, যে মেলার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তুতো ভাইবোন, আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বসূরীদের মহামিলন। পর্তুগিজ সংস্কৃতির পরম্পরা, খাদ্য ও রন্ধনশৈলীকে জনসম্মুখে ব্যাপক ভাবে হাজির করাও ছিল এই মিলনের আর এক অভিপ্রায়।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে চার দিন ব্যাপী মহা সমারোহে অনুষ্ঠিত হয় এই মিলনমেলা। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইস্টটিমোর, লিসবন ও সিঙ্গাপুর থেকে হাজার হাজার পর্তুগিজ মালাক্কায় আসেন। ‘মালাক্কা পর্তুগিজ ইউরেশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে এবং ব্যাঙ্কক পর্তুগিজ দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত এই মেলার থিম ছিল ‘আওয়ার রুটস, আওয়ার হেরিটেজ, আওয়ার হোম’। পর্তুগিজ মিলনমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মালাক্কার মুখ্যমন্ত্রী দাতুক সেরি মহম্মদ আলি রুস্তম।

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পর্তুগিজ লোকনৃত্য, লোকসঙ্গীত, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী-সহ ছিল ছিল বিভিন্ন স্টল, যেখানে ছিল হস্তশিল্প ও বস্ত্র সামগ্রীর বিপুল সম্ভার। ছিল বিভিন্ন বিষয়ের উপর তৈরি করা ‘স্যুভেনির’ও।

আর এই আনন্দ যজ্ঞের ফলে ওই সময়ে মালাক্কায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে মিলনমেলা ছিল একেবারেই উপরি পাওনা!

কিছু কথা...
পর্তুগালের পৃথিবী পরিক্রমা: পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতকে বিভিন্ন জায়গা ‘আবিষ্কার’-এর বিষয়ে পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে পর্তুগিজরা। আর সম্ভবত পশ্চিমী প্রভাবের কারণেই তারা বিশ্ব জুড়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। শুধু ইউরোপ নয়— আফ্রিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকাতেও এরা সাম্রাজ্য বিস্তার করে এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির নিরিখে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ‘ক্ষমতাবান’ হয়ে ওঠে। ইতিহাস মতে, পর্তুগিজরাই প্রথম ‘বিশ্ব সাম্রাজ্য’ গড়ে তোলে। তবে শুধু ‘গড়া’ই নয় সেই সাম্রাজ্য ধরে রাখার ব্যাপারেও পর্তুগিজদের ‘খ্যাতি’ ছিল। ১৪১৫ সালে কিউটা দখল থেকে শুরু করে ১৯৯৯ তে ম্যাকাওকে চিনের হাতে তুলে দেওয়া অর্থাত্ প্রায় ৬০০ বছর তাদের এই ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ‘চালনা’ অব্যাহত ছিল। তবে উনিশ শতকে ব্রাজিল স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ব মানচিত্রে পর্তুগিজদের ‘মর্যাদা’ যথেষ্ট খাটো হয়। কেননা, পর্তুগিজরা সবচেয়ে বড় উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল যে ব্রাজিলেই!

ছবি: ইন্টারনেট ও লেখক


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ